কুলভূষণ র'-এর গুপ্তচর- ভারতের মিথ্যা ফাঁস করে বিপাকে সাংবাদিক
পাকিস্তানে
গুপ্তচর সন্দেহে আটক ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণ যাদব আসলেই ভারতীয় গোয়েন্দা
সংস্থা র-র হয়ে কর্মরত ছিলেন, ভারতেরই একটি পত্রিকায় এরকম খবর বেরোনোর
পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। আনুষ্ঠানিক বিবৃতি
দিয়ে সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, সাংবাদিক প্রবীণ স্বামীর লেখা ওই
প্রতিবেদনটি পুরোপুরি অসত্য ও সাজানো। বেলুচিস্তানে অন্তর্ঘাত তৎপরতা
চালানোর জন্য কুলভূষণকে আটক করে পাকিস্তান। বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। ভারত
দাবি করছে, কুলভূষণ ছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু পাকিস্তান তাদের দাবিতে অটল
রয়েছে। তিনি ভুল নামে ভারতের সত্যিকারের পাসপোর্ট নিয়ে অন্তর্ঘাতমূলক মিশনে
ছিলেন বলে পাকিস্তান দাবি করেছে। ওদিকে পাকিস্তানে এই প্রতিবেদনটি নিয়ে
যথারীতি সাড়া পড়ে গেছে - আর ভারতে শুরু হয়েছে বিতর্ক, গুপ্তচরবৃত্তি
নিয়ে লেখালেখি করে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক কি গোপনীয়তার কিছু অলিখিত নিয়ম
ভেঙেছেন? বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে যে মামলা চলছে তাতে এই প্রতিবেদনের কী
প্রভাব পড়তে পারে, জল্পনা চলছে তা নিয়েও। স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স
নিয়ে ভারতে যারা লেখালেখি করেন, প্রবীণ স্বামী তাদের মধ্যে অত্যন্ত পরিচিত
একটি নাম। দু-তিন দিন আগে 'দ্য হিন্দু' পত্রিকাগোষ্ঠীর ফ্রন্টলাইন
ম্যাগাজিনে তার একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয় - যাতে দাবি করা
হয়েছিল কুলভূষণ যাদব কখনোই ভারতীয় নৌবাহিনী থেকে অবসর নেননি, আর ইরানে
তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে এক গোপন মিশনেই কর্মরত ছিলেন। কুলভূষণ
যে 'হুসেন মুবারক প্যাটেল' নামে ভুয়া ভারতীয় পাসপোর্টেই পুনে থেকে ইরান
পাড়ি দিয়েছেন, দাবি করা হয়েছিল সেটাও। এ প্রতিবেদন প্রকাশের প্রায়
সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি চ্যানেলগুলো তা লুফে নেয়। ভারতীয় প্রচারের মিথ্যা
কীভাবে ধরা পড়ে গেছে,
নৌবাহিনী কীভাবে কুলভূষণের রেকর্ড ধামাচাপা দিয়েছে
বা গোয়েন্দা সংস্থা র-র গোপন মিশন কীভাবে ফাঁস হয়ে গেছে, এই প্রতিবেদনের
সূত্র ধরে তা ফলাও করে সেখানে প্রচার করা হতে থাকে। এরপর শনিবার রাতেই
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কড়া বিবৃতি দিয়ে জানায়, প্রবীণ
স্বামীর রিপোর্টটি শুধু মিথ্যা ও ভুলে ভরাই নয়, দুরভিসন্ধিপূর্ণও বটে।
প্রশ্ন তোলা হয় এর উদ্দেশ্য নিয়েও। রিপোর্টটি যে পাকিস্তানের অপপ্রচারকেই
আরো জোরালো করবে, বলা হয় সেটাও। আর এই বিরল বিবৃতির সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন
ওঠে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকান্ড নিয়ে রিপোর্ট করে এই প্রতিবেদন কি
সাংবাদিকতার অলিখিত কোনো রীতি ভঙ্গ করেছে? ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ
অ্যান্ড অ্যানালিসিসের ফেলো ড: স্মৃতি পটনায়ক কাজের সূত্রে ঘনিষ্ঠভাবে
চেনেন প্রবীণ স্বামীকে। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "বন্ধু হিসেবে এটুকু আমি
বলতে পারি ও নিশ্চয় কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবেদনটা করেনি, করেছে
সাংবাদিকসুলভ আগ্রহ থেকেই। আর নিশ্চয় ও তার জন্য প্রয়োজনীয় রিসার্চও
করেছে।" "তবে আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে রিপোর্টটা পড়ে আশ্চর্য হয়েছি।
বর্তমান পটভূমিতে এটা করা কতটা সঙ্গত হয়েছে বলা সত্যিই মুশকিল, কারণ এখানে
একটা ধূসর এলাকা আছে", বলছিলেন মিস পটনায়ক। পাকিস্তান কুলভূষণ যাদবকে
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার পর তার বিরুদ্ধে ভারত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব
জাস্টিস বা আইসিজি-তে গেছে, সেই মামলা এখন সেখানে বিচারাধীন। ভারতে সুপ্রিম
কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বিজেপির লিগাল সেলের বিক্রমজিৎ ব্যানার্জি মনে
করেন, অন্য কোনো আদালত হলে এক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি সরাসরি আদালত অবমাননার
দায়ে পড়ত। তিনি বলছেন, "স্পষ্টতই এটা লেখা হয়েছে বিচারাধীন বিষয়কে
প্রভাবিত করতেই। আইসিজি-র ক্ষেত্রে আদালত অবমামনার নোটিশ জারির অবকাশ হয়তো
নেই, বিদেশি নাগরিককে কীভাবেই বা তারা করবে - কিন্তু দেশে হাইকোর্ট বা
সুপ্রিম কোর্ট হলে পরিষ্কার এখানে আদালত অবমাননার মামলা হত।" "আর এই
প্রতিবেদনটা তো পরিষ্কার রীতিবহির্ভূত। পরিষ্কার বলব ওনার এটা করা উচিত
হয়নি - কারণ দুনিয়ার কোথাও কেউ এভাবে লেখে না। তবে তারপরও তো কত লোকের কত
রকম এজেন্ডা থাকে!" পৃথিবীর কোনও দেশে কোনো সাংবাদিক এভাবে দেশবিরোধী
লেখালেখি করেন না, মনে করিয়ে দিয়ে বিক্রমজিৎ ব্যানার্জি আরো বলেন, এতে
কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ থাক বা না-থাক, পাকিস্তান তা আইসিজিতে ব্যবহার করার
চেষ্টা করতেই পারে। আর ঠিক এখানেই ভারতের প্রধান আশঙ্কা - যতই বিবৃতি দিয়ে
তারা প্রতিবেদনটি অস্বীকার করুক না কেন, আগামী কয়েক মাসে কুলভূষণ মামলায়
আন্তর্জাতিক আদালতের শুনানিতে তাদের সওয়ালটাই এতে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
আর সে জন্যই এখন থেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে ওই প্রতিবেদনের
সাংবাদিক প্রবীণ স্বামীকে।
No comments