বইমেলা আন্তর্জাতিক রূপ পাক by মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তবুও স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা বায়ান্নর আত্মত্যাগের অভিযাত্রার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। বরং ধীরে ধীরে হারাতে বসেছি আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য ও কৃষ্টি। পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণে আমাদের অর্জিত গৌরবও অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলার চেয়ে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারেই যেন বেশি আগ্রহী নতুন প্রজন্ম। বাংলা গান, বাংলা চলচ্চিত্রে তাদের উৎসাহ কম। সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি দেশের অফিস, আদালতসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে। উপরন্তু কখনও কখনও বাংলা ভাষা হচ্ছে অনাদৃত, অবহেলিত। দেশজুড়ে ইংরেজি সাইনবোর্ডের ছড়াছড়ি। বিজ্ঞাপন, প্রচারপত্রে বাংলা ব্যবহারে চরম উদাসীনতা লক্ষণীয়। দেশে প্রকাশিত, মুদ্রিত বাংলা বইয়ে অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তি ও অসঙ্গতি চোখে পড়ে। বাংলা বানানেও আজ অবধি প্রতিষ্ঠিত হয়নি একটি জাতীয় মান। তারপরও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া গ্রন্থমেলায় হাজার হাজার মানুষের আগমন, অগণিত বাংলা বইয়ের বিকিকিনির মূল্য অনেক। বাংলা ভাষা-সাহিত্যে দেশে অনেক বিশ্বমানের লেখক থাকা সত্ত্বেও আমাদের সাহিত্য এখনও বিশ্বে তেমন সুপরিচিত নয়। তাই বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণাসহ বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলায় লিখিত ভালো বইগুলোকে বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় অনুবাদের ওপর জোর দিতে হবে। তেমনি বিদেশি বিভিন্ন উন্নতমানের বইকে বাংলায় অনুবাদের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের একুশের গ্রন্থমেলাকে আন্তর্জাতিক বইমেলায় রূপ দিতে বিদেশি প্রকাশকদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ : প্রাবন্ধিক ও গল্পকার
No comments