ঘরে-বাইরে চরম চাপে গাদ্দাফি-* লিবিয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরব লীগ * অবরোধ আরোপের আহ্বান ইউরোপীয় দেশগুলোর * সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা পেরুর
সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর কারণে ঘরে-বাইরে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছেন লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পৃথক বিবৃতিতে তাঁর কড়া সমালোচনা করে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার দাবি করেছে।
গাদ্দাফিকে 'একঘরে' করতে লিবিয়ার ওপর অবরোধ আরোপের আহ্বানও জানিয়েছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। আরব দেশগুলোর সংগঠন আরব লীগ লিবিয়াকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর লিবিয়ার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে পেরু।
এদিকে, একের পর এক রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তার পক্ষত্যাগের কারণে দেশের ভেতরেই চাপের মুখে পড়েছেন লিবিয়ার লৌহমানব। বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাদ্দাফির 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' হিসেবে বিবেচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল ফাত্তাহ ইউনুস আল আবিদিও বিদ্রোহীদের দলে যোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় টিভিতে গাদ্দাফির বক্তব্যের পর পক্ষত্যাগের ঘটনা বেড়ে গেছে। ওই বক্তব্যে বিক্ষোভকারীদের ইঁদুর ও তেলাপোকার সঙ্গে তুলনা করেন গাদ্দাফি। এ বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, 'নিজের দেশের মানুষের সঙ্গেই যুদ্ধ ঘোষণা করলেন তিনি।' ওই বক্তব্যের প্রভাবে লিবিয়ায় বিপর্যয় ছড়িয়েপড়ার আশঙ্কা করছে রেড ক্রিসেন্ট।
৪২ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা একনায়ক কর্নেল গাদ্দাফির পতনের দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে লিবিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারি বাহিনীর হামলায় এ-যাবত অন্তত ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। তবে গতকাল বুধবার ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্কো ফ্রাতিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গত কয়েকদিনের বিক্ষোভে লিবিয়ায় অন্তত এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সহিংসতার ভয়ে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের লিবিয়া থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাদ্দাফি বিক্ষোভকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পরও লিবিয়ার উপকূলীয় পূর্বাঞ্চলে শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। ওই এলাকায় সেনাসদস্যরাও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। দেশটির সব বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অবিলম্বে আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য গাদ্দাফির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পরিষদ বলেছে, 'সরকারকে জনগণের বৈধ দাবি-দাওয়ার কথা শুনতে হবে। আর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে দায়িত্ব সরকারের রয়েছে, তা পূরণ করতে হবে।' মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানোরও আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে। ইইউয়ের প্রেসিডেন্ট হারম্যান ভ্যান রমপুই গতকাল বুধবার বলেন, লিবিয়ায় এ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আর চলতে পারে না। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ত্রিনিদাদ জিমেনেজ বলেন, দেশ শাসন করার সব বৈধতা হারিয়েছেন গাদ্দাফি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি অতি দ্রুত গাদ্দাফির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের সুপারিশও করেন তিনি। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।
No comments