কেটে ফেলা হলো দুই হাজার আগরগাছ

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার শাল্টি মুরাদপুরে বন বিভাগের জমি দখলে নিতে একদল গ্রামবাসী দুই হাজার ১০০টি আগরগাছ কেটে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত পাঁচ-ছয় ফুট উঁচু গাছগুলো কেটে ফেলা হয়।


এ ঘটনায় স্থানীয় বন বিভাগ বাদী হয়ে গত শনিবার থানায় ১১ জনের নামে একটি মামলা করে। পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
বন বিভাগের চরকাই রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ভাদুরিয়া বিটের ওই চার হেক্টর জমি শাল্টি মুরাদপুরের কয়েকজন বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছিল। সাত-আট বছর আগে ওই জমি তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে সেখানে আগর বাগান করা হয়। এর কিছুদিন পর তারা সেখানকার ছয় হাজার আগরগাছের চারা তুলে ফেলে। পরে আবার সেখানে গাছ লাগানো হয়। তিনি অভিযোগ করেন, এই ব্যক্তিরা গাছ কেটে পুনরায় জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে। ২৪ জুলাই তারা ২২৭টি আগরগাছ কেটে ফেললে থানায় অভিযোগ করা হয়। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে উপজেলার ভাদুরিয়া বিটের শাল্টি মুরাদপুরে দখলমুক্ত হওয়া বন বিভাগের ওই জমিতে চরকাই সামাজিক বন বিভাগ পাঁচ হাজার ৩১৩টি আগরগাছ লাগানো হয়। এর চারপাশে দুই শতাধিক আকাশমণিগাছও লাগানো হয়। গত শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে শাল্টি মুরাদপুর গ্রামের আলতাব হোসেন (৪৫), বয়েজ উদ্দীন (৫৫), আমিনুর (৩৫), এনামুল (৩০), খাইরুল (২৮), আজিজুল (২৫), শহিদুল (৩০), মতিন (২৫), তরিকুল (২৬), দুলা মিয়া (৩০), মোক্তারসহ (২৫) আরও ১০-১২ জন দা, কুড়াল ও করাত দিয়ে আগরগাছ ও আকাশমণিগাছ কাটতে থাকেন। খবর পেয়ে ভাদুরিয়া বিট কর্মকর্তাসহ দুজন বন প্রহরী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের বাধা দিতে গেলে ওই ব্যক্তিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের মারার জন্য এগিয়ে আসেন। পরে তাঁরা পালিয়ে যান। এ সময় তাঁরা বাগানের দুই হাজার ১০০টি আগরগাছ ও ৩৬টি আকাশমণিগাছ কেটে ফেলেন। যার আনুমানিক মূল্য তিন লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
অভিযুক্তদের মধ্যে আলতাব হোসেন বলেন, ‘আমার দখলে বনের জমি ছিল, এটা ঠিক। কিন্তু গাছ কাটার সঙ্গে আমি জড়িত নই।’ বয়েজ উদ্দীন ও মতিন বলেন, ‘অন্য কেউ এই কাজ করে আমাদের ওপর দোষ দিচ্ছে। আমরা কখনো বনের জমি দখল নিতে যাইনি।’
গত শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, গাছগুলো করাত দিয়ে গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত সেখানে পুলিশ না যাওয়ায় গাছগুলো পড়ে ছিল। এ সময় উপকারভোগীরা কেটে ফেলা গাছগুলো হাতে ধরে দেখায়। আর আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, গাছের সঙ্গে কীসের শক্রতা! গাছগুলো আমরা সন্তানের মতো দেখাশুনা করেছি। যারা এ কাজ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তাঁরা।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল শনিবার অনেকের নামে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বন বিভাগের জনবল কম থাকায় বারবার এই ঘটনা ঘটছে। এর আগের মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে এসে আবার তাঁরা এই কাজ করছে।’

No comments

Powered by Blogger.