ইটভাটা মালিকরা দিশাহারা by ইমাদ উদ দীন
টাকা
দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না কয়লা। এদিকে ভাটায় পোড়ানোর জন্য ইট প্রস্তুত।
প্রতিদিনই প্রতিটি ভাটায় কয়েক হাজার শ্রমিককে কাজ না করেই দিতে হচ্ছে টাকা।
ইট বাবদ অগ্রিম যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তাদের প্রতিনিয়ত তাগিদ। সব
মিলিয়ে মৌলভীবাজারের ইটভাটা মালিকরা কয়লা না পাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
কয়লা আমদানি নেই, অন্যদিকে ইটভাটায় কাট পোড়ানোয় সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে
নিষেধাজ্ঞা। ইটভাটার মালিকরা জানান, সময়মতো কয়লা না পাওয়া গেলে শুধু এ বছর এ
জেলায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মৌলভীবাজার জেলায় ৬৫টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি জিগজ্যাক (হাওয়া) ভাটা।
অন্যগুলো ফিক্সড চিমনি। জিগজ্যাক (হাওয়া) ভাটার মালিকরা পড়েছেন বিপাকে।
এসব ভাটায় কয়লা না পাওয়া গেলে কাঠ পোড়ানোর সুযোগ নেই। রাজনগরের এমআরএস
ব্রিকসের মালিক মঈন উদ্দিন আহমদ, কুলাউড়ার সুরমা ব্রিকসের ফয়েজ আহমদ, মেঘনা
ব্রিকসের আবদুল হাই, তিতাস ও শাপলা ব্রিকসের মালিক মাজেদুর রহমান আফজাল ও
লংলা ব্রিকসের মালিক রমিজ উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, শুষ্ক মওসুমের শুরু হলে
ইটভাটার কাজও শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রতিটি ভাটায় ১০-১২ লাখ করে কাঁচা ইট
মজুদ হয়ে গেছে। কয়লা না থাকায় ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করা যাচ্ছে
না। অন্যদিকে প্রতিটি ভাটায় ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক কাজ করছেন। এরাও হয়ে পড়েছে
বেকার। কারণ, ব্রিকফিল্ডে কাঁচা ইট মজুদ হয়ে যাওয়ায় ফাঁকা জায়গা নেই। আর
নতুন পোড়ানো ইট বের না হওয়াতে এগুলোও সারিবদ্ধ করতে হচ্ছে না। ব্রিকফিল্ডের
মালিকরা জানান, ভাটা শুরু করার আগেই প্রতিটি ভাটার মালিককে মেশিন শ্রমিক,
আগুন শ্রমিক, সাজাই মিস্ত্রি ও রেজা (ইট বহনকারী শ্রমিক)-কে অগ্রিম ৩৫-৪০
লাখ টাকা দিতে হয়। কয়লা আমদানি না হলে এসব ভাটা মালিককে প্রায় অর্ধকোটি
টাকা লোকসান গুনতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়লা আমদানি হয় ভারতের
মেঘালয় প্রদেশ থেকে। সেখানে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় কয়লা উত্তোলন বন্ধের দাবিতে
দেশটির হাইকোর্টে রিট হয়েছে। আদালত কয়লা উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ
করায় ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। কয়লা পাওয়া না গেলে ফিক্সড চিমনির
ভাটাগুলো মজুদকৃত ইট কাঠ দিয়ে পোড়াতে বাধ্য হবে। তখন শুরু হবে বৃক্ষ নিধন।
ক্ষতিগ্রস্ত হবে পরিবেশ। এদিকে ইটের অভাবে জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজও
স্থবির হয়ে পড়েছে। ভাটার সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে
পড়েছেন। কয়লার আশায় ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা রয়েছেন অপেক্ষায়। চলতি মওসুমে
ইট উৎপাদন শুরু না হওয়ায় পুরানো ইট চওড়া মূল্য বিক্রি হচ্ছে। মওসুমে কয়লা
না পাওয়ার কারণে জেলার অধিকাংশ ভাটায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ইট ভাটার মালিকরা
জানান, ইট পোড়ানো শুরু না করতে পারলেও প্রতি বছরের মতো এবারও যাদের কাছ
থেকে অগ্রিম ইটের টাকা নেয়া হয়েছে এরা পাওনা ইটের জন্য প্রতিনিয়তই ফিল্ডে
ধরনা দিচ্ছেন। অধিকাংশ শ্রমিককে বসিয়ে রেখে তাদের মজুরি দিতে হচ্ছে।
বৃষ্টির মওসুম শুরুর আগে ইট পোড়ানো না গেলে তৈরিকৃত কাঁচা ইটগুলো নষ্ট হয়ে
যাবে। মালিকরা জানান সরকার এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে এ বছরের লোকসানে এ
শিল্প ধ্বংসের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে। তারা বলেন, ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ
হলে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, নেপালসহ অন্যান্য দেশ থেকে দ্রুত কয়লা
আমদানি করা হলে তারা এ বিরাট ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। মৌলভীবাজার জেলা
ব্রিকফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার যমুনা
ব্রিকসের মালিক মিসবাউর রহমান জানান কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান আর
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঠিকে রাখতে দ্রুত কয়লা আমদানি করে বিরাট ক্ষতির হাত থেকে এ
শিল্পকে রক্ষায় সরকার এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান আমাদের।
No comments