পিতার বিরুদ্ধে কন্যার নালিশ by সিরাজুস সালেকিন
পরিবারের
সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান ইডেন কলেজের ছাত্রী কামরুন নাহার শিমু। কারণ
পরিবারের সবাই তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তাকে পাগল বলে। পৃথিবীর
সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল পিতাকেই অনিরাপদ মনে করছেন তিনি। তাই পিতার কাছ
থেকে পালিয়ে থাকতে চান। অন্যদিকে পরিবারের দাবি, শিমু মানসিক ভারসাম্যহীন।
সে অস্বাভাবিক আচরণ করে। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। এদিকে পিতার প্রতি অভিমান
করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা
করেন শিমু- পুলিশ সেখান থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং আত্মহত্যার
চেষ্টার অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর
করে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেন। ৩রা ডিসেম্বর জামিনে ছাড়া পান শিমু। তার
পিতা আবুল কাসেম তাকে সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী নিয়ে
যান। রোববার সকালে হাজিরা দিতে পিতার সঙ্গে ঢাকায় এলে আদালত থেকে পালিয়ে
যান শিমু। আশ্রয় নেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কার্যালয়ে।
সেখানে শিমুর সঙ্গে কথা হয়। শিমু জানান, কারাগার থেকে বাসায় নেয়ার পর তার
ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছেন তার পিতা। তাকে জোর করে মানসিক রোগী বানানোর
চেষ্টা করা হয়েছে। ধুতরা পাতা খাইয়ে তাকে ভারসাম্যহীন করারও চেষ্টা করা হয়।
শিমুর ভাষায়, তারা এমন টর্চার করা হয়েছে, মারেনি কিন্তু আমার হার্ট
অ্যাটাকের মতো অবস্থা হয়েছে। এমন চাপে রাখছে কিছু একটা করে বসবো। পত্রিকায়
তাকে নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়েও তার পিতা মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ
করেন তিনি। শিমু বলেন, আমার চরিত্র নাকি খারাপ। এটা পেপারে লেখছে। আমার
বাবা তাই বলছে। আমি তো পত্রিকা দেখিনি। উনি আমার নামে যত নোংরামি করে করুক।
আমি পাগল বদনাম থেকে মুক্তি চাই। আমি অর্থ সম্পদ কিছুই চাই না। উনি আমাকে
ছেড়ে দিক। মিথ্যা অপবাদ থেকে মুক্তি চাই। উনি বিয়ের জন্য কোনদিন আমাকে যেন
কিছু না বলে। এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। শিমু জানান, রোববার সকালে হাজিরা
দিতে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এসেছিলেন। সেখানে অ্যাডভোকেট উল্টাপাল্টা
ডকুমেন্ট লিখে সাইন নেয়ার চেষ্টা করেছে। এ কারণে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন
তিনি। তিনি আরও জানান, ইডেনে ভর্তি হওয়া পিতার পছন্দ ছিল না। তাকে বদলি করে
স্থানীয় সরকারি কলেজে নেয়ার জন্য বলেছিলেন। পিতা সেটাও করেনি। তাই পিতার
বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছিলেন শিমু। ২০১২ সালে পড়াশোনার টাকা চাওয়ায় মাথায়
বাঁশ দিয়ে আঘাত করে তার পিতা। তখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৬ মাস বাড়িতে
থাকতেন আর ৬ মাস হলে থাকতেন। এরপর গার্মেন্টে চাকরি নেন শিমু। এমনকি তার
পিতার পছন্দের ছেলে সঙ্গে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। সেই ছেলে একজন কলেজ
শিক্ষক। তার সঙ্গে ঘোরাফেরা করার জন্য পিতা বলতেন। পিতার অমতে বিয়ে করলে
মেয়ের আপত্তিকর ছবি প্রকাশেরও হুমকি দেন আবুল কাসেম। তার পরিকল্পনা
সম্পর্কে শিমু বলেন, আমি আমার মতো থাকতে চাই। আমি বড় শাস্তি পাওয়ার মতো কোন
কাজ করিনি। আমি তার থেকে পালিয়ে থাকতে চাই। আমার মানসম্মান সব শেষ হয়ে
গেছে। যে ফ্যামিলি এত নোংরা লেভেলে নিয়ে গেছে তাদের সঙ্গে থাকার তো প্রশ্নই
ওঠে না। কখনওই ফিরে যাব না। বুড়া-টুড়া ছাড়া কোন ভাল ছেলে আমাকে বিয়ে করবে
না। এত বদনামের পর কে আমাকে বিয়ে করবে। আমি জব করবো। জব নিয়ে কোন চিন্তা
করিনা। ২০১৩ থেকে ওয়ারলেস গেটে ইন্টারন্যাশনাল গার্মেন্টে কাজ করছি। দরকার
হলে বুয়ার কাজ করবো। কিন্তু ওই ফ্যামিলিতে থাকতে চাই না। শিমুর পিতা আবুল
কাসেম ঝিনাইগাতীর আলহাজ শফিউদ্দিন আহমেদ কলেজের শিক্ষক। তার দুই ছেলে এক
মেয়ে। বড় ছেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আরেক ছেলে জেএসসি পরীক্ষা
দিয়েছে। মেয়ের পড়ালেখার খরচ ঠিকমতো দিতেন দাবি করে তিনি বলেন, মেয়েকে তো আর
বেঁধে রাখার কথা না। কেন মানসিক নির্যাতন করবো? প্রাইভেট কেজি স্কুল
পড়াইছি। তাকে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় খরচ দিছি। কোচিং করাইছি। কিভাবে বলে আমি
খরচ দিইনি। মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন কেন বলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
আমি কিছু বুঝতেছি না। সে এই ভাল এই মন্দ। অনেকে তো বলতেছে যে মেয়ের মানসিক
সমস্যা আছে। ওর সঙ্গে কোন ছেলের সম্পর্ক থাকলে বিয়ে দিতে চাইছি। আমি তাকে
বলছি। মেয়ের আপত্তিকর ছবি প্রকাশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, সেটা তো
প্রশ্নই ওঠে না। ওর বিয়ে ঠিক করেছিলাম তা হয়নি। সেটা তখনই ভেঙে গেছে।
মেয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যদি সে মানে তাহলে কি উপায়
আছে। একমাত্র উপায় আছে ত্যাজ্য করে দেয়া। শিমুর পিতার কর্মস্থল আলহাজ
শফিউদ্দিন আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই শিমুকে
চিনি। তার মানসিক সমস্যা আছে বলে জানা ছিল না। সে অনেক মেধাবী একটা মেয়ে।
কিছুদিন থেকে পিতা ও মেয়ের সম্পর্ক খারাপ ছিল এটা শুনেছিলাম। বাংলাদেশ
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. জালাল উদ্দিন
জানান, রোববার সকালের দিকে ‘বাঁচান বাঁচান’ বলে আমাদের অফিসে আসে শিমু। সে
এখন তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। আমরা তার অভিভাবকের সঙ্গে
যোগাযোগের চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে।
No comments