নামেই ১৪ দল by উৎপল রায়
নির্বাচন ও কর্মসূচিভিত্তিক ঐক্যের ভিত্তিতে গঠন করা হয়েছিল ১৪ দলীয় জোট। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ জোটের কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্থবির। নামমাত্র বৈঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এর কার্যক্রম। এমন অবস্থায় সরকার পরিচালনায় নির্ধারণে সুযোগ না থাকা ও আওয়ামী লীগের ‘একলা চলো’ নীতির কারণে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জোটের অন্য শরিক দলের নেতারা। জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের দুজন মন্ত্রিসভায় থাকায় এ দলের অবস্থান কখনও স্পষ্ট করা হয় না জোটের প্রশ্নে। তবে অন্য ছোট শরিক দলের নেতারা মনে করেন, যে লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল, তা আদৌ অর্জন হয়েছে কি-না তা বিচার-বিশ্লেষণের সময় এসেছে। নেতারা মনে করেন, সরকার পরিচালনার নীতিনির্ধারণে সুযোগ না থাকায় এ জোটের ছোট শরিক দলগুলোকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এদিকে অনিয়মিত বৈঠক ও প্রেস ব্রিফিং ছাড়া আর কোন কাজ নেই ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের। রাজধানীতে ১৪ দলের কার্যক্রম কিছুটা দৃশ্যমান হলেও সারা দেশে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের জোটের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করার পর প্রথম মেয়াদে ৫ বছর, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রায় দেড় বছরসহ মোট সাড়ে ছয় বছর অতিবাহিত হলেও এ দীর্ঘ সময়েও জোটকে গতিশীল করা যায়নি।
ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মাঝেমধ্যে ১৪ দলের নিয়ম রক্ষার বৈঠক হয়। নিয়মমতো প্রেস ব্রিফিংও হয়, তবে বৈঠকে নেয়া কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না। এ ছাড়া সরকার ও জোটের নীতিনির্ধারণী অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে সরকারের অংশীদার ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ছাড়া জোটের অন্য শরিকদের অংশগ্রহণ একেবারেই নেই। এ বিষয়ে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোন পরামর্শও করা হয় না। ফলে অনেক দিন থেকে ক্ষোভ ও হতাশা দানা বাঁধছে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের মনে। একদিকে আওয়ামী লীগের অবহেলা, সরকারে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব, অন্যদিকে ঝিমিয়ে পড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম। ফলে একপ্রকার হতাশ হয়ে পড়েছেন এ জোটের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। জোটের কয়েকজন নেতার দাবি, ২৩ দফার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল ১৪ দলীয় জোট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা, অসাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল, তা অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। চরম হতাশা ও অস্বস্তি কাজ করছে নেতাদের মনে। এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই দায়ী বলে মন্তব্য তাদের। জোট নেতাদের দাবি, দেশে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলেই কেবল ১৪ দলের গুরুত্ব বাড়ে। প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই জোট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
সম্প্রতি সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করায় ১৪ দলীয় জোটে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জোটের নেতারা মনে করেন, আদর্শগত ঐক্যের ভিত্তিতে ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল তার মূল ছিল সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান। বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের দলে ভিড়িয়ে আওয়ামী লীগ এ নীতির বরখেলাপ করছে।
১৯৯৮ সালের শেষের দিকে বিকল্প রাজনৈতিক জোট হিসেবে বাম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সাতটি দলের সঙ্গে আরও চারটি দল মিলে ১১ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। পরে ১১ দল দীর্ঘদিন জাতীয় ইস্যুতে রাজনীতির মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যায়। ২০০৪ সালে ৯ দফা দাবিতে ১১ দল ও আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ/মোজাফফর), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) মিলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। যদিও এ সময়ে বেশ কিছু দল যেমন জোট থেকে বেরিয়ে গেছে, তেমনি ছোট ছোট নতুন কিছু দলও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জোটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোট কিছুটা সক্রিয় হলেও নির্বাচনের পরই আবারও গাছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যায় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালে কিছু জনসভা ও বক্তব্য, বিবৃতি ছাড়া সারা দেশে ১৪ দলের তেমন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল ও চলতি বছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও বিগত কয়েক মাসে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক ও প্রেস ব্রিফিং ছাড়া আর কোন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিই ছিল না ১৪ দলের। আর ধানমন্ডিতে বৈঠক হলেও তা হয়েছে অনিয়মিত। আবার গুরুত্বপূর্ণ অনেক বৈঠকেই জোটের অনেক শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বৈঠকগুলোতে জোটকে সম্প্রসারিত করে জেলা ও উপজেলায় সমন্বয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মসূচি কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায় সে বিষয়ে জোটের শরিক অনেক শীর্ষ নেতার মতামত নেয়া হলেও তা আর কার্যকর করা হয়নি। সর্বশেষ গত ১২ই মে ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২১শে এপ্রিল বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা স্থগিত করা হয়। তারও আগে ৩১শে মার্চ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও প্রতি মাসে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক করার সিদ্ধান্ত ছিল।
১৪ দলে টানাপড়েন ও অস্বস্তির বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া মানবজমিনকে বলেন, কি পেলাম আর কি পেলাম না, সে হিসাব এখন আর করি না। বর্তমানে আমরা একটি ভারসাম্যহীন রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে রয়েছি। ভারসাম্য বলছি এ কারণে, যেখানে সরকার অত্যন্ত শক্তিশালী, সংসদে নামেমাত্র বিরোধী দল ও বিপর্যস্ত বিএনপি। ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী দল আর বাকিরা একেবারেই খর্বশক্তির। এ কারণেই জোটের মধ্যে একটা ভারসাম্যহীনতা চলে এসেছে। জোটের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও এ ভারসাম্যহীনতা চলছে। তাই জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হতাশা কাজ করাটাই স্বাভাবিক। এক প্রশ্নের জবাবে আম্বিয়া বলেন, আমরা সরকারে আছি কিন্তু কেবিনেট বৈঠকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ধরে নেয়া হয়। সরকারের কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমাদের কথা বলার সুযোগ নেই। আর নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকলেও সরকার সে সুযোগ তৈরি করে না। কেন করে না সেটি আওয়ামী লীগ ও সরকারই ভাল জানে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমাদের দেশে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বড় দলের এ ধরনের মনোভাব নতুন কিছু নয়। এটাও একটা অপসংস্কৃতি। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বড় দলগুলোর যেমন আমাদের প্রয়োজন আছে, তেমনি আমাদেরও বড় দলগুলোর প্রয়োজন আছে। সেটা ১৪ দলীয় জোটই হোক আর ২০ দলীয় জোটই হোক। তিনি বলেন, একটি নীতিগত ও আদর্শিক বিষয়কে সামনে রেখে জোটে যোগ দিয়েছিলাম। আমরা জোটে আছি খুব বেশিদিন হয়নি। তাই এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব করা ঠিক হবে না। আর প্রত্যাশা পূরণও এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। তবে, দেশ, গণতন্ত্র ও সংবিধানের স্বার্থে সবারই বোধদয় হবে বলে আশা করছি।
জোটের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ দলের শরিকদের দীর্ঘদিনের দাবি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করে বিএনপি-জামায়াতের বিপরীতে রাজনৈতিক কার্যক্রম জোরদার করা। এ নিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে বিষয়টি তারা উত্থাপনও করেছেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটি কেবল বৈঠকেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এ কয়েক বছরেও এটি আলোর মুখ দেখেনি। যে কারণে মাঠপর্যায়ে ১৪ দলের সাংগঠনিক ভিত্তি তেমন সবল নয় বলে জানান তারা।
গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম মানবজমিনকে বলেন, জোট গঠনের আগে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু সে বিষয়ে জোটের শরিক দলগুলোকে মূল্যায়ন করা হয় নি। এ ছাড়া যে ২৩ দফার ভিত্তিতে জোট গঠন করা হয়েছিল দু-একটি ছাড়া তাও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমরা হতাশ না হলেও বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে মূল্যায়ন আশা করতে পারি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব সেটি অনুধাবন করবে- এটাই আমাদের বিশ্বাস। এ বিষয়ে ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব যেমন রয়েছে, তেমনি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে কিছুটা ফারাক রয়েছে এটা ঠিক। যে উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য নিয়ে জোট গঠন করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে তা বিচার করবে দেশের জনগণ। তবে এতটুকু বলতে পারি, বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে জোটের ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিলে ১৪ দল যেমন লাভবান হতো, তেমনি সরকার ও দেশবাসীও লাভবান হতো।
এদিকে অনিয়মিত বৈঠক ও প্রেস ব্রিফিং ছাড়া আর কোন কাজ নেই ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের। রাজধানীতে ১৪ দলের কার্যক্রম কিছুটা দৃশ্যমান হলেও সারা দেশে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের জোটের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করার পর প্রথম মেয়াদে ৫ বছর, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রায় দেড় বছরসহ মোট সাড়ে ছয় বছর অতিবাহিত হলেও এ দীর্ঘ সময়েও জোটকে গতিশীল করা যায়নি।
ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মাঝেমধ্যে ১৪ দলের নিয়ম রক্ষার বৈঠক হয়। নিয়মমতো প্রেস ব্রিফিংও হয়, তবে বৈঠকে নেয়া কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না। এ ছাড়া সরকার ও জোটের নীতিনির্ধারণী অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে সরকারের অংশীদার ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ছাড়া জোটের অন্য শরিকদের অংশগ্রহণ একেবারেই নেই। এ বিষয়ে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোন পরামর্শও করা হয় না। ফলে অনেক দিন থেকে ক্ষোভ ও হতাশা দানা বাঁধছে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের মনে। একদিকে আওয়ামী লীগের অবহেলা, সরকারে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব, অন্যদিকে ঝিমিয়ে পড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম। ফলে একপ্রকার হতাশ হয়ে পড়েছেন এ জোটের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। জোটের কয়েকজন নেতার দাবি, ২৩ দফার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল ১৪ দলীয় জোট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা, অসাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল, তা অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। চরম হতাশা ও অস্বস্তি কাজ করছে নেতাদের মনে। এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই দায়ী বলে মন্তব্য তাদের। জোট নেতাদের দাবি, দেশে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলেই কেবল ১৪ দলের গুরুত্ব বাড়ে। প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই জোট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
সম্প্রতি সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করায় ১৪ দলীয় জোটে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জোটের নেতারা মনে করেন, আদর্শগত ঐক্যের ভিত্তিতে ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল তার মূল ছিল সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান। বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের দলে ভিড়িয়ে আওয়ামী লীগ এ নীতির বরখেলাপ করছে।
১৯৯৮ সালের শেষের দিকে বিকল্প রাজনৈতিক জোট হিসেবে বাম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সাতটি দলের সঙ্গে আরও চারটি দল মিলে ১১ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। পরে ১১ দল দীর্ঘদিন জাতীয় ইস্যুতে রাজনীতির মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যায়। ২০০৪ সালে ৯ দফা দাবিতে ১১ দল ও আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ/মোজাফফর), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) মিলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। যদিও এ সময়ে বেশ কিছু দল যেমন জোট থেকে বেরিয়ে গেছে, তেমনি ছোট ছোট নতুন কিছু দলও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জোটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোট কিছুটা সক্রিয় হলেও নির্বাচনের পরই আবারও গাছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যায় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালে কিছু জনসভা ও বক্তব্য, বিবৃতি ছাড়া সারা দেশে ১৪ দলের তেমন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল ও চলতি বছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও বিগত কয়েক মাসে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক ও প্রেস ব্রিফিং ছাড়া আর কোন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিই ছিল না ১৪ দলের। আর ধানমন্ডিতে বৈঠক হলেও তা হয়েছে অনিয়মিত। আবার গুরুত্বপূর্ণ অনেক বৈঠকেই জোটের অনেক শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বৈঠকগুলোতে জোটকে সম্প্রসারিত করে জেলা ও উপজেলায় সমন্বয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মসূচি কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায় সে বিষয়ে জোটের শরিক অনেক শীর্ষ নেতার মতামত নেয়া হলেও তা আর কার্যকর করা হয়নি। সর্বশেষ গত ১২ই মে ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২১শে এপ্রিল বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা স্থগিত করা হয়। তারও আগে ৩১শে মার্চ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও প্রতি মাসে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক করার সিদ্ধান্ত ছিল।
১৪ দলে টানাপড়েন ও অস্বস্তির বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া মানবজমিনকে বলেন, কি পেলাম আর কি পেলাম না, সে হিসাব এখন আর করি না। বর্তমানে আমরা একটি ভারসাম্যহীন রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে রয়েছি। ভারসাম্য বলছি এ কারণে, যেখানে সরকার অত্যন্ত শক্তিশালী, সংসদে নামেমাত্র বিরোধী দল ও বিপর্যস্ত বিএনপি। ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী দল আর বাকিরা একেবারেই খর্বশক্তির। এ কারণেই জোটের মধ্যে একটা ভারসাম্যহীনতা চলে এসেছে। জোটের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও এ ভারসাম্যহীনতা চলছে। তাই জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হতাশা কাজ করাটাই স্বাভাবিক। এক প্রশ্নের জবাবে আম্বিয়া বলেন, আমরা সরকারে আছি কিন্তু কেবিনেট বৈঠকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ধরে নেয়া হয়। সরকারের কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমাদের কথা বলার সুযোগ নেই। আর নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকলেও সরকার সে সুযোগ তৈরি করে না। কেন করে না সেটি আওয়ামী লীগ ও সরকারই ভাল জানে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমাদের দেশে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বড় দলের এ ধরনের মনোভাব নতুন কিছু নয়। এটাও একটা অপসংস্কৃতি। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বড় দলগুলোর যেমন আমাদের প্রয়োজন আছে, তেমনি আমাদেরও বড় দলগুলোর প্রয়োজন আছে। সেটা ১৪ দলীয় জোটই হোক আর ২০ দলীয় জোটই হোক। তিনি বলেন, একটি নীতিগত ও আদর্শিক বিষয়কে সামনে রেখে জোটে যোগ দিয়েছিলাম। আমরা জোটে আছি খুব বেশিদিন হয়নি। তাই এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব করা ঠিক হবে না। আর প্রত্যাশা পূরণও এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। তবে, দেশ, গণতন্ত্র ও সংবিধানের স্বার্থে সবারই বোধদয় হবে বলে আশা করছি।
জোটের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ দলের শরিকদের দীর্ঘদিনের দাবি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করে বিএনপি-জামায়াতের বিপরীতে রাজনৈতিক কার্যক্রম জোরদার করা। এ নিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে বিষয়টি তারা উত্থাপনও করেছেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটি কেবল বৈঠকেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এ কয়েক বছরেও এটি আলোর মুখ দেখেনি। যে কারণে মাঠপর্যায়ে ১৪ দলের সাংগঠনিক ভিত্তি তেমন সবল নয় বলে জানান তারা।
গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম মানবজমিনকে বলেন, জোট গঠনের আগে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু সে বিষয়ে জোটের শরিক দলগুলোকে মূল্যায়ন করা হয় নি। এ ছাড়া যে ২৩ দফার ভিত্তিতে জোট গঠন করা হয়েছিল দু-একটি ছাড়া তাও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমরা হতাশ না হলেও বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে মূল্যায়ন আশা করতে পারি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব সেটি অনুধাবন করবে- এটাই আমাদের বিশ্বাস। এ বিষয়ে ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব যেমন রয়েছে, তেমনি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে কিছুটা ফারাক রয়েছে এটা ঠিক। যে উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য নিয়ে জোট গঠন করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে তা বিচার করবে দেশের জনগণ। তবে এতটুকু বলতে পারি, বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে জোটের ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিলে ১৪ দল যেমন লাভবান হতো, তেমনি সরকার ও দেশবাসীও লাভবান হতো।
No comments