নারায়ণগঞ্জে খালেদা জিয়ার সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপিতে ক্ষোভ by বিল্লাল হোসেন রবিন
আগামী ১৩ই ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সোনাগাঁয়ের কাঁচপুরে ডিএমপি’র ডাম্পিং মাঠে জেলা বিএনপি’র জনসভায় আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই সমাবেশের স্থান নিয়ে ইতিমধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। এ ছাড়া সমাবেশের স্থান নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালসহ নগর ও জেলা বিএনপি’র অনেক নেতা। ইতিমধ্যে সমাবেশ সফল করতে একাধিক প্রস্তুতি সভায় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার। তার উপস্থিতিতেই নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শুক্রবার ফতুল্লায় প্রস্তুতি সভায় বক্তারা বলেন, ‘খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জে আসবেন অথচ সেটা হচ্ছে সোনারগাঁয়ে। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। কি কারণে নারায়ণগঞ্জ শহরে আনা হচ্ছে না- তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রস্তুতি সভায় সমাবেশকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল বিভিন্ন প্রশ্ন করেন তৈমূর আলমকে উদ্দেশ্য করে। এর মধ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন যে জেলাতেই সফরে যান না কেন জেলা সদরেই তার জনসভাগুলো হয়ে থাকে, নারায়ণগঞ্জে এর ব্যতিক্রম হলো কেন? ৭ খুনের পর দেশনেত্রী নারায়ণগঞ্জ শহরে জনসভা করতে চাইলে তখন সিটি করপোরেশন ও প্রশাসন থেকে অনুমতি দেয়া না হলেও জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা বলেছিলেন, বর্তমানে ৭ খুন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোন সময় অবনতি হতে পারে বিধায় এ মুহূর্তে ম্যাডামকে শহরে আনা সমীচীন হবে না। তখন তিনি কথা দিয়েছিলেন দু’-এক মাস পরে ম্যাডামকে শহরে আনতে চাইলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। অনুমতির পাশাপাশি আমরা সে জনসভাকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। কিন্তু এবার কেন শহরে সমাবেশ করার অনুমতিই চাওয়া হলো না?
এ টি এম কামাল বলেন, জেলা বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, কাঁচপুর নাকি এ জেলার কেন্দ্রবিন্দু এবং বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা এ সমাবেশে আসবেন, সে কারণেই নাকি সেখানে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, আমরা বিভিন্ন শহরে ম্যাডামের জনসভায় অংশগ্রহণ করে থাকি, সেখানে জেলা সদরেই কোন ঐতিহাসিক মাঠে জনসভাগুলো হয়ে থাকে। অথচ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাইরে পতিত একটি স্থানে ডিএমপি’র বর্জ্যের ভাগাড়ে (ডাম্পিং স্পট) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশের আয়োজন করায় বিভিন্ন জেলার মেহমানদের কাছে আমাদের এ নারায়ণগঞ্জকে হেয়ই করা হবে। যেখানে লাখো মানুষের জমায়েত হবে, সেখানে তাদের জন্য মানবিক ও প্রাকৃতিক সব ব্যাপারেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে, যা কাঁচপুরে নেই। এ টি এম কামাল আরও বলেন, এ শহরে ম্যাডামকে গডফাদার শামীম ওসমান এক সময় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা যারা গডফাদারের নির্যাতন, রক্তচক্ষু, জেল-জুলুম, মামলা-হামলাকে মোকাবিলা করে হরতাল-অবরোধে এখনও ঝাঁপিয়ে পড়ে, শহরে ম্যাডাম সমাবেশ করলে তাদের মনোবল আরও হাজার গুণ বেড়ে যেতো।
শুক্রবার ফতুল্লার প্রস্তুতি সভায় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘১৩ই ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে খালেদা জিয়া আসবেন- সেটা এখন সফল করতে হবে। আগামীতে ম্যাডামকে নারায়ণগঞ্জ শহরে আনা হবে।’
এটিএম কামালের আবেদন
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে ডিএমপির ডাম্পিং মাঠে আগামী ১৩ই ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের জন্য নির্ধারণ করা ভেন্যু পরিবর্তনের জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। গতকাল পাঠানো আবেদনের অনুলিপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুহুল কবীর রিজভীকে দেয়া হয়েছে। আবেদনে এটিএম কামাল উল্লেখ করেন, কাঁচপুরে দেশনেত্রীর জনসভার স্থান নির্ধারণ হওয়ায় একের পর এক প্রস্তুতি সভায় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে নারায়ণগঞ্জ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্নের কোন সদুত্তরই দিতে পারছেন না তারা। জনসভার স্থান নির্ধারণ নিয়ে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য হলো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন যে জেলাতেই সফরে যান না কেন জেলা সদরেই তার জনসভাগুলো হয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জে এর ব্যতিক্রম হলো কেন? ৭ খুনের পর দেশনেত্রী নারায়ণগঞ্জ শহরে জনসভা করতে চাইলে তখন সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসন থেকে অনুমতি দেয়া না হলেও জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিয়া বলেছিলেন, বর্তমানে ৭ খুন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোন সময় অবনতি হতে পারে বিধায় এ মুহূর্তে ম্যাডামকে শহরে আনা সমীচীন হবে না। তখন তিনি কথা দিয়েছিলেন, দুই-এক মাস পরে ম্যাডামকে শহরে আনতে চাইলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। অনুমতির পাশাপাশি আমরা সে জনসভাকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। কিন্তু এবার কেন শহরে সমাবেশ করার অনুমতিই চাওয়া হলো না? জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ গণমাধ্যমে বলেছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে আসবে, সে কারণেই নাকি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কর্মীদের বক্তব্য হলো, আমরা বিভিন্ন শহরে ম্যাডামের জনসভায় অংশগ্রহণ করে থাকি, সেখানে জেলা সদরের কোন ঐতিহাসিক মাঠে জনসভাগুলো হয়ে থাকে। শহরের বাইরে পতিত একটি স্থানে ডিএমপি’র ডাম্পিং মাঠে (বর্জ্যের ভাগাড়ে) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশ হলে বিভিন্ন জেলার মেহমানদের কাছে নারায়ণগঞ্জের ভাবমূর্তি হেয়ই হবে। শহরে সমাবেশ করলে তাতে পুরো জেলার নেতাকর্মীরাই উজ্জীবিত হতো। এই অবৈধ সরকারের পতনের আন্দোলন বেগবান এবং দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে আপনি দেশব্যাপী যে সমাবেশ করছেন, তার সবই জেলা শহরের ঐতিহাসিক কোন স্থানেই হয়েছে। যেখানে লাখো মানুষের জমায়েত হবে, সেখানে তাদের জন্য মানবিক-প্রাকৃতিক সব ব্যাপারেই পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে যা কাঁচপুরে নেই। কাঁচপুরের সেই মাঠের আশপাশে কোন জনবসতিই নেই, আছে শুধু কলকারখানা, বাজার আর শ্রমিকদের আবাস। নারায়ণগঞ্জ শহরে জনসভা হলে বাড়িতে থেকেও হাজারো মা বোন দেশনেত্রী আপনার কণ্ঠ শুনতে পাবেন। ম্যাডাম, আপনাকে গডফাদার শামীম ওসমান এক সময় এই শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল। এই গডফাদারের সন্ত্রাসীরাই নারায়ণগঞ্জের রাজপথে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে আমাদের সহকর্মী মজিবর, ইব্রাহিম, অনিক, অনু, বুলু ও খোকনসহ বিএনপি যুবদল, ছাত্রদলের আরও অনেক নেতাকর্মীকে। তাদের রক্তে রঞ্জিত নারায়ণগঞ্জ শহরের মাটি। এই শহরে আপনার আগমনে এই শহীদদের আত্মাও শান্তি পারে। দেশনেত্রী, আপনার আহ্বানে জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মী যারা গডফাদারের নির্যাতন, রক্তচক্ষু, জেল-জুলুম, মামলা-হামলাকে মোকাবিলা করে হরতাল-অবোরধসহ সকল দলীয় কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, এই শহরে আপনার সমাবেশ হলে তাদের মনোবল আরও হাজার গুণ বেড়ে যেতো। নারায়ণগঞ্জ শহর হচ্ছে দেশের রাজনীতির, আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার। ভাষা আন্দোলনে, ’৭১-র ২৬শে মার্চ হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে, ’৯০-র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এই শহরের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ঐতিহাসিক ভাবে স্বীকৃত। ১/১১-এর গণতন্ত্র হরণকারী সেনা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধেও এই নারায়ণগঞ্জ শহরই ছিল প্রতিবাদে উত্তাল। ১/১১-এর সময় দেশনেত্রী আপনার, দেশনায়ক তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে এই নারায়ণগঞ্জ শহরেই জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হয়েছিল আমরণ অনশন কর্মসূচি। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই শহরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী আপনি অনেক সফল জনসভা করেছেন। যেখানে লাখো জনতার উপস্থিতি এখনও এই শহরের মানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। গত আট বছর ধরে দেশনেত্রী আপনাকে নারায়ণগঞ্জ শহরে আনা হচ্ছে না কেন? কার স্বার্থে, কোন মহলের ইঙ্গিতে আজ কাঁচপুরের ডিএমপি’র ডাম্পিং মাঠের মতো একটি অস্বাস্থ্যকর স্থানে সমাবেশটি নিয়ে যাওয়া হলো? তাই নারায়ণগঞ্জবাসী, বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে কাঁচপুরের ডিএমপির ডাম্পিং মাঠে জনসভার স্থানটি পরিবর্তনে আবেদন জানানো হলো।
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রস্তুতি সভায় সমাবেশকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল বিভিন্ন প্রশ্ন করেন তৈমূর আলমকে উদ্দেশ্য করে। এর মধ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন যে জেলাতেই সফরে যান না কেন জেলা সদরেই তার জনসভাগুলো হয়ে থাকে, নারায়ণগঞ্জে এর ব্যতিক্রম হলো কেন? ৭ খুনের পর দেশনেত্রী নারায়ণগঞ্জ শহরে জনসভা করতে চাইলে তখন সিটি করপোরেশন ও প্রশাসন থেকে অনুমতি দেয়া না হলেও জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা বলেছিলেন, বর্তমানে ৭ খুন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোন সময় অবনতি হতে পারে বিধায় এ মুহূর্তে ম্যাডামকে শহরে আনা সমীচীন হবে না। তখন তিনি কথা দিয়েছিলেন দু’-এক মাস পরে ম্যাডামকে শহরে আনতে চাইলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। অনুমতির পাশাপাশি আমরা সে জনসভাকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। কিন্তু এবার কেন শহরে সমাবেশ করার অনুমতিই চাওয়া হলো না?
এ টি এম কামাল বলেন, জেলা বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, কাঁচপুর নাকি এ জেলার কেন্দ্রবিন্দু এবং বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা এ সমাবেশে আসবেন, সে কারণেই নাকি সেখানে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, আমরা বিভিন্ন শহরে ম্যাডামের জনসভায় অংশগ্রহণ করে থাকি, সেখানে জেলা সদরেই কোন ঐতিহাসিক মাঠে জনসভাগুলো হয়ে থাকে। অথচ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাইরে পতিত একটি স্থানে ডিএমপি’র বর্জ্যের ভাগাড়ে (ডাম্পিং স্পট) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশের আয়োজন করায় বিভিন্ন জেলার মেহমানদের কাছে আমাদের এ নারায়ণগঞ্জকে হেয়ই করা হবে। যেখানে লাখো মানুষের জমায়েত হবে, সেখানে তাদের জন্য মানবিক ও প্রাকৃতিক সব ব্যাপারেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে, যা কাঁচপুরে নেই। এ টি এম কামাল আরও বলেন, এ শহরে ম্যাডামকে গডফাদার শামীম ওসমান এক সময় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা যারা গডফাদারের নির্যাতন, রক্তচক্ষু, জেল-জুলুম, মামলা-হামলাকে মোকাবিলা করে হরতাল-অবরোধে এখনও ঝাঁপিয়ে পড়ে, শহরে ম্যাডাম সমাবেশ করলে তাদের মনোবল আরও হাজার গুণ বেড়ে যেতো।
শুক্রবার ফতুল্লার প্রস্তুতি সভায় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘১৩ই ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে খালেদা জিয়া আসবেন- সেটা এখন সফল করতে হবে। আগামীতে ম্যাডামকে নারায়ণগঞ্জ শহরে আনা হবে।’
এটিএম কামালের আবেদন
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে ডিএমপির ডাম্পিং মাঠে আগামী ১৩ই ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের জন্য নির্ধারণ করা ভেন্যু পরিবর্তনের জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। গতকাল পাঠানো আবেদনের অনুলিপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুহুল কবীর রিজভীকে দেয়া হয়েছে। আবেদনে এটিএম কামাল উল্লেখ করেন, কাঁচপুরে দেশনেত্রীর জনসভার স্থান নির্ধারণ হওয়ায় একের পর এক প্রস্তুতি সভায় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে নারায়ণগঞ্জ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্নের কোন সদুত্তরই দিতে পারছেন না তারা। জনসভার স্থান নির্ধারণ নিয়ে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য হলো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন যে জেলাতেই সফরে যান না কেন জেলা সদরেই তার জনসভাগুলো হয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জে এর ব্যতিক্রম হলো কেন? ৭ খুনের পর দেশনেত্রী নারায়ণগঞ্জ শহরে জনসভা করতে চাইলে তখন সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসন থেকে অনুমতি দেয়া না হলেও জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিয়া বলেছিলেন, বর্তমানে ৭ খুন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোন সময় অবনতি হতে পারে বিধায় এ মুহূর্তে ম্যাডামকে শহরে আনা সমীচীন হবে না। তখন তিনি কথা দিয়েছিলেন, দুই-এক মাস পরে ম্যাডামকে শহরে আনতে চাইলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। অনুমতির পাশাপাশি আমরা সে জনসভাকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। কিন্তু এবার কেন শহরে সমাবেশ করার অনুমতিই চাওয়া হলো না? জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ গণমাধ্যমে বলেছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে আসবে, সে কারণেই নাকি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কর্মীদের বক্তব্য হলো, আমরা বিভিন্ন শহরে ম্যাডামের জনসভায় অংশগ্রহণ করে থাকি, সেখানে জেলা সদরের কোন ঐতিহাসিক মাঠে জনসভাগুলো হয়ে থাকে। শহরের বাইরে পতিত একটি স্থানে ডিএমপি’র ডাম্পিং মাঠে (বর্জ্যের ভাগাড়ে) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশ হলে বিভিন্ন জেলার মেহমানদের কাছে নারায়ণগঞ্জের ভাবমূর্তি হেয়ই হবে। শহরে সমাবেশ করলে তাতে পুরো জেলার নেতাকর্মীরাই উজ্জীবিত হতো। এই অবৈধ সরকারের পতনের আন্দোলন বেগবান এবং দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে আপনি দেশব্যাপী যে সমাবেশ করছেন, তার সবই জেলা শহরের ঐতিহাসিক কোন স্থানেই হয়েছে। যেখানে লাখো মানুষের জমায়েত হবে, সেখানে তাদের জন্য মানবিক-প্রাকৃতিক সব ব্যাপারেই পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে যা কাঁচপুরে নেই। কাঁচপুরের সেই মাঠের আশপাশে কোন জনবসতিই নেই, আছে শুধু কলকারখানা, বাজার আর শ্রমিকদের আবাস। নারায়ণগঞ্জ শহরে জনসভা হলে বাড়িতে থেকেও হাজারো মা বোন দেশনেত্রী আপনার কণ্ঠ শুনতে পাবেন। ম্যাডাম, আপনাকে গডফাদার শামীম ওসমান এক সময় এই শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল। এই গডফাদারের সন্ত্রাসীরাই নারায়ণগঞ্জের রাজপথে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে আমাদের সহকর্মী মজিবর, ইব্রাহিম, অনিক, অনু, বুলু ও খোকনসহ বিএনপি যুবদল, ছাত্রদলের আরও অনেক নেতাকর্মীকে। তাদের রক্তে রঞ্জিত নারায়ণগঞ্জ শহরের মাটি। এই শহরে আপনার আগমনে এই শহীদদের আত্মাও শান্তি পারে। দেশনেত্রী, আপনার আহ্বানে জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মী যারা গডফাদারের নির্যাতন, রক্তচক্ষু, জেল-জুলুম, মামলা-হামলাকে মোকাবিলা করে হরতাল-অবোরধসহ সকল দলীয় কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, এই শহরে আপনার সমাবেশ হলে তাদের মনোবল আরও হাজার গুণ বেড়ে যেতো। নারায়ণগঞ্জ শহর হচ্ছে দেশের রাজনীতির, আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার। ভাষা আন্দোলনে, ’৭১-র ২৬শে মার্চ হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে, ’৯০-র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এই শহরের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ঐতিহাসিক ভাবে স্বীকৃত। ১/১১-এর গণতন্ত্র হরণকারী সেনা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধেও এই নারায়ণগঞ্জ শহরই ছিল প্রতিবাদে উত্তাল। ১/১১-এর সময় দেশনেত্রী আপনার, দেশনায়ক তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে এই নারায়ণগঞ্জ শহরেই জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হয়েছিল আমরণ অনশন কর্মসূচি। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই শহরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী আপনি অনেক সফল জনসভা করেছেন। যেখানে লাখো জনতার উপস্থিতি এখনও এই শহরের মানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। গত আট বছর ধরে দেশনেত্রী আপনাকে নারায়ণগঞ্জ শহরে আনা হচ্ছে না কেন? কার স্বার্থে, কোন মহলের ইঙ্গিতে আজ কাঁচপুরের ডিএমপি’র ডাম্পিং মাঠের মতো একটি অস্বাস্থ্যকর স্থানে সমাবেশটি নিয়ে যাওয়া হলো? তাই নারায়ণগঞ্জবাসী, বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে কাঁচপুরের ডিএমপির ডাম্পিং মাঠে জনসভার স্থানটি পরিবর্তনে আবেদন জানানো হলো।
No comments