রিবন রেটিং পদ্ধতির প্রতি পাটচাষিদের অনাগ্রহ by বরুন রায়
খাল-বিলে পাট জাগ দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় পানি নেই। তবু পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার পাটচাষিরা আধুনিক রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর ব্যাপারে আগ্রহী নন। বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সাঁথিয়ার সহস্রাধিক এবং ২০১০ সালে বেড়ার শতাধিক চাষিকে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট
পচানোর ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে চাষিদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে দলপ্রধানদের কাছে এক হাজার ৫২টি রিবনার মেশিন দেওয়া হয়। একেকটি মেশিন গড়ে ১০০ জন কৃষক পাটের ছাল ছাড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে পারেন।wdedhou
বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার জমির পাট কেটে জাগ দেওয়া হলেও অন্য বেশির ভাগ এলাকার পাট কাটা হয়নি। বৃষ্টি কম হওয়ায় খেতের আশপাশের খাল ও ডোবাগুলোতে পাট পচানোর উপযোগী পানি নেই।
প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীসহ সাধারণ পাটচাষিদের সঙ্গে কথা বলে রিবন রেটিং পদ্ধতির ব্যাপারে তাঁদের চরম অনাগ্রহের কথা জানা গেছে। তাঁরা জানান, এই পদ্ধতিটি খুব ঝামেলার। প্রথমত, পাটগাছ হতে হয় নির্দিষ্ট বয়সের (১০০ থেকে ১০৫ দিন)। বেশি বয়সী গাছ হলে তা থেকে ছাল ছাড়ানো কষ্টকর। আবার কম বয়সী গাছ হলে তা থেকে ভালো আঁশ মেলে না। দ্বিতীয়ত, জমি থেকে পাটগাছ কাটামাত্রই তা থেকে ছাল ছাড়াতে হয়। কাটার দু-চার দিন পর ছাল ছাড়ানো অনেকটাই দুঃসাধ্য। তৃতীয়ত, গর্ত তৈরির কাজটিও বেশ ঝামেলার। এ ছাড়া গর্তে ছাল ডুবিয়ে রাখলে তা চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সব মিলিয়ে তুলনামূলকভাবে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে শ্রমিকের প্রয়োজনও বেশি হয়।
বেড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘রিবন রেটিং পদ্ধতির ব্যাপারে কৃষকদের কিছুটা নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় পাট জাগ দেওয়ার পানির অভাব রয়েছে। তবু কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতির প্রতি তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।’
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল কাদের বলেন, ‘রিবন রেটিং পদ্ধতির ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলার জন্য আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বিনা মূল্যে রিবনার মেশিন দিয়েছি। এ ছাড়া আমরা এ ব্যাপারে তাদের প্রতি সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছি। তবে কৃষকেরা এই পদ্ধতির চেয়ে সনাতন পদ্ধতির প্রতিই বেশি আগ্রহী।’
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবন করা ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতিতে সনাতন পদ্ধতির মতো জলাশয়ের ব্যাপক জায়গাজুড়ে পাট জাগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে পাটগাছের পাতা ঝরিয়ে এর গোড়া থেতলে নিতে হয়। এরপর রিবনার মেশিনের সাহায্যে পাটগাছের ছাল ছাড়িয়ে ছোট গর্তের পানিতে সেই ছাল ১০ দিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। এভাবে এক বিঘা জমির পাট ছয় মিটার লম্বা, তিন মিটার চওড়া ও এক মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট গর্তের ভেতর পলিথিন বিছিয়ে তা পানি দিয়ে ভরে পচানো সম্ভব। গর্তের প্রতিমণ পানিতে এক কেজি করে ইউরিয়া সার দেওয়া হলে পাটের আঁশ খুব ভালো হয়। দিন দশেক পর ওই জাগ দেওয়া ছাল ধুয়ে নিলেই পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট মানের পাট।
No comments