শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই মুক্তির একমাত্র পথ -এমাজউদ্দীন
বিশিষ্ট
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘রাজনীতি থেকে
প্রতিপক্ষকে মুছে ফেলা কখনোই সম্ভব নয়। একদলীয় কমিউনিস্ট শাসনেও সেটা করা
যায়নি। স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট বা নাৎসি শাসনেও ভিন্নমত ছিল। বাংলাদেশে
স্বাধীনতার পরে একদলীয় ব্যবস্থা চালু করে বা বিভিন্ন শাসনামলে শক্তি প্রয়োগ
করেও ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মূল করা যায়নি। রাজনৈতিক ব্যবস্থার
বৈশিষ্ট্যই হলো এই যে, এখানে বহু মানুষ বহুমত ও পথ গ্রহণ করে রাজনৈতিকভাবে
সক্রিয় ও ক্রিয়াশীল থাকেন।’’
সোমবার মানবজমিনকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “হত্যা, নির্যাতন, হামলা, মামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধনের উদ্যোগ সম্পূর্ণ ভুল পথ। এ পথে চললে পদে পদে বিপদ বাড়বে; সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হবে।” বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “এখানে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনমানুষের মধ্যে সরকার ও বিরোধী দলের বিপুল-বিশাল কর্মী-সমর্থক রয়েছে। এটাই বিদ্যমান বাস্তবতা। এই বাস্তবতার বাইরে গিয়ে শক্তি দিয়ে বা জোর করে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক বিশ্বাস ও বিন্যাস বদলানো যায় না। বরং বাস্তবতা মেনে পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে ‘পিসফুল কো-অ্যাকজিসটেন্স’ বা ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ই সঙ্কট মুক্তির একমাত্র পথ।”
বাংলাদেশের চলমান তীব্র ও সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক সঙ্কটের সম্ভাব্য সমাধান প্রসঙ্গে প্রফেসর এমাজউদ্দীন বলেন, “সর্বজনগ্রহণীয় নির্বাচন হলো বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলায় উত্তরণের বৈধ ও পরীক্ষিত পন্থা। ভোটারবিহীন, নিয়মরক্ষার নির্বাচন সেটা করতে পারে না। সবার অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচনই সঙ্কট-সমস্যার অবসান ঘটাতে পেরেছে এবং ভবিষ্যতেও পারবে। এখানে ব্যক্তি বা দলের ইচ্ছা বা একগুয়েমি নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনী সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া-আসার নীতিকে মান্য করাই প্রধান কথা। এই কথাটি রাজনীতিবিদরা মেনে নিলে সঙ্কট থাকার কথা নয়।” তিনি বলেন, “৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে প্রায়-অর্ধেক এসেছেন ভোট ছাড়াই। বাকি অর্ধেক শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছেন বলে দেশে বা বিদেশে কেউই স্বীকার করছেন না। যে নির্বাচনে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ ভোটই দিতে পারলো না এবং সব দল অংশও নিলো না, সে নির্বাচন শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্রে পৌঁছার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করতে পারবে না। বরং একটি সত্যিকারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনমতের ভিত্তিতে নির্বাচিত নেতৃত্বই সমস্যা ও সঙ্কট দূরীকরণে সফল হতে পারবেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, গণতান্ত্রিক সুশাসনের প্রধান কাজ হলো জনমনে স্বস্তি আনা, আইনের নৈর্ব্যক্তিক শাসক প্রতিষ্ঠা করা, দলীয় বা আঞ্চলিক স্বজনপ্রীতির বা বলপ্রয়োগের নীতি পরিহার করা, মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা। বাংলাদেশের অগ্রজ নেতৃবৃন্দ এবং সংগ্রামী জনতা এমন আদর্শের জন্যই বৃটিশ-পাকিস্তানি আমলে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন; প্রয়োজনে জীবন দান করেছেন। বাংলাদেশের সমগ্র জনতাই এমন গণতান্ত্রিক সুশাসনের স্বপ্ন আর প্রত্যাশা তাদের বুকে ও চেতনায় ধারণ করেন। ফলে ঐতিহাসিকভাবেই গণতান্ত্রিক সুশাসনের বাইরে ভিন্ন বিকল্প বা বিকৃত পদ্ধতি বা শক্তির দাম্ভিকতা বাংলাদেশের ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-অঞ্চল নির্বিশেষে কারোপক্ষেই মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, “সঙ্কট যেমন থাকে; তেমনি থাকে সমাধানও। কখনো সমাধান ধীরে আসে; কখনো দ্রুত। এর মানে হলো, সমস্যা কখনোই চিরস্থায়ী হয় না। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, সংঘাত, সঙ্কট ও সমস্যাসমূহ অবশ্যই সমাধানের আওতায় আসবে এবং সেটা সুনিশ্চিতভাবে জনগণের গণতান্ত্রিক-সুশাসনমুখী চিরায়ত-প্রত্যাশার আলোকেই সম্পন্ন হবে।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ড. মাহফুজ পারভেজ
সোমবার মানবজমিনকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “হত্যা, নির্যাতন, হামলা, মামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধনের উদ্যোগ সম্পূর্ণ ভুল পথ। এ পথে চললে পদে পদে বিপদ বাড়বে; সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হবে।” বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “এখানে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনমানুষের মধ্যে সরকার ও বিরোধী দলের বিপুল-বিশাল কর্মী-সমর্থক রয়েছে। এটাই বিদ্যমান বাস্তবতা। এই বাস্তবতার বাইরে গিয়ে শক্তি দিয়ে বা জোর করে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক বিশ্বাস ও বিন্যাস বদলানো যায় না। বরং বাস্তবতা মেনে পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে ‘পিসফুল কো-অ্যাকজিসটেন্স’ বা ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ই সঙ্কট মুক্তির একমাত্র পথ।”
বাংলাদেশের চলমান তীব্র ও সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক সঙ্কটের সম্ভাব্য সমাধান প্রসঙ্গে প্রফেসর এমাজউদ্দীন বলেন, “সর্বজনগ্রহণীয় নির্বাচন হলো বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলায় উত্তরণের বৈধ ও পরীক্ষিত পন্থা। ভোটারবিহীন, নিয়মরক্ষার নির্বাচন সেটা করতে পারে না। সবার অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচনই সঙ্কট-সমস্যার অবসান ঘটাতে পেরেছে এবং ভবিষ্যতেও পারবে। এখানে ব্যক্তি বা দলের ইচ্ছা বা একগুয়েমি নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনী সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া-আসার নীতিকে মান্য করাই প্রধান কথা। এই কথাটি রাজনীতিবিদরা মেনে নিলে সঙ্কট থাকার কথা নয়।” তিনি বলেন, “৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে প্রায়-অর্ধেক এসেছেন ভোট ছাড়াই। বাকি অর্ধেক শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছেন বলে দেশে বা বিদেশে কেউই স্বীকার করছেন না। যে নির্বাচনে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ ভোটই দিতে পারলো না এবং সব দল অংশও নিলো না, সে নির্বাচন শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্রে পৌঁছার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করতে পারবে না। বরং একটি সত্যিকারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনমতের ভিত্তিতে নির্বাচিত নেতৃত্বই সমস্যা ও সঙ্কট দূরীকরণে সফল হতে পারবেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, গণতান্ত্রিক সুশাসনের প্রধান কাজ হলো জনমনে স্বস্তি আনা, আইনের নৈর্ব্যক্তিক শাসক প্রতিষ্ঠা করা, দলীয় বা আঞ্চলিক স্বজনপ্রীতির বা বলপ্রয়োগের নীতি পরিহার করা, মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা। বাংলাদেশের অগ্রজ নেতৃবৃন্দ এবং সংগ্রামী জনতা এমন আদর্শের জন্যই বৃটিশ-পাকিস্তানি আমলে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন; প্রয়োজনে জীবন দান করেছেন। বাংলাদেশের সমগ্র জনতাই এমন গণতান্ত্রিক সুশাসনের স্বপ্ন আর প্রত্যাশা তাদের বুকে ও চেতনায় ধারণ করেন। ফলে ঐতিহাসিকভাবেই গণতান্ত্রিক সুশাসনের বাইরে ভিন্ন বিকল্প বা বিকৃত পদ্ধতি বা শক্তির দাম্ভিকতা বাংলাদেশের ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-অঞ্চল নির্বিশেষে কারোপক্ষেই মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, “সঙ্কট যেমন থাকে; তেমনি থাকে সমাধানও। কখনো সমাধান ধীরে আসে; কখনো দ্রুত। এর মানে হলো, সমস্যা কখনোই চিরস্থায়ী হয় না। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, সংঘাত, সঙ্কট ও সমস্যাসমূহ অবশ্যই সমাধানের আওতায় আসবে এবং সেটা সুনিশ্চিতভাবে জনগণের গণতান্ত্রিক-সুশাসনমুখী চিরায়ত-প্রত্যাশার আলোকেই সম্পন্ন হবে।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ড. মাহফুজ পারভেজ
No comments