সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য -১৬৬ by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিলেতি পণ্য বর্জন এবং স্বদেশী পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ আন্দোলন স্বদেশী আন্দোলন নামেও পরিচিতি পায়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত এ আন্দোলনে শহর ও গ্রামগঞ্জে প্রকাশ্যে বিলেতি দ্রব্য পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং স্বদেশী পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা হয়। স্বদেশী আন্দোলনের ফলে বিদেশী পণ্যের চাহিদা অনেক হ্রাস পায়। ১৯০৬ সালে সরকারি বিবরণ থেকে জানা যায়, বিলেতি সাবান, লবণ, সুতি কাপড় ও সিগারেটের আমদানি অনেক কমে গিয়েছিল। একই সঙ্গে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠে স্বদেশী তাঁত বস্ত্র, সাবান, লবণ, চিনি ও চামড়ার দ্রব্য।
উপরের আন্দোলনগুলো পরিচালিত হওয়ার পরও সরকারের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন না আসায় কংগ্রেসের চরমপন্থী দল বৈপ্লবিক আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা ও কলকাতাকে কেন্দ্র করে ঢাকার অনুশীলন সমিতি ও কলকাতার যুগান্তর পার্টি ছিল বৈপ্লবিক আন্দোলনের দুই প্রধান শক্তিশালী সংগঠন। এই বৈপ্লবিক সংগঠনের যুবকেরা অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এবং ইংরেজ সমর্থকদের হত্যা করে একটি তীব্র সংকট সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেয়। ১৯০৮ সালে বাংলার গভর্নর এন্ড্রু ফ্রেজার এবং পূর্ববঙ্গ ও আসামের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বিপ্লবীরা প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংস ফোর্ডের গাড়িতে হামলা চালালে তার স্ত্রী ও কন্যা নিহত হন। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী ধরা পড়লে প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন এবং ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়। ১৯০৮ থেকে ১৯১১ সালের মধ্যে বিপ্লবীদের গুলিতে বহুসংখ্যক ইংরেজ, পুলিশ কর্মকর্তা এবং তাদের দেশীয় সহযোগী নিহত হয়।
মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন (১৯০৯) : বাংলা তথা ভারতের রাজনীতি যখন এভাবে উত্তপ্ত হচ্ছিল, তখন মুসলমানদের দাবি ব্রিটিশ সরকার নতুনভাবে বিবেচনা করার চিন্তা করে। এরই ফল হিসেবে ১৯০৯ সালে মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন বাস্তবায়ন করা হয়। উনিশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত ভারতের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায় স্বাধিকার লাভের জন্য যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছিল তা ব্রিটিশ শাসকদের প্রবলভাবে ভাবিয়ে তোলে। এ কারণেই তারা শাসনতন্ত্রে নানা ধরনের সংস্কার এনে ভারতীয় জনসাধারণ ও নেতাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের ধারণা প্রকাশ পেয়েছিল। ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সাংবিধানিক সংস্কারের। মুসলমান নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট হয়ে পড়েছিল, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম বড় কারণ প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা। এ পরিস্থিতিতে ১৯০৬ সালের অক্টোবরে আগা খানের নেতৃত্বে মুসলিম প্রতিনিধিদের একটি দল লর্ড মিন্টোর কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। ওই স্মারকপত্রে দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে এবং মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাতের বদলে রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুসারে তাদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে জন মর্লি ও লর্ড মিন্টো একটি সংস্কার চিন্তার রূপরেখা প্রণয়ন করেন। ১৯০৯ সালে এই রূপরেখা ইন্ডিয়া অ্যাক্ট হিসেবে বাস্তবায়িত হয়। মর্লি ও মিন্টোর নামানুসারে তা পরিচিত হয় ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন নামে। এ আইনের কতগুলো শর্ত ছিল। এগুলো হচ্ছে- ক. জনস্বার্থে ভারতীয় নেতৃবর্গ সরকারকে সহযোগিতা করবে, খ. গভর্নর জেনারেল বা বড়লাটের কার্যনির্বাহী পরিষদে একজন ভারতীয় প্রতিনিধি রাখা হবে, গ. বাংলার গভর্নরের একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হবে এবং ঘ. এই পরিষদে কিশোরী লাল গোস্বামীকে নিযুক্ত করা হবে।
উপরের আন্দোলনগুলো পরিচালিত হওয়ার পরও সরকারের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন না আসায় কংগ্রেসের চরমপন্থী দল বৈপ্লবিক আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা ও কলকাতাকে কেন্দ্র করে ঢাকার অনুশীলন সমিতি ও কলকাতার যুগান্তর পার্টি ছিল বৈপ্লবিক আন্দোলনের দুই প্রধান শক্তিশালী সংগঠন। এই বৈপ্লবিক সংগঠনের যুবকেরা অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এবং ইংরেজ সমর্থকদের হত্যা করে একটি তীব্র সংকট সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেয়। ১৯০৮ সালে বাংলার গভর্নর এন্ড্রু ফ্রেজার এবং পূর্ববঙ্গ ও আসামের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বিপ্লবীরা প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংস ফোর্ডের গাড়িতে হামলা চালালে তার স্ত্রী ও কন্যা নিহত হন। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী ধরা পড়লে প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন এবং ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়। ১৯০৮ থেকে ১৯১১ সালের মধ্যে বিপ্লবীদের গুলিতে বহুসংখ্যক ইংরেজ, পুলিশ কর্মকর্তা এবং তাদের দেশীয় সহযোগী নিহত হয়।
মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন (১৯০৯) : বাংলা তথা ভারতের রাজনীতি যখন এভাবে উত্তপ্ত হচ্ছিল, তখন মুসলমানদের দাবি ব্রিটিশ সরকার নতুনভাবে বিবেচনা করার চিন্তা করে। এরই ফল হিসেবে ১৯০৯ সালে মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন বাস্তবায়ন করা হয়। উনিশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত ভারতের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায় স্বাধিকার লাভের জন্য যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছিল তা ব্রিটিশ শাসকদের প্রবলভাবে ভাবিয়ে তোলে। এ কারণেই তারা শাসনতন্ত্রে নানা ধরনের সংস্কার এনে ভারতীয় জনসাধারণ ও নেতাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের ধারণা প্রকাশ পেয়েছিল। ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সাংবিধানিক সংস্কারের। মুসলমান নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট হয়ে পড়েছিল, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম বড় কারণ প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা। এ পরিস্থিতিতে ১৯০৬ সালের অক্টোবরে আগা খানের নেতৃত্বে মুসলিম প্রতিনিধিদের একটি দল লর্ড মিন্টোর কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। ওই স্মারকপত্রে দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে এবং মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাতের বদলে রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুসারে তাদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে জন মর্লি ও লর্ড মিন্টো একটি সংস্কার চিন্তার রূপরেখা প্রণয়ন করেন। ১৯০৯ সালে এই রূপরেখা ইন্ডিয়া অ্যাক্ট হিসেবে বাস্তবায়িত হয়। মর্লি ও মিন্টোর নামানুসারে তা পরিচিত হয় ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন নামে। এ আইনের কতগুলো শর্ত ছিল। এগুলো হচ্ছে- ক. জনস্বার্থে ভারতীয় নেতৃবর্গ সরকারকে সহযোগিতা করবে, খ. গভর্নর জেনারেল বা বড়লাটের কার্যনির্বাহী পরিষদে একজন ভারতীয় প্রতিনিধি রাখা হবে, গ. বাংলার গভর্নরের একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হবে এবং ঘ. এই পরিষদে কিশোরী লাল গোস্বামীকে নিযুক্ত করা হবে।
No comments