দুর্ভোগ

টানা বৃষ্টি, জলজট আর যানজটে দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা। একটানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করাও হয়ে পড়েছে কঠিন। আর জলজটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নগরীর চিরচেনা যানজট। বাড্ডা, কুড়িল, রামপুরা, শান্তিনগর, মিরপুর, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। ভাঙাচোরা রাস্তা ও খোলা ম্যানহোলে অসাবধানতাবশত ঘটেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এছাড়া নগরীর অলিগলিতে গ্যাস পাইপলাইন, পানির লাইন, পয়নিষ্কাশনের জন্য চলছে চিরাচরিত খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারাও জলাবদ্ধতা ও কাদার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাননি। ভোগান্তির শিকার হওয়া নগরবাসীরা জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও কাদাপানিতে একাকার হতে হচ্ছে তাদের।
বিরামহীন বৃষ্টিতে গতকাল মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এখানকার কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে অলিগলির বিভিন্ন বাসাবাড়ি এমনকি দোকানেও পানি ঢুকে পড়ে। ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয় এলাকাবাসীর। রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এসব এলাকায়। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এখানকার জলাবদ্ধতা ও কাদাপানির মাখামাখি নিত্যচিত্র।  গতকাল জলাবদ্ধতার কারণে বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক পার হতে একেকটি গণপরিবহনের লেগেছে আধ ঘণ্টা থেকে দেড়ঘণ্টা পর্যন্ত। অনেকেই সময় বাঁচাতে হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাস্তার পাশে  জমে থাকা কাদা আর পানিতে মাখামাখি হতে হয় তাদের। একই অবস্থা ছিল রাজধানীর কুড়িল, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায়। জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা এক প্রকার থমকে দাঁড়ায়। রাস্তায় জমে থাকা হাঁটু সমান পানি পাড়ি দিয়েই কর্মস্থলে যেতে-আসতে হয় তাদের। গত কয়েকদিন ধরেই এ অবস্থা চলছে বলে জানান বাড্ডা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। মতিঝিল এলাকার কবি জসীমউদদীন রোড, নটর ডেম কলেজ, ফকিরাপুলের বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। ফার্মগেট থেকে গ্রীন রোড সড়কের রাস্তায়ও জমে পানি। এসব এলাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন। ফার্মগেটের পশ্চিম ও পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় একমাস ধরে চলছে সুয়্যারেজ লাইন নির্মাণের কাজ। রাস্তার মাঝখানে বিশাল গর্ত খুঁড়ে তার পাশেই রাখা হয়েছে মাটি। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই আশপাশের রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। আর কাদাপানিতে মাখামাখি হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
এদিকে গতকাল জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। মিরপুর, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, মৎস্য ভবন, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যানজটের ভয়াল চিত্র। যানজটের জন্য বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতাকেই দায়ী করছেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। তাদের দাবি বিরামহীন বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। যার প্রভাব পড়েছে অন্যান্য রাস্তায়। ফলে যানজটের মাত্রা বেড়েছে। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফার্মগেট থেকে মতিঝিল, গুলিস্তান অভিমুখী গণপরিবহনগুলো কাওরানবাজারে এসে পড়ে দীর্ঘ যানজটে। একেকটি সিগন্যাল পার হতে সময় লেগেছে আধ থেকে পৌনে একঘণ্টা। এছাড়া মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পুরানা পল্টন পার হতেও বেশ বেগ পেতে হয়। মিরপুর থেকে গুলিস্তান অভিমুখী ইটিসি পরিবহনের সুপারভাইজার জামাল বলেন, মিরপুরে জলাবদ্ধতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন বাসই গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। অন্যদিন যে ট্রিপ হয় আজ (গতকাল) তার অর্ধেকও হয়নি। একারণে আর্থিকভাবেও লোকসান গুনতে হবে তাদের। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও গতকাল দুপুরের পর রাজধানীর যানজটের পরিস্থিতির অবনতি হয়। ফার্মগেট থেকে মতিঝিল, গুলিস্তান অভিমুখী গাড়িগুলো যানজট ও জলজট মাড়িয়ে কোনমতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারলেও মতিঝিল, গুলিস্তান থেকে ছেড়ে আসা গণপরিবহনগুলো তীব্র যানজটের কবলে পড়ে। বিশেষ করে পুরানা পল্টন, প্রেস ক্লাব, শাহবাগ এলাকা পার হয়ে ফার্মগেট আসতে এক থেকে দু’ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। প্রায় দিনভর এই সড়কে গণপরিবহনগুলোকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যানজট থেকে নিষ্কৃতি  পেতে অনেক গণপরিবহন বিকল্প সড়ক দিয়ে আসার চেষ্টা করলেও যানজটের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এছাড়া সময় বাঁচাতে অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তুমুল বৃষ্টির কারণে ভিজে নেয়ে একাকার হতে হয়েছে তাদের। এক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মতো। পুরানা পল্টন এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে বিরামহীন বৃষ্টিতে যানজট বেড়েছে। সকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও দুপুরের পর থেকে যানজট বেড়েছে। বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাসের সুপারভাইজার সোহেল মিয়া বলেন, মৎস্য ভবন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পার হয়ে শাহবাগ আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। শাহবাগ এলাকায় কর্তব্যরত উপ-পরিদর্শক (ট্রাফিক) তৌফিকউদ্দিন বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যেকারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শাহবাগ এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। গুলশান থেকে মগবাজার-মালিবাগ হয়ে মতিঝিল অভিমুখী ৬ নম্বর বাসগুলোকে মগবাজার চৌরাস্তা পার হতে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কয়েকজন যাত্রী জানান, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই শুকনো দিনে ধুলা, বালি ও বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও কাদাপানি পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে তাদের।
এদিকে আজ থেকে বৃষ্টি কমার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আজ থেকে বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে আসতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, আজ  সকাল থেকেই দেশের সব জায়গায় বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি ছিল। তবে রোববার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.