চার শিশুকে থানায় জেরা by কাজী আনিছ
পরিত্যক্ত
পানির পাইপ থেকে শিশু জিহাদ উদ্ধার হওয়ার আগে গত শনিবার চার শিশুকে
থানায় কয়েক ঘণ্টা আটকে দফায় দফায় জেরা করেছে পুলিশ। পাইপের ভেতরে কোনো
বাচ্চা নেই। তার পরও তারা কেন বলছে, কান্নার আওয়াজ শুনেছে—এ বিষয়ে নানা
প্রশ্ন করে পুলিশ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তারা। তাদের পরিবার জানিয়েছে,
এখনো তাদের ভয় কাটছে না। ওই চার শিশু হলো মো. নাহিদ (৫), মো. তৌশিদ (৪),
জাহিদা ইয়াসমিন পুষ্পিতা (৮) ও মোছাম্মৎ ফাতেমা (১৪)। জাহিদা
শাহজাহানপুরের একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। ফাতেমা একই স্কুলের দশম
শ্রেণিতে পড়ে। এর আগে জিহাদের বাবা নাসির ফকিরকেও থানায় ১২ ঘণ্টা আটকে
রেখে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
শিশু আইন অনুযায়ী, কোনো শিশুকে থানায় নিয়ে গেলে তার বাবা-মা কিংবা বৈধ অভিভাবককে জানাতে হবে। এরপর থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশবিষয়ক কর্মকর্তার হাতে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রবেশন কর্মকর্তাকে অবহিত করে তার উপস্থিতিতেই শিশুবান্ধব পরিবেশে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। মানসিক পরিষেবা ও শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে আইনের কোনো তোয়াক্কা করেনি পুলিশ। তবে থানায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনজনের পরিবারকে জানানো হয়। কয়েক ঘণ্টা জেরা করা হলেও খাবার দেওয়া হয়নি।
গতকাল সন্ধ্যায় থানায় যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়, সেখানে দায়িত্বরত শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা কে। জবাবে শাহজাহানপুর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম বলেন, ‘আমিই থানার শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা। কিন্তু থানায় শিশুদের আনার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’
এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘তথ্য যাচাইয়ের জন্য আমরা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছি, জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এরা কোনো মামলার আসামি হলে শিশু আইন প্রযোজ্য হতো।’
শিশুদের এভাবে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, শিশু আইন অনুযায়ী, এ ধরনের আচরণ নিষিদ্ধ, বেআইনি। পুলিশ যে আইনকানুন না মানতে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে, ছোট ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে এ আচরণেও তা ফুটে উঠেছে। পুলিশ আইন রক্ষার বদলে আইন ভঙ্গকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।
গত শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনি মাঠের কাছে রেলওয়ে পাম্পের একটি পানির পাইপে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিহাদ। ওই দিন রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাইপের ভেতরে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ফেলেন। এরপর ক্যামেরা উঠিয়ে বলেন, পাইপের ভেতরে শিশু জিহাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, গুজব। ফলে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তির। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতেই পুলিশ জিহাদের বাবা নাসিরকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। আর শনিবার বেলা ১১টার দিকে নেওয়া হয় চার শিশুকে।
জানা যায়, জাহিদা ও ফাতেমাকে টানা চার ঘণ্টা এবং নাহিদ ও তৌশিদকে দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। থানায় নাহিদ ও তৌশিদের মা এবং জাহিদার বাবাও যান। কিন্তু ফাতেমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার বাবা-মা কিংবা বৈধ অভিভাবককে পুলিশ কোনো কিছুই জানায়নি।
সরেজমিনে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে রেলওয়ে পাম্পের কাছে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়েছিল জাহিদা ও ফাতেমা। তখন তারা পাইপের ভেতর থেকে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদের বাবা নাসির পুলিশকে জানিয়েছিলেন, জিহাদ পড়ে যাওয়ার কথা তিনি নাহিদ ও তৌশিদের কাছ থেকে শুনেছেন। এ কারণে মাসহ ওই দুই শিশুকেও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। শেষমেশ জিহাদ উদ্ধার হওয়ার পর চার শিশুর বাসায় ফেরার সুযোগ মেলে।
গতকাল দুপুরে বাসায় গেলে ফাতেমা ও জাহিদার পরিবার প্রথমে কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে অনুরোধ করার পর জাহিদার বাবা মো. জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, দুজন পোশাকধারী পুলিশ সদস্য বাসায় এসে জানান, জিহাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাহিদাকে থানায় নিয়ে যেতে এসেছেন তাঁরা। একজনের মাধ্যমে ফাতেমাকেও ডেকে পাঠানো হয়। পরে তাদের দুজনকেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে তিনিও থানায় যান।
ফাতেমার মা ফুলবানু বলেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমাকে পুলিশ কখন, কীভাবে থানায় নিয়ে গেল জানি না। পরে জানতে পাইরা দৌড়াইয়া থানায় যাই। সেখানে এক অফিসার জানায়, কাউকেই থানায় আনেননি তাঁরা। অথচ পরে জাহিদার বাবা জাহিদাকে ফোন করলে জানায়, ফাতেমাসহ তারা থানার ভেতরেই আছে। আমাকে বলল, কোনো দুশ্চিন্তা না করতে।’
ফাতেমা ও জাহিদা প্রথম আলোকে জানায়, থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের একটি কক্ষে বসানো হয়। সেখানে জিহাদের বাবাকেও দেখে তারা। সেখানে একের পর এক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের পাইপের ভেতর থেকে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা জানতে চান। তারা বারবারই ‘শুনতে পেয়েছি’ বলে জানায়। একপর্যায়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের বলেন, ‘তোমরা আবার মিথ্যা বলতাছ নাকি? আমরা তো কোনো বাচ্চা দেখি নাই। বাচ্চার আওয়াজ তো তোমাদের চিৎকারের প্রতিধ্বনিও হতে পারে।’
ফাতেমা জানায়, এর মধ্যে বাচ্চা উদ্ধারের খবর এলে তড়িঘড়ি করে সব পুলিশ সদস্য বের হয়ে যান। তখন সে পুলিশকে বলে, ‘আমরা তো মিথ্যা বলছি। এখন বাচ্চা আইলো কোত্থেকে।’ ওই কর্মকর্তা কোনো জবাব না দিয়ে চলে যান। এরপর তারা বাসায় ফিরে আসে। তবে এই চার ঘণ্টা তাদের কোনো খাবার দেওয়া হয়নি।
শিশু নাহিদের মা খাদিজা বেগম ও তৌশিদের মা পারুল আক্তার জানান, এক পুলিশ সদস্য নাহিদ ও তৌশিদসহ তাদের হেঁটে থানায় নিয়ে যান। সেখানে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করেন, জিহাদকে পড়তে তারা দেখেছিল কি না। তখন বাচ্চারা দেখেনি বলে জানায়।
শিশু আইন অনুযায়ী, কোনো শিশুকে থানায় নিয়ে গেলে তার বাবা-মা কিংবা বৈধ অভিভাবককে জানাতে হবে। এরপর থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশবিষয়ক কর্মকর্তার হাতে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রবেশন কর্মকর্তাকে অবহিত করে তার উপস্থিতিতেই শিশুবান্ধব পরিবেশে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। মানসিক পরিষেবা ও শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে আইনের কোনো তোয়াক্কা করেনি পুলিশ। তবে থানায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনজনের পরিবারকে জানানো হয়। কয়েক ঘণ্টা জেরা করা হলেও খাবার দেওয়া হয়নি।
গতকাল সন্ধ্যায় থানায় যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়, সেখানে দায়িত্বরত শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা কে। জবাবে শাহজাহানপুর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম বলেন, ‘আমিই থানার শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা। কিন্তু থানায় শিশুদের আনার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’
এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘তথ্য যাচাইয়ের জন্য আমরা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছি, জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এরা কোনো মামলার আসামি হলে শিশু আইন প্রযোজ্য হতো।’
শিশুদের এভাবে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, শিশু আইন অনুযায়ী, এ ধরনের আচরণ নিষিদ্ধ, বেআইনি। পুলিশ যে আইনকানুন না মানতে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে, ছোট ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে এ আচরণেও তা ফুটে উঠেছে। পুলিশ আইন রক্ষার বদলে আইন ভঙ্গকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।
গত শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনি মাঠের কাছে রেলওয়ে পাম্পের একটি পানির পাইপে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিহাদ। ওই দিন রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাইপের ভেতরে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ফেলেন। এরপর ক্যামেরা উঠিয়ে বলেন, পাইপের ভেতরে শিশু জিহাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, গুজব। ফলে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তির। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতেই পুলিশ জিহাদের বাবা নাসিরকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। আর শনিবার বেলা ১১টার দিকে নেওয়া হয় চার শিশুকে।
জানা যায়, জাহিদা ও ফাতেমাকে টানা চার ঘণ্টা এবং নাহিদ ও তৌশিদকে দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। থানায় নাহিদ ও তৌশিদের মা এবং জাহিদার বাবাও যান। কিন্তু ফাতেমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার বাবা-মা কিংবা বৈধ অভিভাবককে পুলিশ কোনো কিছুই জানায়নি।
সরেজমিনে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে রেলওয়ে পাম্পের কাছে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়েছিল জাহিদা ও ফাতেমা। তখন তারা পাইপের ভেতর থেকে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদের বাবা নাসির পুলিশকে জানিয়েছিলেন, জিহাদ পড়ে যাওয়ার কথা তিনি নাহিদ ও তৌশিদের কাছ থেকে শুনেছেন। এ কারণে মাসহ ওই দুই শিশুকেও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। শেষমেশ জিহাদ উদ্ধার হওয়ার পর চার শিশুর বাসায় ফেরার সুযোগ মেলে।
গতকাল দুপুরে বাসায় গেলে ফাতেমা ও জাহিদার পরিবার প্রথমে কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে অনুরোধ করার পর জাহিদার বাবা মো. জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, দুজন পোশাকধারী পুলিশ সদস্য বাসায় এসে জানান, জিহাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাহিদাকে থানায় নিয়ে যেতে এসেছেন তাঁরা। একজনের মাধ্যমে ফাতেমাকেও ডেকে পাঠানো হয়। পরে তাদের দুজনকেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে তিনিও থানায় যান।
ফাতেমার মা ফুলবানু বলেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমাকে পুলিশ কখন, কীভাবে থানায় নিয়ে গেল জানি না। পরে জানতে পাইরা দৌড়াইয়া থানায় যাই। সেখানে এক অফিসার জানায়, কাউকেই থানায় আনেননি তাঁরা। অথচ পরে জাহিদার বাবা জাহিদাকে ফোন করলে জানায়, ফাতেমাসহ তারা থানার ভেতরেই আছে। আমাকে বলল, কোনো দুশ্চিন্তা না করতে।’
ফাতেমা ও জাহিদা প্রথম আলোকে জানায়, থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের একটি কক্ষে বসানো হয়। সেখানে জিহাদের বাবাকেও দেখে তারা। সেখানে একের পর এক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের পাইপের ভেতর থেকে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা জানতে চান। তারা বারবারই ‘শুনতে পেয়েছি’ বলে জানায়। একপর্যায়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের বলেন, ‘তোমরা আবার মিথ্যা বলতাছ নাকি? আমরা তো কোনো বাচ্চা দেখি নাই। বাচ্চার আওয়াজ তো তোমাদের চিৎকারের প্রতিধ্বনিও হতে পারে।’
ফাতেমা জানায়, এর মধ্যে বাচ্চা উদ্ধারের খবর এলে তড়িঘড়ি করে সব পুলিশ সদস্য বের হয়ে যান। তখন সে পুলিশকে বলে, ‘আমরা তো মিথ্যা বলছি। এখন বাচ্চা আইলো কোত্থেকে।’ ওই কর্মকর্তা কোনো জবাব না দিয়ে চলে যান। এরপর তারা বাসায় ফিরে আসে। তবে এই চার ঘণ্টা তাদের কোনো খাবার দেওয়া হয়নি।
শিশু নাহিদের মা খাদিজা বেগম ও তৌশিদের মা পারুল আক্তার জানান, এক পুলিশ সদস্য নাহিদ ও তৌশিদসহ তাদের হেঁটে থানায় নিয়ে যান। সেখানে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করেন, জিহাদকে পড়তে তারা দেখেছিল কি না। তখন বাচ্চারা দেখেনি বলে জানায়।
No comments