আবারও পেছাতে পারে ইরান চুক্তি

ইরানের পরমাণু কর্মসূচির পরিধি সংকুচিত করার বিষয়ে ঐতিহাসিক চুক্তির জন্য নির্ধারিত সময়সীমা আবারও পেছাতে পারে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা। আলোচনা শেষ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আগামী ৩০ জুন বেঁধে দেয়া সময় পার হয়ে যেতে পারে বলে এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা স্বীকার করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভিয়েনায় সপ্তাহ শেষের আলোচনায় এ রকমই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে জানান ওই প্রবীণ কর্মকর্তা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি চুক্তিতে পৌঁছাতে ইরান ও বৈশ্বিক শক্তির সম্ভাব্য চূড়ান্ত আলোচনায় নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, ঐতিহাসিক চুক্তিটিতে পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের লুসানে, যখন চুক্তির মূল ধারাগুলোর বিষয়ে সবগুলো পক্ষ একমত হতে পেরেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, চূড়ান্ত চুক্তির নির্ধারিত সময় আরও কয়েকদিন পেছাতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে পি৫+১, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরানসহ সবগুলো পক্ষের উদ্দেশ্য স্পষ্ট- চুক্তিসম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়া, নয় তো বুঝতে পারা যে চুক্তিসম্পন্ন করা আদৌ সম্ভব নয়। এখানে আমাদের উদ্দেশ্য চুক্তিটি সম্পন্ন করা।’ এছাড়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফসহ অনেকেই জানিয়েছেন যে নির্ধারিত সময় কয়েকদিন পেছানোর সম্ভাবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। আজ (শনিবার) ভিয়েনায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে জাভেদ জারিফের। এর আগে বার্ষিক অধিকার প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে জন কেরি বলেন, ‘আমি বরাবরই আশাবাদী ছিলাম। আশাবাদ হয়তো প্রকাশ করিনি আমি, কিন্তু আমি আশাবাদীই।’ প্রসঙ্গত, ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তিশালী দেশ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। চুক্তিটি সম্পন্ন হলে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির পরিধি কমিয়ে আনার বিনিময়ে পশ্চিমা বিশ্ব আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে।
পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ ইরানকে পশ্চিমা বিশ্ব হুমকি হিসেবে দেখলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ইরানের দাবি- অস্ত্র তৈরির জন্য নয়, বরং বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসেবার মতো শান্তিপূর্ণ খাতের জন্য দেশটি পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এদিকে, ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তির খসড়ায় এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। প্রধান বাধাগুলো এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। ইরানি আলোচক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, চুক্তির খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া বক্তব্যকে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না আবার নাকচও করা যাচ্ছে না। এ সূত্র বলেছে, খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে অনেক বাধা দূর এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্টে দূরত্ব এখনও রয়ে গেছে। ওই সূত্রের বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ?ইরনা জানিয়েছে, ‘যদিও কিছু মতপার্থক্য দূর করা হয়েছে তবু গুরুত্বপূর্ণ অন্তত একটি মতভিন্নতা এখনও রয়েছে।’ রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যতম শীর্ষ আলোচক সের্গেই রিয়াবকভ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.