বাংলাদেশ যেন বিস্ময়কর প্রতিভার খনি!

অভিষেকেই চমকে দেওয়া বাংলাদেশের দুই তরুণ
পেসার তাসকিন, মুস্তাফিজ। ছবি: প্রথম আলো
বিস্ময়কর প্রতিভা উপহারে বাংলাদেশের জুড়ি মেলা ভার! কদিন আগেই বাংলাদেশ পেল নতুন এক বিস্ময়—মুস্তাফিজুর রহমান। অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরুতেই বাংলাদেশি বোলারদের এমন চমক দেখানো নতুন নয়। গত ১১ বছরে এমন আরও চার প্রতিভাবান বোলার বাংলাদেশ পেয়েছে, যারা অভিষেকেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন চারদিকে। এ সময়ে অভিষিক্ত বোলারদের গড় ও ইকোনমি বিবেচনায় বাংলাদেশের ওপর কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা। অভিষেকেই চমকে দেওয়া বোলারদের নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ক্রিকেটের ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো। সেখানে দেখা যায়, বিস্ময়কর প্রতিভা উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ভারতের মতো সব বড় দলগুলোকেই।
গত ১১ বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অভিষিক্ত বোলাররা। ৪৭ ম্যাচে ৪৭ উইকেট তাদের। তবে গড় ও ইকোনমি বিবেচনা করলে তাদের অবস্থান ১১ দলের মধ্যে আটে। উইকেট সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে না থাকলেও গড় ও ইকোনমিতে সবার ওপরে প্রোটিয়ারই। ৩০ ম্যাচে ১৯.৭০ গড় ও ৪.৬৭ ইকোনমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিষিক্ত বোলাররা নিয়েছেন ৩৭ উইকেটে। এই সময়ে প্রোটিয়া দলে অভিষেক হয়েছে ভারনন ফিল্যান্ডার, ইমরান তাহির, মার্চেন্ট ডি ল্যাঙ্গা ও লনওয়াবো সতসোবের মতো প্রতিভাবান বোলার।
দক্ষিণ আফ্রিকার পরই অবস্থান বাংলাদেশের তরুণ তুর্কিদের। তবে ​একদিক দিয়ে প্রোটিয়াদের ছাড়িয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৪ সাল থেকে হিসাব করলে গত ১১ বছরে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলারদের চেয়ে বেশি ৪ উইকেট নিতে পারেননি অন্য কোনো দেশের বোলাররা। বছর ছয়েক আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রুবেল হোসেন। সে ম্যাচে রুবেলের ৩৩ রানে ৪ উইকেটের সুবাদে ১৪৭ রানেই আটকে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ৫ উইকেট হারিয়ে সে রান টপকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বছর তিনেক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ চমক দেখিয়েছিলেন অফ স্পিনার সোহাগ গাজী। সোহাগের ঘূর্ণিতে নাকাল ক্যারিবীয়রা অলআউট ১৯৯ রানে। বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়েই পৌঁছে গিয়েছিল লক্ষ্যে। এ ক্ষেত্রে তাসকিনের ভাগ্যটা খারাপ। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে সেরা বোলিং করলেন কিন্তু দল জিততে পারেনি। তাসকিনের তোপে গত বছর ভারত অলআউট হয়েছিল ১০৫ রানে। জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৫৮ রানে।
তাইজুলের কীর্তিও কোনো অংশে কম নয়। অভিষেকেই হ্যাটট্রিক, ম্যাচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। গত বছর ডিসেম্বরে তাইজুলের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ১২৮ রানে। বাংলাদেশ জিতেছিল ৫ উইকেটে। আর সর্বশেষ, মুস্তাফিজ-কীর্তির স্মৃতি তো টাটকাই।
অভিষেকে চমকে দেওয়া বোলিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে ভারত। এ তালিকায় ভারতের অবস্থান জিম্বাবুয়ে-কানাডার পরে। এ সময়ে ভারত পেয়েছে প্রবীণ কুমার, ইরফান পাঠান, কর্ন শরমা, বরুণ অ্যারন, পিযুশ চাওলা ও রাহুল শর্মার মতো বোলার। তবে কেউ অভিষেকে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি।
এমন পরিসংখ্যানে ভালো লাগলেও তৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ দলে শুরুতেই চমক দেখানো প্রতিভা যেমন এসেছে, আবার সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়ারও উদাহরণ কম নয়। কাজেই দীর্ঘ দিন ধারাবাহিক পারফর্ম করে দলকে সেবা দেওয়াই মূল কথা।
অভিষেকেই চমকে দেওয়া পাঁচ বাংলাদেশি বোলার
বোলার      বোলিং ফিগার     প্রতিপক্ষ     সাল
তাসকিন আহমেদ      ৫/২৮      ভারত      ২০১৪
মুস্তাফিজুর রহমান      ৫/৫০      ভারত     ২০১৫
তাইজুল ইসলাম     ৪/১১     জিম্বাবুয়ে     ২০১৪
সোহাগ গাজী     ৪/২৯     ওয়েস্ট ইন্ডিজ     ২০১২
রুবেল হোসেন      ৪/৩৩     শ্রীলঙ্কা     ২০০৯
ওয়ানডেতে অভিষিক্ত বোলারদের পারফরম্যান্স (২০০৪ থেকে)
দল                   ম্যাচ                উইকেট           গড়         ইকোনমি         ৪‍+উইকেট
দক্ষিণ আফ্রিকা       ৩০                ৩৭                ১৯.৭০        ৪.৬৭             ৪
বাংলাদেশ             ৩৬                ৪২                ২১.০৪        ৪.৪৯             ৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজ         ৪২                ৩৩                 ২৫.৩৬       ৪.৫১             ১
ইংল্যান্ড               ৪৫                ৪৩                 ২৬.২৭       ৪.৭২             ১
পাকিস্তান             ৪০                ৩৭                  ৩০.৩৫       ৪.৭৯            ০
শ্রীলঙ্কা                ৪০                ৩০                 ৩০.৯০        ৫.১১            ০
জিম্বাবুয়ে             ৩৮                 ৪০                ৩১.৬৫         ৫.৪২           ১
অস্ট্রেলিয়া             ৪৭                ৪৭                 ৩৩.১৭         ৫.০৫           ১
নিউজিল্যান্ড          ৪৩                ৩৩                 ৩৪.৭৮          ৫.৫৭          ২
কানাডা               ৩০                 ২৯                 ৩৯.০৬          ৫.৪০          ১
------------------
ভারত                 ৪২                 ৩১                 ৪২.১২          ৫.১০           ০

No comments

Powered by Blogger.