নেপালে নতুন সংবিধান প্রণয়নের রোডম্যাপ by ড. মাহফুজ পারভেজ
নতুন
সংবিধান প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক রোডম্যাপ ধরে অগ্রসর হচ্ছে
নেপাল। আগামী বছরের ২২শে জানুয়ারি নেপালের প্রেসিডেন্ট নতুন সংবিধান ঘোষণা
করবেন বলে রোডম্যাপে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে, বিভিন্ন মতাদর্শের
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন সংবিধান প্রণয়নের
কাজ এগিয়ে চলেছে। গত শুক্রবার ‘নেপাল সাংবিধানিক পরিষদ’-এর ‘রাজনৈতিক
সংলাপ ও ঐকমত্য বিষয়ক কমিটি’ সংবিধানের জন্য আলোচনার ভিত্তিতে নেপালি
কংগ্রেস এবং নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি (সংযুক্ত)-র সুপারিশসমূহ প্রণয়ন করে
এবং ‘রাজনৈতিক সংলাপ ও ঐকমত্য বিষয়ক কমিটি’-র প্রধান ড. বাবুরাম ভট্টরায়
রিপোর্টটি ‘নেপাল সাংবিধানিক পরিষদ’-এর চেয়ারম্যান সুভাষ নিমবাং-এর কাছে
হস্তান্তর করেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১২ই জানুয়ারির মধ্যে ‘রাজনৈতিক
সংলাপ ও ঐকমত্য বিষয়ক কমিটি’ সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার
ভিত্তিতে সমঝোতা ও ঐকমত্যের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে। ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে
‘নেপাল সাংবিধানিক পরিষদ’ সংবিধান সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলোকে খসড়া প্রণয়ন
কমিটির কাছে পাঠাবে। ২৩শে ডিসেম্বরের মধ্যে খসড়া কমিটি বিধি-বিধানসহ
সংবিধানের চূড়ান্ত-খসড়া উপস্থাপন করবে। ২৫, ২৬, ২৭শে ডিসেম্বর ‘নেপাল
সাংবিধানিক পরিষদ’ খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা ও বিতর্কে মিলিত হবে। ৪ঠা
জানুয়ারির মধ্যে খসড়া সংবিধান ও এর বিধি-বিধানসমূহ জনগণের জ্ঞাতার্থে গেজেট
আকারে প্রকাশ করা হবে। ৪ঠা থেকে ৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে খসড়া সংবিধান
সম্পর্কে জনমত সংগ্রহ করা হবে। ১০ই জানুয়ারি ‘নেপাল সাংবিধানিক পরিষদ’-এর
‘পাবলিক রিলেশন্স কমিটি’ জনমতের পুরো বিবরণ জানাবে। ১১ই জানুয়ারি খসড়া
কমিটি জনমতের আলোকে পরিমার্জিত খসড়া-সংবিধান উপস্থাপন করবে। ১২, ১৩, ১৪
জানুয়ারি ‘নেপাল সাংবিধানিক পরিষদ’ পরিমার্জিত খসড়া-সংবিধানের উপর
বিস্তারিত বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনার আয়োজন করবে। ১৫, ১৬, ১৭ই জানুয়ারি
সংবিধানের উপর আনীত সংশোধনীসমূহ পেশ করার ব্যবস্থা থাকবে। ১৯, ২০, ২১শে
জানুয়ারি উত্থাপিত সংশোধনীকে সামনে রেখে সংবিধানের বিধি ও অনুচ্ছেদ অনুযায়ী
সর্বশেষ আলোচনা ও বিতর্ক হবে। ২২শে জানুয়ারি নেপালের প্রেসিডেন্ট নতুন
সংবিধান ঘোষণা করবেন। তারপরই সেটা কার্যকর হবে।
প্রায় ২৫০ বছর রাজতন্ত্রের অধীনে সাংবিধানিকভাবে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত হওয়ার পর মাওবাদীদের নেতৃত্বে ‘পিপলস ওয়ার’ বিজয়ের মাধ্যমে নেপাল প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। কিন্তু মাওবাদীদের ক্ষমতা যেমন স্থায়ী হয়নি, তেমনি একটি প্রজাতন্ত্রী সংবিধান প্রণয়ন করাও সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও এর মিত্র সংযুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি নেপালকে ধর্ম ও ভাষা ভিত্তিক প্রজাতান্ত্রিক ফেডারেশনে পরিণত করার পক্ষে। অন্যদিকে মাওবাদী নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি ধর্মনিরপেক্ষ-নেপালি জাতিসত্তার ভিত্তিতে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে। বেশ কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শক্তির রাজনৈতিক দল ও গ্রুপ এখনও মনে করে যে, নেপাল হিন্দু ধর্মভিত্তিক রাজতন্ত্রেই প্রত্যাবর্তন করা উচিত। এ রকম মনে করার কারণ, সর্বশেষ নেপালি রাজা জ্ঞানেন্দ্র গণঅভ্যুত্থানে সব কিছু ফেলে ভারতে পালিয়ে গেলেও তিনি নেপালের রাজনীতিতে এখনও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, রাজনৈতিক ক্ষমতা হারালেও নেপালের অর্থনৈতিক ক্ষমতার ৮০ ভাগই নামে-বেনামিতে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র ও ভূতপূর্ব রাজপরিবারের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বের অধীন। কাঠমাণ্ডুর ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি আসলে চালাচ্ছে এই গোষ্ঠী। এদের সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট বিপুল সংখ্যক পরিবার ও বাণিজ্যিক সংস্থা এবং এর বিপুল কর্মকর্তা-কর্মচারী নেপালে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন, যদিও প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের দাবির সামনে এই ‘রাজ-গ্রুপ’ গোষ্ঠীর দাবি হালে পানি পাবে না। আসল বিতর্ক হবে নেপালি কংগ্রেস ও সংযুক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মাওবাদী কমিউনিস্টদের মধ্যে। এই দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই নেপালের আগামী সংবিধানের বৈশিষ্ট্য, রূপ, চরিত্র নির্ধারিত হবে।
প্রায় ২৫০ বছর রাজতন্ত্রের অধীনে সাংবিধানিকভাবে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত হওয়ার পর মাওবাদীদের নেতৃত্বে ‘পিপলস ওয়ার’ বিজয়ের মাধ্যমে নেপাল প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। কিন্তু মাওবাদীদের ক্ষমতা যেমন স্থায়ী হয়নি, তেমনি একটি প্রজাতন্ত্রী সংবিধান প্রণয়ন করাও সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও এর মিত্র সংযুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি নেপালকে ধর্ম ও ভাষা ভিত্তিক প্রজাতান্ত্রিক ফেডারেশনে পরিণত করার পক্ষে। অন্যদিকে মাওবাদী নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি ধর্মনিরপেক্ষ-নেপালি জাতিসত্তার ভিত্তিতে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে। বেশ কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শক্তির রাজনৈতিক দল ও গ্রুপ এখনও মনে করে যে, নেপাল হিন্দু ধর্মভিত্তিক রাজতন্ত্রেই প্রত্যাবর্তন করা উচিত। এ রকম মনে করার কারণ, সর্বশেষ নেপালি রাজা জ্ঞানেন্দ্র গণঅভ্যুত্থানে সব কিছু ফেলে ভারতে পালিয়ে গেলেও তিনি নেপালের রাজনীতিতে এখনও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, রাজনৈতিক ক্ষমতা হারালেও নেপালের অর্থনৈতিক ক্ষমতার ৮০ ভাগই নামে-বেনামিতে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র ও ভূতপূর্ব রাজপরিবারের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বের অধীন। কাঠমাণ্ডুর ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি আসলে চালাচ্ছে এই গোষ্ঠী। এদের সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট বিপুল সংখ্যক পরিবার ও বাণিজ্যিক সংস্থা এবং এর বিপুল কর্মকর্তা-কর্মচারী নেপালে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন, যদিও প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের দাবির সামনে এই ‘রাজ-গ্রুপ’ গোষ্ঠীর দাবি হালে পানি পাবে না। আসল বিতর্ক হবে নেপালি কংগ্রেস ও সংযুক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মাওবাদী কমিউনিস্টদের মধ্যে। এই দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই নেপালের আগামী সংবিধানের বৈশিষ্ট্য, রূপ, চরিত্র নির্ধারিত হবে।
No comments