বিজিএমইএকে আরও পরিণত হতে হবে -খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
ক্রেতাদের
জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রমের সমালোচনায়
নেমেছেন পোশাকশিল্পের মালিক ও একাধিক মন্ত্রী। অ্যালায়েন্সও এক বিবৃতিতে
সরকারকে পরিষ্কার অবস্থান জানাতে বলেছে। অ্যাকর্ড–বিজিএমইএ গত বুধবার বৈঠক
করেছে। এসব বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা
পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
প্রথম আলো: বিজিএমইএর নেতারা ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এসব গলার কাঁটা। এসব কথাবার্তায় সমস্যা বাড়বে, নাকি কমবে?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: পোশাক কারখানার পরিদর্শন ও সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে কারখানার মালিকেরা একধরনের চাপের মধ্যে রয়েছেন। এ সময় রপ্তানির নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধিও দুশ্চিন্তার কারণ। এটা সত্যি, যেকোনো সংস্কারই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। এসবের প্রতিক্রিয়া বড় পোশাক কারখানার চেয়ে ছোট, মাঝারি বা সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার ওপর বেশি। সব মিলিয়ে তাদের অস্থিরতা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সমালোচনা করার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেয়েছে। তবে সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর আরও পরিণত আচরণ প্রয়োজন। সংগঠনের সদস্য কারখানার মালিকদের সংস্কার কার্যক্রম সময়মতো শেষ করতে চাপ দেওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, সংস্কারকাজে দীর্ঘসূত্রতা কাঙ্ক্ষিত ফল প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। সংগঠন দুটির পাশাপাশি সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার ও চুক্তির বিষয়গুলো মনে রাখা প্রয়োজন। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে অগ্রসর না হয়ে অন্য উপায়ে গেলে সমস্যা বাড়াবে বৈ কমবে না।
প্রথম আলো: অ্যালায়েন্স অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে বলেছে। সরকারের কী করা উচিত?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: অ্যালায়েন্স-প্রধানের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে কারখানা পর্যায়ের সংস্কারকাজে নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না হলেও শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তি হিসেবে একে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হচ্ছে। এখানে মনে রাখা দরকার, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলওর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী অ্যাকর্ডের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। এসব চুক্তির অধীনে গৃহীত কাজের অগ্রগতি সরকার নিয়মিতভাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে অবহিত করছে। এ রকম ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যেকোনো মন্তব্য চুক্তি বাস্তবায়নে তার অবস্থানকে দুর্বল করে। সরকারের উচিত হবে তার অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরা। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করা।
প্রথম আলো: পোশাকমালিকেরা বলছেন, দুই জোটের কার্যক্রমের কারণে জটিল সময় পার করছেন তাঁরা। এই বক্তব্য কতটা যুক্তিযুক্ত?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শনে বিভিন্ন রকমের ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। সংশোধন পরিকল্পনা অনুসারে ত্রুটি সমাধানে কারখানাগুলোকে বেশ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক না হওয়ায় সীমিত আয়ের মধ্যে থেকে এ বাড়তি বিনিয়োগ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। পাশাপাশি সংস্কারের অংশ হিসেবে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, আইনি সংস্কার ও বাস্তবায়ন, কারখানা পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন চালু এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটি চালু করতে হচ্ছে। সার্বিকভাবে কারখানামালিকদের জন্য সময়টা জটিল ও কষ্টসাধ্য। তবে এসব সংস্কার নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই।
প্রথম আলো: পোশাকের রপ্তানি ২০২১ সালে পাঁচ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: পাঁচ হাজার কোটি ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শুরুর বছরেই দুর্বল প্রবৃদ্ধির কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর যে ধরনের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা এখনো অনুপস্থিত। এ জন্য পণ্য রপ্তানির পরিমাণের প্রবৃদ্ধির ওপর নয়, বরং গুণগতমানের উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন করতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আর এ ক্ষেত্রে যে ধরনের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার, তার জন্য বর্তমানে চলমান সংস্কারের গুরুত্ব আছে। তাই অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম গুরুত্বের সঙ্গে শেষ করে বিশ্বে নতুন বার্তা দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
সাক্ষাৎকার দুটি নিয়েছেন:
শুভংকর কর্মকার
প্রথম আলো: বিজিএমইএর নেতারা ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এসব গলার কাঁটা। এসব কথাবার্তায় সমস্যা বাড়বে, নাকি কমবে?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: পোশাক কারখানার পরিদর্শন ও সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে কারখানার মালিকেরা একধরনের চাপের মধ্যে রয়েছেন। এ সময় রপ্তানির নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধিও দুশ্চিন্তার কারণ। এটা সত্যি, যেকোনো সংস্কারই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। এসবের প্রতিক্রিয়া বড় পোশাক কারখানার চেয়ে ছোট, মাঝারি বা সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার ওপর বেশি। সব মিলিয়ে তাদের অস্থিরতা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সমালোচনা করার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেয়েছে। তবে সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর আরও পরিণত আচরণ প্রয়োজন। সংগঠনের সদস্য কারখানার মালিকদের সংস্কার কার্যক্রম সময়মতো শেষ করতে চাপ দেওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, সংস্কারকাজে দীর্ঘসূত্রতা কাঙ্ক্ষিত ফল প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। সংগঠন দুটির পাশাপাশি সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার ও চুক্তির বিষয়গুলো মনে রাখা প্রয়োজন। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে অগ্রসর না হয়ে অন্য উপায়ে গেলে সমস্যা বাড়াবে বৈ কমবে না।
প্রথম আলো: অ্যালায়েন্স অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে বলেছে। সরকারের কী করা উচিত?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: অ্যালায়েন্স-প্রধানের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে কারখানা পর্যায়ের সংস্কারকাজে নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না হলেও শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তি হিসেবে একে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হচ্ছে। এখানে মনে রাখা দরকার, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলওর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী অ্যাকর্ডের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। এসব চুক্তির অধীনে গৃহীত কাজের অগ্রগতি সরকার নিয়মিতভাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে অবহিত করছে। এ রকম ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যেকোনো মন্তব্য চুক্তি বাস্তবায়নে তার অবস্থানকে দুর্বল করে। সরকারের উচিত হবে তার অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরা। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করা।
প্রথম আলো: পোশাকমালিকেরা বলছেন, দুই জোটের কার্যক্রমের কারণে জটিল সময় পার করছেন তাঁরা। এই বক্তব্য কতটা যুক্তিযুক্ত?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শনে বিভিন্ন রকমের ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। সংশোধন পরিকল্পনা অনুসারে ত্রুটি সমাধানে কারখানাগুলোকে বেশ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক না হওয়ায় সীমিত আয়ের মধ্যে থেকে এ বাড়তি বিনিয়োগ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। পাশাপাশি সংস্কারের অংশ হিসেবে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, আইনি সংস্কার ও বাস্তবায়ন, কারখানা পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন চালু এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটি চালু করতে হচ্ছে। সার্বিকভাবে কারখানামালিকদের জন্য সময়টা জটিল ও কষ্টসাধ্য। তবে এসব সংস্কার নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই।
প্রথম আলো: পোশাকের রপ্তানি ২০২১ সালে পাঁচ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: পাঁচ হাজার কোটি ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শুরুর বছরেই দুর্বল প্রবৃদ্ধির কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর যে ধরনের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা এখনো অনুপস্থিত। এ জন্য পণ্য রপ্তানির পরিমাণের প্রবৃদ্ধির ওপর নয়, বরং গুণগতমানের উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন করতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আর এ ক্ষেত্রে যে ধরনের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার, তার জন্য বর্তমানে চলমান সংস্কারের গুরুত্ব আছে। তাই অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম গুরুত্বের সঙ্গে শেষ করে বিশ্বে নতুন বার্তা দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
সাক্ষাৎকার দুটি নিয়েছেন:
শুভংকর কর্মকার
No comments