পথে বসছেন আবাসন ও লিঙ্কেজ শিল্প ব্যবসায়ীরা by হামিম উল কবির
ভয়াবহ
বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন দেশের আবাসন শিল্প ব্যবসায়ী ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট
কর্মীরা। এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে ছোট-বড় কয়েক হাজার ডেভেলপার ও রিয়েল এস্টেট
কোম্পানি। বেকারত্ব বরণ করেছেন প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক ও কর্মী। অবিক্রীত পড়ে
আছে অর্ধলক্ষাধিক ফ্যাট। এ শিল্পের সাথে জড়িত পশ্চাৎ শিল্পের (লিঙ্কেজ
ইন্ডাস্ট্রিজ) বেশির ভাগই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। নির্মাণসামগ্রীর পরিবহন
বন্ধ হওয়ায় পরিবহন খাতেও নেমেছে বিপর্যয়। আবাসন ও লিঙ্কেজ
ইন্ডাস্ট্রিজগুলোর কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ থাকায় ব্যাংকগুলোগুলোর
অর্থ যেমন অনাদায়ী থাকছে, তেমনি ঋণগ্রহীতারাও পড়েছেন বেকায়দায়। ৯০ শতাংশ
ব্যবসায়ী ঋণের কিস্তি দিতে পারছেন না।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবাসন সেক্টরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। এর অর্ধেক এখন বেকার। এ ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ইট, পাথর, বালু, সিমেন্ট, রঙ, ইলেকট্রিক সামগ্রী, রড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃবৃন্দ জানান, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট এবং এর আগে থেকেই অর্থনৈতিক স্থবিরতায় নির্মাণ শিল্প বিশাল একটা ধাক্কা খেয়েছে। অর্থনীতির ধীর গতির জন্য এ শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসছে না।
রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ বলছেন, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না থাকলে মানুষ একান্ত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ছাড়া অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে চায় না। ব্যবসায়ীদের মতে, আবাসন শিল্পে বিশাল ধনবান ব্যক্তিরা সাধারণত বিনিয়োগ করে না। এ শ্রেণীর লোকদের একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট থাকে অথবা পারিবারিকভাবেই এরা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হন। এ শিল্পে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করে থাকেন মধ্যবিত্ত অথবা নিন্মমধ্যবিত্তরা। আর এ শ্রেণীর মানুষের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ‘অর্থনৈতিক মন্দা দেখলেই এরা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে চান না’।
এ বিষয়ে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছে। ক্রেতারা এ শিল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। বিক্রি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণের কিস্তি দিতে পারছেন না। এ সমস্যা শুধু আবাসন ব্যবসায়ীদেরই নয়। ক্রেতাদেরও একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যারা এরই মধ্যে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন তারা এক দিকে অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসায়ীদের কিস্তি শোধ করতে পারছেন না। অন্য দিকে তারা ডাউন পেমেন্টের জন্য ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছেন তারও কিস্তি শোধ করতে পারছেন না।
বর্তমান অবস্থায় ব্যবসায় সম্পর্কে রিরোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক জানান, রিরোলিং মিলগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা কাজ হতো। এখন ক্রেতার অভাবে কাজ নেই। এরই মধ্যে ২০০ মিল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিরা তাদের কারখানাগুলো আট থেকে ১২ ঘণ্টা কোনো মতে চালাচ্ছে। হরতাল অবরোধে যেমন কারখানায় কাঁচামাল আসতে পারছে না। তেমনি কারখানা থেকে উৎপাদিত মাল বাইরে যেতে পারছে না। রাজনৈতিক অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে হয়তো অবশিষ্ট মিলগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
পেইন্টস ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবদুর রহমান বলেন, অ্যাপার্টমেন্ট বানালে রঙ লাগবেই। এ শিল্প বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় করত এর আগে। রাজনৈতিক সঙ্কটে আমাদের শিল্পটি স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নতুন অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ নেই বলে রঙ বিক্রি হচ্ছে না। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকছে। সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আলমগীর কবির বলেন, আমাদের কথা কেউ শোনে না। আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। সেই সাথে এ শিল্পের খেটেখাওয়া শ্রমিকেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবদুল মতিন খান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর নিয়ে প্রতিদিন ঢাকায় আসত ২০০ জাহাজ। এখন ২০ থেকে ২২টি জাহাজ আসে। সারা দেশে ৪৬২টি পাথর ভাঙার কারখানা ছিল। পাথর সরবরাহ করতে না পারায় এর বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। আবদুল মতিন বলেন, পাথর ভাঙার কারখানাগুলো ক’দিন আগেও ২৪ ঘণ্টা পাথর ভেঙেও চাহিদা মেটাতে পারত না। এখন এ কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এ শিল্পের শ্রমিকেরা খুবই দরিদ্র। এরা সারা দিন কাজ করে রাতে পরিবার-পরিজনদের জন্য বাজার করে নিয়ে যেত। এরা এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়। আবদুল মতিন জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্রেতাও কমে গেছে। আগে গোয়াইনঘাট থেকে ঢাকায় এক ট্রাক পাথর পৌঁছতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন ৬০ হাজার টাকা দিয়েও একটি ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না ঢাকায় পাথর পৌঁছানোর জন্য। রাস্তায় চলাচলের নিরাপত্তা না থাকায় মালিকেরা ট্রাক বের করতে দিতে চান না আবার ড্রাইভাররাও জীবনের ঝুঁকি নিতে চান না। তিনি বলেন, পাথর ভাঙার জন্য সারা দেশে পাঁচ লাখ থেকে সাত লাখ শ্রমিক কাজ করতেন। এদের চার লাখই বেকার হয়ে পড়েছেন।
গত দুই মাসের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় আবাসন শিল্পে স্থবিরতা নামার পাশাপাশি বন্ধ হতে চলেছে অনেক শিল্প। এ শিল্পের ব্যবসায়ীদের দাবি দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা উচিত। নইলে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশের স্বপ্নই দেখতে পারবে কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারবে না।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবাসন সেক্টরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। এর অর্ধেক এখন বেকার। এ ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ইট, পাথর, বালু, সিমেন্ট, রঙ, ইলেকট্রিক সামগ্রী, রড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃবৃন্দ জানান, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট এবং এর আগে থেকেই অর্থনৈতিক স্থবিরতায় নির্মাণ শিল্প বিশাল একটা ধাক্কা খেয়েছে। অর্থনীতির ধীর গতির জন্য এ শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসছে না।
রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ বলছেন, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না থাকলে মানুষ একান্ত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ছাড়া অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে চায় না। ব্যবসায়ীদের মতে, আবাসন শিল্পে বিশাল ধনবান ব্যক্তিরা সাধারণত বিনিয়োগ করে না। এ শ্রেণীর লোকদের একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট থাকে অথবা পারিবারিকভাবেই এরা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হন। এ শিল্পে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করে থাকেন মধ্যবিত্ত অথবা নিন্মমধ্যবিত্তরা। আর এ শ্রেণীর মানুষের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ‘অর্থনৈতিক মন্দা দেখলেই এরা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে চান না’।
এ বিষয়ে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছে। ক্রেতারা এ শিল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। বিক্রি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণের কিস্তি দিতে পারছেন না। এ সমস্যা শুধু আবাসন ব্যবসায়ীদেরই নয়। ক্রেতাদেরও একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যারা এরই মধ্যে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন তারা এক দিকে অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসায়ীদের কিস্তি শোধ করতে পারছেন না। অন্য দিকে তারা ডাউন পেমেন্টের জন্য ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছেন তারও কিস্তি শোধ করতে পারছেন না।
বর্তমান অবস্থায় ব্যবসায় সম্পর্কে রিরোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক জানান, রিরোলিং মিলগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা কাজ হতো। এখন ক্রেতার অভাবে কাজ নেই। এরই মধ্যে ২০০ মিল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিরা তাদের কারখানাগুলো আট থেকে ১২ ঘণ্টা কোনো মতে চালাচ্ছে। হরতাল অবরোধে যেমন কারখানায় কাঁচামাল আসতে পারছে না। তেমনি কারখানা থেকে উৎপাদিত মাল বাইরে যেতে পারছে না। রাজনৈতিক অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে হয়তো অবশিষ্ট মিলগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
পেইন্টস ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবদুর রহমান বলেন, অ্যাপার্টমেন্ট বানালে রঙ লাগবেই। এ শিল্প বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় করত এর আগে। রাজনৈতিক সঙ্কটে আমাদের শিল্পটি স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নতুন অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ নেই বলে রঙ বিক্রি হচ্ছে না। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকছে। সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আলমগীর কবির বলেন, আমাদের কথা কেউ শোনে না। আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। সেই সাথে এ শিল্পের খেটেখাওয়া শ্রমিকেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবদুল মতিন খান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর নিয়ে প্রতিদিন ঢাকায় আসত ২০০ জাহাজ। এখন ২০ থেকে ২২টি জাহাজ আসে। সারা দেশে ৪৬২টি পাথর ভাঙার কারখানা ছিল। পাথর সরবরাহ করতে না পারায় এর বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। আবদুল মতিন বলেন, পাথর ভাঙার কারখানাগুলো ক’দিন আগেও ২৪ ঘণ্টা পাথর ভেঙেও চাহিদা মেটাতে পারত না। এখন এ কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এ শিল্পের শ্রমিকেরা খুবই দরিদ্র। এরা সারা দিন কাজ করে রাতে পরিবার-পরিজনদের জন্য বাজার করে নিয়ে যেত। এরা এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়। আবদুল মতিন জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্রেতাও কমে গেছে। আগে গোয়াইনঘাট থেকে ঢাকায় এক ট্রাক পাথর পৌঁছতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন ৬০ হাজার টাকা দিয়েও একটি ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না ঢাকায় পাথর পৌঁছানোর জন্য। রাস্তায় চলাচলের নিরাপত্তা না থাকায় মালিকেরা ট্রাক বের করতে দিতে চান না আবার ড্রাইভাররাও জীবনের ঝুঁকি নিতে চান না। তিনি বলেন, পাথর ভাঙার জন্য সারা দেশে পাঁচ লাখ থেকে সাত লাখ শ্রমিক কাজ করতেন। এদের চার লাখই বেকার হয়ে পড়েছেন।
গত দুই মাসের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় আবাসন শিল্পে স্থবিরতা নামার পাশাপাশি বন্ধ হতে চলেছে অনেক শিল্প। এ শিল্পের ব্যবসায়ীদের দাবি দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা উচিত। নইলে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশের স্বপ্নই দেখতে পারবে কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারবে না।
No comments