অনাগত রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

রাখাইনে গত বছরের আগস্টের সহিংসতার পর থেকে রোহিঙ্গা নারীরা ব্যাপক হারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। নিপীড়নের শিকার এসব নারীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েছেন। কয়েক মাসের মধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মানোর পর তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। অস্ট্রেলিয়ার দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা লেবার-দলীয় সিনেটর লিসা সিং ও ন্যাশনালস-দলীয় এমপি অ্যান্ড্রু ব্রডের সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফরের ওপর ভিত্তি করে এ খবর ছেপেছে। অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর লিসা সিং ও এমপি অ্যান্ড্রু ব্রড সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের সময় কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁরা শিশুবান্ধব কয়েকটি শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গা শিশুদের আঁকা ছবি দেখে বিস্মিত হয়েছেন। লিসা সিং বলেন, শিশুদের কাঁচা হাতে আঁকা ছবিতে পোড়া বাড়ি, হেলিকপ্টার থেকে বাড়িগুলোতে গুলি ছোড়া আর গাছে ঝুলে থাকা লোকজনের লাশ জীবনের মাঝে সংঘাতের বর্ণনা দিচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার দুই রাজনীতিবিদই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের সম্পর্কে জেনেছেন। বিশেষ করে এর মধ্যেই যেসব নারী সন্তানসম্ভবা হয়েছেন, তাঁদের খোঁজ নিয়েছেন তাঁরা। লিসা সিং বলেন, এসব নারীর ঘরে জন্মানো শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশে এপ্রিল আর মে মাসে বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এ সময়টায় ধর্ষণের শিকার উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক নারীর সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে পরের কয়েক মাসে আরও ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। ‘সম্ভব হলে’ দুই বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যে চুক্তি সই করেছে। মিয়ানমারের সংবাদ সাময়িকী ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার-এর এক বিশ্লেষণে বলা বলছে, রাখাইনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বহিরাগমন বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানকার গণমাধ্যমকে বারবার বলেছেন রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা সম্পর্কে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। অথচ কী সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে, তা মিয়ানমার জানায়নি। রাখাইনে ফেরার পর রোহিঙ্গাদের আদি নিবাসে ফেরার বিষয়টিও মিয়ানমার নিশ্চিত করেনি। স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের তাদের এলাকায় ফিরতে দেওয়া হবে না। অধিকাংশ বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরবে কি না, সেটা কর্তৃপক্ষও স্পষ্ট করে বলছে না। উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে ১১টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব জায়গা এখনো বসবাসের উপযোগী নয়।

No comments

Powered by Blogger.