যে ট্রলারে মানব পাচার, সে ট্রলারেই ইয়াবা বহন by শরিফুল হাসান ও গিয়াসউদ্দিন
কক্সবাজার থেকে যেসব ট্রলারে মানব পাচার
হয়, সেগুলোই মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে ফেরে। ইয়াবা চোরাচালানিদের বড় অংশই
এখন মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। মানব পাচার ও ইয়াবার চোরাচালানের দুই তালিকায়ও
একই ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। আর এ দুই কাজের কেন্দ্র হিসেবে মিয়ানমার
সীমান্তবর্তী ‘সীতা পাহাড়ে’র কথা ওঠে এসেছে বারবার।
কক্সবাজার পুলিশ, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, স্থানীয় লোকজন ও উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৪৪ হাজার লোক সাগরপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে। আর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ড চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নদীপথে পাচারের সময় ৩২ লাখ ৪৫ হাজার ৪০১ পিচ ইয়ারা জব্দ করেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৯৭ কোটি টাকা।
টেকনাফ থেকে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছে ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানব পাচার হতো। পরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলেও ছড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকা থেকে লোক তুলে ট্রলারে করে প্রথমে সীতা পাহাড়ের কাছে নেওয়া হয়। এর পর বড় জাহাজে করে তাদের গন্তব্যে পাঠানো হয়। একই স্থানে মিয়ানমার থেকে আস ইয়াবা বাংলাদেশি ট্রলারে করে দেশে আনা হয়। আমরা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায়ই এমন অনেক ট্রলার ও মাঝিদের আটক করেছি’।
আবু জার আল জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, মানব পাচার ও ইয়াবা চোরাচালান দুই অপরাধে একই ট্রলার ব্যবহার হয়। কাজেই ট্রলারের নিবন্ধন ও জেলেদের পরিচয়পত্র দেওয়া দরকার। পাশাপাশি মাছ ধরা কিংবা অন্য কাজে যেসব নৌকা সাগরে যায় সেগুলো নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গা থেকে ছাড়া উচিত। কক্সবাজার র্যাব-৭ এর অধিনায়ক মহিউদ্দিনও প্রথম আলোকে বলেন, মানব পাচার ও ইয়াবা পাচার কাজে অনেক সময়ই একই ট্রলার ব্যবহার হয়।
একই কথা বলেন কোস্টগার্ড চট্টগ্রামের পূর্ব জোনের কমান্ডার লে. কমান্ডার দুরুল হুদা। তিনিও বলেন, ‘যেসব ট্রলারে করে এই ইয়াবা আসছে কিংবা মানবপাচার হচ্ছে সেগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই। ফলে ট্রলারগুলো দুই অপরাধেই ব্যবহৃত হচ্ছে’।
মানব পাচার ও ইয়াবার চোরাচালানের দুই তালিকায় একই নাম: ২০১৩ সালের শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের একটি তালিকা করে। এর পর পুলিশও গত বছরের শেষে ২৩০ জন মানব পাচারকারীর একটি তালিকা করে। দুই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একসময় ইয়াবা ব্যবসা করতেন এমন ৬০ থেকে ৭০ জনের নাম মানব পাচারকারী তালিকাতেও রয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ডেইলপাড়ার বাসিন্দা তিন ভাই নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আমিন ও আবদুল আমিনের নাম মানবপাচারের ক্ষেত্রে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নামের তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে। আবার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায়ও তাদের নাম রয়েছে।
মানব পাচারকারীর তালিকার ৫ নম্বরে থাকা মো. সেলিম ওরফে লম্বা সেলিমের নাম ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায়ও রয়েছে। এ ছাড়া দুই তালিকায়ই নাম রয়েছে এমন ব্যক্তিরা হলেন, টেকনাফের কাটাবুনিয়ার শওকত হোসেন, সিদ্দিক ওরফে বাগুইন্না, এজাহার মিয়া, সাকের, মো. হোসেন লুলা, ওসমান, কচুবুনিয়ার মৌলভী বশীর ওরফে ডাইল্লা, নজির আহমেদ ওরফে নজির ডাকাত, আবদুল হামিদ, মো. ইসলাম ওরফে বাগু, মো, সাকের, ভুট্টো, মৌলভী জিয়াউল হক, সাবরাংয়ের আলীর ডেইলের আক্তার কামাল, তাঁর ভাই সাহেদ কামাল, মুন্ডারডেলের সাকের মাঝি, নুরু মাঝি, জহিরুদ্দিন ওরফে কানা জহির, সাবরাংয়ের হারিয়াখালী এলাকার আবুল কালাম, মৌলভী কলিমুল্লাহ, শাহ পরীর দ্বীপের আবদুস শুক্কুর, মো. ইউনুছ, মো. ইসমাইল, ফিরোজ আহমেদ, দেলোয়ার, শাহাব মিয়া, শরিফ হোসেন, শরিফ হোসেন বুলু, নূর হাকিম মাঝি, বেলালউদ্দিন, নূর হোসেন, নুরুল আলম, মো. হোসেন, শামসুল আলম, সাব্বির আহমেদ, হেলাল উদ্দিন ও মো. কামাল।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়াবা ও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। তাদের অনেকে দুই অপরাধের সঙ্গেই জড়িত। এমনকি এই দুই কাজে ব্যবহৃত ট্রলার ও শ্রমিকেরাও এক। এদের অনেকেই আবার বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা।’
সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব সময় বলে এসেছি মানব পাচার ও ইয়াবার চক্র একই সূত্রে গাঁথা। এসবের পেছনের মূল হোতারা দুই ব্যবসা থেকেই মাসোহারা পান। এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে ইয়াবা ও মানব পাচার দুটোই বন্ধ করা সম্ভব’।
মানব পাচার ও ইয়াবা পাচারের কেন্দ্র সীতা পাহাড়: গত কিছুদিনে বেশ কিছু ঘটনায় মানব পাচার ও ইয়াবা পাচারের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ‘সীতা পাহাড়ে’র নাম ওঠে এসেছে।
কক্সবাজারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড ও চীন সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা তৈরি হয়। নৌপথে সেগুলোকে বাংলাদেশে আনা হয়। নাম প্রকাশ না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকজন সদস্য বলেন, একসময় মিয়ানমারের মংডু শহর থেকে বিভিন্ন উপায়ে টেকনাফে ইয়াবা পাঠানো হতো। কিন্তু বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান আটক হওয়ার কারণে এখন আকিয়াব থেকে নৌপথে মিয়ানমার সীমানার কাছের সীতা পাহাড় এলাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশের ছোট ছোট নৌকায় করে ইয়াবা দেশের ভেতরে আনা হয়।
গত ২১ মে মিয়ানমার সাগরপথে মালয়েশিয়াগামী ২৮৪ জনের একটি ট্রলারকে আটক করে। বাংলাদেশ যাচাই করে তাঁদের ১৫০ জনকে ফেরত আনে। এদের মধ্যে মেহেদী হাসান ইমাম ও ফাহাদ মিয়াসহ আরও কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, দালালেরা চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কক্সবাজারের মহেশখালীসহ বিভিন্ন উপকূল থেকে ট্রলারে লোক তুলে। এর পর মিয়ানমার সীমান্তের কাছের সীতা পাহাড় এলাকা থেকে তাদের বড় ট্রলারে তোলা হয়।
এর আগে গত ১২ মে সীতা পাহাড়ের কাছে একটি ট্রলার থেকে ১১৬ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। ওই ট্রলারের যাত্রী গাজীপুরের কালিগঞ্জের আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, প্রথমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন ঘাট থেকে লোক তোলা হয়। এর পর সীতা পাহাড়ের কাছে একটি বড় ট্রলারে আরও অনেক লোক তোলা হয়। ওইখানে তিনি আরও ১৪টি ট্রলার দেখেছেন।
পুলিশ ও বিজিবি সূত্র বলছে, টেকনাফ একসময় মালয়েশিয়ার ঘাঁট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক এনে টেকনাফের বাহারছড়া, লেঙ্গুরবিল, মহেশখালীয়াপাড়া, মুন্ডারডেইল, হাদুরছড়া, কাটাবুনিয়া, কচুবুনিয়া, শাহ পরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে করে সীতা পাহাড়ের কাছে নেওয়া হতো। সেখান থেকে বড় ট্রলারে করে তাঁদের থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য পাঠানো হতো।
কিন্তু টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় কড়াকড়ি আরোপ করা হলে চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট, পটিয়া, বাঁশখালী, গহিরা, লোহাগড়া, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, কক্সবাজার, ইনানী, উখিয়াসহ আরও অনেক এলাকা দিয়ে লোক পাঠানো শুরু হয়। নৌকায় করে এসব এলাকা থেকে লোক নিয়ে বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিনের অদূরের সীতা পাহাড়ের কাছে পাঠানো হতো। এরপর সেখান থেকে বড় ট্রলারে করা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হতো।
কক্সবাজার পুলিশ, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, স্থানীয় লোকজন ও উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৪৪ হাজার লোক সাগরপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে। আর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ড চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নদীপথে পাচারের সময় ৩২ লাখ ৪৫ হাজার ৪০১ পিচ ইয়ারা জব্দ করেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৯৭ কোটি টাকা।
টেকনাফ থেকে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছে ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানব পাচার হতো। পরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলেও ছড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকা থেকে লোক তুলে ট্রলারে করে প্রথমে সীতা পাহাড়ের কাছে নেওয়া হয়। এর পর বড় জাহাজে করে তাদের গন্তব্যে পাঠানো হয়। একই স্থানে মিয়ানমার থেকে আস ইয়াবা বাংলাদেশি ট্রলারে করে দেশে আনা হয়। আমরা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায়ই এমন অনেক ট্রলার ও মাঝিদের আটক করেছি’।
আবু জার আল জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, মানব পাচার ও ইয়াবা চোরাচালান দুই অপরাধে একই ট্রলার ব্যবহার হয়। কাজেই ট্রলারের নিবন্ধন ও জেলেদের পরিচয়পত্র দেওয়া দরকার। পাশাপাশি মাছ ধরা কিংবা অন্য কাজে যেসব নৌকা সাগরে যায় সেগুলো নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গা থেকে ছাড়া উচিত। কক্সবাজার র্যাব-৭ এর অধিনায়ক মহিউদ্দিনও প্রথম আলোকে বলেন, মানব পাচার ও ইয়াবা পাচার কাজে অনেক সময়ই একই ট্রলার ব্যবহার হয়।
একই কথা বলেন কোস্টগার্ড চট্টগ্রামের পূর্ব জোনের কমান্ডার লে. কমান্ডার দুরুল হুদা। তিনিও বলেন, ‘যেসব ট্রলারে করে এই ইয়াবা আসছে কিংবা মানবপাচার হচ্ছে সেগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই। ফলে ট্রলারগুলো দুই অপরাধেই ব্যবহৃত হচ্ছে’।
মানব পাচার ও ইয়াবার চোরাচালানের দুই তালিকায় একই নাম: ২০১৩ সালের শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের একটি তালিকা করে। এর পর পুলিশও গত বছরের শেষে ২৩০ জন মানব পাচারকারীর একটি তালিকা করে। দুই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একসময় ইয়াবা ব্যবসা করতেন এমন ৬০ থেকে ৭০ জনের নাম মানব পাচারকারী তালিকাতেও রয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ডেইলপাড়ার বাসিন্দা তিন ভাই নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আমিন ও আবদুল আমিনের নাম মানবপাচারের ক্ষেত্রে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নামের তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে। আবার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায়ও তাদের নাম রয়েছে।
মানব পাচারকারীর তালিকার ৫ নম্বরে থাকা মো. সেলিম ওরফে লম্বা সেলিমের নাম ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায়ও রয়েছে। এ ছাড়া দুই তালিকায়ই নাম রয়েছে এমন ব্যক্তিরা হলেন, টেকনাফের কাটাবুনিয়ার শওকত হোসেন, সিদ্দিক ওরফে বাগুইন্না, এজাহার মিয়া, সাকের, মো. হোসেন লুলা, ওসমান, কচুবুনিয়ার মৌলভী বশীর ওরফে ডাইল্লা, নজির আহমেদ ওরফে নজির ডাকাত, আবদুল হামিদ, মো. ইসলাম ওরফে বাগু, মো, সাকের, ভুট্টো, মৌলভী জিয়াউল হক, সাবরাংয়ের আলীর ডেইলের আক্তার কামাল, তাঁর ভাই সাহেদ কামাল, মুন্ডারডেলের সাকের মাঝি, নুরু মাঝি, জহিরুদ্দিন ওরফে কানা জহির, সাবরাংয়ের হারিয়াখালী এলাকার আবুল কালাম, মৌলভী কলিমুল্লাহ, শাহ পরীর দ্বীপের আবদুস শুক্কুর, মো. ইউনুছ, মো. ইসমাইল, ফিরোজ আহমেদ, দেলোয়ার, শাহাব মিয়া, শরিফ হোসেন, শরিফ হোসেন বুলু, নূর হাকিম মাঝি, বেলালউদ্দিন, নূর হোসেন, নুরুল আলম, মো. হোসেন, শামসুল আলম, সাব্বির আহমেদ, হেলাল উদ্দিন ও মো. কামাল।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়াবা ও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। তাদের অনেকে দুই অপরাধের সঙ্গেই জড়িত। এমনকি এই দুই কাজে ব্যবহৃত ট্রলার ও শ্রমিকেরাও এক। এদের অনেকেই আবার বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা।’
সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব সময় বলে এসেছি মানব পাচার ও ইয়াবার চক্র একই সূত্রে গাঁথা। এসবের পেছনের মূল হোতারা দুই ব্যবসা থেকেই মাসোহারা পান। এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে ইয়াবা ও মানব পাচার দুটোই বন্ধ করা সম্ভব’।
মানব পাচার ও ইয়াবা পাচারের কেন্দ্র সীতা পাহাড়: গত কিছুদিনে বেশ কিছু ঘটনায় মানব পাচার ও ইয়াবা পাচারের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ‘সীতা পাহাড়ে’র নাম ওঠে এসেছে।
কক্সবাজারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড ও চীন সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা তৈরি হয়। নৌপথে সেগুলোকে বাংলাদেশে আনা হয়। নাম প্রকাশ না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকজন সদস্য বলেন, একসময় মিয়ানমারের মংডু শহর থেকে বিভিন্ন উপায়ে টেকনাফে ইয়াবা পাঠানো হতো। কিন্তু বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান আটক হওয়ার কারণে এখন আকিয়াব থেকে নৌপথে মিয়ানমার সীমানার কাছের সীতা পাহাড় এলাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশের ছোট ছোট নৌকায় করে ইয়াবা দেশের ভেতরে আনা হয়।
গত ২১ মে মিয়ানমার সাগরপথে মালয়েশিয়াগামী ২৮৪ জনের একটি ট্রলারকে আটক করে। বাংলাদেশ যাচাই করে তাঁদের ১৫০ জনকে ফেরত আনে। এদের মধ্যে মেহেদী হাসান ইমাম ও ফাহাদ মিয়াসহ আরও কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, দালালেরা চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কক্সবাজারের মহেশখালীসহ বিভিন্ন উপকূল থেকে ট্রলারে লোক তুলে। এর পর মিয়ানমার সীমান্তের কাছের সীতা পাহাড় এলাকা থেকে তাদের বড় ট্রলারে তোলা হয়।
এর আগে গত ১২ মে সীতা পাহাড়ের কাছে একটি ট্রলার থেকে ১১৬ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। ওই ট্রলারের যাত্রী গাজীপুরের কালিগঞ্জের আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, প্রথমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন ঘাট থেকে লোক তোলা হয়। এর পর সীতা পাহাড়ের কাছে একটি বড় ট্রলারে আরও অনেক লোক তোলা হয়। ওইখানে তিনি আরও ১৪টি ট্রলার দেখেছেন।
পুলিশ ও বিজিবি সূত্র বলছে, টেকনাফ একসময় মালয়েশিয়ার ঘাঁট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক এনে টেকনাফের বাহারছড়া, লেঙ্গুরবিল, মহেশখালীয়াপাড়া, মুন্ডারডেইল, হাদুরছড়া, কাটাবুনিয়া, কচুবুনিয়া, শাহ পরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে করে সীতা পাহাড়ের কাছে নেওয়া হতো। সেখান থেকে বড় ট্রলারে করে তাঁদের থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য পাঠানো হতো।
কিন্তু টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় কড়াকড়ি আরোপ করা হলে চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট, পটিয়া, বাঁশখালী, গহিরা, লোহাগড়া, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, কক্সবাজার, ইনানী, উখিয়াসহ আরও অনেক এলাকা দিয়ে লোক পাঠানো শুরু হয়। নৌকায় করে এসব এলাকা থেকে লোক নিয়ে বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিনের অদূরের সীতা পাহাড়ের কাছে পাঠানো হতো। এরপর সেখান থেকে বড় ট্রলারে করা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হতো।
No comments