পবিত্র কোরআনের আলো-খ্রিস্টানদের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত
৬০. আলহাক্বু মির্ রাবি্বকা ফালা-তাকুম্ মিনাল মুমতারীন। ৬১. ফামান হা-জ্জাকা ফীহি মিম্ বা'দি মা- জা-আকা মিনাল ই'লমি ফাক্বুল তাআ'লাও নাদ্উ' আব্না-আনা- ওয়া আব্না-আকুম ওয়া নিছা-আনা- ওয়া নিছা-আকুম ওয়া আনফুছানা ওয়া আনফুছাকুম; ছুম্মা নাবতাহিল ফানাজআ'ল্ লা'নাতাল্লাহি আ'লাল কা-যিবীন।
৬২. ইন্না হা-যা লাহুওয়াল ক্বাসাসুল হাক্কু; ওয়ামা- মিন ইলা-হিন ইল্লাল্লা-হ; ওয়া ইন্নাল্লাহা লাহুওয়াল আ'যীযুল হাকীম।
৬৩. ফাইন তাওয়াল্লাও ফাইন্নাল্লা-হা আ'লীমুম্ বিলমুফছিদীন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬০-৬৩]
অনুবাদ
৬০. সত্য এসেছে তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে। (কারণ তোমাদের প্রভুই সত্য)। অতঃপর তোমরা কখনো সেসব দলে শামিল হয়ো না, যারা সত্যের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে।
৬১. (হে নবী!) যারা আপনার সঙ্গে তর্ক করতে চায় আল্লাহর কাছ থেকে সঠিক জ্ঞান আসার পরও, তাদের আপনি বলে দিন, এসো, আমরা আমাদের সন্তানদের ডাকি, তোমরাও তোমাদের সন্তানদের ডাকো, আমরা আমাদের নারীদের ডাকি, তোমরাও তোমাদের নারীদের ডাকো, আর আমরা নিজেরা এবং তোমরা নিজেরা সবাই মিলে একত্রে জড়ো হই। এরপর আমরা বিনীতভাবে প্রার্থনা জানাই এই মর্মে, যে মিথ্যাবাদী তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।
৬২. নিশ্চিত জেনে রেখো, এটা হচ্ছে সত্যিকার কাহিনী। আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা পরম ক্ষমতাশালী ও প্রজ্ঞাময়।
৬৩. অতঃপর তারা যদি এ চ্যালেঞ্জ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তারা জেনে রাখুক আল্লাহ কলহ সৃষ্টিকারীদের চেনেন।
ব্যাখ্যা
৬১ নম্বর আয়াতের শানেনুজুল এ রকম : রাসুল (সা.) মদিনা থেকে নাজরানের খ্রিস্টানদের ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বার্তাবাহক পাঠালেন। বার্তায় বলা হলো, আপনারা হয় ইসলাম গ্রহণ করুন অথবা জিজিয়া কর দিয়ে মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বীকার করুন, অন্যথায় যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু নাজরানের খ্রিস্টানরা ধর্ম সম্পর্কে বিতর্ক করার জন্য শুরাহবিল নামক ধর্মজাযকের নেতৃত্বে তাদের তিনজন আলেমকে পাঠালেন। সেখানে হজরত ঈসা (আ.) ও তাঁর ধর্মমত সম্পর্কে আলোচনা হলো। কিন্তু তারা রাসুল (সা.)-এর কোনো দলিল-প্রমাণ বা যুক্তিই মানলেন না। তখন রাসুল (সা.) তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন বা কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তা ভাবছিলেন। এ অবস্থায় এ আয়াতটি নাজিল হয়। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-কে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দিকে না গিয়ে ধর্মীয় সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়ার পথনির্দেশ দেন। অর্থাৎ এখানে রাসুল (সা.)-কে যুক্তি-তর্ক, চাপ প্রয়োগ বা যুদ্ধের দিকে যাওয়ার নির্দেশ না দিয়ে আল্লাহর হাতে বিষয়টি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত হতে এবং প্রতিপক্ষকে আহ্বান জানাতে নির্দেশ দেন। বিষয়টির ফায়সালা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থাটা ছিল এ রকম_রাসুল তাদের বললেন, আপনারা যেহেতু আমার যুক্তি প্রমাণ মানছেন না এবং সত্যকে কবুল করতে রাজি হচ্ছেন না। সুতরাং আসুন, আমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে একটা মোনাজাত করি। এই মোনাজাতে আমরা আমাদের সন্তানসন্ততি এবং নারীদের সমবেত করব, আপনারাও আপনাদের সন্তানসন্ততি ও নারীদের সমবেত করবেন। সেখানে আমরা আল্লাহর কাছে বলব, 'হে প্রভু, তুমি মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণকারীদের ধ্বংস করো।' এতে শুরাহবিল ও তাঁর সঙ্গী খ্রিস্টান আলেমরা ঘাবড়ে গেল। কারণ তারা জানত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) সত্য নবী। নবীর সঙ্গে এ রকম মোবাহালায় শামিল হলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। এটা তারা বুঝতে পারল। অতঃপর তারা রাসুলের সঙ্গে আপসে সম্মত হলো। তারা মুসলমানদের জিজিয়া কর দিয়ে সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৬৩. ফাইন তাওয়াল্লাও ফাইন্নাল্লা-হা আ'লীমুম্ বিলমুফছিদীন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬০-৬৩]
অনুবাদ
৬০. সত্য এসেছে তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে। (কারণ তোমাদের প্রভুই সত্য)। অতঃপর তোমরা কখনো সেসব দলে শামিল হয়ো না, যারা সত্যের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে।
৬১. (হে নবী!) যারা আপনার সঙ্গে তর্ক করতে চায় আল্লাহর কাছ থেকে সঠিক জ্ঞান আসার পরও, তাদের আপনি বলে দিন, এসো, আমরা আমাদের সন্তানদের ডাকি, তোমরাও তোমাদের সন্তানদের ডাকো, আমরা আমাদের নারীদের ডাকি, তোমরাও তোমাদের নারীদের ডাকো, আর আমরা নিজেরা এবং তোমরা নিজেরা সবাই মিলে একত্রে জড়ো হই। এরপর আমরা বিনীতভাবে প্রার্থনা জানাই এই মর্মে, যে মিথ্যাবাদী তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।
৬২. নিশ্চিত জেনে রেখো, এটা হচ্ছে সত্যিকার কাহিনী। আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা পরম ক্ষমতাশালী ও প্রজ্ঞাময়।
৬৩. অতঃপর তারা যদি এ চ্যালেঞ্জ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তারা জেনে রাখুক আল্লাহ কলহ সৃষ্টিকারীদের চেনেন।
ব্যাখ্যা
৬১ নম্বর আয়াতের শানেনুজুল এ রকম : রাসুল (সা.) মদিনা থেকে নাজরানের খ্রিস্টানদের ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বার্তাবাহক পাঠালেন। বার্তায় বলা হলো, আপনারা হয় ইসলাম গ্রহণ করুন অথবা জিজিয়া কর দিয়ে মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বীকার করুন, অন্যথায় যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু নাজরানের খ্রিস্টানরা ধর্ম সম্পর্কে বিতর্ক করার জন্য শুরাহবিল নামক ধর্মজাযকের নেতৃত্বে তাদের তিনজন আলেমকে পাঠালেন। সেখানে হজরত ঈসা (আ.) ও তাঁর ধর্মমত সম্পর্কে আলোচনা হলো। কিন্তু তারা রাসুল (সা.)-এর কোনো দলিল-প্রমাণ বা যুক্তিই মানলেন না। তখন রাসুল (সা.) তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন বা কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তা ভাবছিলেন। এ অবস্থায় এ আয়াতটি নাজিল হয়। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-কে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দিকে না গিয়ে ধর্মীয় সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়ার পথনির্দেশ দেন। অর্থাৎ এখানে রাসুল (সা.)-কে যুক্তি-তর্ক, চাপ প্রয়োগ বা যুদ্ধের দিকে যাওয়ার নির্দেশ না দিয়ে আল্লাহর হাতে বিষয়টি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত হতে এবং প্রতিপক্ষকে আহ্বান জানাতে নির্দেশ দেন। বিষয়টির ফায়সালা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থাটা ছিল এ রকম_রাসুল তাদের বললেন, আপনারা যেহেতু আমার যুক্তি প্রমাণ মানছেন না এবং সত্যকে কবুল করতে রাজি হচ্ছেন না। সুতরাং আসুন, আমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে একটা মোনাজাত করি। এই মোনাজাতে আমরা আমাদের সন্তানসন্ততি এবং নারীদের সমবেত করব, আপনারাও আপনাদের সন্তানসন্ততি ও নারীদের সমবেত করবেন। সেখানে আমরা আল্লাহর কাছে বলব, 'হে প্রভু, তুমি মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণকারীদের ধ্বংস করো।' এতে শুরাহবিল ও তাঁর সঙ্গী খ্রিস্টান আলেমরা ঘাবড়ে গেল। কারণ তারা জানত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) সত্য নবী। নবীর সঙ্গে এ রকম মোবাহালায় শামিল হলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। এটা তারা বুঝতে পারল। অতঃপর তারা রাসুলের সঙ্গে আপসে সম্মত হলো। তারা মুসলমানদের জিজিয়া কর দিয়ে সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments