অসবর্ণ বিয়ে করে পুলিশ হেফাজতে
নিজ বর্ণের বাইরে বিয়ে করেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের মেয়ে কৃষ্ণা (১৯)। সেখানকার কট্টর হিন্দুদের কাছে অসবর্ণে বিয়ে রীতিমতো শাস্ত্রবিরোধী, নিষিদ্ধ। পরিবারের অসম্মতিতে ভিন্ন বর্ণের ছেলেকে বিয়ে করায় কৃষ্ণাকে এখন ঘর ছাড়তে হয়েছে।
তাঁর পরিবারের লোকজন যেকোনো সময় তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে মেরে ফেলতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন তিনি। এ কারণে উত্তর হরিয়ানার একটি পুলিশ প্রহরার আশ্রমে আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন কৃষ্ণা ও তাঁর নিম্নবর্ণের স্বাopebecমী সনু (২২)।
বর্ণের বাইরে সম্পর্ক কিংবা বিয়ে ভারতের অনেক রাজ্যে ‘নিষিদ্ধ’। এই কঠোর প্রথা ভেঙে যাঁরাই পা বাড়ান, তাঁদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। হাজারো বর্ণের দেশটিতে কৃষ্ণাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পরিবারের রক্তচক্ষু এড়ানো কিংবা জীবনের নিরাপত্তায় তাঁরা উঠছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করছে পুলিশ।
প্রথা ভাঙায় কৃষ্ণার পরিবার সত্যিই তাঁর স্বামীকে হত্যা করতে পারে কি না, সে প্রশ্নে তিনি মাথা নাড়িয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, তাঁরা হত্যা করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে বন্দুক সহজলভ্য। সামান্য ঝগড়াঝাঁটি হলেও লোকজন অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সেখানে খুনখারাপি কোনো ব্যাপারই নয়।’
নিম্নবর্ণের সনুকে পছন্দ করতেন কৃষ্ণা। কিন্তু তাঁর পরিবার এ সম্পর্ক মেনে নেয়নি, বরং অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে ঠিক করেন। অথচ ওই ছেলেকে কোনো দিন দেখেইনি কৃষ্ণা। উপায়ান্তর না দেখে চলতি মাসের শুরুতে সাহারানপুরের বাড়ি ছাড়েন। বাসযোগে সোজা গিয়ে ওঠেন পার্শ্ববর্তী হরিয়ানায় প্রেমিকের বাড়িতে। পরদিন সকালে তাঁরা এক মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন এবং নিরাপত্তার জন্য দ্বারস্থ হন আদালত ও পুলিশের। আদালত নবদম্পতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। সেই থেকে কৃষ্ণাদের ঠিকানা পুলিশ পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্র। হরিয়ানায় এ রকম অসংখ্য কেন্দ্র রয়েছে। গত বছরও এ রকম দুই শতাধিক যুগলকে আশ্রয় দেয় পুলিশ।
সমাজবিজ্ঞানী প্রেম চৌধুরী এএফপিকে বলেন, একই গ্রাম বা গোত্রের মধ্যে যেমন, তেমনই নিজ বর্ণ ও বিশ্বাসের বাইরে কারও সঙ্গে সম্পর্কও ভারতে নিষিদ্ধ। এর ব্যত্যয় ঘটলে নির্ঘাত পরিবার ও গ্রাম্য মাতব্বরদের চড়কগাছ। ক্যাঙারু আদালত বসিয়ে প্রথা ভঙ্গকারীদের হত্যা করতেও তাঁরা পিছপা হন না। বিবিসি।
No comments