সমস্যার বেড়াজালে চা-চাষিরা by সাবিবুর রহমান সাবিব
বিভিন্ন
সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে পঞ্চগড় জেলার চা-চাষিরা। শুল্ক সংক্রান্ত
সরকারি নতুন নীতিমালার কারণে চা-বাগান মালিকরা প্রায় এক বছর ধরে চাপাতা
বিক্রি করে লোকসান গুনে চলেছে। এ অবস্থায় নতুন বাগান মালিকরা ভবিষ্যতে
তাদের চাপাতার ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। সবরকম ঋণ ও
ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়ায় অর্থাভাবে চাষিরা তাদের বাগানের ঠিকভাবে পরিচর্যা
করতে পারছেন না। পাশাপাশি নতুন নতুন চা-বাগান করার ব্যাপারে অনেকের আগ্রহ
থাকলেও সুযোগ সুবিধার অভাবে তারা এগিয়ে আসছে না। পঞ্চগড় জেলায় ২৩টি
টি-এস্টেট, ১৫টি ক্ষুদ্রায়তন ও ৫০০টি ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে। এ
চা-বাগানগুলো থেকে প্রতিবছর প্রায় ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার কেজি চাপাতা উৎপাদন
হচ্ছে। স্থানীয় ৬টি চা কারখানায় এ পাতা প্রক্রিয়াজাত করে বছরে উৎপাদন হচ্ছে
প্রায় ১৫ লাখ কেজি চা। সংশিষ্ট মন্ত্রণালয় এ জেলাকে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল
হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও চার বছর আগে চা-চাষিদের জন্য চালু থাকা ঋণ ও ভর্তুকি
বন্ধ করে দিয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্র মতে, বিদেশ থেকে চা আমদানির ক্ষেত্রে
২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর এ শুল্ক তুলে
দেয়। এ সুযোগে কয়েকজন ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ কেজি নিম্নমানের
চা আমদানি করে কম দামে বাজারে ছাড়ে। ফলে পঞ্চগড়সহ দেশে উৎপাদিত ২৬০ টাকা
থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরের চা ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় নেমে আসে। তবে ভোক্তারা কম
দামের সুযোগ পায়নি। মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা কম দামের সুযোগ নিলেও
তাদের কারসাজির কারণে ভোক্তাদের এখনও বেশি দামে চা ক্রয় করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মোটা অংকের টাকার যোগসাজশ করে চা আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে
বলে জানা গেছে। চা’র দাম কমে যাওয়ায় কারখানা মালিকরা চাষিদের চাপাতার দাম
কমিয়ে দেয়াসহ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পাতার কোন দাম দিচ্ছে না। এ বিষয়ে কৃষকরা
কথা-কাটাকাটি করে কোন লাভ হচ্ছে না। কারখানা মালিকদের সাফ কথা- এভাবে দিলে
দেও না হলে চাপাতা ফিরিয়ে নিয়ে যাও। ফলে বাধ্য হয়ে চাষিরা তাদের চা পাতা
লোকসান দিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। চা আমদানির আগে প্রতি কেজি চাপাতার মূল্য
নির্ধারিত ছিল ২৬ টাকা ৫০ পয়সা। কোন কোন কারখানায় ৩২ টাকা কেজি পর্যন্ত
চাপাতা ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু এখন ক্রয় করা হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে।
চাষিরা লোকসানের সম্মুখীন হওয়ার জন্য সমপ্রতি পঞ্চগড় জেলা স্মল টি গার্ডেন
অনার্র্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল
জব্বারের নেতৃত্বে একটি টিম বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে দেখা করে
সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। মন্ত্রী ও সচিব তাদের বক্তব্যকে সমর্থন
জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত অবস্থার কোন
পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বাণিজ্য
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও চা বোর্ডের গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকর্তা মো.
সিদ্দিক এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান আবদুল লতিফসহ ৫
সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম ১৩ থেকে ১৫ই ডিসেম্বর পঞ্চগড় জেলার
মাঠ পর্যায়ে চা-বাগান ও কারখানা পরিদর্শনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে চাষিদের
সঙ্গে আলোচনা করেন। চাষিদের লোকসানের কারণ ও সমস্যার ব্যাপারে তারা নিশ্চিত
হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আটোয়ারীর
সোনাপাতিলার রাইম টি কোম্পানির মালিক মতিয়ার রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের
কর্মকর্তাদের সার্বিক বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তারা চাষিদের সমস্যা সমাধানে
আশ্বাস দিয়েছেন। করতোয়া চা প্রক্রিয়াজাত কারখানার ম্যানেজার নিপুন বলেন,
আমরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ২০ টাকা কেজি হিসেবে চাষিদের
চাপাতার মূল্য দিচ্ছি। পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ
আমির হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয় ও চা বোর্ডের যে উচ্চ পর্যায়ের টিম এসেছিলেন
তারা চা বাগান, কারখানা পরিদর্শন ও কৃষকদের সমস্যার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল
করবেন। তাদের প্রতিবেদনের ওপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments