আদালতে খুনের বিবরণ আসামির অথচ ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা! by মহিউদ্দীন জুয়েল
হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামি। আদালতে বলেছেন, প্ল্যান করে বিয়ের ২০ দিনের মাথায় নববধূকে সন্দেহ করে ওড়না পেঁচিয়ে খুন করেছেন তিনি। অথচ মেডিক্যাল রিপোর্টের ময়নাতদন্তে এই ঘটনাকে বলা হয়েছে আত্মহত্যা! চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর রীমা হত্যাকাণ্ডের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে পাওয়া গেছে এমনি গরমিল তথ্য। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র চলছে জোর আলোচনা। প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সততা ও প্রতিবেদন নিয়েও। যদিও ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন অত্যন্ত সততার সঙ্গে খুনের আলামত পর্যবেক্ষণ করে আত্মহত্যার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাউজানের রীমা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় আবু বক্করের। এরপর বিয়ের ২০ দিনের মাথায় খুন হয় রীমা। ঘটনাস্থল তার শ্বশুরবাড়ি স্থানীয় নোয়াজিশপুরে। ঘটনার দিনই নিহতের ভাই তৌহিদুল আলম বাদি হয়ে রিমার স্বামী আবু বক্কর, বক্করের ভাই ইব্রাহিম, মা শেলিনা ইয়াছমিন, মামা নজরুল ইসলাম ও মামী পারভিন আক্তারকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। বিয়ের পরদিন থেকেই রীমার সঙ্গে বিবাদে জড়ায় স্বামী বক্কর। এই সময় কথাকাটাকাটির সূত্র ধরে সে তাকে সন্দেহ করার কথা জানায়। বলে, রীমার সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ক ছিল। পারিবারিক অশান্তি শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই রীমার ওপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন।
চট্টগ্রাম আদালতের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর রীমার স্বামী বক্কর বিচারকের সামনে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। এই সময় তিনি বলেন, পরকীয়ার সন্দেহ করে নিজ হাতে তিনি স্ত্রীকে খুন করেছেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে তার মা শেলিনা ইয়াছমিন ও মামী পারভিন আক্তার। ঘটনার দিন তারা সবাই মিলে নববধূকে জাপটে ধরে বাড়ির একটি কক্ষে। এরপর প্রথমে তার হাত চেপে ধরেন স্বামী বক্কর। অন্যদিকে গলায় ওড়না পেঁচায় মামী। দুই হাত বাঁধার কাজে থাকে শাশুড়ি শেলিনা। এক সময় মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার পরিবারকে দুই ধরনের বক্তব্য দেয় বক্কর। মামলার বাদী নিহতের ভাইকে একবার জানায় তার বোনের মুখ দিয়ে ফেনা বের করছে। আরেক সময় বলে সে নাকি আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে রিমার ভাই বাদী তৌহিদুল আলম দ্রুত এসে দেখেন তার বোন ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।
পরে এই ঘটনার ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডা. মোমিনুর রহমান। তিনি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আদালতে যে প্রতিবেদন দেন সেখানে বলা হয় মেয়েটি দাম্পত্য কলহ থেকে আত্মহত্যা করেছে। তার গলায় ওড়নার দাগ থেকে তাই প্রমাণিত হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সচেতন মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। আদালতের বক্তব্য আর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দুই ধরনের হওয়াতে ডাক্তারের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠে। নববধূ রীমার পরিবার দাবি করেছেন টাকা খেয়ে ডাক্তার পাল্টে দিয়েছেন এই প্রতিবেদন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে রিমার ভাই তৌহিদুল আলম বলেন, একজন বখাটের কাছে বোনকে বিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। যদি জানতাম তাহলে ভাই হয়ে কখনও এমন কাজ করতাম না। আমার বোনের মেহেদীর রঙ না শুকাতেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হলো। ডাক্তারের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাস্যকর। আসামি নিজে আদালতে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। অথচ ডাক্তার বলছেন সে নাকি আত্মহত্যা করেছে। এই রিপোর্টের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
নববধূ রীমার পারিবারিক সূত্র জানায়, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে শিগগিরই বিষয়েটি আদালতকে জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। দুই ধরনের বক্তব্য মামলার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। একই সঙ্গে প্রকৃত আসামিরা কৌশলে খালাসও পেতে পারেন বলে মনে করছেন তারা। জানতে চাইলে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বাবর বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। হতবাক হয়েছি রিপোর্ট দেয়ার কথা শুনে। কিভাবে এই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি হয় তা আমার বোধগম্য নয়। তাছাড়া আসামি যেখানে খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জবানবন্দিতে আবু বক্কর তার স্ত্রী রিমা আক্তার পরকীয়ায় আসক্ত ছিল বলে দাবি করেছে বিষয়টি সত্য নয়। চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ পারভেজের আদালতে ১০ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তার খুনের ঘটনার পুরো বিবরণ আছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একটি চক্র মোটা অংকের বিনিময়ে আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যা, আবার হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। সাগর নামে এক দালালের সহায়তায় চক্রটি জঘন্য এ অপরাধ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গত ৬ই সেপ্টেম্বর নগরীর বিবিরহাট এলাকায় শাহেনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করেন শাহেনার ভাই। তার দাবি, শাহেনা আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি বিচারাধীন হলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহতের পরিবার। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তাদের জানান, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শাহেনার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘হত্যার’ আলামত বর্ণনা দিলেও শেষ কলামে এসে ‘ফাঁসযুক্ত আত্মহত্যা’ বলেছেন। অথচ ওই গৃহবধূর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার মস্তিষ্কের ওপর দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়। মাথার খুলি ফেটে গেছে। চামড়ার নিচে (মাথার) তিন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধা। ডান হাতের মাঝামাঝি আঘাতের চিহ্ন। মৃত্যুর আগে ধাক্কা দেয়ায় বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাউজানের রীমা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় আবু বক্করের। এরপর বিয়ের ২০ দিনের মাথায় খুন হয় রীমা। ঘটনাস্থল তার শ্বশুরবাড়ি স্থানীয় নোয়াজিশপুরে। ঘটনার দিনই নিহতের ভাই তৌহিদুল আলম বাদি হয়ে রিমার স্বামী আবু বক্কর, বক্করের ভাই ইব্রাহিম, মা শেলিনা ইয়াছমিন, মামা নজরুল ইসলাম ও মামী পারভিন আক্তারকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। বিয়ের পরদিন থেকেই রীমার সঙ্গে বিবাদে জড়ায় স্বামী বক্কর। এই সময় কথাকাটাকাটির সূত্র ধরে সে তাকে সন্দেহ করার কথা জানায়। বলে, রীমার সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ক ছিল। পারিবারিক অশান্তি শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই রীমার ওপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন।
চট্টগ্রাম আদালতের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর রীমার স্বামী বক্কর বিচারকের সামনে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। এই সময় তিনি বলেন, পরকীয়ার সন্দেহ করে নিজ হাতে তিনি স্ত্রীকে খুন করেছেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে তার মা শেলিনা ইয়াছমিন ও মামী পারভিন আক্তার। ঘটনার দিন তারা সবাই মিলে নববধূকে জাপটে ধরে বাড়ির একটি কক্ষে। এরপর প্রথমে তার হাত চেপে ধরেন স্বামী বক্কর। অন্যদিকে গলায় ওড়না পেঁচায় মামী। দুই হাত বাঁধার কাজে থাকে শাশুড়ি শেলিনা। এক সময় মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার পরিবারকে দুই ধরনের বক্তব্য দেয় বক্কর। মামলার বাদী নিহতের ভাইকে একবার জানায় তার বোনের মুখ দিয়ে ফেনা বের করছে। আরেক সময় বলে সে নাকি আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে রিমার ভাই বাদী তৌহিদুল আলম দ্রুত এসে দেখেন তার বোন ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।
পরে এই ঘটনার ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডা. মোমিনুর রহমান। তিনি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আদালতে যে প্রতিবেদন দেন সেখানে বলা হয় মেয়েটি দাম্পত্য কলহ থেকে আত্মহত্যা করেছে। তার গলায় ওড়নার দাগ থেকে তাই প্রমাণিত হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সচেতন মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। আদালতের বক্তব্য আর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দুই ধরনের হওয়াতে ডাক্তারের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠে। নববধূ রীমার পরিবার দাবি করেছেন টাকা খেয়ে ডাক্তার পাল্টে দিয়েছেন এই প্রতিবেদন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে রিমার ভাই তৌহিদুল আলম বলেন, একজন বখাটের কাছে বোনকে বিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। যদি জানতাম তাহলে ভাই হয়ে কখনও এমন কাজ করতাম না। আমার বোনের মেহেদীর রঙ না শুকাতেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হলো। ডাক্তারের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাস্যকর। আসামি নিজে আদালতে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। অথচ ডাক্তার বলছেন সে নাকি আত্মহত্যা করেছে। এই রিপোর্টের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
নববধূ রীমার পারিবারিক সূত্র জানায়, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে শিগগিরই বিষয়েটি আদালতকে জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। দুই ধরনের বক্তব্য মামলার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। একই সঙ্গে প্রকৃত আসামিরা কৌশলে খালাসও পেতে পারেন বলে মনে করছেন তারা। জানতে চাইলে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বাবর বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। হতবাক হয়েছি রিপোর্ট দেয়ার কথা শুনে। কিভাবে এই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি হয় তা আমার বোধগম্য নয়। তাছাড়া আসামি যেখানে খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জবানবন্দিতে আবু বক্কর তার স্ত্রী রিমা আক্তার পরকীয়ায় আসক্ত ছিল বলে দাবি করেছে বিষয়টি সত্য নয়। চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ পারভেজের আদালতে ১০ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তার খুনের ঘটনার পুরো বিবরণ আছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একটি চক্র মোটা অংকের বিনিময়ে আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যা, আবার হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। সাগর নামে এক দালালের সহায়তায় চক্রটি জঘন্য এ অপরাধ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গত ৬ই সেপ্টেম্বর নগরীর বিবিরহাট এলাকায় শাহেনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করেন শাহেনার ভাই। তার দাবি, শাহেনা আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি বিচারাধীন হলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহতের পরিবার। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তাদের জানান, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শাহেনার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘হত্যার’ আলামত বর্ণনা দিলেও শেষ কলামে এসে ‘ফাঁসযুক্ত আত্মহত্যা’ বলেছেন। অথচ ওই গৃহবধূর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার মস্তিষ্কের ওপর দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়। মাথার খুলি ফেটে গেছে। চামড়ার নিচে (মাথার) তিন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধা। ডান হাতের মাঝামাঝি আঘাতের চিহ্ন। মৃত্যুর আগে ধাক্কা দেয়ায় বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
No comments