টার্গেট ঢাকার নেতারা
বিএনপির
চূড়ান্ত আন্দোলন দমনে সরকার ফের গ্রেফতার, রিমান্ডের মতো কৌশল বেছে
নিয়েছে। আন্দোলন সংগঠিত করে এগিয়ে নিতে পারে এ ধরনের নেতাদের গ্রেফতারের
টার্গেট করেছে সরকার। ফলে কৌশল পাল্টে বিএনপিও নেতাকর্মীদের গোপনে
দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। তারাও গ্রেফতার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। আতংক
সৃষ্টির মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের দুর্বল করতে না পারে সেজন্য তাদের
চাঙ্গা রাখতে নানাভাবে প্রকৃত তথ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
নজর বাঁচিয়ে নিজেদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। দলের
শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারের কৌশলের অংশ
হিসেবে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে গ্রেফতার অভিযান। ঢাকার আন্দোলন পরিচালনার
সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে
গ্রেফতার করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাসায় রাতে হানা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতারের পর সিনিয়র নেতাদের রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে।
সরকারের এমন কৌশলে কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে বিএনপি। গোপন অবস্থানে থেকে
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলন গোছানোর চেষ্টা করলেও মহানগরসহ
কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে গ্রেফতারের পাশাপাশি রিমান্ড আতংকও
কাজ করছে। যে কারণে কাজের গতি কিছুটা কম।
জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন দমনের নামে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ঢাকার রাজপথে কেউ যাতে নামতে না পারে সেজন্য মহানগর নেতাদের টার্গেট করে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার শুরু করেছে। শুধু বিএনপি নয়, যারাই সরকারের মতের বিরোধিতা করছে তাদের ওপরই নেমে আসছে নির্যাতন। তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নয়, দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এ সরকারে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। মামলা-হামলা আর রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে জনগণকে দমিয়ে রাখা যাবে না। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
সরকারের এক নীতিনির্ধারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, দেশ ভালোভাবে চলছে। মানুষ স্বস্তিতে আছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আন্দোলনের নামে যারা অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় তাদের দমন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছে। কাউকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে দেয়া হবে না।
সূত্র জানায়, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। সারা দেশে কঠোর আন্দোলন হলেও ঢাকার রাজপথ ছিল ফাঁকা। ঢাকা মহানগরে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় চূড়ান্ত সফলতা আসেনি এমন অভিযোগ ওঠে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরবর্তী আন্দোলনে ঢাকাকে গুরুত্ব দিয়েই কর্মকৌশল চূড়ান্ত করেন তিনি। ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনে গতি আনার লক্ষ্যে পুনর্গঠন করা হয় মহানগর কমিটি। সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে করা হয় আহ্বায়ক। কমিটিতে রাখা হয়, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন কমিটি কাজ শুরু করে। আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের কারণে পুনর্গঠনের গতি কিছুটা ধাক্কা খায়। শুরুতেই সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন আব্বাস। বিষয়টি খালেদা জিয়াকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। পুনর্গঠনে ধীরগতিতে আব্বাসসহ মহানগরের নেতাদের ডেকে কয়েকবার সতর্ক করেন তিনি। খালেদা জিয়ার সরাসরি তত্ত্বাবধানে পুনর্গঠনে কিছুটা গতি আসে। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন তারা। খালেদা জিয়াও বিভিন্ন সমাবেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেন, এবার ঢাকায় আন্দোলন হবে। আব্বাসও ঘোষণা দেন ঢাকায় এবার তারা কিছু করতে চান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির আন্দোলনের কৌশল বানচালে পাল্টা প্রস্তুতি নিতে থাকে সরকার। ঢাকায় যাতে বিএনপি দাঁড়াতে না পারে সেই টার্গেট করা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হলে সার্বিক পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে থাকবে। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে এমন কৌশল গ্রহণ করায় সরকার সফলতাও পায়। ওই সময় সারা দেশ ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলেও ঢাকা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
সেই কৌশলের অংশ হিসেবে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগেই ঢাকা মহানগর বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মীদের টার্গেট করে সরকার। গত কয়েকদিন থেকে শুরু হয়েছে চিরুনি অভিযান। ইতিমধ্যে মহানগর পুনর্গঠনের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ দুই নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আলাল সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হন। এছাড়া মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের সক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে তুরাগ থানা বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমানসহ তিনজনকে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুগ্ম-আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ আরও কয়েকজনের বাসায় কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়। মহানগর নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারেও সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ অনেকের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়।
সূত্র জানায়, গয়েশ্বর ও আলালের ক্ষেত্রে সরকারের গ্রেফতারের কৌশল প্রয়োগের পর বিএনপির অনেক সিনিয়ির ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতার মধ্যে গ্রেফতার আতংকের মাত্রা বেড়ে যায়। অনেক নেতাই গ্রেফতার এড়াতে সতর্ক চলাফেরা করছেন। গত কয়েকদিনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা নিজ বাসা ছেড়ে অন্যত্র রাত্রিযাপন করছেন। অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ। কেউ কেউ খোলা রাখলেও পরিচিত ছাড়া কারও কল রিসিভ করছেন না। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদেরও টার্গেট করেছে সরকার। যে কোনো ঘটনায় জেলা ও মহানগরীর শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা করা হচ্ছে। চলছে গ্রেফতার অভিযান। আন্দোলন দমাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার আতংকে রাখতে নানা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও স্বস্তিতে নেই অনেকে। আটকের পর বিভিন্ন মামলায় অজ্ঞাত আসামির তালিকায় তাদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এই কৌশলের শিকার হয়েছেন। ২৪ ডিসেম্বর বকশিবাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আসামি হিসেবে এদের নাম ছিল না। কিন্তু আটকের পর ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতার করে তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। এসব কারণে অনেকের মাঝে রিমান্ড আতংকও বিরাজ করছে।
আন্দোলন সামনে রেখে সক্রিয় নেতাদের নামে পুরনো মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে। ওইসব মামলায় অনেককে গ্রেফতারও করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে হবিগঞ্জের পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা জিকে গউসকে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া যুগান্তরকে বলেন, কাউকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না এটা গণতন্ত্রের কোন সংজ্ঞায় পড়ে। শুধু উনারাই কথা বলবে। সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে শুধু বিএনপি নয়, দেশের জনগণও অতিষ্ঠ। জনগণও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রস্তুত।
তিনি দাবি করেন, জনগণের সেই আন্দোলন দমনে নিষ্ঠুর পদ্ধতি গ্রহণ করেছে সরকার। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আবার রিমান্ডের নামে নেতাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, এভাবে নির্যাতন চালিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। এরাও পারবে না। ইতিহাস তাই বলে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন দমনের নামে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ঢাকার রাজপথে কেউ যাতে নামতে না পারে সেজন্য মহানগর নেতাদের টার্গেট করে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার শুরু করেছে। শুধু বিএনপি নয়, যারাই সরকারের মতের বিরোধিতা করছে তাদের ওপরই নেমে আসছে নির্যাতন। তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নয়, দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এ সরকারে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। মামলা-হামলা আর রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে জনগণকে দমিয়ে রাখা যাবে না। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
সরকারের এক নীতিনির্ধারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, দেশ ভালোভাবে চলছে। মানুষ স্বস্তিতে আছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আন্দোলনের নামে যারা অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় তাদের দমন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছে। কাউকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে দেয়া হবে না।
সূত্র জানায়, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। সারা দেশে কঠোর আন্দোলন হলেও ঢাকার রাজপথ ছিল ফাঁকা। ঢাকা মহানগরে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় চূড়ান্ত সফলতা আসেনি এমন অভিযোগ ওঠে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরবর্তী আন্দোলনে ঢাকাকে গুরুত্ব দিয়েই কর্মকৌশল চূড়ান্ত করেন তিনি। ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনে গতি আনার লক্ষ্যে পুনর্গঠন করা হয় মহানগর কমিটি। সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে করা হয় আহ্বায়ক। কমিটিতে রাখা হয়, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন কমিটি কাজ শুরু করে। আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের কারণে পুনর্গঠনের গতি কিছুটা ধাক্কা খায়। শুরুতেই সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন আব্বাস। বিষয়টি খালেদা জিয়াকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। পুনর্গঠনে ধীরগতিতে আব্বাসসহ মহানগরের নেতাদের ডেকে কয়েকবার সতর্ক করেন তিনি। খালেদা জিয়ার সরাসরি তত্ত্বাবধানে পুনর্গঠনে কিছুটা গতি আসে। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন তারা। খালেদা জিয়াও বিভিন্ন সমাবেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেন, এবার ঢাকায় আন্দোলন হবে। আব্বাসও ঘোষণা দেন ঢাকায় এবার তারা কিছু করতে চান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির আন্দোলনের কৌশল বানচালে পাল্টা প্রস্তুতি নিতে থাকে সরকার। ঢাকায় যাতে বিএনপি দাঁড়াতে না পারে সেই টার্গেট করা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হলে সার্বিক পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে থাকবে। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে এমন কৌশল গ্রহণ করায় সরকার সফলতাও পায়। ওই সময় সারা দেশ ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলেও ঢাকা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
সেই কৌশলের অংশ হিসেবে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগেই ঢাকা মহানগর বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মীদের টার্গেট করে সরকার। গত কয়েকদিন থেকে শুরু হয়েছে চিরুনি অভিযান। ইতিমধ্যে মহানগর পুনর্গঠনের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ দুই নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আলাল সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হন। এছাড়া মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের সক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে তুরাগ থানা বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমানসহ তিনজনকে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুগ্ম-আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ আরও কয়েকজনের বাসায় কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়। মহানগর নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারেও সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ অনেকের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়।
সূত্র জানায়, গয়েশ্বর ও আলালের ক্ষেত্রে সরকারের গ্রেফতারের কৌশল প্রয়োগের পর বিএনপির অনেক সিনিয়ির ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতার মধ্যে গ্রেফতার আতংকের মাত্রা বেড়ে যায়। অনেক নেতাই গ্রেফতার এড়াতে সতর্ক চলাফেরা করছেন। গত কয়েকদিনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা নিজ বাসা ছেড়ে অন্যত্র রাত্রিযাপন করছেন। অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ। কেউ কেউ খোলা রাখলেও পরিচিত ছাড়া কারও কল রিসিভ করছেন না। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদেরও টার্গেট করেছে সরকার। যে কোনো ঘটনায় জেলা ও মহানগরীর শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা করা হচ্ছে। চলছে গ্রেফতার অভিযান। আন্দোলন দমাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার আতংকে রাখতে নানা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও স্বস্তিতে নেই অনেকে। আটকের পর বিভিন্ন মামলায় অজ্ঞাত আসামির তালিকায় তাদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এই কৌশলের শিকার হয়েছেন। ২৪ ডিসেম্বর বকশিবাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আসামি হিসেবে এদের নাম ছিল না। কিন্তু আটকের পর ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতার করে তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। এসব কারণে অনেকের মাঝে রিমান্ড আতংকও বিরাজ করছে।
আন্দোলন সামনে রেখে সক্রিয় নেতাদের নামে পুরনো মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে। ওইসব মামলায় অনেককে গ্রেফতারও করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে হবিগঞ্জের পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা জিকে গউসকে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া যুগান্তরকে বলেন, কাউকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না এটা গণতন্ত্রের কোন সংজ্ঞায় পড়ে। শুধু উনারাই কথা বলবে। সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে শুধু বিএনপি নয়, দেশের জনগণও অতিষ্ঠ। জনগণও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রস্তুত।
তিনি দাবি করেন, জনগণের সেই আন্দোলন দমনে নিষ্ঠুর পদ্ধতি গ্রহণ করেছে সরকার। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আবার রিমান্ডের নামে নেতাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, এভাবে নির্যাতন চালিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। এরাও পারবে না। ইতিহাস তাই বলে।
No comments