আইনটি বাস্তবায়িত হলে অনেক বিপন্ন প্রাণী রক্ষা পাবে by আলম শাইন
আজ
৩ মার্চ। দিনটি বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সমগ্র বিশ্বে। এ
উপলক্ষে দেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর
উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। দিবসটি বিশ্বে ও বাংলাদেশে
দ্বিতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে। ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ
পরিষদের সভায় ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ
পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে মোট বন্যপ্রাণী প্রজাতির সংখ্যা ১ হাজার ৫৯ (মাছ ছাড়া)। এর মধ্যে পাখির প্রজাতি ৭৩৬, স্তন্যপায়ী প্রাণী ১২৪, সরীসৃপ ১৫৭ এবং উভচর প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা ৪২। এদের মধ্যে বন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে ২১৯ প্রজাতির প্রাণী। অপরদিকে মহাবিপন্ন ৬৫টি প্রজাতি। বিপন্ন ৯৫, সংকটাপন্ন ৫৯ এবং বিলুপ্ত প্রাণীর সংখ্যা ১৩। বিলুপ্ত প্রাণীগুলোর মধ্যে গোলাপি শির হাঁস, বাদি হাঁস, একশিঙা গণ্ডার, বারশিঙ্গা, প্যারা হরিণ, রাজশকুন, মিঠা পানির কুমির এবং হকস বিল্ড টারটল অন্যতম।
পরিবেশগত সমস্যা বা বন্যপ্রাণীর আবাস সংকটের কারণ ছাড়াও বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তির আরেকটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করছি, তা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিভিন্ন ধরনের বন্য পশুপাখির মাংস প্রকাশ্যে বিক্রি করছে কবিরাজ নামক এক ধরনের অপচিকিৎসক। তারা এসব মাংস বাত, ব্যথা ও যৌন শক্তিবর্ধক বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
এ ধরনের অপতৎপরতার কারণে বন্যপ্রাণীর বেশ কিছু প্রজাতি এ দেশ থেকে হারিয়ে গেছে। কিছু প্রজাতি রয়েছে বিপন্নের পথে। তেমনি একটি প্রাণী হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনজুড়ে সাড়ে চারশর মতো রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস। এত বিশাল আয়তনের বনে মাত্র এ কটি বাঘের বাস বড়ই বেমানান মনে হয়। দেশের পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, সুন্দরবন অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত, যদি রয়েল বেঙ্গল টাইগার না থাকত। বলা যায়, এ ভয়ংকর প্রাণীর কারণেই চোরাই কাঠ চোরদের তৎপরতায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। বিঘ্ন ঘটছে বিষধর সাপের কারণেও। চোরাই মৎস্য শিকারীকে পাহারা দিয়ে রেখেছে কুমির ও হাঙ্গর। তারপরও এসব প্রাণী নিধন থেমে নেই। কেউ ভয় পেয়ে বন্যপ্রাণী পিটিয়ে নিধন করছে, কেউবা নিধন করছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। এছাড়াও মানুষের বিলাসিতা ও রসনা বিলাসের শিকার হচ্ছে সুন্দরবনের চিত্রল হরিণগুলো।
যারা পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের পরিবেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বনের পাখিরা। ওরা শুধু ভারসাম্যই রক্ষা করছে না, আমাদের প্রকৃতির কঠিন পরিবেশে খাপ খাইয়ে রাখতেও সহায়তা করছে। অনেকে অভিযোগ করেন, পাখিরা আমাদের ফল-শস্যাদি খেয়ে ফেলছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, পাখিরা গাছের ফল খেয়ে দূরে কোথাও গিয়ে মলত্যাগের মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টি করে অক্সিজেন ফ্যাক্টরি তৈরি করছে। হাওরাঞ্চলের মানুষের ধারণা, অতিথি পাখিরা শুধু তাদের ফসল খেয়েই বিনষ্ট করছে। অথচ সেই অতিথি পাখিরা হাওরেই প্রতিদিন এক টন বিষ্ঠা ত্যাগ করে। এর ফলে গাছগাছালি ও মাছেরা পাচ্ছে উপযুক্ত খাবার। অথচ এ উপকারী বন্ধু অতিথি পাখিসহ অন্যান্য পাখি নিধন করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা ওদের খাবারে বিষ মাখিয়ে, বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার করছি। এ অপরিণামদর্শিতার ফলে আজ দেশ থেকে অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে গেছে।
যে কোনো ধরনের প্রাণীর প্রজাতি যদি প্রকৃতি থেকে বছর দশেকের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ বা তারও বেশি বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে, সাধারণত সেই প্রজাতি মহাবিপন্নের তালিকায় স্থান পায়। আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের দেশে বেশ কিছু প্রজাতির প্রাণী আজ মহাবিপন্নের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে লজ্জাবতী বানর অন্যতম। প্রাণী বিজ্ঞানীদের আশংকা, এটি দ্রুত হারিয়ে যাবে এ দেশ থেকে। লজ্জাবতী বানর রেড সিগন্যালের আওতায় রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অবাধে বনভূমি উজাড় হওয়া। লজ্জাবতী বানরের বাসযোগ্য স্থান হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও লাউয়াছড়ার গভীর জঙ্গল। উঁচু গাছের মগডালে থাকতে পছন্দ করে এরা। জনমানবের পদচিহ্ন নেই যেখানে, সেখানেই ওদের বাস। অন্য কারণটি হচ্ছে, এদের প্রজনন হার সন্তোষজনক নয়। বছরে মাত্র একটি বাচ্চা প্রসব করে মাদী বানরটি। সন্তোষজনক নয় গড় আয়ুও। যদি অনুকূল পরিবেশ পায়, তাহলে এরা মাত্র ১০-১২ বছর বাঁচে।
এসব বিষয় চিন্তা করে আমাদের উচিত প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বন্যপ্রাণীদের ওপর যেন নির্যাতন না হয় সেদিকে খেয়াল দেয়া। বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য আমাদের প্রচার-প্রচারণাসহ ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কেউ বন্যপ্রাণী নিধন করতে না পারে।
সরকার ইতিমধ্যে বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ পাস হয়েছে। এ আইনের ১নং ও ২নং তফসিলে ৬৫০ প্রজাতির পাখিকে প্রোটেক্টেড বার্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি শিকারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সুন্দরবন ও টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার সাইট ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। অপরদিকে টাঙ্গুয়ার হাওর, হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর, নিঝুম দ্বীপ ও সোনাদিয়া দ্বীপকে ফ্লাইওয়ে সাইট ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন প্রকল্পের আওতায় বনবিভাগ-এনজিও-বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। শকুনের মরণঘাতী ওষুধ ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। পাখিপ্রেমীদের উৎসাহিত করতে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন প্রদান করছে সরকার। উদ্ধারকৃত ও আহত পাখির সেবাদানে সারা দেশে চারটি অঞ্চলে বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পাখি সমৃদ্ধ এলাকাকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ইকোলজি ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণা করেছে। এছাড়াও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২-এ বাঘ বা হাতি হত্যা করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অন্যসব বন্যপ্রাণী শিকার করলে অথবা আইন লংঘন করলে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা আছে। আইনটি বাস্তবায়ন হলে অনেক বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা পাবে। সেক্ষেত্রে শুধু আইন পাস হলেই চলবে না, তার প্রয়োগও হতে হবে যথাযথ, যা হচ্ছে না অদ্যাবধি আমাদের দেশে। তাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, বন্যপ্রাণী নিধন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসুন।
আলম শাইন : বন্যপ্রাণী ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
alamshine@gmail.com
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে মোট বন্যপ্রাণী প্রজাতির সংখ্যা ১ হাজার ৫৯ (মাছ ছাড়া)। এর মধ্যে পাখির প্রজাতি ৭৩৬, স্তন্যপায়ী প্রাণী ১২৪, সরীসৃপ ১৫৭ এবং উভচর প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা ৪২। এদের মধ্যে বন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে ২১৯ প্রজাতির প্রাণী। অপরদিকে মহাবিপন্ন ৬৫টি প্রজাতি। বিপন্ন ৯৫, সংকটাপন্ন ৫৯ এবং বিলুপ্ত প্রাণীর সংখ্যা ১৩। বিলুপ্ত প্রাণীগুলোর মধ্যে গোলাপি শির হাঁস, বাদি হাঁস, একশিঙা গণ্ডার, বারশিঙ্গা, প্যারা হরিণ, রাজশকুন, মিঠা পানির কুমির এবং হকস বিল্ড টারটল অন্যতম।
পরিবেশগত সমস্যা বা বন্যপ্রাণীর আবাস সংকটের কারণ ছাড়াও বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তির আরেকটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করছি, তা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিভিন্ন ধরনের বন্য পশুপাখির মাংস প্রকাশ্যে বিক্রি করছে কবিরাজ নামক এক ধরনের অপচিকিৎসক। তারা এসব মাংস বাত, ব্যথা ও যৌন শক্তিবর্ধক বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
এ ধরনের অপতৎপরতার কারণে বন্যপ্রাণীর বেশ কিছু প্রজাতি এ দেশ থেকে হারিয়ে গেছে। কিছু প্রজাতি রয়েছে বিপন্নের পথে। তেমনি একটি প্রাণী হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনজুড়ে সাড়ে চারশর মতো রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস। এত বিশাল আয়তনের বনে মাত্র এ কটি বাঘের বাস বড়ই বেমানান মনে হয়। দেশের পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, সুন্দরবন অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত, যদি রয়েল বেঙ্গল টাইগার না থাকত। বলা যায়, এ ভয়ংকর প্রাণীর কারণেই চোরাই কাঠ চোরদের তৎপরতায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। বিঘ্ন ঘটছে বিষধর সাপের কারণেও। চোরাই মৎস্য শিকারীকে পাহারা দিয়ে রেখেছে কুমির ও হাঙ্গর। তারপরও এসব প্রাণী নিধন থেমে নেই। কেউ ভয় পেয়ে বন্যপ্রাণী পিটিয়ে নিধন করছে, কেউবা নিধন করছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। এছাড়াও মানুষের বিলাসিতা ও রসনা বিলাসের শিকার হচ্ছে সুন্দরবনের চিত্রল হরিণগুলো।
যারা পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের পরিবেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বনের পাখিরা। ওরা শুধু ভারসাম্যই রক্ষা করছে না, আমাদের প্রকৃতির কঠিন পরিবেশে খাপ খাইয়ে রাখতেও সহায়তা করছে। অনেকে অভিযোগ করেন, পাখিরা আমাদের ফল-শস্যাদি খেয়ে ফেলছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, পাখিরা গাছের ফল খেয়ে দূরে কোথাও গিয়ে মলত্যাগের মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টি করে অক্সিজেন ফ্যাক্টরি তৈরি করছে। হাওরাঞ্চলের মানুষের ধারণা, অতিথি পাখিরা শুধু তাদের ফসল খেয়েই বিনষ্ট করছে। অথচ সেই অতিথি পাখিরা হাওরেই প্রতিদিন এক টন বিষ্ঠা ত্যাগ করে। এর ফলে গাছগাছালি ও মাছেরা পাচ্ছে উপযুক্ত খাবার। অথচ এ উপকারী বন্ধু অতিথি পাখিসহ অন্যান্য পাখি নিধন করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা ওদের খাবারে বিষ মাখিয়ে, বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার করছি। এ অপরিণামদর্শিতার ফলে আজ দেশ থেকে অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে গেছে।
যে কোনো ধরনের প্রাণীর প্রজাতি যদি প্রকৃতি থেকে বছর দশেকের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ বা তারও বেশি বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে, সাধারণত সেই প্রজাতি মহাবিপন্নের তালিকায় স্থান পায়। আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের দেশে বেশ কিছু প্রজাতির প্রাণী আজ মহাবিপন্নের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে লজ্জাবতী বানর অন্যতম। প্রাণী বিজ্ঞানীদের আশংকা, এটি দ্রুত হারিয়ে যাবে এ দেশ থেকে। লজ্জাবতী বানর রেড সিগন্যালের আওতায় রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অবাধে বনভূমি উজাড় হওয়া। লজ্জাবতী বানরের বাসযোগ্য স্থান হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও লাউয়াছড়ার গভীর জঙ্গল। উঁচু গাছের মগডালে থাকতে পছন্দ করে এরা। জনমানবের পদচিহ্ন নেই যেখানে, সেখানেই ওদের বাস। অন্য কারণটি হচ্ছে, এদের প্রজনন হার সন্তোষজনক নয়। বছরে মাত্র একটি বাচ্চা প্রসব করে মাদী বানরটি। সন্তোষজনক নয় গড় আয়ুও। যদি অনুকূল পরিবেশ পায়, তাহলে এরা মাত্র ১০-১২ বছর বাঁচে।
এসব বিষয় চিন্তা করে আমাদের উচিত প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বন্যপ্রাণীদের ওপর যেন নির্যাতন না হয় সেদিকে খেয়াল দেয়া। বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য আমাদের প্রচার-প্রচারণাসহ ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কেউ বন্যপ্রাণী নিধন করতে না পারে।
সরকার ইতিমধ্যে বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ পাস হয়েছে। এ আইনের ১নং ও ২নং তফসিলে ৬৫০ প্রজাতির পাখিকে প্রোটেক্টেড বার্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি শিকারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সুন্দরবন ও টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার সাইট ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। অপরদিকে টাঙ্গুয়ার হাওর, হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর, নিঝুম দ্বীপ ও সোনাদিয়া দ্বীপকে ফ্লাইওয়ে সাইট ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন প্রকল্পের আওতায় বনবিভাগ-এনজিও-বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। শকুনের মরণঘাতী ওষুধ ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। পাখিপ্রেমীদের উৎসাহিত করতে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন প্রদান করছে সরকার। উদ্ধারকৃত ও আহত পাখির সেবাদানে সারা দেশে চারটি অঞ্চলে বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পাখি সমৃদ্ধ এলাকাকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ইকোলজি ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণা করেছে। এছাড়াও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২-এ বাঘ বা হাতি হত্যা করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অন্যসব বন্যপ্রাণী শিকার করলে অথবা আইন লংঘন করলে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা আছে। আইনটি বাস্তবায়ন হলে অনেক বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা পাবে। সেক্ষেত্রে শুধু আইন পাস হলেই চলবে না, তার প্রয়োগও হতে হবে যথাযথ, যা হচ্ছে না অদ্যাবধি আমাদের দেশে। তাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, বন্যপ্রাণী নিধন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসুন।
আলম শাইন : বন্যপ্রাণী ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
alamshine@gmail.com
No comments