একুশ শতকে সম্প্রসারিত গভীর সম্পর্ক by আঁলা বেরসে
সুইজারল্যান্ড
ও বাংলাদেশ কয়েক দশক ধরে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আসছে। বহু বছর ধরে উন্নয়ন
সহযোগিতা ছিল এই সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু। গুরুত্বপূর্ণ এই উন্নয়ন
সহযোগিতার পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও
সম্প্রসারিত করা এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দুই দেশের বাণিজ্য, সংস্কৃতি
এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতার দিকে মনোযোগ ক্রমেই বাড়ছে।
আমি আশা করি, প্রথম
সুইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে আমার এই সফরে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান
সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ হবে এবং এ বিষয়ে আমি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সঙ্গে
মতবিনিময়ের জন্য আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি। সুইজারল্যান্ড এবং বাংলাদেশ
তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে পুনরুজ্জীবিত করছে। আমরা অতীতের দিকে ফিরে
তাকালে দেখতে পাব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে
‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমরা
দুদেশের বর্তমান সাদৃশ্যগুলোর দিকেও দৃষ্টি দিতে পারি, যেমন আমাদের উভয়
দেশই আজ ভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানে থেকেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের শিকার।
এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন অভিন্ন অঙ্গীকার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের
জন্য ত্রাণ সহায়তার বিষয়টি জরুরি। সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের জনগণ এবং
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে সুইজারল্যান্ড বিশেষ সাধুবাদ জানাচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডও এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশে দ্রুত মানবিক সহায়তা
কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করেছে এবং জরুরি সহায়তার বরাদ্দ বাড়িয়েছে, যা মিয়ানমার
থেকে আগত শরণার্থীদের খাদ্য ও পানীয় জলের সংস্থানে, বাসস্থান নির্মাণে এবং
পয়োনিষ্কাশন সেবা দিতে ব্যয় করা হচ্ছে। দুটি সরকারি হাসপাতালের অবকাঠামো
এবং চিকিৎসা উপকরণ দিয়ে সুইজারল্যান্ড সহায়তা করছে এবং কক্সবাজার ও
পার্শ্ববর্তী এলাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এই সফরে
সেখানকার পরিস্থিতি আমি স্বচক্ষে দেখব বলে আশা করছি। সুইজারল্যান্ডের এই
মানবিক সহায়তার ভিত্তি হলো বহু দশক ধরে চলে আসা সুইস-বাংলাদেশ পারস্পরিক
সহযোগিতার বন্ধন। স্থানীয় সরকারবিষয়ক সুইস সরকারের সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলো
স্থানীয় জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করছে এবং বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানে স্থানীয় সরকারকে সহযোগিতা করছে। সুইস উন্নয়ন
সহযোগিতার লক্ষ্যই হচ্ছে দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে
কাজ করা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন
ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে প্রশংসনীয় পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক কর্তৃক সংজ্ঞায়িত মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে আমি বাংলাদেশকে অর্জিত সফলতার জন্য অভিনন্দন জানাই এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন প্রত্যাশা করি। সুইজারল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক দুদেশের জন্যই সুবিধাজনক, যেমন বিগত সাত বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ হয়েছে। বহুসংখ্যক সুইস কোম্পানি যারা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তাদের কল্যাণে সুইজারল্যান্ডের প্রযুক্তি জ্ঞান বাংলাদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সুইস এবং বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিদ্যমান শক্তিশালী সম্পর্কের সাক্ষ্য বহন করে। সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ প্রোগ্রাম’-এ সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের শক্তিশালী বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নতিতে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ আসে এ দুটি শিল্প থেকে। এই কর্মসূচির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সেবা বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পকে শক্তিশালী এবং অধিক প্রযুক্তি-সক্ষম করে তুলতে সাহায্য করেছে। অন্যান্য অনেক বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে, যেমন সবুজ অর্থনীতি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এসব ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের বিশেষ প্রযুক্তি জ্ঞান রয়েছে। গণতন্ত্র অধিক শক্তিশালীকরণ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সুইজারল্যান্ড উপলব্ধি করে, যা দুদেশের গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নীতিতে সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
অনুমিত দূরত্ব হ্রাস
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি তৃতীয় আরেকটি ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক ক্রমে বাড়ছে। তা হলো সাংস্কৃতিক বিনিময়। আমি খুবই আনন্দিত যে আমার সফর এমন একটি সময়ে হচ্ছে যখন সুইস প্রো হেলভেশিয়া ফাউন্ডেশনের সম্পৃক্ততায় ঢাকা আর্ট সামিটের মতো একটি বড়মাপের আয়োজন এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সংস্কৃতি একটি অনন্য এবং আনন্দদায়ক মাধ্যম। বিশ্বায়ন এবং যুগপৎ ডিজিটালাইজেশনের কল্যাণে এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যকার অনুমিত দূরত্ব দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ বর্তমান বিশ্বের সংকট শুধু যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই মোকাবিলা করা সম্ভব। এ জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। এই সফরের এবং দুই দেশের পরবর্তী সম্মিলিত পদক্ষেপ নিয়ে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
আঁলা বেরসে
প্রেসিডেন্ট, সুইস কনফেডারেশন
অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন
ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে প্রশংসনীয় পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক কর্তৃক সংজ্ঞায়িত মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে আমি বাংলাদেশকে অর্জিত সফলতার জন্য অভিনন্দন জানাই এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন প্রত্যাশা করি। সুইজারল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক দুদেশের জন্যই সুবিধাজনক, যেমন বিগত সাত বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ হয়েছে। বহুসংখ্যক সুইস কোম্পানি যারা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তাদের কল্যাণে সুইজারল্যান্ডের প্রযুক্তি জ্ঞান বাংলাদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সুইস এবং বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিদ্যমান শক্তিশালী সম্পর্কের সাক্ষ্য বহন করে। সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ প্রোগ্রাম’-এ সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের শক্তিশালী বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নতিতে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ আসে এ দুটি শিল্প থেকে। এই কর্মসূচির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সেবা বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পকে শক্তিশালী এবং অধিক প্রযুক্তি-সক্ষম করে তুলতে সাহায্য করেছে। অন্যান্য অনেক বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে, যেমন সবুজ অর্থনীতি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এসব ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের বিশেষ প্রযুক্তি জ্ঞান রয়েছে। গণতন্ত্র অধিক শক্তিশালীকরণ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সুইজারল্যান্ড উপলব্ধি করে, যা দুদেশের গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নীতিতে সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
অনুমিত দূরত্ব হ্রাস
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি তৃতীয় আরেকটি ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক ক্রমে বাড়ছে। তা হলো সাংস্কৃতিক বিনিময়। আমি খুবই আনন্দিত যে আমার সফর এমন একটি সময়ে হচ্ছে যখন সুইস প্রো হেলভেশিয়া ফাউন্ডেশনের সম্পৃক্ততায় ঢাকা আর্ট সামিটের মতো একটি বড়মাপের আয়োজন এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সংস্কৃতি একটি অনন্য এবং আনন্দদায়ক মাধ্যম। বিশ্বায়ন এবং যুগপৎ ডিজিটালাইজেশনের কল্যাণে এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যকার অনুমিত দূরত্ব দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ বর্তমান বিশ্বের সংকট শুধু যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই মোকাবিলা করা সম্ভব। এ জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। এই সফরের এবং দুই দেশের পরবর্তী সম্মিলিত পদক্ষেপ নিয়ে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
আঁলা বেরসে
প্রেসিডেন্ট, সুইস কনফেডারেশন
No comments