‘দেশব্যাপী ব্যাপক দমননীতি চালিয়েছে সরকার’ -ফখরুল
২০
দলীয় জোটের হরতালকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সরকার ব্যাপক দমননীতি চালিয়েছে
বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। বলেছেন,
হরতালে জনগণের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন থাকবে ভেবেই দেশব্যাপী চালানো
হয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ওপর ব্যাপক দমননীতি। বিরোধী দলের
নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপকভাবে হানা
দিয়েছে। তল্লাশির নামে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে করা হয়েছে অসভ্য
দুর্ব্যবহার। বিরোধী নেতাকর্মীদের যাকে যেখানে পাওয়া গেছে গ্রেপ্তার করা
হয়েছে নির্বিচারে। হরতালের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিকালে নয়াপল্টন
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ
অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, হরতালকে কেন্দ্র করে রোববার রাত থেকে বিকাল
পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৪২ জন নেতাকর্মীকে। ভ্রাম্যমাণ
আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে তিনজনকে। গ্রেপ্তারকৃত কেন্দ্রীয় নেতাদের
মধ্যে রয়েছেন- যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয়
নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার
প্রমুখ। তিনি বলেন, রাজধানীর পল্লবী, মুগদা, লালবাগ, দক্ষিণখান, শাহআলী,
সবুজবাগ, নিউমার্কেট এলাকায় মিছিলে হামলা করেছে পুলিশ। পল্লবীতে মিছিলে
গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা স্বপন গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়
পুলিশ। মির্জা আলমগীর বলেন, একদলীয় বাকশালী স্বৈরতন্ত্র পাকাপাকি একটি
ভিত্তি দেয়ার জন্য এই ভোটারবিহীন সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। ক্ষমতা হারানোর
ভয়ে তারা আরও বেশি নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী হয়ে উঠেছে। শাসক দল তার
সাঙ্গপাঙ্গসহ সমস্ত হিংস্রতা দিয়ে বিরোধী দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। মির্জা
আলমগীর বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে অন্তর্নিহিত শক্তিই হচ্ছে গণমাধ্যমের
স্বাধীনতা। দেশে দেশে নিষ্ঠুর জনপীড়ক একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগকারী স্বৈরাচারী
শাসকরাই মুক্তচিন্তা, সমালোচনাকে ভয় পায়। সেইজন্য এ ধরনের শাসকরা
মুক্তবুদ্ধির স্বাধীনচেতা মানুষদেরকে বর্বর আক্রমণে দমন করতে চায়। তিনি
বলেন, গতকাল নিউএজ পত্রিকা অফিসে পুলিশ হানা দেয়। পুলিশি হানার মাধ্যমে
গণমাধ্যমকে চাপ সৃষ্টি করা এই সরকারের একটি চিরচেনা কৌশল। নিউ এজ অফিসে
পুলিশি হানার উদ্দেশ্যই হচ্ছে পত্রিকার নির্ভীক সম্পাদক নুরুল কবিরকে ভয়
দেখানো। আমরা নিউএজ অফিসে পুলিশি হানার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মির্জা আলমগীর বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে
প্রবাহিত করার জন্য সরকার নিখুঁত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। হরতালের
প্রাক্কালে পুরনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি করে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল
বোমা ছুড়ে জীবনহানির মতো মানবতাবিরোধী সহিংস কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
সরকারি এজেন্টদের দিয়ে তারা এই ধরনের অমানবিক কর্মকা- ৫ই জানুয়ারির তামাশার
নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটিয়েছিল। মির্জা আলমগীর বলেন, নোয়াখালীতে হরতালের
প্রথম প্রহরে স্কুল শিক্ষিকা সামসুন্নাহানের জীবনহানি ঘটানো হয়। সরকার
এজেন্টদের দিয়ে নানাভাবে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিগুলোকে
স্যাবোটাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়ে, সহিংস ধ্বংযজ্ঞ
সংঘটিত করে হরতালকারীদের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করে। বিরোধী দলের
হরতালের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়ার জন্য এই ভোটারবিহীন সরকারের অন্তর্ঘাতমূলক
কর্মকা-ের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু জনগণের দরবারে প্রকৃত ঘাতকরা চিহ্নিত
হয়েই থাকে। তাদের নিষ্ঠুর অপকর্মের বিচার জনগণ একদিন যথাযথভাবেই করবে। তিনি
বলেন, বেআইনি অস্ত্র দিয়ে বিরোধী দলের মিছিলকে পন্ড করার পুরস্কারস্বরূপ এই
অবৈধ সরকারের স্নেহমাখা সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনের নেতাদেরকে যখন মন্ত্রী ও
ঊর্ধ্বতন আওয়ামী নেতারা বাহবা দেন তখন দেশবাসী কারোরই জীবনের নিরাপত্তা
নির্বিঘœ থাকে না। নোয়াখালীতে শিক্ষিকা হত্যার ঘটনায় শোকপ্রকাশ ও দায়ীদের
গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। তিনি কমলাপুর রেল দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে
নিহত ও আহতদের প্রতি শোক ও দুঃখ প্রকাশ এবং তাদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি
সমবেদনা জানান। সরকারের সমালোচনা করে বলেন, জনস্বার্থকে সরকার তাচ্ছিল্য
করে শুধুমাত্র বিরোধী দলকে দমানোর আয়োজনে ব্যস্ত থাকার জন্যই দেশজুড়ে চলছে
নানা দুর্যোগ দুর্ঘটনা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গ্রেপ্তারকৃত
নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবি করেন। সেই সঙ্গে
হরতাল সফল করায় বিএনপি, অঙ্গসংগঠন ও জোটের শরিক দলের নেতাকর্মীদের বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
No comments