বৃহৎ অর্থে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন by অধ্যাপক মেসবাহ কামাল
সহিংসতা
ও জামায়াত না ছাড়া পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু
অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা নাগরিক সমাজকে নিয়ে বৃহৎ অর্থে জাতীয় সংলাপ শুরু
হওয়া দরকার। এটা করতে পারলে একপর্যায়ে বিএনপি সেখানে শামিল হবে। এতে ক্ষমতা
হস্তান্তরসহ অন্যান্য সমস্যার একটা সমাধান পাওয়া যাবে। অধিকতর উপযোগী কোন
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটি জায়গায় আসা যাবে। চলমান সঙ্কট খুব দ্রুত সমাধান
হওয়া প্রয়োজন। তবে খুব দ্রুত হবে বলে আমি আর প্রত্যাশা করি না। কারণ বিরোধী
দলের আন্দোলন এখন ধৈর্যের বাইরে চলে গেছে। কোনটি উচিত আর অনুচিত সেটি
মানছে না। মানলে টানা দু’মাস ধরে আন্দোলন চলতে পারে। কিন্তু সপ্তাহের সব
কার্যদিবসে হরতাল কিভাবে দেয়? এটা হতে পারে না। কারণ বিরোধী দলের তো দেশ
পরিচালনায় একটা দায়িত্ব থাকে। তারা ককটেল ও পেট্রলবোমা দিয়ে সরকারকে
আলোচনায় বাধ্য করতে চায়। এতে সরকারের জায়গাটা সীমিত হয়ে পড়ে। তারপরও আমি
মনে করি যারা পেট্রলবোমা মেরে আন্দোলন করছেন তারাই তো একমাত্র শক্তি না।
আরও শক্তি আছে। তাদের নিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হওয়া
দরকার। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলকে সেখানে যুক্ত করা যায়।
সংলাপ হবে না এটা সরকার বলছে বিএনপি-জামায়াত প্রসঙ্গে। কিন্তু দেশে তো আরও রাজনৈতিক দল আছে। নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন আছে তাদের সবার সঙ্গে সরকারের কথা বলা দরকার। আগামীতে নির্বাচনী কাঠামো কেমন হবে। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কেমন হবে। এসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়া দরকার। বিএনপি এখনও নিজেদের গণতান্ত্রিক দল দাবি করে। আমি মনে করি তারা ভুল রাজনীতি করছে। এ রাজনীতি তাদের জনবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। সেটি তো তারা বুঝতে শুরু করেছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেই তৃণমূল সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। দেশ থেকে বিচ্ছিন্্ন হয়েছেন। নিজের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। সেটি তো বুঝতে পারছে? তাহলে তারা কি আত্মহত্যার কাজ করবেন। আমরা মনে হয়, বৃহৎ অর্থে একটি জাতীয় সংলাপ শুরু হলে, আমার ধারণা একটা পর্যায়ে বিএনপি সেখানে শামিল হবে। এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের আরও অধিকতর উপযোগী কোন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ব্যাপারে একটি জায়গায় আসতে পারবো।
যেমন এখন ব্যক্তি ধরে নির্বাচন হয়। সেটি তুলে দেয়া যেতে পারে। দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা তৈরি করা হয়েছে। সেটি দূর করা যেতে পারে। জাতীয় একটি সংলাপে হলে এগুলো সমাধান করা সম্ভব। এটি হলে বিএনপিকে এখানে আসতে হবে না হয় তার রাজনৈতিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তাহলে তারা কোনটি নেবে? সে চয়েজটি তাদের নিতে হবে। তখন তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুর পরিবর্তন হবে। সহিংসতার পথ থেকে সরে আসতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্ল্লগার ও লেখক অভিজিতের নির্মম হত্যাকাণ্ড খুবই উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের বৃদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য একটি মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। বৃদ্ধিজীবী হত্যা ৭১ এ হয়েছে। বিরতি দিয়ে বিভিন্ন সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো থেকে স্পষ্ট একটি বিশেষ মহল বৃদ্ধিজীবী হত্যার টার্গেট করে মাঠে নেমেছে। রাষ্ট্রের উচিত বৃদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং লেখক-শিল্পীদের নিরাপত্তায় বিশেষ যত্নবান হওয়া। এ অপরাধগুলো যারা ঘটাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার ও সন্ত্রাস দমনের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা। হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি হতো তাহলে পরবর্তী সময়ে এসব ঘটনা হয়তো ঘটতো না।
মৌলবাদী তৎপরতা এখন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের একটি অংশ হয়ে গেছে। বৃহৎ অর্থে এদের মাঝে সংযোগ আছে। আদর্শিক অর্থে ভাবার্থ আছে। পুলিশকে আরও বেশি তৎপর হওয়া দরকার। যারা অভিজিৎকে কুপিয়েছে তারা হচ্ছে অপারেটর। কিন্তু এদের পেছনে হুকুমদাতা, ইন্ধনতাদাতাদের খুঁজে বের করা দরকার। আন্তর্জাতিকসহ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ দেখিয়েছে তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে এ বিষয়টিতে আরও প্রয়োজন। কারণ অভিজিৎ মার্কিন নাগরিক। তার তার জন্ম কিন্তু বাংলাদেশে। তাই দু’দেশ যৌথভাবে এ কাজটি করতে পারে।
পুলিশের সংখ্যার পাশাপাশি পুলিশের মৌলিক কিছু প্রশিক্ষণ আরও বাড়ানোর দরকার। আদর্শিক প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। কারণ দেশে দুটি আদর্শিক লড়াই চলছে। মৌলবাদী বনাম মুক্তমনা বা প্রগতিশীল পক্ষ। জনগণের আরও সচেতন প্রতিবাদ জানানোর সময় হয়েছে।
নোট: প্রতিক্রিয়াটি দিয়েছেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
সংলাপ হবে না এটা সরকার বলছে বিএনপি-জামায়াত প্রসঙ্গে। কিন্তু দেশে তো আরও রাজনৈতিক দল আছে। নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন আছে তাদের সবার সঙ্গে সরকারের কথা বলা দরকার। আগামীতে নির্বাচনী কাঠামো কেমন হবে। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কেমন হবে। এসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়া দরকার। বিএনপি এখনও নিজেদের গণতান্ত্রিক দল দাবি করে। আমি মনে করি তারা ভুল রাজনীতি করছে। এ রাজনীতি তাদের জনবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। সেটি তো তারা বুঝতে শুরু করেছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেই তৃণমূল সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। দেশ থেকে বিচ্ছিন্্ন হয়েছেন। নিজের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। সেটি তো বুঝতে পারছে? তাহলে তারা কি আত্মহত্যার কাজ করবেন। আমরা মনে হয়, বৃহৎ অর্থে একটি জাতীয় সংলাপ শুরু হলে, আমার ধারণা একটা পর্যায়ে বিএনপি সেখানে শামিল হবে। এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের আরও অধিকতর উপযোগী কোন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ব্যাপারে একটি জায়গায় আসতে পারবো।
যেমন এখন ব্যক্তি ধরে নির্বাচন হয়। সেটি তুলে দেয়া যেতে পারে। দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা তৈরি করা হয়েছে। সেটি দূর করা যেতে পারে। জাতীয় একটি সংলাপে হলে এগুলো সমাধান করা সম্ভব। এটি হলে বিএনপিকে এখানে আসতে হবে না হয় তার রাজনৈতিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তাহলে তারা কোনটি নেবে? সে চয়েজটি তাদের নিতে হবে। তখন তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুর পরিবর্তন হবে। সহিংসতার পথ থেকে সরে আসতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্ল্লগার ও লেখক অভিজিতের নির্মম হত্যাকাণ্ড খুবই উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের বৃদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য একটি মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। বৃদ্ধিজীবী হত্যা ৭১ এ হয়েছে। বিরতি দিয়ে বিভিন্ন সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো থেকে স্পষ্ট একটি বিশেষ মহল বৃদ্ধিজীবী হত্যার টার্গেট করে মাঠে নেমেছে। রাষ্ট্রের উচিত বৃদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং লেখক-শিল্পীদের নিরাপত্তায় বিশেষ যত্নবান হওয়া। এ অপরাধগুলো যারা ঘটাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার ও সন্ত্রাস দমনের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা। হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি হতো তাহলে পরবর্তী সময়ে এসব ঘটনা হয়তো ঘটতো না।
মৌলবাদী তৎপরতা এখন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের একটি অংশ হয়ে গেছে। বৃহৎ অর্থে এদের মাঝে সংযোগ আছে। আদর্শিক অর্থে ভাবার্থ আছে। পুলিশকে আরও বেশি তৎপর হওয়া দরকার। যারা অভিজিৎকে কুপিয়েছে তারা হচ্ছে অপারেটর। কিন্তু এদের পেছনে হুকুমদাতা, ইন্ধনতাদাতাদের খুঁজে বের করা দরকার। আন্তর্জাতিকসহ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ দেখিয়েছে তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে এ বিষয়টিতে আরও প্রয়োজন। কারণ অভিজিৎ মার্কিন নাগরিক। তার তার জন্ম কিন্তু বাংলাদেশে। তাই দু’দেশ যৌথভাবে এ কাজটি করতে পারে।
পুলিশের সংখ্যার পাশাপাশি পুলিশের মৌলিক কিছু প্রশিক্ষণ আরও বাড়ানোর দরকার। আদর্শিক প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। কারণ দেশে দুটি আদর্শিক লড়াই চলছে। মৌলবাদী বনাম মুক্তমনা বা প্রগতিশীল পক্ষ। জনগণের আরও সচেতন প্রতিবাদ জানানোর সময় হয়েছে।
নোট: প্রতিক্রিয়াটি দিয়েছেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
No comments