যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের চেয়েও বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ: বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, প্রকৃত চিত্র তার চেয়েও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই প্রতিবেদন বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই নেতিবাচক। বিরোধী দলের রাজনীতি করে বলেই বিএনপি এই নেতিবাচক প্রতিবেদনে উল্লসিত নয়। তবে প্রশ্ন হলো, কেন বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধরনের  নেতিবাচক চিত্র আন্তর্জাতিক মহলে প্রচার হবে। গতকাল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে চিত্র তুলে ধরেছেন তাতে বাস্তবতার কিছু অংশ ফুটে উঠেছে। প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ।  দেশে জরুরি অবস্থা নেই। তারপরও গণমাধ্যম কর্মীরা নিজ  থেকেই অনেক কিছু সেন্সর করেন। মিডিয়া যখন ভয়ভীতির মাধ্যমে কাজ করে তখন তা প্রকৃত গণমাধ্যম হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে যে সরকার এখন দেশ শাসন করছে তা জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না। সম্ভবত এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তা মনে করেন না। সে কারণেই তিনি নির্বাচনের পরপরই বলেছিলেন, খুব দ্রুত সময়ে আলোচনার মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। ড. রিপন বলেন, বর্তমানে যে সংসদ বহাল আছে তার মধ্যে ১৫৪ জন ফাও এমপি আছেন। বাকি যারা আছেন তাদের কেউই ৫ ভাগেরও কম ভোট পেয়ে সংসদে গিয়েছেন। সে কারণে এসব  ভোটারবিহীন এমপি নির্বাচনের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠেন। এই সংসদে কিছু লাফাঙ্গামার্কা এমপি আছেন। যখন সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখন সেই লাফাঙ্গা-বাচাল মার্কা এমপিরা আবোল-তাবোল বক্তব্য দিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করে থাকেন। তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শুক্রবার খুচরা পার্টির নেতা ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়ার জায়গা হবে কাশিমপুর কারাগারে। আমরা জানি না, তিনি কবে বিচারক হলেন। আমরা বলছি না, ইনুর জায়গা হবে কুষ্টিয়া কারাগারে। কারণ আমরা বিচারক নই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের  বোমাবাজি ও সন্ত্রাসের জনক হচ্ছেন ইনুরা। তারাই এদেশে হত্যা-সন্ত্রাসের অপরাজনীতি শুরু করেছিলেন। এই ইনুরাই শেখ মুজিবের শাসনকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে ঝালাপালা করে দিয়েছিলেন।  যে জন্য দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি করলেও শেখ মুজিব একদলীয় বাকশাল শাসনের কলঙ্ক গায়ে মাখাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ড. রিপন বলেন, পঁচাত্তরের পর ইনুরাই বাংলাদেশের  সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। ওই অপরাধে তিনি  গ্রেপ্তারও হন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় তিনি আজও বেঁচে আছেন। রাজনীতি করছেন। ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার সুযোগ পাচ্ছেন। তা না হলে তার ফাঁসির কাষ্টে  ঝোলার কথা। মূলত নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই খুচরা পার্টির নেতারা নানারকম উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশের রাজনীতিকে উত্তপ্ত করতে চান। তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্পর্কে নানা ধরনের আবোল-তাবোল উত্তেজিত কথা বলে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে চান। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এসব খুচরা নেতাদের বক্তব্যে সায় দেবেন না। তিনি বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে  দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদক্ষেপ নেবেন। বিএনপিও এই খুচরা পার্টির নেতাদের আবোল-তাবোল ও উস্কানিমূলক বক্তব্যে উত্তেজিত হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেবে না। সংবাদ সম্মেলনে দলের যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.