ডেঙ্গু জ্বর: ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ কতটা আছে by রাকিব হাসনাত
স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার
পর ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
সেই নোটিশের পর আইনি দিক
থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া বা দেয়ার ব্যাপারে অগ্রগতি না হলেও এর জের ধরে তার
বাসায় গিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যক্রম জোরদারের অঙ্গীকার করে এসেছেন
মেয়র সাঈদ খোকন।
মিস্টার ইসলাম বলছেন পরে উচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত
হয়েই ডেঙ্গুর বিষয়ে রুল জারি করায় তিনি আর আইনি পথে অগ্রসর হননি তবে
নোটিশটি এখনো প্রত্যাহারও করে নেননি তিনি।
"আমার স্ত্রী ডেঙ্গু রোগে
আক্রান্ত হওয়ার পর ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ দিয়েছিলাম। এটা
ছিলো প্রতিবাদস্বরূপ। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট যেহেতু স্বত:প্রণোদিত হয়ে রুল
দিয়েছেন তাই আমি এর পার্ট হিসেবেই পর্যবেক্ষণ করছি। দেখি কি পদক্ষেপ নেয়
সিটি কর্পোরেশন"।
তিনি বলেন আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে ব্যর্থতার কারণেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
মিস্টার
ইসলামের স্ত্রীর মতো প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ এবার এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে
আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন বলে আজই তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ঢাকার ৪১ টি হাসপাতালে এখনো ভর্তি আছে ৩ হাজার ২৬৮ জন রোগী।
ঢাকার একটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে |
অধিদফতরের
হেলথ ইমার্জেন্সী অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বলছে রোগতত্ত্ব, রোগ
নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আর আইইডিসিআরকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে
১৬৯টি মৃত্যুর তথ্য দেয়া হলেও তারা এর মধ্যে ৮০টি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা
করে ৪৭টি মৃত্যুর ঘটনা ডেঙ্গু জনিত বলে নিশ্চিত করেছে।
আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বলছেন তিনি মনে করেন যাদের পরিবারের সদস্য বা
প্রিয়জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তারা চাইলে ক্ষতিপূরণের দাবি
করতে পারেন।
"আমাদের দেশে টর্ট আইন আছে, যদিও আইনটি প্রায় মৃত।
তারপরেও এ আইনে রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সুযোগ আছে। তবে বিষয় হলো
ক্ষতিপূরণ দিতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে কিন্তু রাষ্ট্র কতজনকে সেটি দেবে।
কিন্তু ক্ষতিপূরণ চাওয়ার অধিকার আছে এবং তার জন্য সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত
যাওয়ার সুযোগ আছে"।
তিনি বলেন সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের যে ক্ষতিপূরণের মামলা হয়েছে সেগুলো টর্ট আইনের আওতাতেই হয়েছে।
মিস্টার
ইসলামের সঙ্গে একমত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আফরোজা আক্তারও। তিনি বলছেন
সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার দায়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের যে ভোগান্তি
হলো সেটা তুলে ধরে ক্ষতিগ্রস্তরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আইনি প্রতিকার বা
ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন।
"যদি সিটি কর্পোরেশন সচেতন হলে এই রোগ বা এই
পতঙ্গ এভাবে ছড়াতোনা। যেহেতু পর্যাপ্ত মশার ঔষধ দেয়া হয়নি সর্বত্র এবং
কর্পোরেশন যেহেতু দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেনি -এটি তুলে ধরে এক ব্যক্তি
রিট করে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবে"।
কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চাওয়ার নজির খুব একটা নেই।
তবে
ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া বা না দেয়া নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কেউ কোনো
মন্তব্য করতে রাজী হননি। কর্মকর্তারা শুধু বলছেন ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস
মশা দমনে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে, এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকরা ধৈর্য্যসহকারে
তাদের সহযোগিতা করবেন-এমনটিই প্রত্যাশা করছেন তারা।
সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতায় ক্ষুব্ধ অনেকেই |
No comments