এবার খালেদা জিয়ার ছয় দফা! by সোহরাব হাসান
১৯৬৬
সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তিসনদ।
সেই ছয় দফাকে কেন্দ্র করে ছেষট্টিতে আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলন দমন করতে আইয়ুব
সরকার বিরোধী নেতাদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুসহ সব কেন্দ্রীয়
নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়েছে। কিন্তু
শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাঙালি প্রথমে ভোটের অধিকার আদায় করে।
পরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেই অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাঙালি
রুখে দাঁড়ায়, যার অনিবার্য পরিণতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। গত
শনিবার রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায়
খালেদা জিয়াও একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ছয় দফা উত্থাপন করেছেন।
খালেদা জিয়ার ছয় দফা হলো:
১. ভোট হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে
২. জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে
৩. ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে
৪. নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে
৫. ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোবাইল ফোর্স হিসেবে কাজ করবে
৬. যন্ত্রে ভোটের জন্য ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না।
প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু প্রণীত ছয় দফার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের দেওয়া ছয় দফার কোনো তুলনা চলে না। দুটির প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের জন্য, যা চূড়ান্তভাবে দেশকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায়। আর খালেদা জিয়ার ছয় দফা বা শর্ত দিয়েছেন আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ ষাটের দশকে ছয় দফার সমর্থক থাকলেও এখন সেটি জোরগলায় বলেন না। তারপরও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্য তাঁরা ছয় দফা দিয়েছেন। সম্ভবত বিএনপি নেতারা মুখে না বললেও বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার কথা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চেয়েছেন যে ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। এবারে খালেদা জিয়া ঘোষিত ছয় দফা বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। এই ছয় দফার তিনটির বিষয়ে সম্ভবত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগীরাও আপত্তি করবে না। এগুলো যথাক্রমে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে এবং ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়ে থাকে। সরকারি দলও এর বিরোধিতা করছে না। প্রশ্ন হলো তারা প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করবে, না তারাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর মতো সমভাবে দায়িত্ব পালন করবে? ২০০১ সালের নির্বাচনে সেনাবাহিনীকেও সমান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে আইনের সেই ধারা বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো নির্বাচন কমিশন চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সেনাবাহিনীকে তলব করতে পারে। এখানে বড় ধরনের পার্থক্য দেখি না। তবে বিএনপি নেত্রী বাকি যে তিন দফা দিয়েছেন, তার মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা এবং ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমান সংসদে বিএনপি নেই। অতএব সংবিধান পরিবর্তনে তাঁদের ভূমিকা রাখারও সুযোগ নেই। আর সরকারি দল ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান সংবিধানের অধীনেই অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময়ে সংসদ বহাল থাকবে। কেননা পাঁচ বছরের জন্য গঠিত সংসদের মেয়াদ থাকতেই নির্বাচন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না বলে বাকি যে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন তা আগেই পরিষ্কার করেছে। তারা বলেছে, কারিগরি কারণেই আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। প্রযুক্তিকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না।
১. ভোট হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে
২. জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে
৩. ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে
৪. নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে
৫. ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোবাইল ফোর্স হিসেবে কাজ করবে
৬. যন্ত্রে ভোটের জন্য ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না।
প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু প্রণীত ছয় দফার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের দেওয়া ছয় দফার কোনো তুলনা চলে না। দুটির প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের জন্য, যা চূড়ান্তভাবে দেশকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায়। আর খালেদা জিয়ার ছয় দফা বা শর্ত দিয়েছেন আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ ষাটের দশকে ছয় দফার সমর্থক থাকলেও এখন সেটি জোরগলায় বলেন না। তারপরও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্য তাঁরা ছয় দফা দিয়েছেন। সম্ভবত বিএনপি নেতারা মুখে না বললেও বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার কথা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চেয়েছেন যে ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। এবারে খালেদা জিয়া ঘোষিত ছয় দফা বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। এই ছয় দফার তিনটির বিষয়ে সম্ভবত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগীরাও আপত্তি করবে না। এগুলো যথাক্রমে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে এবং ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়ে থাকে। সরকারি দলও এর বিরোধিতা করছে না। প্রশ্ন হলো তারা প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করবে, না তারাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর মতো সমভাবে দায়িত্ব পালন করবে? ২০০১ সালের নির্বাচনে সেনাবাহিনীকেও সমান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে আইনের সেই ধারা বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো নির্বাচন কমিশন চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সেনাবাহিনীকে তলব করতে পারে। এখানে বড় ধরনের পার্থক্য দেখি না। তবে বিএনপি নেত্রী বাকি যে তিন দফা দিয়েছেন, তার মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা এবং ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমান সংসদে বিএনপি নেই। অতএব সংবিধান পরিবর্তনে তাঁদের ভূমিকা রাখারও সুযোগ নেই। আর সরকারি দল ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান সংবিধানের অধীনেই অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময়ে সংসদ বহাল থাকবে। কেননা পাঁচ বছরের জন্য গঠিত সংসদের মেয়াদ থাকতেই নির্বাচন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না বলে বাকি যে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন তা আগেই পরিষ্কার করেছে। তারা বলেছে, কারিগরি কারণেই আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। প্রযুক্তিকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না।
কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি বড় অদ্ভুত। যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার
ইভিএমের প্রস্তাব দিয়েছে, সেহেতু বিএনপি এর বিরোধিতা করছে। একই প্রস্তাব
বিএনপি দিলেও হয়তো আওয়ামী লীগও বিরোধিতা করত। পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণেই
একবার তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছে। আরেকবার সেই ব্যবস্থা বাতিল করে
দিয়েছে। তবে এই ছয় দফার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন দলীয় নেতা-কর্মীদের
উদ্দেশে যেসব কথা বলেছেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, নির্বাচন
সামনে রেখে যাতে সরকার তাঁদের ফাঁদে ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে
হবে। তিনি এ-ও বলেছেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন, আপনাদের সঙ্গে আছি।
আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ নেই। দলের নেতা ও এ দেশের মানুষের সঙ্গে আছি।’ একই
সঙ্গে তিনি দলের নেতাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ-প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান
জানিয়ে বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাকে কোনো
ভয়ভীতি দেখিয়ে দমাতে পারেনি, পারবেও না। আমি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে
আছি, দেশের মানুষের সঙ্গে আছি।’ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা বাঙালির স্বাধিকার তথা
স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার ছয় দফা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার করতে
পারবে কি না, সেটা দেখার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
No comments