শেষ সম্বল জাল by শরিফুল হক শাহীন
জাল
বুননের সুতা ঢোকানোর একটি থুড়িয়া ও একটি ধারালো চাকুই এখন উপকূলীয় জেলেদের
শেষ সম্বল। সাগরে মাছ ধরা শেষে ছিঁড়ে যাওয়া জাল সেলাই করে তাদের জীবিকা
নির্বাহ করতে হয়। সাগরে জলদস্যুদের একের এক পর এক তাণ্ডব, লুটপাট, ঝড়ের
কবলে পড়ে ট্রলারডুবিতে ভীতসন্ত্রস্ত সমুদ্র উপকূলীয় হাজার হাজার জেলে। এখন
তাদের অনেকে এ পেশা ছেড়ে বিকল্প পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন। অনেক জেলে এখন ছেঁড়া
জাল সেলাই ও নতুন জালে দড়ি লাগানোকে জীবিকা নির্বাহের প্রধান পথ হিসেবে
বেছে নিয়েছেন। উপকূলীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপকূলীয় উপজেলা
কলাপাড়ায় ছেঁড়া জাল সেলাই ও নতুন জালে দড়ি লাগানোকে জীবিকা নির্বাহ করছে
অন্তত আড়াই হাজার জেলে পরিবার। সাগর কিংবা সাগর মোহনা সংলগ্ন এলাকায় যখন
জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে তখন এদের মজুরি বাড়ে। আবার যখন সাগরে মাছ
শিকার বন্ধ অথবা কম থাকে তখন মজুরি কমে যায়। তখন তিন শ’ টাকার মজুরি কমে
অর্ধেকে নেমে আসে। লালুয়ার চারিপাড়া স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টারের নিচে বসে
জাল সেলাই করছিলেন গোলবুনিয়া গ্রামের ওয়াজেদ আলী (৫৫), দেলোয়ার হোসেন
(৪৫), চারিপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৪৭), সোবাহান কবিরাজ (৫০), শাহ আলম
মৃধা (৫২) ও নয়াকাট গ্রামের সাঈয়েদ খলিফা (৪৪)। তারা জানান, দিনভর দড়ি
লাগিয়ে একেকজন মজুরি পায় দুই থেকে তিন শ’ টাকা। নতুন জালে নাইলনের দড়ি
লাগানো এবং ছেঁড়া জাল সেলাই করেই তাদের চলে জীবন-জীবিকা। জেলেদের জাল
ছিঁড়লে এদের জোটে কর্মসংস্থান। আর তা না হলে বেকার জীবন কাটাতে হয়।
গোলবুনিয়া গ্রামের ওয়াজেদ আলী জানান, তিনি প্রায় এক যুগ ধরে পুরনো জাল
সেলাই করছেন। আগে তাদের দিনে ১০০ টাকা মজুরি ছিল। এ ছাড়া মাছের জো থাকলে
মজুরি বাড়ে। আবার জো কেটে গেলে মজুরিও কমে যায়। সাগর বা নদীর পাড়ে বসেই
তাদের এ কাজ করতে হয়। উপজেলার চারিপাড়া, গাজীরখাল, মুন্সিপাড়া,
বুড়োজালিয়াঘাটা, ঢোস, চর ধূলাসার, চর গঙ্গামতি, কুয়াকাটা, মাঝিবাড়ী,
খাজুরা, লেম্বুরচর, নাইওরিপাড়া, আলীপুর, মহিপুর, গোড়াখাল এলাকায় ছেঁড়া জাল
সেলাই ও নতুন জালে দড়ি লাগিয়ে অন্তত আড়াই হাজার জেলে পরিবার জীবিকা নির্বাহ
করছে। জেলে পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই নয়। অনেক মহিলা ছেঁড়া জাল সেলাই করে
থাকেন। তবে পুরো বছর তাদের এ কাজ থাকে না। তখন আবার মাটি কাটা কিংবা অন্য
কোন কাজ জুটিয়ে নিতে হয়। জেলেরা আরও জানান, একেকটি ইলিশ মাছ ধরার শাইন জালে
দড়ি লাগাতে চারজনের ৫-৬ দিন পার হয়ে যায়। একেকটি ইলিশ মাছ ধরার শাইন জাল
লম্বায় প্রায় এক হাজার হাত। সাগরে বছরের পর বছর জলদস্যুদের তাণ্ডব এবং হঠাৎ
করে ঝড়ের প্রচণ্ডতা বেড়ে যাওয়ায় জেলেরা সাগরে যাওয়া ছেড়েই দিয়েছেন। এ
বছরের মতো এত জলদস্যুর তাণ্ডব তারা এর আগে কখনও দেখেননি। নিরুপায় জেলেরা
এখন সাগর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পথ খুঁজছেন। অনেকে বিকল্প পেশায় নিয়োজিত
হচ্ছেন বলে জানান।
No comments