কৃত্রিম পায়ে আসল পায়ের অনুভূতি

একজনের পা নেই। কোন দুর্ঘটনায় হয়তো তিনি তার এক পা বা দুটি পা হারিয়েছেন কিংবা ক্যানসারের মতো কোন রোগে পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাঁটাচলার জন্য চিকিৎসকরা কৃত্রিম পা সংযোজন করেছেন। কিন্তু, সেই পায়ে কোন বোধ নেই। নেই বিন্দুমাত্র কোন মনুষ্য অনুভূতির লেশ। তাদের জন্য অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানীরা দারুণ এক সুখবর এনেছেন। অত্যাধুনিক এ প্রযুক্তির কল্যাণে পায়ের পাতা থেকে আসল পায়ের মতোই অনুভূতি পাওয়া যাবে। এ ধরনের ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাই প্রথম। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ২০০৭ সালে ডান পা হারিয়েছিলেন ওল্ফগ্যাং র‌্যাংগার (৫৪)। শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন তিনি। স্ট্রোকে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার পর পা হারাতে হয় তাকে। নতুন এ প্রযুক্তির কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়েছে তার দেহে। ওল্ফগ্যাং বলছিলেন, আমার বোধ হচ্ছে, আমার পা ফিরে পেয়েছি। এটা অনেকটা দ্বিতীয় জীবন পাওয়ার মতো ঘটনা। লিঞ্জ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হিউবার্ট এগার বলছিলেন, কৃত্রিম পায়ের একেবারে তলায় স্নায়ুকে উদ্দীপিত করার জন্য ৬টি সেন্সর লাগানো হয়েছে। সেটা মস্তিষ্ককে অনুভূতির বার্তা পাঠায়। তবে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় কয়েকটি ধাপে। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা অন্য কোন কাজ করার সময় গোড়ালি, পায়ের আঙুলের চাপ ও পায়ের নড়াচড়ার তথ্য সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করে ও তা মস্তিষ্কে প্রেরণ করে সেন্সরগুলো। সংকেতগুলো প্রথম একটি মাইক্রো-কন্ট্রোলারের কাছে পাঠায় সেন্সর। পায়ের হাঁটু বা ওপরের অংশ থেকে যে ধাতব পা বসানো থাকে উদ্দীপনা সেখানে প্রেরিত হয় এবং এক ধরনের কম্পন হয়। চামড়ার সঙ্গে সংযোগস্থলে যে স্নায়ুগুলো থাকে, সেগুলোও উদ্দীপিত হয়। আর সেখান থেকেই সরাসরি মস্তিষ্কে চলে যায় সংকেতগুলো। ফলে, আসল পায়ের অনুভূতি হয়। অধ্যাপক এগার বলছিলেন, সেন্সরগুলো মস্তিষ্ককে বলে যে একটি পা আছে। কৃত্রিম পা যিনি পরবেন, তিনি হাঁটার সময় মাটিতে পা স্পর্শ করা বা মাটি থেকে পা ওঠানোর বিষয়গুলো অনুভব করতে পারবেন। ওলফগ্যাং তার অনুভূতির ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন এভাবে, আমি আর বরফের ওপর পিছলে যাই না, নুড়িপাথর, কংক্রিট, ঘাস নাকি বালির ওপর দিয়ে হাঁটছি তা আমি না দেখেই বলে দিতে পারি। এমনকি ছোট ছোট পাথরগুলোও অনুভব করতে পারি আমি। শুধু তাই নয়। তিনি দৌড়ান, সাইকেল চালান এবং পাহাড়ও চড়েন। বড় আরেকটি প্রাপ্তি হলো, ভৌতিক এক তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ব্যথাও অনেকটা কমে গেছে। হারানো অঙ্গের জন্য তথ্য না খুঁজে, মস্তিষ্ক এখন প্রকৃত তথ্য পাচ্ছে বলে জানান এগার। ভিয়েনায় এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার গবেষক দলটি তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। তবে এখনও কোন মেডিকেল জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়নি। এর আগে গত বছর আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল বায়োনিক বা কৃত্রিম হাত উদ্ভাবন করেছিল, যা আঙুলের যে কোন অনুভূতি মস্তিষ্কে পৌঁছে দেবে। ‘সায়েন্স ট্র্যান্সলেশনাল মেডিসিন’ সাময়িকীতে ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল। তবে পায়ের ক্ষেত্রে অনুভূতি পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

No comments

Powered by Blogger.