আসছে অমরত্বের দিন
মানুষ মরণশীল_এই আপ্তবাক্যের দিন সম্ভবত ফুরিয়ে আসছে। বিজ্ঞান যে গুণাঙ্কে এগোচ্ছে, তাতে আর ৩৪ বছরের ভেতরেই মানুষের জৈবিক আয়ুষ্কাল অসীম পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার পথে পা বাড়াতে পারে। টাইম সাময়িকীর চলতি সংখ্যা এমন বিস্ময়কর গল্পই আমাদের শোনাচ্ছে।
বলা হয়েছে, ২০৪৫ সম্ভবত সেই বছর, যখন মানুষ অমরত্ব লাভ করবে। এ বিশ্বাসের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, যদি আপনি মনে করেন মানুষ ও যন্ত্র_এই দুই মিলে 'এক' হয়ে যাওয়া সম্ভব। স্বাগত জানানো হবে 'সিঙ্গুলারিটি বিপ্লব'কে।
মানুষ ও যন্ত্র এখন একে অন্যের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পথে। এর প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল কৃষিবিপ্লব থেকে। কৃষিবিপ্লবের আট হাজার বছর পর শুরু হয় শিল্পবিপ্লব। শিল্পবিপ্লবের ১২০ বছর পর বিজলি বাতি আবিষ্কৃত হয়। এর মাত্র ৯০ বছরের ভেতরে মানুষ তাঁর কল্পবিলাসের চূড়ান্তে পেঁৗছে যায়_পা রাখে চাঁদের মাটিতে। তার ২২ বছর পর পুরো পৃথিবী একটি একক গ্রামে পরিণত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে_আবির্ভাব ঘটে 'ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব'-এর। ইন্টারনেটের জালে পুরো বিশ্ব আবৃত করার মাত্র ৯ বছরের মাথায় মানুষের জিন মানচিত্র তৈরি হয়ে যায়।
টাইম জানিয়েছে, পরিবর্তনের এই ত্বরণের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিকটি হলো কম্পিউটিং শক্তিমত্তা। এটি এমন গতিতে এগোচ্ছে, যা সব ধরনের আপাত অসম্ভব কল্পবিজ্ঞানকেও সম্ভব করে তুলছে। এবং তার লেখচিত্র আমাদের সেই বছরের দিকে ইঙ্গিত করে, যখন যন্ত্র আর মানুষ একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠার সন্ধিক্ষণ ঘটবে। এই বছরটি হলো ২০৪৫। যখন এ জগতের নেতৃত্বের লাগাম তুলে নেবে 'সিঙ্গুলারিটি'। এই 'সিঙ্গুলারিটি বিপ্লব'ই একপর্যায়ে হিউম্যানকাইন্ডকে সরিয়ে মেশিনকাইন্ডের যুগের সূচনা করবে।
সিঙ্গুলারিটি শব্দটা নেওয়া হয়েছে জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা থেকে। এর অর্থ মহাশূন্য-সময়ের একটি বিন্দু। যেমনটি পাওয়া যায় কৃষ্ণগহ্বরের অভ্যন্তরে_যেখানে পদার্থবিদ্যার নিয়ম খাটে না। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার উদ্যোগ তিন বছর আগে এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে সিঙ্গুলারিটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।
টাইমে বলা হয়েছে, কৃত্রিমভাবে বুদ্ধিমত্তার প্রথম উদাহরণ পাওয়া যায় ১৯৬৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সে সময় ১৭ বছর বয়সী স্কুলছাত্র রেমন্ড কুরজউইল টিভির একটি গেম শোতে পিয়ানোয় একটি সংক্ষিপ্ত সংগীত শোনায়। রেমন্ডের ওই সংগীতটির কম্পোজ করে একটি কম্পিউটার।
এখন ৪৬ বছর পর রেমন্ড বলছেন, 'আমরা এমন একসময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যখন কম্পিউটার বুদ্ধিমত্তায় মানুষকেও ছাড়িয়ে যাবে। সেই মুহূর্তে মানবিকতা, আমাদের শরীর, মন, সভ্যতা সবকিছুর পুরোপুরি রূপান্তর ঘটে যাবে।'
কম্পিউটারের সহায়তায় আমাদের বুদ্ধিমত্তা, শরীরের সামর্থ্যের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো আমাদের বুড়ো অবস্থার প্রভাব এড়িয়ে যেতে সহায়ক হবে, জীবনের সীমানা আরো দীর্ঘ হবে। এমনও হতে পারে, আমাদের 'চেতনা' কম্পিউটারে স্থানান্তর করতে পারছি। এর ভেতরে মানুষই সফটওয়্যার হিসেবে চিরস্থায়ী বসবাস করবে। কল্পবিজ্ঞানের মতো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রমানব (রোবট) হয়তো মানুষকে ধ্বংস করে নিজেই মানবজাতিতে রূপান্তরিত হবে।
গত বছর সিঙ্গুলারিটি শীর্ষ সম্মেলনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি ছিল, মানুষের জীবনের সীমানা বাড়ানো। মানুষ এ যাবৎকাল তার সীমিত আয়ুকে একটি স্থায়ী ও অপরিহার্য ব্যাপার বলে মনে করে এসেছে। কিন্তু একজন সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ববিদ এটাকে 'সমস্যা' হিসেবে দেখেন, যা সমাধানযোগ্য। মৃত্যুও একটি সমস্যা। বৃদ্ধাবস্থাও এক ধরনের অসুস্থতা, যার চিকিৎসা সম্ভব। আমাদের শারীরিক অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িত ডিএনএর ভেতরের টেলোমিয়ারের কথা বলা যায়। ক্রোমোজমের প্রান্তদেশে অবস্থিত টেলোমিয়ার কোষবিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। একসময় কোষে টেলোমিয়ার নিঃশেষ হলে এর পুনরুৎপাদন হয় না। তখনই কোষ মারা যায়। তবে টেলোমেরাসি নামের একটি এনজাইম আছে, যা এ প্রক্রিয়াকে ঘুরিয়ে দেয়। একদল বয়স্ক ইঁদুরের শরীরে টেলোমেরাসি প্রয়োগ করে তাঁদের বয়সজনিত অসুস্থতা দূর করা সম্ভব হয়। দেখা গেছে, ইঁদুরগুলো আরো সবলই হয়নি, তরুণও হয়ে গেছে।
২০০৫ সাল থেকে স্নায়ুবিজ্ঞানী হেনির মার্করাম সুইজারল্যান্ডে ব্রেইন মাইন্ড ইনস্টিটিউটে 'ব্লু ব্রেইন' নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এর লক্ষ্য আইবিএমের 'ব্লু জিন সুপার-কম্পিউটার' ব্যবহার করে প্রতিটি নিউরন ধরে স্তন্যপায়ী প্রাণীর কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরি করা। তিনি ইঁদুরের একটি মস্তিষ্ক তৈরিও করে ফেলেছেন, যেখানে ১০ হাজার নিউরন রয়েছে। বয়সজনিত পানকিনসনে আক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার রোগীর মস্তিষ্কে স্নায়ু রোপণ করা সম্ভব হয়েছে। এভাবেই জৈবপ্রযুক্তি ও ন্যানোপ্রযুক্তি আমাদের শরীর ও চারপাশের দুনিয়ার শক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তি ক্রমশ ছুটছে অকল্পনীয় ত্বরণে। অচিরেই প্রতি ঘণ্টার বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হবে অতীতের এক শতাব্দীর সমান সময়ের। অসীম জীবন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
মানুষ ও যন্ত্র এখন একে অন্যের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পথে। এর প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল কৃষিবিপ্লব থেকে। কৃষিবিপ্লবের আট হাজার বছর পর শুরু হয় শিল্পবিপ্লব। শিল্পবিপ্লবের ১২০ বছর পর বিজলি বাতি আবিষ্কৃত হয়। এর মাত্র ৯০ বছরের ভেতরে মানুষ তাঁর কল্পবিলাসের চূড়ান্তে পেঁৗছে যায়_পা রাখে চাঁদের মাটিতে। তার ২২ বছর পর পুরো পৃথিবী একটি একক গ্রামে পরিণত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে_আবির্ভাব ঘটে 'ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব'-এর। ইন্টারনেটের জালে পুরো বিশ্ব আবৃত করার মাত্র ৯ বছরের মাথায় মানুষের জিন মানচিত্র তৈরি হয়ে যায়।
টাইম জানিয়েছে, পরিবর্তনের এই ত্বরণের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিকটি হলো কম্পিউটিং শক্তিমত্তা। এটি এমন গতিতে এগোচ্ছে, যা সব ধরনের আপাত অসম্ভব কল্পবিজ্ঞানকেও সম্ভব করে তুলছে। এবং তার লেখচিত্র আমাদের সেই বছরের দিকে ইঙ্গিত করে, যখন যন্ত্র আর মানুষ একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠার সন্ধিক্ষণ ঘটবে। এই বছরটি হলো ২০৪৫। যখন এ জগতের নেতৃত্বের লাগাম তুলে নেবে 'সিঙ্গুলারিটি'। এই 'সিঙ্গুলারিটি বিপ্লব'ই একপর্যায়ে হিউম্যানকাইন্ডকে সরিয়ে মেশিনকাইন্ডের যুগের সূচনা করবে।
সিঙ্গুলারিটি শব্দটা নেওয়া হয়েছে জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা থেকে। এর অর্থ মহাশূন্য-সময়ের একটি বিন্দু। যেমনটি পাওয়া যায় কৃষ্ণগহ্বরের অভ্যন্তরে_যেখানে পদার্থবিদ্যার নিয়ম খাটে না। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার উদ্যোগ তিন বছর আগে এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে সিঙ্গুলারিটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।
টাইমে বলা হয়েছে, কৃত্রিমভাবে বুদ্ধিমত্তার প্রথম উদাহরণ পাওয়া যায় ১৯৬৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সে সময় ১৭ বছর বয়সী স্কুলছাত্র রেমন্ড কুরজউইল টিভির একটি গেম শোতে পিয়ানোয় একটি সংক্ষিপ্ত সংগীত শোনায়। রেমন্ডের ওই সংগীতটির কম্পোজ করে একটি কম্পিউটার।
এখন ৪৬ বছর পর রেমন্ড বলছেন, 'আমরা এমন একসময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যখন কম্পিউটার বুদ্ধিমত্তায় মানুষকেও ছাড়িয়ে যাবে। সেই মুহূর্তে মানবিকতা, আমাদের শরীর, মন, সভ্যতা সবকিছুর পুরোপুরি রূপান্তর ঘটে যাবে।'
কম্পিউটারের সহায়তায় আমাদের বুদ্ধিমত্তা, শরীরের সামর্থ্যের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো আমাদের বুড়ো অবস্থার প্রভাব এড়িয়ে যেতে সহায়ক হবে, জীবনের সীমানা আরো দীর্ঘ হবে। এমনও হতে পারে, আমাদের 'চেতনা' কম্পিউটারে স্থানান্তর করতে পারছি। এর ভেতরে মানুষই সফটওয়্যার হিসেবে চিরস্থায়ী বসবাস করবে। কল্পবিজ্ঞানের মতো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রমানব (রোবট) হয়তো মানুষকে ধ্বংস করে নিজেই মানবজাতিতে রূপান্তরিত হবে।
গত বছর সিঙ্গুলারিটি শীর্ষ সম্মেলনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি ছিল, মানুষের জীবনের সীমানা বাড়ানো। মানুষ এ যাবৎকাল তার সীমিত আয়ুকে একটি স্থায়ী ও অপরিহার্য ব্যাপার বলে মনে করে এসেছে। কিন্তু একজন সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ববিদ এটাকে 'সমস্যা' হিসেবে দেখেন, যা সমাধানযোগ্য। মৃত্যুও একটি সমস্যা। বৃদ্ধাবস্থাও এক ধরনের অসুস্থতা, যার চিকিৎসা সম্ভব। আমাদের শারীরিক অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িত ডিএনএর ভেতরের টেলোমিয়ারের কথা বলা যায়। ক্রোমোজমের প্রান্তদেশে অবস্থিত টেলোমিয়ার কোষবিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। একসময় কোষে টেলোমিয়ার নিঃশেষ হলে এর পুনরুৎপাদন হয় না। তখনই কোষ মারা যায়। তবে টেলোমেরাসি নামের একটি এনজাইম আছে, যা এ প্রক্রিয়াকে ঘুরিয়ে দেয়। একদল বয়স্ক ইঁদুরের শরীরে টেলোমেরাসি প্রয়োগ করে তাঁদের বয়সজনিত অসুস্থতা দূর করা সম্ভব হয়। দেখা গেছে, ইঁদুরগুলো আরো সবলই হয়নি, তরুণও হয়ে গেছে।
২০০৫ সাল থেকে স্নায়ুবিজ্ঞানী হেনির মার্করাম সুইজারল্যান্ডে ব্রেইন মাইন্ড ইনস্টিটিউটে 'ব্লু ব্রেইন' নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এর লক্ষ্য আইবিএমের 'ব্লু জিন সুপার-কম্পিউটার' ব্যবহার করে প্রতিটি নিউরন ধরে স্তন্যপায়ী প্রাণীর কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরি করা। তিনি ইঁদুরের একটি মস্তিষ্ক তৈরিও করে ফেলেছেন, যেখানে ১০ হাজার নিউরন রয়েছে। বয়সজনিত পানকিনসনে আক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার রোগীর মস্তিষ্কে স্নায়ু রোপণ করা সম্ভব হয়েছে। এভাবেই জৈবপ্রযুক্তি ও ন্যানোপ্রযুক্তি আমাদের শরীর ও চারপাশের দুনিয়ার শক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তি ক্রমশ ছুটছে অকল্পনীয় ত্বরণে। অচিরেই প্রতি ঘণ্টার বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হবে অতীতের এক শতাব্দীর সমান সময়ের। অসীম জীবন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
No comments