সিলেটের সাবেক ডিসি শহিদুল চলতেন স্ত্রীর ইশারায় by দীন ইসলাম

সিলেটের সাবেক ডিসি মো. শহিদুল ইসলাম চলতেন স্ত্রী শাহনাজ ইসলামের আঙুলের ইশারায়। তার স্ত্রীকে ম্যানেজ করতে পারলে সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে কোন কাজ বাগিয়ে আনা কঠিন হতো না। এমনটাই এতদিন প্রচলিত কথা ছিল সিলেটের বিভিন্ন মহলের মুখে মুখে। কোন অকাজকে কাজে পরিণত করতে সিলেটে কর্মরত প্রশাসন ছাড়া অন্য সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বাধার মুখে পড়লে বিশেষ জেলায় বাড়ি ও মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গাতেন। এ মওকাকে কাজে লাগিয়েই দোর্দণ্ড প্রতাপে সিলেটের সিভিল প্রশাসন চালান সিলেটের সদ্য সাবেক এ ডিসি। তবে নানামুখী বিতর্কিত ভূমিকার কারণে গত ১০ই জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বদলি করা হয়। এরপর কয়েক দিন নামামুখী তদবির করেও সিলেট জেলার ডিসি পদে থাকতে পারেননি শহিদুল ইসলাম। সিলেট জেলার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দিয়ে তদবির করান এবং বিশেষ জেলার অধিবাসী হিসেবে বদলি ঠেকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের এ কর্মকর্তাকে সিলেটের ডিসির পদ থেকে গত বৃহস্পতিবার বিদায় নিতে হয়েছে। নতুন ডিসি পদে দায়িত্ব নিয়েছেন জয়নাল আবেদীন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের সাবেক ডিসির পরিবারের ব্যবহৃত গাড়ি থেকে র‌্যাব কর্তৃক ফেনসিডিল উদ্ধার ও ড্রাইভার গ্রেপ্তারের পর দুমাস স্বপদে বহাল ছিলেন। বিশেষ একটি জেলায় বাড়ি হওয়ার কারণে এমন সুবিধা পেয়েছেন তিনি। এমনটা বলাবলি করছেন প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণের বিল প্রদানে অনিয়ম, সরকারি খাসজমি ব্যক্তি নামে রেকর্ড করিয়ে দেয়া ও ভূমি অফিসের কর্মচারীদের বদলির মাধ্যমে দুই হাতে অর্থ কড়ি কামিয়েছেন তিনি। এছাড়া যেসব জমি দিনের পর দিন ধরে নানা আইনি মারপ্যাঁচে নামজারি হচ্ছিল না ওইসব নামজারি করিয়ে দিয়েছেন। এনিয়ে সিলেটের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১১ই আগস্ট থেকে ২০০৬ সালের ২রা মে পর্যন্ত সাবেক ডিসি শহিদুল ছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এছাড়া ২০০৭ সালের ২১শে জুন থেকে ২০০৯ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সিলেট জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে দীর্ঘ সময় চাকরি করার কারণে সবকিছুই ছিল তার নখদর্পণে। এ কারণে ২০১৩ সালের ৫ই মে সিলেটের ডিসি পদে পোস্টিং পাওয়ার পর পুরনো লোকদের মাধ্যমে দুই হাতে অর্থকড়ি কামানো শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদ থেকে প্রত্যাহার হয়ে একই জেলায় ২০১৩ সালে জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়া ঠিক নয়। এর মাধ্যমে প্রশাসন আরও বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সিলেট ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিসির পরিবারের ব্যবহৃত প্রগতি থেকে কেনা পাজেরো জিপ (সিলেট-ঘ ১১-০২৫৭) থেকেই গত ১৪ই এপ্রিল ৩৭৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে র‌্যাব-৯ এর সদস্যরা। শহিদুল ইসলাম ডিসি পদে যোগদানের পর থেকে এ ব্যবসা করছেন বলে র‌্যাবকে জানান ওই গাড়ির ড্রাইভার রুমন মিয়া। এনিয়ে প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় হয়। ফেনসিডিলসহ ডিসির ড্রাইভারকে আটকের পর র‌্যাব-৯ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে দীর্ঘ দিন ধরে একটি সরকারি গাড়ি দিয়ে  ফেনসিডিল আনা-নেয়া হচ্ছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রুমন মিয়া সার্কিট হাউজ থেকে উপশহরে যাচ্ছিল। পথে শিবগঞ্জ এলাকায় গাড়ি তল্লাশি করে ৩৭৫ বোতল ফেনসিডিলসহ তাকে আটক করা হয়। রুমন দুবছর ধরে ফেনসিডিল আনা-নেয়ার কাজ করছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে সেনাবাহিনীর আলাদা কমান্ডিং এরিয়া হচ্ছে। এর জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির বিল নিয়ে নানা নয়ছয় করেন সাবেক ডিসি শহিদুল। এ বিষয়ে একটি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশনে চলমান রয়েছেন। অদৃশ্য শক্তির বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা, গাড়ি থেকে ফেনসিডিল উদ্ধারের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেতে বেগ পেতে হয়নি সাবেক ডিসি শহিদুলের। এখন তিনি কর্মরত আছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক পদে। গতকাল এ পদে যোগদানের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে যোগদানপত্র দিয়েছেন। সাবেক ডিসি মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমার স্ত্রীকে জড়িয়ে যা বলা হচ্ছে তা ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ আমার স্ত্রী বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন। তার পরিবারের গাড়িতে ফেনসিডিল বহন সম্পর্কে তিনি বলেন, গাড়িটি ছিল ডিসি পুলের গাড়ি। এটা আমার পরিবারের ব্যবহৃত কোন গাড়ি নয়। তার বিরুদ্ধে আনা অন্য অভিযোগ সম্পর্কে শহিদুল ইসলাম বলেন, রেকর্ড করে দেয়ার দায়িত্ব ডিসির নয়, অন্যদের। 

No comments

Powered by Blogger.