ইরাক শেষ, এবার উত্তর কোরিয়া? by শে-উং কু

ওয়াশিংটন পোস্ট ৩০ জানুয়ারি একটা বোমা ফাটিয়েছে। ওই দিন তারা বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যাঁর জন্য একরকম ঠিক হয়েই ছিল, সেই প্রভাবশালী কূটনীতিক ভিক্টর চাকে হোয়াইট হাউস ওই পদে নিতে অস্বীকার করেছে। উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকে সব সময় কট্টর সমর্থন দিয়ে আসার সুবাদে ওয়াশিংটন ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক মহলে ভিক্টর চা খুবই পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। সাবেক বুশ প্রশাসনের আমলে তিনি ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্য বামপন্থী সরকারের লোকজনের কাছে ভিক্টর চা মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে খুব আদর্শ কোনো প্রার্থী ছিলেন, এমনটা বলা যাবে না। তিনি বর্তমানে দুই কোরিয়ার সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ব্যাপারে খুব দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে শোনা যায়। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে চা অবস্থান নিয়েছেন। আর এ কারণেই তাঁকে নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা থেকে হোয়াইট হাউস সরে এসেছে। তার মানে, ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যে মাত্রার কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে আসছেন, শেষ পর্যন্ত হয়তো তিনি তার চেয়ে বেশি কঠোরের দিকে যেতে পারেন। গদিতে বসার পর থেকে এ পর্যন্ত ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে ‘পাগলা কুকুর’, ‘পুঁচকে রকেট মানব’ থেকে শুরু করে ‘ঢ্যাপসা বামন’-কত কিছু বলেছেন! জবাবে পিয়ংইয়ংও ট্রাম্পকে ভর্ৎসনা করতে একটুও ছাড় দেয়নি। ট্রাম্প টুইটারে নানা বিদ্রূপাত্মক কথা বলার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়াকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। তিনি উত্তর কোরিয়াকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করতে চেয়েছেন এবং পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে আলোচনাকে ‘সময় নষ্ট’ করা বলে আখ্যায়িত করেছেন। উত্তর কোরিয়ার আশপাশে যুদ্ধজাহাজ ও বোমারু বিমান মোতায়েন করে আতঙ্ক ছড়াতে চেয়েছেন। গত আগস্ট ও ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিশাল সামরিক মহড়া দিয়েছে। ২০১৭ সালজুড়ে উত্তর কোরিয়া বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এটি ট্রাম্প প্রশাসনকে আক্রমণাত্মক আচরণ করতে উসকানি দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে একটি হলো পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। উত্তর কোরিয়ার দাবি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেও এটি আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে। ট্রাম্প প্রথম দিকে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। তবে এখন মনে হচ্ছে তিনি পরবর্তী ধাপে পা রাখতে যাচ্ছেন। গত ১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে চমকে দিয়ে কিম জং-উন ঘোষণা দেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় পিয়ংচ্যাং অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার একটি ক্রীড়া প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা তাঁরা বিবেচনা করছেন। এরপর ৯ জানুয়ারি ডি-মিলিটারাইজড জোনে এটি নিয়ে দুই কোরিয়ার প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন এবং উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিরা খেলায় অংশ নেবেন বলে ঠিক হয়। তখন থেকেই কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আলোচনাকে ট্রাম্প মিন মিন করে ‘ভালো উদ্যোগ’ বলে অভিহিত করলেও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এই অগ্রগতির খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তার পক্ষে প্রচারের অংশ হিসেবে অলিম্পিককে ‘ছিনতাই’ করতে চাইছে। ভিক্টর চা দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে যেদিন খবর বের হয়, সেদিনই ট্রাম্প কংগ্রেসে তাঁর প্রথম স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণ দেন। সেখানে তিনি উত্তর কোরিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। ইরাকে হামলার বৈধতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় জর্জ বুশ ২০০০ সালে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে ট্রাম্পের এই ভাষণের সাযুজ্য পেয়েছেন বিশ্লেষকেরা। বুশের মতো ট্রাম্পও উত্তর কোরিয়ার সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও পুরো বিশ্বের জন্য উত্তর কোরিয়া কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এবং যেভাবেই হোক ওই সরকারকে কেন ফেলে দিতে হবে, তা নিয়ে তিনি অনেক কথা বলেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার ওপর কীভাবে হামলা চালানো যেতে পারে, সেই পরিকল্পনা প্রতিবেদন পেন্টাগনের কাছে চেয়েছে হোয়াইট হাউস। ট্রাম্প সত্যি সত্যি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে বসতে পারেন, এমন আশঙ্কায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটি দিতে গড়িমসি করছে। ওয়াশিংটনের অনেকেই মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যদি ধরেও নিই ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে ভয় দেখানোর জন্য সামরিক হামলার জন্য হম্বিতম্বি করছেন, আসলে হামলা চালাবেন না। কিন্তু এত দিনে তাঁর যে চারিত্রিক পরিচয় আমরা পেয়েছি, তাতে তিনি যে সত্যি সত্যি হামলা চালাবেন না, সেই ভরসায় কি থাকা যায়?
আল-জাজিরা থেকে নেওয়া। অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
শে-উং কু দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজবিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘কোরিয়া এক্সপোজ’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক।

No comments

Powered by Blogger.