প্রশ্নফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার
চলমান
এসএসসি পরীক্ষা ২০১৮-এর প্রশ্নপত্র অব্যাহতভাবে ফাঁস হওয়ার ঘটনা তদন্তে এক
সচিবকে প্রধান করে কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ফাঁসকারীকে
ধরিয়ে দিতে পারলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা
মন্ত্রণালয়। রোববার পাবলিক পরীক্ষা মনিটরিং ও আইন শৃংখলা কমিটির বৈঠক শেষে এ
ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে অব্যাহত
সমালোচনার মুখে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদ। রোববার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জরুরি এ বৈঠক ডেকেছিলেন শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন।
পাবলিক পরীক্ষা মনিটরিং ও আইন শৃংখলা কমিটির বৈঠকটি বেলা ৩টা শুরু হয়ে
বিকেল ৫টায় শেষ হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইন
প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশ-র্যাব-এনএসআই, বিটিআরসি’র উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তারা
যোগ দেন। রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীরকে প্রধান করে উচ্চপর্যায়ের
কমিটি গঠিত হলেও তারা কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেবে তার কোনো সময়সীমা বেঁধে
দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবে এ কমিটি।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরীক্ষা বাতিল করা হবে কী হবে না তার সিদ্ধান্ত
নেয়া হবে। ১১ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে থাকবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ,
জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিটিআরসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
মাধ্যমিক শাখা এবং শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিরা। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা
গেছে, বৈঠকের মূল ও একমাত্র এজেন্ডা (আলোচ্য বিষয়) ছিল প্রশ্ন ফাঁস। বৈঠকের
বিবেচনার জন্য একাধিক প্রস্তাব করা হযেছিল। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে
পরীক্ষায় এমসিকিউ তুলে দেয়া, সচিব পর্যায়ের কমিটি গঠন করে নিবিড় মনিটরিং,
পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের হাতে স্মার্ট ফোন পাওয়া গেলেই তাকে তাৎক্ষণিকভাবে
গ্রেফতার করা, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে;
পরীক্ষার্থীকে সাড়ে ৯টার আগে কেন্দ্রে প্রবেশ ও আসন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা,
আর কোনো পরীক্ষার্থী হলে মোবাইল ফোন নিয়ে গেলে তার পরীক্ষা বাতিল করা, পরে
এলে তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া এবং তার পরীক্ষাও বাতিল
করা, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের খাম সাড়ে ৯টার আগে না খোলা এবং খোলার সময় তিনজন
কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিশ্চিত করা।
এ তিন কর্মকর্তা হচ্ছেন, প্রশাসনের
একজন, কেন্দ্র সচিব ও পুলিশের একজন কর্মকর্তা। বৈঠকে প্রস্তাবগুলো নিয়ে
আলোচনা হয়েছে এবং এরই ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়,
পরীক্ষায় এমসিকিউ তুলে দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী আরো পর্যালোচনার কথা বলেন
এবং আগামীতে একটি জাতীয় সেমিনার করে তার পর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পক্ষে
মত দেন।উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার
প্রশ্নপত্র ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। এবারে এসএসসি
পরীক্ষা সাধারণ সব কয়টি বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে
দেশের যেকোনো স্থান থেকেই কেউ না কেউ প্রশ্ন ফাঁস করে দিচ্ছে এবং তা
সারাদেশের ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে। গত ১ ও ৩
ফেব্রুয়ারি বাংলা ১ম ও ২য় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর এক
ঘন্টা আগেই উক্ত পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া গেছে, ফেসবুকের একটি নির্দিষ্ট
আইডি’তে। এবং উক্ত আইডি থেকে তাৎক্ষণিকভাবেই তা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন গ্রুপের
আইডি’তে। অথচ পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষা
সচিব বলেছিলেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রমাণিত
হলেই পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তারা উভয়েই আরো বলেছিলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সকল
পথ বন্ধ করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু অনুষ্ঠিত দু’টি
পরীক্ষার আগের চিত্র হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত। এ নিয়ে পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের
মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। জানা গেছে, আজ ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষার
প্রশ্নও গত পরশু রাত থেকেই ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছিল। এটি আসলেই মূল প্রশ্ন কি
না? তা যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পরীক্ষাটি হবে সোমবার। পরীক্ষার
প্রথম দিন শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন ফাঁস
হওয়া বিষয় জানতে চাইলে মন্ত্রী মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। ২য় পত্রের
প্রশ্নও রোববারও একইভাবে ফেসবুকে পাওয়া গেলে মন্ত্রী ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড
সমন্বয়কারী প্রকারান্তবে বিষয়টি স্বীকার করেন এবং বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। রোববার দুপুরে সচিবই এ বৈঠক ডাকলেন।
No comments