অস্ত্র বিক্রি লজ্জার কিছু নয় : ক্যামেরন

অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বিষয়টি নিয়ে কুয়েতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। তাঁরা ক্যামেরনের কাছে জানতে চান, 'একইসঙ্গে গণতন্ত্রের কথা বলা এবং স্বৈরশাসকদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা কি স্ববিরোধিতা নয়?'


সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে স্পষ্ট জবাব দিতে বাধ্য হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। বলেন, 'অস্ত্র বিক্রি করা কোনো লজ্জার বিষয় নয়।'
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গণ-আন্দোলন শুরুর পর প্রথম পশ্চিমা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ওই অঞ্চল সফর করলেন ক্যামেরন। গত সোমবার মিসর থেকে তিন দিনের এ সফর শুরু করেন তিনি। পরে কুয়েত ও কাতারে যান ক্যামেরন। কুয়েত পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে আরব দেশগুলোতে একনায়কতন্ত্রের কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি। কিন্তু সফর চলাকালেই ব্রিটিশ গণমাধ্যম প্রকাশ করে দেয়, ক্যামেরনের এ সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো অস্ত্র বিক্রি। তাঁর সঙ্গে থাকা ৩৬ সদস্যের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলে ব্রিটেনের শীর্ষ আট অস্ত্র বিক্রেতা রয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো দাবি করেছে, এ অস্ত্র বিক্রেতাদের সফরসঙ্গী করার লক্ষ্য হলো আরব দেশগুলোর সঙ্গে কয়েক শ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করা। সমালোচকরা এ বিষয়টিকে 'বৈপরীত্য' অভিহিত করে বলেছেন, ক্যামেরন একইসঙ্গে স্বৈরশাসকদের সমালোচনা করছেন আবার তাদের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করছেন। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে বছরে প্রায় ৩৬০ কোটি পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রি করে ব্রিটেন।
দেশের এ সমালোচনার জের কুয়েতেও পেঁৗছায়। মঙ্গলবার কুয়েতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথসংবাদ সম্মেলনেই বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরনকে চেপে ধরেন সাংবাদিকরা। প্রসঙ্গটি নিয়ে স্পষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি বুঝি না, আপনারা কেন বুঝছেন না যে, প্রতিটি দেশেরই নিজেকে রক্ষার অধিকার আছে। কুয়েতের কথাই ধরুন। ২০ বছর আগে দেশটির সার্বভৌমত্বকে অসম্মান দেখিয়ে প্রতিবেশী ইরাক এখানে হামলা চালিয়েছে। এমন হামলা থেকে রক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার অধিকার অবশ্যই কুয়েতের আছে।'
সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'স্বৈরশাসকদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে ব্রিটেন কিভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে?' জবাবে ক্যামেরন বলেন, 'আপনারা কি বলছেন যে, কুয়েতের মতো ছোট দেশগুলোও তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি অস্ত্র নিজেরা তৈরি করবে? আমার মনে হয়, খুব কম লোকই এ ধারণা সমর্থন করবে। তাই অস্ত্র বাণিজ্যের বিরোধিতা করা হাস্যকর। আর ব্রিটেন কঠোর আইন-কানুন মেনেই অস্ত্র ব্যবসা করে। তাই এতে লজ্জার কিছু নেই।'
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের কম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে বছরে প্রায় ৭২০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে। এর অর্ধেকেরও বেশি বিক্রি হয় কেবল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। বর্তমানে আবুধাবিতে চলমান অস্ত্র মেলায়ও অংশ নিচ্ছে ব্রিটেনের ৯৩টি কম্পানি। সূত্র : গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.