স্ত্রীর মামলায় সাংবাদিক মুকুল রিমান্ডে

সন্তান চন্দ্রমুখীর মৃত্যুর পর সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলেন তারা। শোকাতুর মা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। আর বাবা দিনের পর দিন লিখে গেছেন কন্যার স্মৃতি। অথচ সেই সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম মুকুলের বিরুদ্ধেই মামলা হলো নারী ও শিশু নির্যাতনের। নিজ স্ত্রী সাংবাদিক নাজনীন আখতার তন্বী দায়ের করেছেন এ মামলা। স্ত্রীকে নির্যাতন আর অন্য নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই কানাঘুষা চলছিল। স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারের পর পুলিশ সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম মুকুলকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চায়। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিমের আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার আরেক আসামি মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস সিঁথি। যাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে নাজনীন আখতার বলেন, ২০১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর একমাত্র মেয়ে চন্দ্রমুখী মারা যাওয়ার পর শোকে তিনি পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। এরপর দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে আবার তারা দুজন সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরবর্তীকালে রকিবুল এ সন্তান তার কাঙ্ক্ষিত সন্তান নয় এবং তিনি নতুন সুখের সন্ধান পেয়েছেন উল্লেখ করে একটি স্ট্যাটাসও দেন ফেসবুকে। এমনকি সেখানে নাজনীনকে শুধু কাগজের বউ বলেও উল্লেখ করেন। সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, এটা তার অনিচ্ছার সন্তান। শুধু তন্বীর চাওয়ার কারণেই নাকি বাচ্চা পেটে এসেছে। সে এখন অন্য নারীতে সুখ খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় যে রকিবুল ছায়ানটের শিল্পী এবং ঢাকা ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার রাজিউল আমিনের স্ত্রী মেহেরুন বিনতে ফেরদৌসের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে কথা বললে স্বামী রকিবুল বিভিন্ন সময়ে নাজনীনকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। একবার রক্তাক্ত অবস্থায় সহকর্মীরা বাসা থেকে নাজনীনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরই মাঝে মুকুল আর তার নতুন বান্ধবীর (মামলার দ্বিতীয় আসামি) নানারকম অশ্লীল ছবিও আসতে থাকে ফেসবুকের কল্যাণে।
নাজনীন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময়ে রকিবুল তার কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন। সর্বশেষ রাজউকে পূর্বাচলে বরাদ্দ পাওয়া একটি প্লটের কিস্তির জন্য তিনি বোন এবং দুলাভাইয়ের কাছ থেকে এনে ১৪ লাখ টাকা দেন রকিবুলকে। কিন্তু রকিবুল ওই প্লটটি নিজের নামে লিখে নেন এবং সম্প্রতি সেটা বিক্রিও করে দেন। কথা ছিল, কিস্তির টাকা পরিশোধের পরিপ্রেক্ষিতে ওই জমির তিন কাঠা দুলাভাইকে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে রকিবুলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি পুরোপুরিই অস্বীকার করেন, উপরন্তু শক্তি এবং সাহস থাকলে মামলা করতে বলেন। এটাও বলেন যে, মামলা করেও কোন লাভ হবে না।
এত দিন মামলা না করার বিষয়ে নাজনীন আখতার বলেন, সবার পরামর্শে ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি এত দিন মামলা করেননি। কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই মামলা করলেন। তিনি তার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, এর ন্যায়বিচার দাবি করেন।
২০১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর পাঁচ বছরের মেয়ে চন্দ্রমুখীর মৃত্যুর ঘটনা এবং পরবর্তী কন্যাশোক সইতে না পেরে মা নাজনীনের পাঁচ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টার কারণে এই সাংবাদিক দম্পতি সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে সেবার বেঁচে যান নাজনীন, কিন্তু তার হাত ভেঙে যায়, মেরুদণ্ডও ব্যাপক আঘাতপ্রাপ্ত হয়। সাংবাদিক মহল ছাড়াও এই ঘটনাটি তখন ব্যাপক নাড়া দেয় সাধারণের মনেও। ডিসেম্বরে জন্ম নেয় নাজনীনের দ্বিতীয় মেয়ে আয়রা। যখন সবাই চিন্তিত বাচ্চার সুস্থতা নিয়ে, তখন সে সবাইকে চমকে দিয়ে বেশ সুস্থভাবেই জন্ম নেয়।

No comments

Powered by Blogger.