শত চেষ্টায় খালেদকে ভুলতে পারেনি শিফা by ওয়েছ খছরু

সিলেটে প্রবাসী বধূ ফারজানা আক্তার শিফা কাহিনীর ইতি ঘটছে না। বরং এবার শিফার কু-কর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে স্বামীর পরিবার। বলছেন, ৮ দিনের পলাতক জীবনের পর শিফা যা বলেছে- তা কেবলই সাজানো নাটক। তারা বলেন, শিফা অপহৃত হয়নি। শিফা পালিয়েছে। পালানোর আগে এ নিয়ে মজির ও শিফার পরিবারের মধ্যে দফায় দফায় কথাবার্তা হয়েছে। আবদুল মান্নানও শিফাকে পরকীয়ার পথ থেকে ফেরাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে ব্যর্থ হন আবদুল মান্নান। শেষে শিফা  পালিয়ে যাওয়া এবং উদ্ধারের পর মজিরের ভাইপো প্রবাসী নাজিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এসব বিষয় নিয়ে গতকাল বিকালে সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিফার বড় জা সাইচ্ছারুন্নেছা। সিলেটের মোগলাবাজার ইউনিয়নের কান্দেবপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী সাইচ্ছারুন নেছা। তিনি প্রবাসী নাজিমের মা। আর শিফার স্বামী মজিরউদ্দিনের ভাবী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মজির উদ্দিন তালুকদার ২০০৪ সালে গোলাপগঞ্জের লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের আবদুল মান্নানের মেয়ে ফারজানা আক্তার শিফা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনে আলী আকবর মাহী ও শাহী আকবর শাফী নামে দুটি সন্তান রয়েছে। মজির উদ্দিনের পাঠানো ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা  ৮ই জুন পুবালী ব্যাংক চৌধুরীবাজার শাখা থেকে উত্তোলনের পর স্বামীর বাড়িতে আসেন শিফা। পরদিন সকালে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে একটি বড় সাইট ব্যাগ ও ছেলের বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বের হন। তবে স্কুলে না গিয়ে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে পথিমধ্যে খালেদ আহমদের সাথে পালিয়ে যায় সে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শিফার পিতাসহ বাড়ির লোকজন তার বসত ঘরের আলমিরা তল্লাশি করেন। কিন্তু আলমিরায় রক্ষিত উত্তোলিত টাকাসহ নগদ ৫ লাখ টাকা এবং তার ব্যবহৃত প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৯ই জুন পালিয়ে যাওয়ার পর সিলেটের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে এফিডেভিড করে স্বামীকে তালাক দেয় শিফা। এরপর কাবিন নিবন্ধনের মাধ্যমে খালেদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু উদ্ধারের পর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় আদালতে ২২ ধারায় পিত্রালয়ের লোকজনের শেখানো বুলি আওড়ায় শিফা। পালিয়ে যাওয়ার আগেও ফারজানা আক্তার শিফা সঙ্গে একই এলাকার মুজিবুর রহমানের ছেলে সিএনজি অটোরিকশাচালক খালেদ আহমদের সুসম্পর্ক ছিল। ২০১৪ সালে তার স্বামী মজির উদ্দিন তালুকদার ছুটিতে দেশে আসেন। দেশে অবস্থানকালে খালেদের সাথে সুসম্পর্ক টের পান শিফার স্বামী। মজির তার স্ত্রীর কাছে খালেদ সম্পর্কে জানতে চান।  কিন্তু শিফা বেগম খালেদের পক্ষে স্বামীর কাছে সাফাই করেন। একপর্যায়ে খালেদের মাকে দিয়ে কৌশলে আমার শাশুড়িকে ধর্মের বোন বানানো হয়। সে সুবাদে খালেদ হয়ে যায় শিফার দেবর। আর সেই সুযোগে খালেদ আরও নিবিড়ভাবে শিফার সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। বিভিন্ন সময় বাজার করতে যাওয়ার নামে তাদের এই সম্পর্ক লোকজন দেখে মুখে বলাবলি করতে থাকেন এবং বাড়িতে স্বজনদের কাছে বলেন। এছাড়া ছোট ছেলেকে মোগলাবাজার আল ইকমা স্কুলে ভর্তি করে শিফা। ছেলেকে নিয়ে খালেদের সিএনজি অটোরিকশায় স্কুলে আসা-যাওয়াকালে নিবিড় সম্পর্কের বিষয়টি স্থানীয়রা দেখে আমার ভাসুর মনু মিয়াকেও বলেন। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন আমার ভাসুর। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নাজিম উদ্দিন তার ফুফা-ফুফুসহ শিফার পিত্রালয়ে যান। নাজিম তার নানা অর্থাৎ শিফার পিতা আবদুল মান্নানের কাছে শিফার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নালিশ দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিফা তার স্বামীর কাছেও নাজিমের বিরুদ্ধে নালিশ করে। সে বলে, নাজিম নাকি তার বিরুদ্ধে বদনাম ছড়াচ্ছে এবং খালেদ তাকে এ বিষয়টি জানিয়েছে বলে উল্লেখ করে শিফা। তৎক্ষণাৎ শিফাকে তার বাবা ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলেন। ৯ই জুন পালিয়ে যাওয়ার আগে পিত্রালয়ে চলে যায় শিফা। যে কারণে আমার ছেলে নাজিম উদ্দিনসহ পরিবারে লোকজন শিফা বেগমকে আনতে যান। কিন্তু সে আসতে রাজি হয়নি। খালেদের সাথে সম্পর্কের ঘটনাও এদিন শিফার বাবা জানতে পারেন। এ ঘটনায় শিফার বাবা নাজিমসহ উপস্থিত শিফার স্বামী পরিবারের সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ঘটনাটি দেখে দেয়ার আশ্বাস দেন। এদিকে, শিফা পালিয়ে যাওয়ার পর আমার ছেলেসহ আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে ৯ই জুন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার পিতা। এরপর ১১ই জুন অপহরণ মামলা করেন। পরে ১৭ই জুন গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে শিফা ও তার ছেলে শাফিকে উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে খালেদকেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন মোগলাবাজার থানার এসআই স্বপন কান্তি দাশ। এরপর যা হলো- তা এক ধরনের নাটকই বলা চলে। সাইচ্ছারুন্নেছা জানান, ৯ই জুন পালিয়ে যাওয়ার দিনই শিফা সিলেটের আদালতে ৪নং বার হলে অ্যাডভোকেট আনছার খানের মাধ্যমে নোটারি পাবলিকের করে স্বামীকে তালাক দেয়। একই দিনে ওই আইনজীবীর মাধ্যমে হলফ সম্পাদন করে চালক খালেদকে বিয়ে করেন। এরপর ঢাকায় গিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৮নং ওয়ার্ডের কাজীর মাধ্যমে ১৫ই জুন তারা উভয়ে কাবিন  রেজিস্ট্রি করেন। ডকুমেন্ট-ই এর প্রমাণ দেয়। এদিকে, শিশু-সন্তানসহ অপহরণ মামলায় শিফার বাবা দাবি করেন, তার মেয়ে পালিয়ে যায়নি বরং তাকে অপরহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা ও প্রমাণাদি তার মামলার এজাহারে দেয়া বক্তব্য অসঙ্গতি প্রমাণ করে। এমনি আদালতে শিফা বক্তব্য দিলেও তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে চরম অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এদিকে, সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে শিফার বাবা নাজিমউদ্দিনকে ৫০ হাজার হাজার টাকা দিয়েছে বলে দাবি করেন। আর গতকালের সংবাদ সম্মেলনে নাজিম উদ্দিনের মা সাইচ্চারুন্নেছা দাবি করেছেন, শিফার বাবা নাজিমকে টাকা কোথায়, কিভাবে দিয়েছেন? লোক মারফত জানতে পেরেছেন, সেই লোকগুলো কারা? এবং ৫০ হাজার টাকাও তিনি কোথা থেকে পেলেন? এ বিষয়গুলো তার কথাবার্তা ও আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। শিফার বাবা অভিযোগে উল্লেখ করেন খালেদ পরিকল্পিতভাবে নাকি তার মেয়ে ও নাতিকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের ফন্দি করার চক্রান্ত করেছে। মূলত মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে মিথ্যার আশ্রয় নেন শিফার বাবা। তিনি বলেন, শুধু শিফার অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় শিফা ও তার বাবা আমার ছেলে নাজিম উদ্দিন, ভাসুর মনু মিয়াসহ স্বজনদের বিরুদ্ধে স্বামীর কাছে বদনাম রটিয়েছে। আর চালক খালেদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে স্বামীকে তালাক দিয়ে এখন উদ্ধারের পর বাবা-ভাইদের চাপে অপকর্ম ঢাকতে সবকিছু অস্বীকার করে সাজানো নাটকে মোড়াতে চেষ্টা করছে। সংবাদ সম্মেলনে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.