ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য যা এখন সবচেয়ে বড় হুমকি by মুকুল কেসাবন
গত
মে মাসে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপির) বিপুল বিজয়ে মনোবল হারানো এক বন্ধু
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল যে নরেন্দ্র মোদি এখন ‘বর্ণ নিশ্চিহ্ন’ করার কথা লিখে
দিতে পারেন। উত্তর প্রদেশে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের একত্রিত হওয়া সত্ত্বেও
উত্তর প্রদেশের মোদির দল বিপুল বিজয় পাওয়ায় তিনি এমন মন্তব্য করলেন।
নির্বাচনের প্রাক্কালে এই জোট ভারতের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে যে
কথা বলা হয়েছিল, তাতে আমি কেবল মাথা নাড়াতে পারি।
২০১৯ সালের নির্বাচনে জয় পাওয়া গেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদের নামে। ২০১৪ সালে বিজেপির মধ্যে কিছু কৌশলগত দ্ব্যর্থবোধকতা থাকলেও এবার তাদের মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ ছিল। আগের চেয়েও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে বিজেপি কিছু যৌক্তিক কারণেই বিশ্বাস করবে যে হিন্দু রাষ্ট্রের ব্যাপারে দলটির ভিশনের প্রতি জনগণ সমর্থন দিয়েছে। মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে বিজেপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো প্রকাশ্যভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা স্কলার আসিম আলী সম্প্রতি ‘একে হিন্দু রাষ্ট্র বললে কী হবে’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র লিখেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে মুসলিম ও অন্যান্য হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা করেও খালাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ভারততো কার্যত হিন্দু রাষ্ট্র হয়েই গেছে। মিডিয়ার অপরাধে সহযোগিতা করা, সহিংস ভীতি প্রদর্শনের কার্যক্রম, জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন অভিযান, জনজীবনে মুসলিমদের প্রান্তিককরণ ও দানব হিসেবে তুলে ধরা, মুসলিমদের দ্বিধা (এমনকি অনেক সময় নাম বলতেও) ইত্যাদি কারণে আলীর মতে এটি একটি হিন্দু রাষ্ট্র, যেখানে মুসলিমরা হলো ভীত-সন্ত্রস্ত্র দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। তিনি বলেন, উদার বুদ্ধিজীবী মহলের কারণে ভারত এখনো হয়তো হিন্দু রাষ্ট্র হয়নি, তবে হিন্দুত্ববাদী অগ্রসেনাদের রাস্তায় রাস্তায় টহল দেয়ার ফলে এটি হিন্দু রাষ্ট্রই।
যে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অদিত্যনাম, সেখানে এই যুক্তি খণ্ডন করা কঠিন। আলীর প্রশ্নের জবাব না হতেই হবে।
কারণ বর্তমানে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করা মানে হলো হিন্দু রাষ্ট্রকে সম্ভাব্য দানব হিসেবে তুলে ধরা। মোদির মুসলিমমুক্ত রাজনীতি সৃষ্টির সফলতা বিবেচনায় নিলে এবং খুনি ও তাণ্ডবকারীদের অবাধে ঘোরাফেরা করার প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক আবরণে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমরা তা অস্বীকার করব। কারণ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের মতো হিন্দু রাষ্ট্রেরও নিজেকে সুসংহত হতে প্রয়োজন বিধিবিধান, কাঠামো ও ব্যবস্থার।
প্রথম ৫ বছরে বিজেপির সবচেয়ে বড় একক অর্জন হলো তার প্যান-ভারত উপস্থিতি সুসংহত করা এবং সেইসাথে তার সবচেয়ে বড় আদর্শগত প্রতিশ্রুতিবদ্ধতায় অটল থাকা তথা মুসলিমদের প্রান্তিক করা। মুসলিমদের কোণঠাসা করার কাজটি করা হয়েছে গোরক্ষকদের দিয়ে প্রহার করার মধ্য দিয়ে। এ ব্যাপারে তার একটি কৃতিত্ব হলো নিহত ব্যক্তিদের গরুচোর হিসেবে প্রচার করে গোরক্ষকদের তাণ্ডবকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে তুলে ধরা। এমনকি নীতিশ কুমারকে পর্যন্ত মোদি তার দলে টানতে পেরেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নীতিশ এনডিএ ত্যাগ করেছিলেন মোদির উত্তরণের প্রতিবাদে। সেই তিনিই ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর দুই উপজাতীয় ও এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যাকে গরুচুরির ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেন।
অবশ্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরা হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। আসলে তাদের লক্ষ্য এসবের মাধ্যমে একটি একক হিন্দু জাতিকে হিন্দু সমাজের প্রতিটি অংশে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা।
মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের এজেন্ডা হলো বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা। সঙ্ঘ পরিবারের মূল বিষয়ই হলো সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা। সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় ভারতে কাজটি করা কিছুটা জটিল কারণ পার্লামেন্টে এর জন্য বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হয়, সুপ্রিম কোর্টের সম্মতি থাকতে হয়।
এই কাজে তারা এক ধাপ এগিয়ে গেছে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের মাধ্যমে। এটি নির্বাচনের আগে রাজ্যসভায় নয়, লোকসভায় পাস হয়েছিল। এটি করা হয়েছে নাগরিকত্বের জন্য ধর্মীয় পরীক্ষার জন্য। এতে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম অভিবাসীদের বিশেষ সুবিধায় নাগরিকত্ব প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য আরোপ করা হয়েছে।
এটি আসলে মুসলিমদের নাগরিকত্বের বৈধতার অবসান ঘটানোর প্রয়াস। এ কারণে মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও এবং সেখানে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হলেও দেশটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আবার পাশে সীমান্ত না থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বরং মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা যৌক্তিক হতো, কারণ সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চলছে।
এদিকে অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতের প্রতিটি স্থানে এনআরসি বাস্তবায়ন করবেন। এর ফলে কী হতে পারে, চিন্তা করে দেখুন। একটি হবে প্রতিটি নাগরিককে তার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। অর্থাৎ এতে সব নাগরিককেই অপরাধী বিবেচনা করা হচ্ছে, যতক্ষণ না তারা নিজেদের নাগরিক প্রমাণ করতে পারেন।
অমিত শাহ যদি তার প্রকল্পে সফল হতে পারেন তবে পুরো ভারতজুড়ে শুরু হবে ইনকুইজিশন। এ কারণে যারাই প্রজাতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের প্রত্যেককে এই ভয়ঙ্কর প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার।
২০১৯ সালের নির্বাচনে জয় পাওয়া গেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদের নামে। ২০১৪ সালে বিজেপির মধ্যে কিছু কৌশলগত দ্ব্যর্থবোধকতা থাকলেও এবার তাদের মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ ছিল। আগের চেয়েও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে বিজেপি কিছু যৌক্তিক কারণেই বিশ্বাস করবে যে হিন্দু রাষ্ট্রের ব্যাপারে দলটির ভিশনের প্রতি জনগণ সমর্থন দিয়েছে। মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে বিজেপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো প্রকাশ্যভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা স্কলার আসিম আলী সম্প্রতি ‘একে হিন্দু রাষ্ট্র বললে কী হবে’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র লিখেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে মুসলিম ও অন্যান্য হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা করেও খালাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ভারততো কার্যত হিন্দু রাষ্ট্র হয়েই গেছে। মিডিয়ার অপরাধে সহযোগিতা করা, সহিংস ভীতি প্রদর্শনের কার্যক্রম, জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন অভিযান, জনজীবনে মুসলিমদের প্রান্তিককরণ ও দানব হিসেবে তুলে ধরা, মুসলিমদের দ্বিধা (এমনকি অনেক সময় নাম বলতেও) ইত্যাদি কারণে আলীর মতে এটি একটি হিন্দু রাষ্ট্র, যেখানে মুসলিমরা হলো ভীত-সন্ত্রস্ত্র দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। তিনি বলেন, উদার বুদ্ধিজীবী মহলের কারণে ভারত এখনো হয়তো হিন্দু রাষ্ট্র হয়নি, তবে হিন্দুত্ববাদী অগ্রসেনাদের রাস্তায় রাস্তায় টহল দেয়ার ফলে এটি হিন্দু রাষ্ট্রই।
যে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অদিত্যনাম, সেখানে এই যুক্তি খণ্ডন করা কঠিন। আলীর প্রশ্নের জবাব না হতেই হবে।
কারণ বর্তমানে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করা মানে হলো হিন্দু রাষ্ট্রকে সম্ভাব্য দানব হিসেবে তুলে ধরা। মোদির মুসলিমমুক্ত রাজনীতি সৃষ্টির সফলতা বিবেচনায় নিলে এবং খুনি ও তাণ্ডবকারীদের অবাধে ঘোরাফেরা করার প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক আবরণে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমরা তা অস্বীকার করব। কারণ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের মতো হিন্দু রাষ্ট্রেরও নিজেকে সুসংহত হতে প্রয়োজন বিধিবিধান, কাঠামো ও ব্যবস্থার।
প্রথম ৫ বছরে বিজেপির সবচেয়ে বড় একক অর্জন হলো তার প্যান-ভারত উপস্থিতি সুসংহত করা এবং সেইসাথে তার সবচেয়ে বড় আদর্শগত প্রতিশ্রুতিবদ্ধতায় অটল থাকা তথা মুসলিমদের প্রান্তিক করা। মুসলিমদের কোণঠাসা করার কাজটি করা হয়েছে গোরক্ষকদের দিয়ে প্রহার করার মধ্য দিয়ে। এ ব্যাপারে তার একটি কৃতিত্ব হলো নিহত ব্যক্তিদের গরুচোর হিসেবে প্রচার করে গোরক্ষকদের তাণ্ডবকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে তুলে ধরা। এমনকি নীতিশ কুমারকে পর্যন্ত মোদি তার দলে টানতে পেরেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নীতিশ এনডিএ ত্যাগ করেছিলেন মোদির উত্তরণের প্রতিবাদে। সেই তিনিই ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর দুই উপজাতীয় ও এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যাকে গরুচুরির ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেন।
অবশ্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরা হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। আসলে তাদের লক্ষ্য এসবের মাধ্যমে একটি একক হিন্দু জাতিকে হিন্দু সমাজের প্রতিটি অংশে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা।
মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের এজেন্ডা হলো বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা। সঙ্ঘ পরিবারের মূল বিষয়ই হলো সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা। সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় ভারতে কাজটি করা কিছুটা জটিল কারণ পার্লামেন্টে এর জন্য বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হয়, সুপ্রিম কোর্টের সম্মতি থাকতে হয়।
এই কাজে তারা এক ধাপ এগিয়ে গেছে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের মাধ্যমে। এটি নির্বাচনের আগে রাজ্যসভায় নয়, লোকসভায় পাস হয়েছিল। এটি করা হয়েছে নাগরিকত্বের জন্য ধর্মীয় পরীক্ষার জন্য। এতে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম অভিবাসীদের বিশেষ সুবিধায় নাগরিকত্ব প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য আরোপ করা হয়েছে।
এটি আসলে মুসলিমদের নাগরিকত্বের বৈধতার অবসান ঘটানোর প্রয়াস। এ কারণে মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও এবং সেখানে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হলেও দেশটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আবার পাশে সীমান্ত না থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বরং মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা যৌক্তিক হতো, কারণ সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চলছে।
এদিকে অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতের প্রতিটি স্থানে এনআরসি বাস্তবায়ন করবেন। এর ফলে কী হতে পারে, চিন্তা করে দেখুন। একটি হবে প্রতিটি নাগরিককে তার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। অর্থাৎ এতে সব নাগরিককেই অপরাধী বিবেচনা করা হচ্ছে, যতক্ষণ না তারা নিজেদের নাগরিক প্রমাণ করতে পারেন।
অমিত শাহ যদি তার প্রকল্পে সফল হতে পারেন তবে পুরো ভারতজুড়ে শুরু হবে ইনকুইজিশন। এ কারণে যারাই প্রজাতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের প্রত্যেককে এই ভয়ঙ্কর প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার।
No comments