রপ্তানি আদেশ ও পণ্য বিক্রি কমেছে

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) গতকাল রোববার শেষ হয়েছে। ৩৫ দিনের এবারের মেলায় আগেরবারের তুলনায় রপ্তানি আদেশ ও পণ্য বিক্রি দুটোই কমেছে। যদিও মেলার আয়োজক বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দাবি, ‘মেলা অত্যন্ত সফল ও সার্থক হয়েছে’। মেলা প্রাঙ্গণে গতকাল বিকেলে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবারের মেলায় ১ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৬০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। আর নগদে বিক্রি হয়েছে ৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার পণ্য। ইপিবি গতবারের মেলার শেষ দিন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, ওইবার রপ্তানি আদেশ এসেছিল ২৪৩ কোটি টাকার এবং ১১৩ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল। গতবারের চেয়ে রপ্তানি আদেশ কম পাওয়া গেলেও আয়োজকদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, এবার ৮৭ লাখ ডলার বা ৭১ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ বেশি এসেছে। রপ্তানি আদেশ কমলেও বাড়িয়ে দেখানো হলো কেন, জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘এটা ঠিক রপ্তানি মেলা না, ভোগ্যপণ্যেরও মেলা। বিক্রি ও রপ্তানি আদেশের তথ্য যাদের থেকে নেওয়া হয়, হেরফের হতেই পারে। তবে ইপিবির কাছে গতবারের রপ্তানি আদেশের তথ্য হচ্ছে ১৪৩ কোটি টাকা।’     সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সঙ্গে তাঁর সহধর্মিণী আনোয়ারা আহমেদ ছিলেন। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও সদস্য লায়লা আঞ্জুমান বানু, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মেলা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, অন্যবারের চেয়ে এবারের মেলা জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছে। লাখ লাখ লোক মেলায় এসে কেনাকাটা করেছেন। ইপিবির অনেক টাকা লাভ হবে। তিনি বলেন, ‘পূর্বাচলে ৩৫ একর জায়গায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র হচ্ছে। সেখানে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের মেলা হবে।
আশা করছি, ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে।’ রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘চলতি বছর নির্বাচনের বছর। আমাদের মেয়াদ আছে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো দিন নির্বাচন হবে। কালকে দেখলাম, একটি রাজনৈতিক দল ছয়টি শর্ত দিয়েছে। এই শর্ত বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে।’ মেলায় অংশ নেওয়া ৫৮৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে আকিজ সিরামিক, দ্বিতীয় হয়েছে যৌথভাবে মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও আখতার ফার্নিচারস এবং তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে যৌথভাবে আবুল খায়ের মিল্ক প্রোডাক্টস, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও নাদিয়া ফার্নিচার। বিশেষ সম্মাননা পেয়েছে ডেলটা ইন্টেরিয়র। সাধারণ প্যাভিলিয়ন শ্রেণিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে কারুপণ্য রংপুর। এ ছাড়া দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে মৌসুমি ইন্ডাস্ট্রিজ ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইল। প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন শ্রেণিতে প্রথম হাতিল কমপ্লেক্স, দ্বিতীয় মেটাডোর বলপেন ও বিআরবি ক্যাবলস এবং তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে অ্যাগ্রিকালচার মার্কেটিং ও পারটেক্স ফ্যাশন। সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন শ্রেণিতে প্রথম ক্রাউন সিমেন্ট, দ্বিতীয় গঙ্গা ফাউন্ড্রি ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে এনার্জিপ্যাক ও ওরিয়েন্টাল ইকো উডস। মেলার শেষ দিনে গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নে পণ্য নেই, খালি। বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলার ভেতরের সড়কজুড়ে বসে পড়েছে হকার। কিছু প্রতিষ্ঠান পণ্য গোছাতে শুরু করেছে। তারপরও বিকেল থেকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল বাড়তে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.