মরণব্যাধি ক্যান্সার
বাংলাদেশসহ
সমগ্র বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি)-এর তথ্য উদ্ধৃত
করে রোববারের যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে
প্রতিবছর এক লাখ ২২ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
এই বিপুলসংখ্যক
রোগীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের স্বীকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থার বাইরেই থেকে
যায়। অর্থ সংকটের কারণেই যে ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেক রোগী আধুনিক চিকিৎসা
সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। এ প্রেক্ষাপটে দেশে ক্যান্সারসহ
অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা যাতে সুলভে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার দৈন্যদশার চিত্র নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হলেও
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা মিলছে না। অথচ বিশেষজ্ঞরা
বলছেন, প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেলে ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রায় ৫০
ভাগকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা
প্রাপ্তি নিশ্চিত করা না গেলে এ রোগে আক্রান্তদের আরোগ্য লাভের বিষয়টি যে
অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য
অন্তত একটি ক্যান্সার হাসপাতাল থাকা প্রয়োজন। সেই হিসাবে ১৬০টি ক্যান্সার
হাসপাতাল এবং ১৬শ’ বিশেষজ্ঞের চাহিদা থাকলেও আছে যথাক্রমে ১৮টি ক্যান্সার
হাসপাতাল ও মাত্র দেড়শ’ বিশেষজ্ঞ। বিদ্যমান ক্যান্সার হাসপাতালের ব্যবহৃত
যন্ত্রপাতি বেশিরভাগ অকার্যকর থাকার বিষয়টিও উদ্বেগজনক। প্রত্যন্ত অঞ্চলের
বিপুলসংখ্যক রোগী সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা মেডিকেল কলেজগুলোর ওপরই বিশেষভাবে
নির্ভর করে।
এসব এলাকার অনেক রোগীর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যন্ত আসার
সামর্থ্যও নেই। সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিওথেরাপি মেশিনসহ অন্যান্য
আধুনিক যন্ত্রপাতি যাতে সবসময় সচল থাকে তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। ক্যান্সার
চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ছাড়া
এখনও পর্যন্ত দেশে সরকারি-বেসরকারি এ বিষয়ক কোনো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে
ওঠেনি। বস্তুত ক্যান্সার চিকিৎসা রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের
মতে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার
আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে
প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।
No comments