চরাচর-হাওরবাসীর দুঃখ by আখলাক হুসেইন খান খেলু
অবিমৃষ্যকারিতায় ৩৫ বছরেও পূর্ণতা পেল না 'হাওর উন্নয়ন বোর্ড'। শেষ পর্যায়ে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে 'হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড' পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও অদৃশ্য কারণে থেমে যায়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বোর্ড পুনর্গঠনের সব প্রক্রিয়া যখন সম্পন্ন করেছে, তখনই ২০০৮ সালের ২১ জুলাই সিলেটে
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। হাওরবাসী প্রায় নিশ্চিত ছিল, পরিষদ এই সভায় পুনর্গঠনকৃত বোর্ডের ঘোষণা দেবে। কিন্তু পরিষদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাওরবাসীকে আশাহত করে বোর্ড এর ঘোষণা না দিয়ে হাওর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি বা সেল গঠনের নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়। হতবাক হাওরবাসীর সামনে এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দেয়। আগের সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা সংস্থাগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বা কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ বা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে হাওরাঞ্চলের জেলা পর্যায় থেকে একজন করে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ২০০৭ সালের ২২ অক্টোবর এক পত্রের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ এবং হাওর ও জলাভূমি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ও সমজদার ব্যক্তিকে সন্ধান করে মনোনয়ন দিয়ে তাঁদের নাম মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সদরে এক জনসভায় সিলেটে সদর দপ্তর স্থাপন করে হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেন এবং ১৯৯৭ সালের ৯ অক্টোবর কিশোরগঞ্জে ও ২০ অক্টোবর সুনামগঞ্জে এ বোর্ড গঠনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রথম ঘোষণার ৪৫ মাস পর প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের সদস্য রেখে 'হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড' গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যরাও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় এর কার্যক্রম গঠন পর্যন্তই সীমিত থেকে যায়। পরবর্তী সময়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২০০০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক রেজুলেশনের মাধ্যমে এ বোর্ডকে মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত অফিস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা 'হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড' পুনর্গঠনের উদ্যোগ না নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত অফিস হিসেবেই এ বোর্ডের একজন নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দিয়ে হাওর উন্নয়নের পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া ফাইলের স্তূপে চাপা দেওয়ার কাজটি হাওরবাসীকে আবারও হতাশ করে। 'হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন হয়েছে। এটাকে আরো শক্তিশালী করা হবে'_প্রধানমন্ত্রীর তাহিরপুরের এ ঘোষণায় আশ্বস্ত হয়েছে হাওরবাসী। তবে তাদের দাবি বোর্ডকে সক্রিয় ও কার্যকর রাখার জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ হিসেবে শক্তিশালী করে গঠন করা হোক। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু '৭৫ সালে ট্র্যাজেডির মাধ্যমে পটপরিবর্তন হলে এর কার্যক্রম থেমে যায়। পরে ১৯৭৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। '৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সামরিক সরকার এ বোর্ড বিলুপ্ত করে দেয়। আমরা আশা করব, ২০০৮ সালের ৬ ও ৭ মার্চ ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হাওর সম্মেলনে প্রস্তুতকৃত মহাপরিকল্পনা ও হাওর ঘোষণানুযায়ী হাওর অঞ্চলের প্রতিটি জেলায় হাওর উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনসহ প্রধান কার্যালয় সুবিধাজনক জায়গায় স্থাপন করা হবে_যা হবে হাওর অঞ্চলের সব উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু।
আখলাক হুসেইন খান খেলু
আখলাক হুসেইন খান খেলু
No comments