বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার জন্যে একটি অগ্নি পরীক্ষা by মিনার রশীদ
ইন্ডিয়ার
সামনে এখন সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো, জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী
আসনটি লাভ করা। বর্তমান অবয়বে জন্মের পর থেকে অর্থাৎ ব্রিটিশের কাছ থেকে
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই এই স্বপ্নটি দেখে এসেছে ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ার সামনে
এর চেয়ে বড় স্বপ্ন আর কিছু হতে পারে না।
নিরাপত্তা পরিষদে বর্তমানে যে পাঁচজন স্থায়ী সদস্য রয়েছে, তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তি হিসেবে এই মর্যাদা ও আরামের আসনটি সংরক্ষণ করে ফেলেছে। তাদের এ জন্য বিশেষ কোনো পরীক্ষায় বসতে হয়নি। অন্য কারো কাছ থেকে চরিত্রগত সনদ কিংবা অন্য কোনো যোগ্যতার সনদ সংগ্রহ করতে হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে যারা একই অবস্থানে আসতে খায়েশ প্রকাশ করবে, তাদের এসব কঠিন ও জটিল পরীক্ষায় পাস করেই আসতে হবে। এটাই নিয়ম। কারণ ডায়নাকে বিয়ের আগে সতীত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছিল। তবে একই বিয়ের জন্য প্রিন্স চার্লসকে তেমন কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। ব্যাপারটা অনেকটা তেমনি।
জাতিসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্য পদ পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য প্রথম ধাপটি হলো, সাধারণ পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি ও সমর্থন অর্জন। এটি অর্জিত হলে পরের ধাপ হলো, খোদ নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতি।
এই শর্তগুলো যারপরনাই কঠিন। কারণ নিরাপত্তা পরিষদে যারা আছে, তারা সর্বদা পরস্পর দুটি ব্লক বা মেরুতে অবস্থান করে। পরস্পর মুখোমুখি এই দু’টি পকে একসাথে সন্তুষ্ট করার কাজটি আসলেই কঠিন। কারণ দু’টি শর্তই বানানো হয়েছে যাতে নতুন করে কেউ এখানে ঢুকতে না পারে। তার পরেও যে ক’জন নাছোড়বান্দা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে ইন্ডিয়া অন্যতম।
এই কঠিন কাজটির একটি বিশেষ অধ্যায় অতিক্রম করে ফেলেছে ইন্ডিয়া। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীনের সম্মতি আগেভাগেই নিয়ে রেখেছে। গত ইন্ডিয়া সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী আসন পেতে ইন্ডিয়াকে সমর্থন জানাবেন বলে অঙ্গীকার করে এসেছেন। এখন ‘ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে’ এমন ধরনের কিছু না ঘটলে ইন্ডিয়ার স্বপ্ন পূরণে নিরাপত্তা পরিষদের বাধা বা ঠেকটি আর রইল না।
বলা যায়, ইন্ডিয়ার আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। অর্থাৎ বিশ্ব পরিসরে ইন্ডিয়ার জন্য মাহেন্দ্রণ উপস্থিত। এখন বাকি চ্যালেঞ্জটি হলো, সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের সমর্থনের নিশ্চয়তাটুকু। ১৯২ জন সদস্যের মধ্যে সবার সাথে ইন্ডিয়ার স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই। বর বা কনের চরিত্র এবং চালচলন সম্পর্কে জানতে যেমন প্রতিবেশীর দ্বারস্থ হতে হয়, তেমনি প্রায় পৌনে দুই শ’ সদস্য ইন্ডিয়ার চালচলন ও চরিত্র সম্পর্কে জানতে তার নিকটতম প্রতিবেশীর সাথে তার সম্পর্ককে বিবেচনায় নেবে, এটাই স্বাভাবিক।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ সদস্যদের মধ্যে বেশির ভাগ দেশই নিরীহ। তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে কম বেশি উদ্বিগ্ন। এদের প্রায় সবাই সমব্যথায় ব্যথী। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দাসত্বের শৃঙ্খলে ইতিহাসের দীর্ঘ সময় এদের অনেককেই কাটাতে হয়েছে। চুন খেয়ে মুখ পুড়েছে। কাজেই দই খাওয়ার আগে ভালো করে চেক করে নেয়। যেকোনো আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী শক্তিকে তারা ভয়, ঘৃণা ও সন্দেহের চোখে দেখে থাকে। যখন তারা সুযোগ পায়, নিপীড়িত নির্যাতিত জাতির দিকে সর্বদা নিজেদের সমর্থন তুলে ধরে। সম্ভবত বিশ্বমানবতা ও নৈতিকতার বাঁশিটি এই সাধারণ পরিষদের কণ্ঠেই বেজে ওঠে। অবশ্য কোনো কিছু কার্যকর করার শক্তি এই পরিষদের হাতে নেই। সে জন্য নিরাপত্তা পরিষদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর আগ্রাসন নিয়ে আগ্রাসী ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ সাধারণ পরিষদে সহজেই নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়ে যায়।
ইন্ডিয়া এই ব্যাপারটি ভালো করেই জানে। নিজের সম্পর্কে আত্মসমালোচনা বা সেলফ অ্যাসেসমেন্ট করেছে। তাই ২০১৩ সালের সাধারণ অধিবেশনে নিরাপত্তা পরিষদে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে উত্থাপনের সাহস করেনি ইন্ডিয়া। দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য দেশের সমর্থন জুটবে, এমন আস্থা ইন্ডিয়া সঙ্গত কারণেই রাখতে পারেনি। কারণ নিকট প্রতিবেশীর সাথে ইন্ডিয়ার আচরণ নিয়ে সারাবিশ্বের মানুষের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মূলমন্ত্র শান্তি ও নিরাপত্তা (Peace and Security) রক্ষায় ইন্ডিয়ার এই ইমেজটি ততটা উজ্জ্বল নয়। তবে এই স্বপ্নটি পূরণের জন্য মোটামুটি টেনেটুনে একটা ভালোমানুষি অবয়ব বিশ্বসভায় এ যাবত প্রদর্শন করে এসেছে। ছোটখাটো কিছু দাগ থাকলেও চরিত্রে বড় ধরনের কোনো দাগ পড়েনি। কাশ্মিরের সমস্যাকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। ১৯৭১ সালে সবচেয়ে বড় শত্রু পাকিস্তানকে খন্ডিত করার লক্ষ্যে সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেও তা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মদানের মতো মহৎ কাজ হিসেবে গণ্য হয়েছে। যুদ্ধের পর বিজিত ভূখন্ডে সৈন্য রেখে দিতে চাইলেও নিজের এই ইমেজের কথা চিন্তা করে (মুজিব চাহিবা মাত্রই) তা উঠিয়ে নিয়েছে। মাঝখানে স্বাধীন সিকিমকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেও লেন্দুপ দর্জির ভূমিকার কারণে দখলদারের দুর্নামটি ইন্ডিয়ার ঘাড়ে পড়েনি। নেপাল ও ভুটানকে নিজের কব্জায় নিলেও কখনোই দখলদার বা আগ্রাসীর ভূমিকায় নামতে হয়নি। শ্রীলঙ্কার অশান্তিতে কলকাঠি নাড়লেও বা বিভিন্নভাবে ইন্ধন জোগালেও সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি।
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের একটা প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা শুধু রাজনৈতিক প্রতিপরে উল্টো কাজ হিসেবে করছে এমন নয়; এখানে অন্য গণনা কাজ করছে।
সেই গণনাটি হলো, বিশ্বসভায় নিজের ভালো মানুষি প্রদর্শনের তাগিদ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি অনুভব করছে ইন্ডিয়া। নির্বাচনের আগে আগে আমাদের অনেক নেত্রী যেমন মাথায় পট্টি বাঁধেন, কেউ কেউ দু’বার আছরের নামাজ পড়েন, গ্রামের ‘আতইরা’কেও জ্বনাব আতর আলী সাহেব বলে ডাক দেন, তেমনি একটা সময় এই গ্লোবাল ভিলেজে ইন্ডিয়ার জন্যও উপস্থিত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অদ্ভুত, অবৈধ ও ব্রেইন ডেড একটি সরকারকে (প্রশাসন যার ভেন্টিলেটর হিসেবে কাজ করছে) সমর্থন করা ইন্ডিয়ার নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিল। বিশ্বসভায় যে মুহূর্তে (বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রায়) তার ভূমিকা আরো উজ্জ্বল করার কথা, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ইন্ডিয়ার মুখে সবচেয়ে বড় দাগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় ইন্ডিয়ার নির্লজ্জ সহযোগিতা তাকে ক্রমাগত বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে ।
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিশ্বের সবচেয়ে বাজে নির্বাচনগুলোর একটি হিসেবে সব ধরনের জরিপে উঠে এসেছে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টিতে কোনো নির্বাচনেরই প্রয়োজন পড়েনি। বাদবাকি আসনগুলোতেও শতকরা পাঁচ ভাগের কম ভোটার ও উপস্থিত হয়েছে। অনেক ভোটকেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে কুকুর ছাড়া কোনো দ্বিপদী প্রাণী দেখা যায়নি। গৃহপালিত বিরোধী দলকেও মহাসার্কাস করে পোষ মানানো হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র প্রমুখ বিশ্বসংস্থা ও বিশ্বশক্তি বারবার এই নির্বাচন নিয়ে তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করেছে। এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখান থেকে প্রশ্ন ওঠেনি। সব আন্তর্জাতিক সংস্থা মুক্ত, অবাধ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস কয়েক দিন আগে এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের মন্দা বা রিসেশনে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেছে। এ ব্যাপারে স্পষ্টতই বিশ্বজনমতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে ইন্ডিয়া।
ইন্ডিয়ার স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশ সত্যিই একটি অগ্নিপরীক্ষা। মনে হচ্ছে, ইন্ডিয়া নিজের নাক কেটে বাংলাদেশের (গণতন্ত্রের) যাত্রাটি ভঙ্গ করছে। অথচ বিশ্বের মধ্যে বেশির ভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে ইন্ডিয়ার বিরাট ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্কীর্ণ গণ্ডি পেরিয়ে ইন্ডিয়া যদি বৈশ্বিক চাহিদা ও প্রত্যাশার (Global need and expectation) দিকে মনোযোগ দেয়, তবে পুরো এলাকার চেহারা বদলে যেতে পারে। ইন্ডিয়াকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের ষোল-সতের কোটি মানুষকে অশান্তিতে রেখে ইন্ডিয়া নিজের শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে না।
কোনো বিশেষ দলের সাথে অবৈধ প্রেম নয়, এ দেশের জনগণের সাথে বৈধ সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত । পিপল টু পিপল কন্টাক্ট বা জনগণের সাথে জনগণের সংযোগ খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া এক পা এগিয়ে এলে এ দেশের জনগণ দুই পা এগিয়ে যাবে।
এ দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর ঐতিহাসিক সুযোগ ইন্ডিয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। ইন্ডিয়ার জাতীয় স্বার্থও একই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছে। কাজেই এই সরকারকে যেকোনো মূল্যে টিকিয়ে রাখলে ইন্ডিয়ার লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হবে।
তার পরেও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা অতি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসে ভুগছেন বলে মনে হচ্ছে। ব্যক্তিগত আবেগের চেয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের নিরিখেই ইন্ডিয়ার ফরেন পলিসি নির্ধারিত হয়। শেখ মুজিব ও খোন্দকার মোশতাকের মধ্যে কে ইন্ডিয়ার বড় সুহৃদ ছিলেন ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে, সেটা বোঝা যায়নি। ১৬ আগস্টে রাষ্ট্রদূত সমর সেন খোন্দকার মোশতাকের সঙ্গে যেভাবে দন্তবিকশিত করে পোজ দিয়েছিলেন, তা সেই নির্মম সত্যটি তুলে ধরে। তখনকার অনেক গোপন চুক্তি ও আশ্বাস গোপনেই রয়ে গেছে। ইন্দিরা গান্ধীর নাকি নির্দেশ ছিল, ডোন্ট ডিস্টার্ব মোশতাক গভর্নমেন্ট!
উত্তরপাড়াকে (দেশের সামরিক বাহিনীকে) ও প্রতিপকে স্বভাবসুলভ খোঁচা মেরে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের মতাগ্রহণের সুযোগ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু অসাংবিধানিকভাবে মতায় যারা এসেছেন তারা সংবিধানকে স্থগিত করেই এসেছেন। যারা সংবিধান নামক মূর্তিটি তৈরি করেন, সেই মূর্তিমানেরাও চিরদিন ভূপৃষ্ঠে থাকেন না । কোনো সরকারই শেষ সরকার নয়। কোনো সংবিধানই শেষ সংবিধান নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষের জন্য সংবিধান। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়।
ইন্ডিয়ার সাথে বিভিন্ন গোপন চুক্তির কথাও বিভিন্ন কৌশলে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের অনেকগুলোই প্রেমিকাকে লেখা প্রেমপত্রের মতোই মধুর।
কিন্তু প্রয়োজনের সময় ইন্ডিয়া পাঁচ ভাগের কম জনসমর্থিত একটি সরকারকে বিশ্ব জনমতের বিপে গিয়ে রা করবে, সেটা ভাবাও কঠিন। বিশেষ করে যখন বিশ্বসভায় নিজের ইমেজ বৃদ্ধির চাপ রয়েছে, তখন আগ্রাসী শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করার এই ঝুঁকি তারা গ্রহণ করবেন, এমন বোকা ইন্ডিয়ার নেতাদের ভাবা যায় না।
কাজেই অতি আত্মবিশ্বাসী সরকার সম্ভবত নিজের ও তার দলের জন্যই বিপদটি টেনে আনছে না। সারা জাতিকে চরম বিপদের দিকে টেনে নিচ্ছে।
এক-এগারোর পর যখন সারা দেশে মাইনাস টু’র পক্ষে বিশাল স্রোত বয়ে চলছিল তখনো এই কলামটি সেই স্রোতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছি। কোনো ধরনের অসাংবিধানিক শাসনের পক্ষে অবস্থান করিনি । এই লেখাটি কোনো পরে জন্য উসকানি নয়। গণতান্ত্রিক সব শক্তির জন্য একটি সাবধান বাণী। জানি না, আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা থেকে সদুপদেশটি গ্রহণ করার মতো প্রজ্ঞা এই সরকারের কোনো পর্যায়ে অবশিষ্ট আছে কি না। আমি মনে করি রাজনৈতিক সমাধানের পথ এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি।
বাংলাদেশের মানুষ উত্তর কোরিয়া কিংবা মিয়ানমারের জনগণের মতো নয়। যে কৌশলেই আটকানো হোক না কেন, যেভাবেই মুখটি বন্ধ করা হোক না কেন, মুক্তির একটা উপায় তারা বের করে নেবেই।
পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বড় বড় স্বৈরাচারীরা সব সময় আত্মতৃপ্তি ও আত্মবিশ্বাসে ভুগেছেন । এদের শেষ দৃশ্যটি সব সময় কৌতুক অভিনেতা ভানুর সেই কৌতূকের মতো হয়েছে।
‘ভানু : ওকিল মহাশয়। ফাঁসির হুকুম তো হয়ে গেল! এখন কী করব?
উকিল: ঝুইলা পড়ো। আমি তো আছিই।’
সমস্যা হলো এরা শুধু নিজেরাই ঝোলে না। সারা জাতিকে ঝুলিয়ে দিয়ে যায়।
নিরাপত্তা পরিষদে বর্তমানে যে পাঁচজন স্থায়ী সদস্য রয়েছে, তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তি হিসেবে এই মর্যাদা ও আরামের আসনটি সংরক্ষণ করে ফেলেছে। তাদের এ জন্য বিশেষ কোনো পরীক্ষায় বসতে হয়নি। অন্য কারো কাছ থেকে চরিত্রগত সনদ কিংবা অন্য কোনো যোগ্যতার সনদ সংগ্রহ করতে হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে যারা একই অবস্থানে আসতে খায়েশ প্রকাশ করবে, তাদের এসব কঠিন ও জটিল পরীক্ষায় পাস করেই আসতে হবে। এটাই নিয়ম। কারণ ডায়নাকে বিয়ের আগে সতীত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছিল। তবে একই বিয়ের জন্য প্রিন্স চার্লসকে তেমন কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। ব্যাপারটা অনেকটা তেমনি।
জাতিসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্য পদ পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য প্রথম ধাপটি হলো, সাধারণ পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি ও সমর্থন অর্জন। এটি অর্জিত হলে পরের ধাপ হলো, খোদ নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতি।
এই শর্তগুলো যারপরনাই কঠিন। কারণ নিরাপত্তা পরিষদে যারা আছে, তারা সর্বদা পরস্পর দুটি ব্লক বা মেরুতে অবস্থান করে। পরস্পর মুখোমুখি এই দু’টি পকে একসাথে সন্তুষ্ট করার কাজটি আসলেই কঠিন। কারণ দু’টি শর্তই বানানো হয়েছে যাতে নতুন করে কেউ এখানে ঢুকতে না পারে। তার পরেও যে ক’জন নাছোড়বান্দা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে ইন্ডিয়া অন্যতম।
এই কঠিন কাজটির একটি বিশেষ অধ্যায় অতিক্রম করে ফেলেছে ইন্ডিয়া। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীনের সম্মতি আগেভাগেই নিয়ে রেখেছে। গত ইন্ডিয়া সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী আসন পেতে ইন্ডিয়াকে সমর্থন জানাবেন বলে অঙ্গীকার করে এসেছেন। এখন ‘ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে’ এমন ধরনের কিছু না ঘটলে ইন্ডিয়ার স্বপ্ন পূরণে নিরাপত্তা পরিষদের বাধা বা ঠেকটি আর রইল না।
বলা যায়, ইন্ডিয়ার আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। অর্থাৎ বিশ্ব পরিসরে ইন্ডিয়ার জন্য মাহেন্দ্রণ উপস্থিত। এখন বাকি চ্যালেঞ্জটি হলো, সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের সমর্থনের নিশ্চয়তাটুকু। ১৯২ জন সদস্যের মধ্যে সবার সাথে ইন্ডিয়ার স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই। বর বা কনের চরিত্র এবং চালচলন সম্পর্কে জানতে যেমন প্রতিবেশীর দ্বারস্থ হতে হয়, তেমনি প্রায় পৌনে দুই শ’ সদস্য ইন্ডিয়ার চালচলন ও চরিত্র সম্পর্কে জানতে তার নিকটতম প্রতিবেশীর সাথে তার সম্পর্ককে বিবেচনায় নেবে, এটাই স্বাভাবিক।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ সদস্যদের মধ্যে বেশির ভাগ দেশই নিরীহ। তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে কম বেশি উদ্বিগ্ন। এদের প্রায় সবাই সমব্যথায় ব্যথী। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দাসত্বের শৃঙ্খলে ইতিহাসের দীর্ঘ সময় এদের অনেককেই কাটাতে হয়েছে। চুন খেয়ে মুখ পুড়েছে। কাজেই দই খাওয়ার আগে ভালো করে চেক করে নেয়। যেকোনো আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী শক্তিকে তারা ভয়, ঘৃণা ও সন্দেহের চোখে দেখে থাকে। যখন তারা সুযোগ পায়, নিপীড়িত নির্যাতিত জাতির দিকে সর্বদা নিজেদের সমর্থন তুলে ধরে। সম্ভবত বিশ্বমানবতা ও নৈতিকতার বাঁশিটি এই সাধারণ পরিষদের কণ্ঠেই বেজে ওঠে। অবশ্য কোনো কিছু কার্যকর করার শক্তি এই পরিষদের হাতে নেই। সে জন্য নিরাপত্তা পরিষদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর আগ্রাসন নিয়ে আগ্রাসী ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ সাধারণ পরিষদে সহজেই নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়ে যায়।
ইন্ডিয়া এই ব্যাপারটি ভালো করেই জানে। নিজের সম্পর্কে আত্মসমালোচনা বা সেলফ অ্যাসেসমেন্ট করেছে। তাই ২০১৩ সালের সাধারণ অধিবেশনে নিরাপত্তা পরিষদে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে উত্থাপনের সাহস করেনি ইন্ডিয়া। দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য দেশের সমর্থন জুটবে, এমন আস্থা ইন্ডিয়া সঙ্গত কারণেই রাখতে পারেনি। কারণ নিকট প্রতিবেশীর সাথে ইন্ডিয়ার আচরণ নিয়ে সারাবিশ্বের মানুষের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মূলমন্ত্র শান্তি ও নিরাপত্তা (Peace and Security) রক্ষায় ইন্ডিয়ার এই ইমেজটি ততটা উজ্জ্বল নয়। তবে এই স্বপ্নটি পূরণের জন্য মোটামুটি টেনেটুনে একটা ভালোমানুষি অবয়ব বিশ্বসভায় এ যাবত প্রদর্শন করে এসেছে। ছোটখাটো কিছু দাগ থাকলেও চরিত্রে বড় ধরনের কোনো দাগ পড়েনি। কাশ্মিরের সমস্যাকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। ১৯৭১ সালে সবচেয়ে বড় শত্রু পাকিস্তানকে খন্ডিত করার লক্ষ্যে সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেও তা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মদানের মতো মহৎ কাজ হিসেবে গণ্য হয়েছে। যুদ্ধের পর বিজিত ভূখন্ডে সৈন্য রেখে দিতে চাইলেও নিজের এই ইমেজের কথা চিন্তা করে (মুজিব চাহিবা মাত্রই) তা উঠিয়ে নিয়েছে। মাঝখানে স্বাধীন সিকিমকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেও লেন্দুপ দর্জির ভূমিকার কারণে দখলদারের দুর্নামটি ইন্ডিয়ার ঘাড়ে পড়েনি। নেপাল ও ভুটানকে নিজের কব্জায় নিলেও কখনোই দখলদার বা আগ্রাসীর ভূমিকায় নামতে হয়নি। শ্রীলঙ্কার অশান্তিতে কলকাঠি নাড়লেও বা বিভিন্নভাবে ইন্ধন জোগালেও সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি।
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের একটা প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা শুধু রাজনৈতিক প্রতিপরে উল্টো কাজ হিসেবে করছে এমন নয়; এখানে অন্য গণনা কাজ করছে।
সেই গণনাটি হলো, বিশ্বসভায় নিজের ভালো মানুষি প্রদর্শনের তাগিদ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি অনুভব করছে ইন্ডিয়া। নির্বাচনের আগে আগে আমাদের অনেক নেত্রী যেমন মাথায় পট্টি বাঁধেন, কেউ কেউ দু’বার আছরের নামাজ পড়েন, গ্রামের ‘আতইরা’কেও জ্বনাব আতর আলী সাহেব বলে ডাক দেন, তেমনি একটা সময় এই গ্লোবাল ভিলেজে ইন্ডিয়ার জন্যও উপস্থিত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অদ্ভুত, অবৈধ ও ব্রেইন ডেড একটি সরকারকে (প্রশাসন যার ভেন্টিলেটর হিসেবে কাজ করছে) সমর্থন করা ইন্ডিয়ার নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিল। বিশ্বসভায় যে মুহূর্তে (বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রায়) তার ভূমিকা আরো উজ্জ্বল করার কথা, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ইন্ডিয়ার মুখে সবচেয়ে বড় দাগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় ইন্ডিয়ার নির্লজ্জ সহযোগিতা তাকে ক্রমাগত বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে ।
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিশ্বের সবচেয়ে বাজে নির্বাচনগুলোর একটি হিসেবে সব ধরনের জরিপে উঠে এসেছে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টিতে কোনো নির্বাচনেরই প্রয়োজন পড়েনি। বাদবাকি আসনগুলোতেও শতকরা পাঁচ ভাগের কম ভোটার ও উপস্থিত হয়েছে। অনেক ভোটকেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে কুকুর ছাড়া কোনো দ্বিপদী প্রাণী দেখা যায়নি। গৃহপালিত বিরোধী দলকেও মহাসার্কাস করে পোষ মানানো হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র প্রমুখ বিশ্বসংস্থা ও বিশ্বশক্তি বারবার এই নির্বাচন নিয়ে তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করেছে। এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখান থেকে প্রশ্ন ওঠেনি। সব আন্তর্জাতিক সংস্থা মুক্ত, অবাধ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস কয়েক দিন আগে এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের মন্দা বা রিসেশনে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেছে। এ ব্যাপারে স্পষ্টতই বিশ্বজনমতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে ইন্ডিয়া।
ইন্ডিয়ার স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশ সত্যিই একটি অগ্নিপরীক্ষা। মনে হচ্ছে, ইন্ডিয়া নিজের নাক কেটে বাংলাদেশের (গণতন্ত্রের) যাত্রাটি ভঙ্গ করছে। অথচ বিশ্বের মধ্যে বেশির ভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে ইন্ডিয়ার বিরাট ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্কীর্ণ গণ্ডি পেরিয়ে ইন্ডিয়া যদি বৈশ্বিক চাহিদা ও প্রত্যাশার (Global need and expectation) দিকে মনোযোগ দেয়, তবে পুরো এলাকার চেহারা বদলে যেতে পারে। ইন্ডিয়াকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের ষোল-সতের কোটি মানুষকে অশান্তিতে রেখে ইন্ডিয়া নিজের শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে না।
কোনো বিশেষ দলের সাথে অবৈধ প্রেম নয়, এ দেশের জনগণের সাথে বৈধ সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত । পিপল টু পিপল কন্টাক্ট বা জনগণের সাথে জনগণের সংযোগ খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া এক পা এগিয়ে এলে এ দেশের জনগণ দুই পা এগিয়ে যাবে।
এ দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর ঐতিহাসিক সুযোগ ইন্ডিয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। ইন্ডিয়ার জাতীয় স্বার্থও একই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছে। কাজেই এই সরকারকে যেকোনো মূল্যে টিকিয়ে রাখলে ইন্ডিয়ার লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হবে।
তার পরেও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা অতি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসে ভুগছেন বলে মনে হচ্ছে। ব্যক্তিগত আবেগের চেয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের নিরিখেই ইন্ডিয়ার ফরেন পলিসি নির্ধারিত হয়। শেখ মুজিব ও খোন্দকার মোশতাকের মধ্যে কে ইন্ডিয়ার বড় সুহৃদ ছিলেন ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে, সেটা বোঝা যায়নি। ১৬ আগস্টে রাষ্ট্রদূত সমর সেন খোন্দকার মোশতাকের সঙ্গে যেভাবে দন্তবিকশিত করে পোজ দিয়েছিলেন, তা সেই নির্মম সত্যটি তুলে ধরে। তখনকার অনেক গোপন চুক্তি ও আশ্বাস গোপনেই রয়ে গেছে। ইন্দিরা গান্ধীর নাকি নির্দেশ ছিল, ডোন্ট ডিস্টার্ব মোশতাক গভর্নমেন্ট!
উত্তরপাড়াকে (দেশের সামরিক বাহিনীকে) ও প্রতিপকে স্বভাবসুলভ খোঁচা মেরে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের মতাগ্রহণের সুযোগ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু অসাংবিধানিকভাবে মতায় যারা এসেছেন তারা সংবিধানকে স্থগিত করেই এসেছেন। যারা সংবিধান নামক মূর্তিটি তৈরি করেন, সেই মূর্তিমানেরাও চিরদিন ভূপৃষ্ঠে থাকেন না । কোনো সরকারই শেষ সরকার নয়। কোনো সংবিধানই শেষ সংবিধান নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষের জন্য সংবিধান। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়।
ইন্ডিয়ার সাথে বিভিন্ন গোপন চুক্তির কথাও বিভিন্ন কৌশলে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের অনেকগুলোই প্রেমিকাকে লেখা প্রেমপত্রের মতোই মধুর।
কিন্তু প্রয়োজনের সময় ইন্ডিয়া পাঁচ ভাগের কম জনসমর্থিত একটি সরকারকে বিশ্ব জনমতের বিপে গিয়ে রা করবে, সেটা ভাবাও কঠিন। বিশেষ করে যখন বিশ্বসভায় নিজের ইমেজ বৃদ্ধির চাপ রয়েছে, তখন আগ্রাসী শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করার এই ঝুঁকি তারা গ্রহণ করবেন, এমন বোকা ইন্ডিয়ার নেতাদের ভাবা যায় না।
কাজেই অতি আত্মবিশ্বাসী সরকার সম্ভবত নিজের ও তার দলের জন্যই বিপদটি টেনে আনছে না। সারা জাতিকে চরম বিপদের দিকে টেনে নিচ্ছে।
এক-এগারোর পর যখন সারা দেশে মাইনাস টু’র পক্ষে বিশাল স্রোত বয়ে চলছিল তখনো এই কলামটি সেই স্রোতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছি। কোনো ধরনের অসাংবিধানিক শাসনের পক্ষে অবস্থান করিনি । এই লেখাটি কোনো পরে জন্য উসকানি নয়। গণতান্ত্রিক সব শক্তির জন্য একটি সাবধান বাণী। জানি না, আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা থেকে সদুপদেশটি গ্রহণ করার মতো প্রজ্ঞা এই সরকারের কোনো পর্যায়ে অবশিষ্ট আছে কি না। আমি মনে করি রাজনৈতিক সমাধানের পথ এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি।
বাংলাদেশের মানুষ উত্তর কোরিয়া কিংবা মিয়ানমারের জনগণের মতো নয়। যে কৌশলেই আটকানো হোক না কেন, যেভাবেই মুখটি বন্ধ করা হোক না কেন, মুক্তির একটা উপায় তারা বের করে নেবেই।
পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বড় বড় স্বৈরাচারীরা সব সময় আত্মতৃপ্তি ও আত্মবিশ্বাসে ভুগেছেন । এদের শেষ দৃশ্যটি সব সময় কৌতুক অভিনেতা ভানুর সেই কৌতূকের মতো হয়েছে।
‘ভানু : ওকিল মহাশয়। ফাঁসির হুকুম তো হয়ে গেল! এখন কী করব?
উকিল: ঝুইলা পড়ো। আমি তো আছিই।’
সমস্যা হলো এরা শুধু নিজেরাই ঝোলে না। সারা জাতিকে ঝুলিয়ে দিয়ে যায়।
>>মিনার রশীদ
minarrashid@yahoo.com
minarrashid@yahoo.com
No comments