লন্ডনে গৃহহীন অভিবাসীদের রাত কাটে যেভাবে
একদিকে
বাকিংহ্যাম প্রাসাদ। অপরদিকের রাস্তায় শুয়ে আছে গৃহহীন অসহায় মানুষ।
একদিকে রানীর রাজকীয় বাসভবন। অপরদিকে বিলাসবহুল ভবনগুলোর সামনে কোন রকমে
রাত কাটানোর আয়োজন। বৃটেনের ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন
চিত্র। লন্ডনের অভিজাত এলাকা গ্রোসভেনোর প্লেস থেকে গতকাল ধারণ করা হয়েছে
গৃহহীন এসব মানুষের ছবি। এতে দেখা যায়, বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে মাত্র কয়েক
মিটার দূরে এক দল অভিবাসী রাস্তার পাশে রাতযাপনের পর তাদের কম্বল,
বাক্সপেটরা গুটিয়ে নিচ্ছে। অভিজাত এ রাস্তার বাড়িগুলো বিক্রি হয় শত কোটি
পাউন্ডে। আন্তর্জাতিক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার, পেট্রোলিয়াম শিপিং কোম্পানি
এবং আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠানগুলোর সব এখানেই রয়েছে।
লন্ডনের রাস্তায় প্রতি বছর প্রায় ৬৫০০ মানুষ রাস্তায় ঘুমায়। এর মধ্যে ৪০
শতাংশই অভিবাসী। নিকটবর্তী পার্ক লেনের ব্যয়বহুল সব দোকানের সামনে নিয়মিত
গৃহহীন মানুষদের রাতে ঘুমাতে দেখা যায়। এর কাছেই ডরচেস্টার হোটেল যেখানে
ঘরভাড়া প্রতি রাত ৫৫০ পাউন্ড থেকে শুরু হয়ে ৭০০০ পাউন্ড পর্যন্ত রয়েছে।
এদিকে ঐতিহাসিক মারবেল আর্চ এলাকা কেন্দ্রে ঘাসের ওপর অনেক গৃহহীন মানুষকে
ক্যাম্পিং করে থাকতে দেখা যায়। এরা প্রধানত রোমানিয়ান আর বুলগেরিয়ান নাগরিক
বলে ধারণা করা হয়। লন্ডনে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা এপ্রিল ২০১৪ থেকে মার্চ
২০১৫ সময়ের মধ্যে ১৬ শতাংশ বেড়েছে। এর আগের বছর এ হার বৃদ্ধি পেয়েছিল মাত্র
১ শতাংশ। ওয়েস্টমিনিস্টার, যেখানে গ্রোসেভোনোর প্লেস অবস্থিত সেখানে
বাস্তুচ্যুত মানুষের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ শতাংশ। গতকাল ডেইলি মেইলের
প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিগুলো যেখান থেকে তোলা হয়েছে তা বেসরকারি
মালিকানাধীন স্থান। উল্লেখ্য, এদিকে বেলজিয়ামে ইউরোপীয় নেতারা অভিবাসী সংকট
মোকাবেলা ইস্যু নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। ইইউর ২৮ সদস্য রাষ্ট্র সম্প্রতি অবৈধ
অভিবাসীদের ব্যাপক আগমন প্রত্যক্ষ করেছে। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে
যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকে সড়কপথে বিপজ্জনক যাত্রায় প্রবৃত্ত হচ্ছেন আর
অনেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার মতো দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। লন্ডনের
অভিজাত এলাকাগুলো আর এর নিকটবর্তী স্থানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা
বলছেন, খোলা রাস্তার ওপর অভিবাসীদের রাতযাপনের বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ
নেয়া হচ্ছে না। অনেকে এ এলাকায় দুই বছর ধরে এভাবেই বাস করে আসছেন বলে তারা
জানান। ওয়েস্টমিনিস্টার সিটি কাউন্সিল অতীতে এ এলাকা থেকে অভিবাসীদের
সরানোর জন্য প্রচারণা চালিয়েছিল। একপর্যায়ে অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত
পাঠানোর জন্য তারা টিকিট কিনে দেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিল। এ মাসের শুরুতে
কাউন্সিল বলেছে, অবৈধ অভিবাসীদের সরাতে বাধ্য করার জন্য তাদের কঠোরতর
ক্ষমতা প্রয়োজন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলেছে, এলাকাগুলো প্রতিদিন টহল দেয়ার
জন্য তারা অভিবাসন কর্মকর্তা এবং কাউন্সিল ওয়ার্ডেনদের সঙ্গে একযোগে কাজ
করছেন। এ বিষয়ে মতামতের জন্য ওয়েস্টমিনিস্টার কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ
করেছে ডেইলি মেইল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন জবাব মেলেনি।
No comments