বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি by সালাহউদ্দিন বাবর
বাংলাদেশের
একুশতম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান রাষ্ট্রপতি
আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ
নিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি পদে তার মেয়াদ শেষ হবে ২৩ এপ্রিল। ২০১৩ সালে
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালে তিনি
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধানে রয়েছে ‘রাষ্ট্রপতি পদে মেয়াদ অবসানের
কারণে ওই পদ শূন্য হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০
দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’
সংবিধানের এই
নির্দেশনার আলোকেই এখন সে নির্বাচন হচ্ছে। বাংলাদেশের আইন বিভাগ, শাসন
বিভাগ ও বিচার বিভাগের সব শাখার আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র
বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ
স্থগিত, কমানো বা দণ্ডিতকে ক্ষমা করার অধিকার রয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি
জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সংসদীয় গণতন্ত্র ১৯৯১
সালে চালু হওয়ার আগে অবশ্য রাষ্ট্রপতি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন।
তখন একই সাথে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন
রাষ্ট্রপতি। সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরকারপ্রধান নন। রাষ্ট্রপতি পদের
মেয়াদকাল পাঁচ বছর। প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনে
উদ্বোধনী ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনের প্রথম উদ্বোধনী
ভাষণটিও তিনিই দেন। তার এই ভাষণটি প্রকৃতপক্ষে নতুন বছরে সরকারি নীতির
রূপরেখা। এই ভাষণ নিয়ে সংসদে সরকারি এবং বিরোধী দলের সদস্যরা বক্তব্য পেশ
করেন। সংসদে পাস হওয়া প্রতিটি বিল আইনে পরিণত হতে হলে রাষ্ট্রপতির অনুমতি
লাগে। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করার পর তা আইনে পরিণত হয়।
রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন প্রক্রিয়া
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত ও সংসদীয় উভয় পদ্ধতি পরিচালিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন পদ্ধতি সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে দ্বিতীয় তফসিল অনুসারে রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের গোপান ভোটে নির্বাচিত হতেন। পরে আওয়ামী লীগ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করে। তাতে দেশে একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা কায়েমসহ প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান প্রবর্তিত হয়। সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে সংসদীয় পদ্ধতি চালু হলে পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। বর্তমানে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুসারে সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্যতা
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি পদে কাদের নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকবে তার বিবরণ রয়েছে : (ক) পঁয়ত্রিশ বছরের কম নন; অথবা (খ) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা না রাখেন; (গ) কখনো সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকেন।
পদের মেয়াদ
সংবিধানের ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী : রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন : তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। একাধিক্রমে হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি তার কার্যভার কালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না এবং কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতিরূপে তার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
রাষ্ট্রপতির শপথ বা প্রতিজ্ঞা
রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচাপতির (অথবা তার অনুপস্থিতিতে, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারক) উপস্থিতিতে শপথ নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি সংবিধান সংরক্ষণ এবং রক্ষায় নিম্নরূপ শপথ নেন। ‘আমি, সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি আইনানুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততায় সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; আমি সংবিধানের রক্ষণ সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব; এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব।’
নিয়োগের ক্ষমতা
রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত পদে নিযুক্ত করিতে পারেন : রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদিগকে নিয়োগ দেবেন। তবে শর্ত থাকে যে, তাদের সংখ্যার অন্যূন নয়- দশমাংশ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মনোনীত হতে পারবেন। সংবিধানের ৯৫ ধারা অনুসারে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করবেন। সংবিধানের ১১৮ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি রাষ্ট্রপতিকে অনুসরণ করতে হয়। সেটা হলো, সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, সেই সংসদীয় দলের যিনি নেতা নির্বাচিত হবেন, তাকেই রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানাতে হবে।
ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিশেষ অধিকার রয়েছে। সেই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো আদালত ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে।
আইনি ক্ষমতা
সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ কর্তৃক কোনো বিল গৃহীত হলে সম্মতির জন্য তা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো বিল পেশ করার পর ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দেবেন কিংবা অর্থবিল ব্যতীত অন্য কোনো বিলের ক্ষেত্রে বিলটি বা তার কোনো বিশেষ বিধান পুনঃবিবেচনার কিংবা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্দেশিত কোনো সংশোধনী বিবেচনার অনুরোধ জ্ঞাপন করে একটি বার্তাসহ রাষ্ট্রপতি বিলটি সংসদে ফেরত দিতে পারেন (রাষ্ট্রপতি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানের পর রাষ্ট্রপতি বিলটি সম্মতি দান করেছেন বলে গণ্য হবে)। রাষ্ট্রপতি যদি বিলটি অনুরূপভাবে সংসদে ফেরত পাঠান, তাহলে সংসদ রাষ্ট্রপতির বার্তাসহ তা পুনর্বিবেচনা করবে; এবং সংশোধনীসহ বা সংশোধনী ব্যতিরেকে সংসদে পুনরায় বিলটি গ্রহণ করলে সম্মতির জন্য তা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপিত হবে এবং অনুরূপ উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি দেবেন (রাষ্ট্রপতি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানের পর রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি দান করেছেন বলে গণ্য হবে)। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে না থাকলে জরুরি ভিত্তিতে যদি কোনো বিধিবিধানের প্রয়োজন পড়ে তবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি এমন বিধি সম্বলিত বিধান অধ্যাদেশের মাধ্যমে জারি করতে পারেন। এই অস্থায়ী বিধান সংসদ অধিবেশন মিলিত হলে সেই বিধান বিবেচনার জন্য সংসদে উপস্থাপিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর
চ্যান্সেলর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি পদমর্যাদা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ এর ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রপতি এই পদে অধিষ্ঠিত। দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা নির্ধারিত হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনরা যাকে প্রার্থী করবেন তিনি হবেন। ইতোমধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে মোহাম্মদ আবদুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকবেন। আওয়ামী লীগ তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর কেউ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হননি। বিএনপির প্রথম আমলে দলের নেতা আবদুর রহমান বিশ্বাস ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয় গত ২৫ জানুয়ারি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীরা আজ ৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। ৭ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইয়ের পর ১০ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এর পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শুধু সংসদ সদস্যরাই প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করতে পারবেন। একেবারেই আলঙ্কারিক এই রাষ্ট্রপতির পদটির জন্য কাউকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। সংবিধানে ক্ষমতা সীমিত হলেও রাষ্ট্রপতি বহু ক্ষেত্রে নৈতিক অবস্থান নিতে পারেন। দলীয় প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন বটে। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর তিনি দলীয় অবস্থানে না থেকে গোটা দেশের সব মানুষের রাষ্ট্রপতির ভূমিকা পালনই তার নৈতিক অবস্থান হতে হবে। জাতির কোনো সংকটে সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতিকে দেখবেন না। বরং গোটা দেশের ঐক্যের স্থল হিসেবে দণ্ডায়মান হবেন। তিনি ন্যায় ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে পারলে রাষ্ট্রপতির পদটি সার্থক হবে। এমন ভূমিকা পালন করা অবশ্য কঠিন ব্যাপার। এতে তার দল এবং সরকার অসন্তুষ্ট হবে। এতে সরকারপ্রধানের সাথে রাষ্ট্রপ্রধানের দূরত্ব সৃষ্টির রয়েছে সম্ভাবনা। ইতোপূর্বে সাবেক দু’জন রাষ্ট্রপতির সাথে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি যখন ক্ষমতাসীন ছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে এবং পরে আওয়ামী লীগ আমলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের সাথে তাদের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছিল। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে এ কারণে পদ ত্যাগ করতে হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল। তিনি পদ ছেড়ে ছিলেন ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি। তিনি আওয়ামী লীগ প্রধান ছিলেন। দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন (অস্থায়ী) সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১২ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল।
রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন প্রক্রিয়া
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত ও সংসদীয় উভয় পদ্ধতি পরিচালিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন পদ্ধতি সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে দ্বিতীয় তফসিল অনুসারে রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের গোপান ভোটে নির্বাচিত হতেন। পরে আওয়ামী লীগ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করে। তাতে দেশে একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা কায়েমসহ প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান প্রবর্তিত হয়। সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে সংসদীয় পদ্ধতি চালু হলে পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। বর্তমানে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুসারে সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্যতা
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি পদে কাদের নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকবে তার বিবরণ রয়েছে : (ক) পঁয়ত্রিশ বছরের কম নন; অথবা (খ) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা না রাখেন; (গ) কখনো সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকেন।
পদের মেয়াদ
সংবিধানের ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী : রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন : তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। একাধিক্রমে হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি তার কার্যভার কালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না এবং কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতিরূপে তার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
রাষ্ট্রপতির শপথ বা প্রতিজ্ঞা
রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচাপতির (অথবা তার অনুপস্থিতিতে, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারক) উপস্থিতিতে শপথ নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি সংবিধান সংরক্ষণ এবং রক্ষায় নিম্নরূপ শপথ নেন। ‘আমি, সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি আইনানুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততায় সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; আমি সংবিধানের রক্ষণ সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব; এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব।’
নিয়োগের ক্ষমতা
রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত পদে নিযুক্ত করিতে পারেন : রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদিগকে নিয়োগ দেবেন। তবে শর্ত থাকে যে, তাদের সংখ্যার অন্যূন নয়- দশমাংশ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মনোনীত হতে পারবেন। সংবিধানের ৯৫ ধারা অনুসারে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করবেন। সংবিধানের ১১৮ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি রাষ্ট্রপতিকে অনুসরণ করতে হয়। সেটা হলো, সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, সেই সংসদীয় দলের যিনি নেতা নির্বাচিত হবেন, তাকেই রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানাতে হবে।
ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিশেষ অধিকার রয়েছে। সেই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো আদালত ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে।
আইনি ক্ষমতা
সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ কর্তৃক কোনো বিল গৃহীত হলে সম্মতির জন্য তা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো বিল পেশ করার পর ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দেবেন কিংবা অর্থবিল ব্যতীত অন্য কোনো বিলের ক্ষেত্রে বিলটি বা তার কোনো বিশেষ বিধান পুনঃবিবেচনার কিংবা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্দেশিত কোনো সংশোধনী বিবেচনার অনুরোধ জ্ঞাপন করে একটি বার্তাসহ রাষ্ট্রপতি বিলটি সংসদে ফেরত দিতে পারেন (রাষ্ট্রপতি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানের পর রাষ্ট্রপতি বিলটি সম্মতি দান করেছেন বলে গণ্য হবে)। রাষ্ট্রপতি যদি বিলটি অনুরূপভাবে সংসদে ফেরত পাঠান, তাহলে সংসদ রাষ্ট্রপতির বার্তাসহ তা পুনর্বিবেচনা করবে; এবং সংশোধনীসহ বা সংশোধনী ব্যতিরেকে সংসদে পুনরায় বিলটি গ্রহণ করলে সম্মতির জন্য তা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপিত হবে এবং অনুরূপ উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি দেবেন (রাষ্ট্রপতি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানের পর রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি দান করেছেন বলে গণ্য হবে)। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে না থাকলে জরুরি ভিত্তিতে যদি কোনো বিধিবিধানের প্রয়োজন পড়ে তবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি এমন বিধি সম্বলিত বিধান অধ্যাদেশের মাধ্যমে জারি করতে পারেন। এই অস্থায়ী বিধান সংসদ অধিবেশন মিলিত হলে সেই বিধান বিবেচনার জন্য সংসদে উপস্থাপিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর
চ্যান্সেলর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি পদমর্যাদা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ এর ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রপতি এই পদে অধিষ্ঠিত। দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা নির্ধারিত হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনরা যাকে প্রার্থী করবেন তিনি হবেন। ইতোমধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে মোহাম্মদ আবদুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকবেন। আওয়ামী লীগ তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর কেউ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হননি। বিএনপির প্রথম আমলে দলের নেতা আবদুর রহমান বিশ্বাস ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয় গত ২৫ জানুয়ারি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীরা আজ ৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। ৭ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইয়ের পর ১০ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এর পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শুধু সংসদ সদস্যরাই প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করতে পারবেন। একেবারেই আলঙ্কারিক এই রাষ্ট্রপতির পদটির জন্য কাউকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। সংবিধানে ক্ষমতা সীমিত হলেও রাষ্ট্রপতি বহু ক্ষেত্রে নৈতিক অবস্থান নিতে পারেন। দলীয় প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন বটে। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর তিনি দলীয় অবস্থানে না থেকে গোটা দেশের সব মানুষের রাষ্ট্রপতির ভূমিকা পালনই তার নৈতিক অবস্থান হতে হবে। জাতির কোনো সংকটে সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতিকে দেখবেন না। বরং গোটা দেশের ঐক্যের স্থল হিসেবে দণ্ডায়মান হবেন। তিনি ন্যায় ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে পারলে রাষ্ট্রপতির পদটি সার্থক হবে। এমন ভূমিকা পালন করা অবশ্য কঠিন ব্যাপার। এতে তার দল এবং সরকার অসন্তুষ্ট হবে। এতে সরকারপ্রধানের সাথে রাষ্ট্রপ্রধানের দূরত্ব সৃষ্টির রয়েছে সম্ভাবনা। ইতোপূর্বে সাবেক দু’জন রাষ্ট্রপতির সাথে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি যখন ক্ষমতাসীন ছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে এবং পরে আওয়ামী লীগ আমলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের সাথে তাদের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছিল। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে এ কারণে পদ ত্যাগ করতে হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল। তিনি পদ ছেড়ে ছিলেন ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি। তিনি আওয়ামী লীগ প্রধান ছিলেন। দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন (অস্থায়ী) সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১২ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল।
রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, তিনি
আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব
গ্রহণ করেন ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে। পদত্যাগ করেন ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর।
তিনি রাষ্ট্রে তৃতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। চতুর্থ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন
মোহাম্মদ উল্লাহ, ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর। আওয়ামী লীগের এই নেতা দায়িত্ব
থেকে অব্যাহতি নেন ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। ১৯৭৫ সালে দেশে একদলীয় ব্যবস্থা
কায়েম হয়, সংসদীয় ব্যবস্থা পাল্টে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা কায়েম
হয়। এ সময় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পঞ্চম রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্ধুু শেখ
মুজিবুর রহমান। একই বছর ১৫ আগস্ট তিনি নিহত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আওয়ামী
লীগ নেতা খন্দকার মুশতাক আহমদ ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি
১৮৭৫ সালের ৬ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হন। সপ্তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ
করেছিলেন বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। তিনি ৭৫ সালের ৬ নভেম্বর
রাষ্ট্রপতির শপথ নেন এবং ১৯৭৫ সালের ২১ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি ১৯৭৫
সালের ৬ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হন। সপ্তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ
করেছিলেন বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। তিনি ’৭৫ সালের ৬ নভেম্বর
রাষ্ট্রপতির শপথ নেন এবং ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল পদত্যাগ করন। জিয়াউর রহমান
দেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ করেন ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল। ১৯৮১ সালের
৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যদের হাতে তিনি নিহত হন। তিনি বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান ছিলেন। বিচারপতি আবদুস সাত্তার দেশের নবম
রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ৩০ মে ১৯৮১ সালে শপথ গ্রহণ করেন। পরে তিনি সামরিক
বাহিনী কর্তৃক পদচ্যুত হন ১৯৮২ সালের ২৪ মে। তিনি বিএনপির নেতা ছিলেন।
তৎকালীন সেনাপ্রধান লে. জেনারেল এইচএম এরশাদ বিচারপতি সাত্তারকে
ক্ষমতাচ্যুত করে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নিজে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালের
২৭ মার্চ পদত্যাগ করেন। একাদশততম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন বিচারপতি আফম আহসান
উদ্দিন চৌধুরী, ওই দিন তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। ১৯৮৩ সালের ১১
ডিসেম্বর তিনি পদ হারান। এরপর এইচএম এরশাদ দ্বাদশতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ
নেন। জাতীয় পার্টির এই নেতা ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।
দেশের ত্রয়োদশতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ ১৯৯০ সালের ৬
ডিসেম্বর শপথ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ৯ অক্টোবর ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব
পালন করেন। এরপর দেশে পুনরায় সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে
বাংলাদেশের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেন আবদুর রহমান বিশ্বাস। তার
পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বে আসনে বিচাপতি
সাহাবুদ্দীন আহমেদ। তার মেয়াদ শেষ হয় ১৪ নভেম্বর ২০০১ সালে। দেশের ১৬তম
রাষ্ট্রপতি হিসেবে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৪ নভেম্বর ২০০১ সালে শপথবাক্য
পাঠ করেন। ২০০২ সালের ২১ জুন তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি বিএনপির নেতা ছিলেন।
দেশে ১৭তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।
তিনি দায়িত্ব নেন ২০০২ সালের ২১ জুন, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান ২০০২ সালের
৬ সেপ্টেম্বর। তিনি বিএনপির নেতা। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ২০০২ সালের ৬
সেপ্টেম্বর নির্দলীয় হিসেবে দেশের ১৮তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান। ২০০৯
সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে তিনি পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলের
প্রবীণ নেতা জিল্লুর রহমান ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি হিসেবে
শপথগ্রহণ করেন। তার মৃত্যু ঘটলে পদটি শূন্য হয়। আওয়ামী লীগের অপর প্রবীণ
নেতা আবদুল হামিদ জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ১৪ মার্চ ভারপ্রাপ্ত
রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল নির্বাচিত
২০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। এখনো তার সেই মেয়াদ চলছে। ইতোমধ্যে
গত ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ২১তম প্রেসিডেন্ট পদে
নির্বাচন করার জন্য আবদুল হামিদকে মনোনয়ন দিয়েছে।
No comments