ডায়াবেটিক ও সিজোফ্রেনিকের লড়াই by মাহবুব কামাল
ইমম্যাচিউরের কথায় ম্যাচুউরিটি থাকে না-এই
বাক্যটি দিয়ে লেখাটা শুরু করলে বুদ্ধিমান পাঠক ধরে ফেলবেন আমাকে। কারণ,
বাক্যটিতে চক্রাবৃত্ত অনুপপত্তি ঘটেছে- একই কথা দুবার বলা হয়েছে।
অনির্ভরযোগ্যকে নির্ভর করা যায় না- এই বাক্যের মতো। অনির্ভরযোগ্যকে যে
নির্ভর করা যায় না, তা যেমন আলাদাভাবে বলার দরকার হয় না, তেমন ইমম্যাচিউর
যে ম্যাচিউরিটির পরিচয় দেবে না- এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু যদি বলি, ম্যাচিউরও
কখনও কখনও ইমম্যাচিউরিটি দেখায়, তাহলে ভুল হবে না। অবশ্য সেক্ষেত্রেও কেউ
বলতে পারেন, যে মুহূর্তে ইমম্যাচিউরিটি দেখানো হল, সেই মুহূর্তে লোকটি আর
ম্যাচিউর থাকল না, ইমম্যাচিউর হয়ে গেল।
তো একটি সাপ্তাহিকের এক অনুজপ্রতিম (আসল নামটা কেন দিলাম না, পাঠক পরে বুঝবেন নিশ্চয়ই। ধরা যাক তার নাম জামান) যথেষ্ট ম্যাচিউর। তাকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়- আরে, এটা তো আমি ৮৫ সালেই বুঝে ফেলেছিলাম। হবে হয়তো, কারণ তিনি সাধারণত মিথ্যা বলেন না। তবে সত্যবাদী মানেই সত্যসন্ধানী নন। সত্যকে স্পর্শ করা বড় কঠিন কাজ, সত্যবাদীর পক্ষে তা সম্ভব না-ও হতে পারে। আর তাই হয়তো জামান এমন এক কথা বলে ফেলেছেন, যা ইমম্যাচিউরিটির নামান্তর। কথাটি নিছকই সুইপিং কমেন্ট হলে তা নেগলিজিবল বলে উড়িয়ে দিতাম। চায়ের আড্ডার কথার মতো। এরূপ আড্ডায় লোকে মুহূর্তে মুহূর্তে সুইপিং কমেন্ট করে। সেগুলো চায়ের ধোঁয়ার সঙ্গে মিলিয়েও যায়। আমরা যখন বলি- অল করাপ্ট, সেটা সুইপিং কমেন্ট, কারণ সমাজে দুর্নীতিমুক্ত মানুষও আছে। যাহোক, জামানের মন্তব্যটি সুইপিং নয়, তিনি জেনে-বুঝেই করেছেন তা। হয়তো তার মতো আরও অনেকেই এই ধারণা পোষণ করেন। জামান বলেছেন, এদেশের সব মন্দ কাজের সূত্রপাত করেছে আওয়ামী লীগ, এই দলটি যতদিন না ধ্বংস হচ্ছে, ততদিন এদেশে কিছু হওয়ার নেই!
এদেশের সব মন্দ কাজের সূত্রপাত আওয়ামী লীগ করেছে কি-না কিংবা দেশের অগ্রগতির জন্য আওয়ামী লীগের ধ্বংস অনিবার্য শর্ত কি-না, ভেবে দেখার ফুরসত পাইনি। কীভাবে পাবো? আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে- এটা ভেবেই তো অস্থির। জামান কি মনে করেন, আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়েও যেতে পারে? তা না হলে অমন কথা বলবেন কেন? আমাদের অনেকেই, এমনকি ভাষাবিদরাও আশংকা বলতে বা লিখতে হবে যেখানে, সেখানে সম্ভাবনা বলেন বা লেখেন। যেমন লেখেন- এবার বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে- জামানের কাছে হয়তো এটা সম্ভাবনা; তবে বাণীটি সম্ভাবনার, না আশংকার, সেটা আমাদের প্রতিপাদ্য নয়। আমরা শুধু যাচাই করব আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা আদৌ সম্ভব কি-না।
শুরুতেই উপসংহার টানার নিয়ম আছে কি? থাকলে নিয়মটা ভাঙলাম। না, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। একমাত্র প্রকৃতিই যদি পারে তা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের রেকর্ডসহ এ অঞ্চলের সভ্যতা যদি কখনও হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর মতো তলিয়ে যায়, তাহলে এরপর নবউত্থিত সভ্যতায় আওয়ামী লীগ বলতে হয়তো কিছু থাকবে না। অন্যথায় নয়। তিনটি বড় কারণে।
প্রথমত, আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল। স্বাধীনতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। সৈয়দ হক বলেছেন, সব অনুভূতি মানুষের মধ্যে বাস করে আর মানুষ বাস করে প্রেমানুভূতির ভেতর। রোমান্টিক তো, তাই এমন বলেছেন। আমি বলি, মানুষ বাস করে স্বাধীন সত্তার ভেতর। এই স্বাধীন সত্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে যে দল, তাকে ধ্বংস করতে চাইলে এই সমাজে তাই সবসময়ই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ পাওয়া যাবে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্টের কারণে যারা তা প্রতিহত করতে এগিয়ে আসবে। ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল কংগ্রেসকে যেমন ধ্বংস করা যায় না, দুর্বল করা যায় মাত্র; বাংলাদেশেও তেমন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা যাবে না, বড়জোর দুর্বল করা যাবে। কেউ হয়তো বলবেন, এ অঞ্চলের স্বাধীনতার জন্য মুসলিম লীগও তো একসময় নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেটি ধ্বংস হল কীভাবে? এর সহজ উত্তর- এ অঞ্চলে মুসলিম লীগের ধ্বংসের জন্য পাকিস্তান ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। মুসলিম লীগ প্রাসঙ্গিক ছিল পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের নয়। যে হেতুর (cause) জন্য মুসলিম লীগ ফাইট করেছিল, সেটিই যখন আর থাকল না, তখন দলটির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগের ধ্বংস দেখতে চাইলে আমাদের প্রবেশ করতে হবে আরেকটি স্বাধীন ভৌগোলিক রাজ্যে এবং সেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলটিই কেবল পারবে আওয়ামী লীগকে প্রতিস্থাপিত করতে। ভাবুন কত অসম্ভব কল্পনা! জামান হয়তো বলবেন, ভৌগোলিক স্বাধীনতাই কি শেষ কথা? স্বাধীন দেশের মানুষ কি পরাধীন জীবনযাপন করে না? গণতন্ত্রহীন মানুষ কি প্রকৃত স্বাধীন? কোনো দল যদি নিজভূমে পরাধীন থাকা মানুষকে স্বাধীন করতে পারে, সেক্ষেত্রে? এর উত্তর হচ্ছে- নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা, নিরঙ্কুশ গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই পৃথিবীতে, হ্যাঁ কোথাও নেই। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র দুটোই আপেক্ষিক প্রপঞ্চ (phenomenon)। এই আপেক্ষিকতা নিয়ে তর্ক চলে, সিদ্ধান্ত টানা যায় না। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে সিদ্ধান্ত টানা একটা বদঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমাদের।
দ্বিতীয় যে কারণে আওয়ামী লীগ ধ্বংস হবে না, সেটা জীববৈজ্ঞানিক। জীববিজ্ঞানে প্রাণীবর্গের প্রধান বিভাগ বা গোত্রকে বলে phylum- যেমন সরীসৃপ প্রাণীদের phylum হল রেপটাইলা, উভচরদের অ্যাম্ফিবিয়া। বাঙালি প্রাণিকুলের একটি প্রধান গোত্র বা ঢ়যুষঁস হল আওয়ামী লীগ। সে টিকে থাকবে প্রজনন ক্ষমতার জোরে। প্রশ্ন, তবে কি ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়নি? হয়েছে এবং সেটা প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতার অভাবে। আওয়ামী লীগের সেই ক্ষমতা আছে। প্রতিকূল পরিবেশে আওয়ামী লীগের অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতা আয়ুব-ইয়াহিয়াই টের পাননি শুধু, ৭৫-পরবর্তী সময়ে জিয়া, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া এবং এক-এগারোর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা (বুয়েট থেকে পাস করা হলে ঘটনা অন্যরকম হতো) টের পেয়েছেন ভালোভাবেই।
তৃতীয়ত, কর্মদোষে অর্থাৎ ভ্রান্ত রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা-উত্তরকালে কখনও কখনও দুর্বল (জনসমর্থনহীনতাজনিত দুর্বলতা) হয়ে পড়েছে ঠিক; কিন্তু তাকে ধ্বংস করতে পারে এমন শক্তিধর সুঠাম দেহ কোথায়? আওয়ামী লীগ যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন নির্বাচনে হারে; কিন্তু তাকে ধ্বংস করার শক্তি ধারণ করে না কেউ। এক অর্থে দেশের সব রাজনৈতিক দলই কম-বেশি দুর্বল, কোনোটাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নাতীত নয়। এক দুর্বল আরেক দুর্বলকে ধ্বংস করতে পারে না, অর্থাৎ দৌর্বল্যে দৌর্বল্যে কাটাকাটি হয়ে যায় এবং তাই সবগুলোই টিকে আছে। এমন কোনো সময় যদি আসে, যখন উন্নত সংস্কৃতি ও যথার্থ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছাড়া রাজনীতি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে, অপরাজনীতিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করতে প্রস্তুত হবে, তখন আওয়ামী লীগসহ সবাইকেই তাদের স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কাউকে ধ্বংস করার কিংবা কারও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার প্রশ্ন অবান্তর হয়ে পড়বে।
হ্যাঁ, ২০০৮ সালের নির্বাচনের অব্যবহিত আগ থেকে এ বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত শত আন্দোলন ও নাশকতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল; কিন্তু এর পর দলটি দুর্বল হয়ে পড়ছে দিন দিন। নিজের দুর্বলতা ঢাকতে বিরোধী দলকে আঘাত করে তাকেও দুর্বল করতে চাইছে এখন ক্ষমতাসীন এই দল; তবে বুঝতে পারছে না এতে তার নিজের ফিজিওলজিক্যাল সিস্টেমগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে মেডিকেল চেকআপ করালে দেখা যাবে, অলক্ষ্যেই দলটির শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেছে অনেক, যা অ্যাফেক্ট করছে নানা সিস্টেম ও অরগ্যান। ইতিমধ্যেই তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে পড়েছে, যে কারণে দেখতে পারছে না অনেক কিছু। আওয়ামী লীগ কিছু কাজ কেন করল আর কিছু কেন করছে না, বিলাতের আবহাওয়া বুঝতে পারার চেয়েও বুঝি কঠিন সেটা বোঝা। এই দল তিনটি বড় গণতান্ত্রিক শুভশক্তি নিয়ন্ত্রণের ভার হাতে তুলে নিয়েছে- বিচারপতি, সম্প্র্রচার ও বিরোধী দল। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পর্যবেক্ষক যারা, তারা জানেন যে, যে সরকার যত কম শাসন করে, সেই সরকার ততো বেশি স্থায়ী হয়। অথচ বর্তমান সরকার অতিরিক্ত শাসন করে টিকে থাকতে চাইছে। শাসনটা যদি অপরাধ দমন কিংবা জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট হতো তাহলে এক কথা ছিল। চারদিকে হত্যা, দুর্নীতির সূচক বাড়ছে, বাড়ছে তেল-গ্যাসের দাম, ওষুধের দামও, ফাঁস হচ্ছে প্রশ্নপত্র- কোথায় শাসন? শাসন মানে কি ক্ষমতার প্রতি হুমকি দমন?
প্রশ্ন উঠতে পারে, আওয়ামী লীগ তো বোঝা হল, বিএনপি কি সুস্থ? না, বিএনপিও অসুস্থ। তার রোগের নাম সিজোফ্রেনিয়া। সিজোফ্রেনিয়ার একটি টাইপ হল, আক্রান্ত ব্যক্তি বাস্তব জগৎ থেকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সে নিজের মতো করে জগৎ গড়ে তোলে, কারও কথা শুনতে চায় না। এ অবস্থায় কখনও সে হঠকারীও হয়ে উঠতে পারে। আমরা এখন যে লড়াইটা দেখছি, তা আসলে ডায়াবেটিক ও সিজোফ্রেনিকের লড়াই।
ওলবার্স নামের এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী একটা কূটতর্ক তুলেছিলেন বহুকাল আগে। এটি 'lburs' paradox বা ওলবার্সের কূটাভাস নামে পরিচিত। তিনি বলেছিলেন- রাতের আকাশে সূর্য নেই ঠিক আছে; কিন্তু আলো বিকিরণকারী লক্ষ-কোটি নক্ষত্র তো আছে। তার তর্কটা- রাতের আকাশ তবু অন্ধকার কেন? ৭৫-এর ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সূর্য চিরকালের জন্য অস্তমিত হয়েছে সত্য; কিন্তু এই দলে ছিল অসংখ্য তারকা। এত তারকা-রাজনীতিক থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ একুশ বছর দলটির অন্ধকার কাটেনি। কেন?
হ্যাঁ, এটাও এক কূটাভাস। মর্মার্থটি খুঁজে বের করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। তা না হলে আওয়ামী লীগকে হয়তো আরেকবার প্রবেশ করতে হবে দীর্ঘস্থায়ী অন্ধকারে।
পুনশ্চ : ছাত্রলীগ নিয়ে আমার লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের এক কর্মী অনেক কথা বলার ফাঁকে বলেছে- ছাত্র রাজনীতি নিয়ে গর্ব করার মতো কিছুই কি নেই?
এই ছাত্র সংগঠনটির কর্মীদের প্রতি আমি সহানুভূতিশীল। প্রায়ই ১০ টাকার বিনিময়ে তাদের লিটারেচার কিনে থাকি। এটা ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মতো চাঁদাবাজি নয়। এই টাকা দিয়ে তারা সংগঠন চালায়, আদর্শকে সমুন্নত রাখে। একটি অধঃপতিত সমাজে তারা মেইনস্ট্রিমে আসতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। যাহোক।
ছাত্রফ্রন্ট কর্মী প্রশ্ন করেছেন- ছাত্র রাজনীতির কোনো গৌরব আছে কি-না। কখনও কখনও এক প্রশ্নের দুই উত্তর থাকে। গল্পটি পড়ুন আগে।
স্কুল পরিদর্শনে এসেছেন ইন্সপেক্টর। পঞ্চম শ্রেণীতে ঢুকে তিনি ফার্স্ট বয়কে দাঁড়াতে বললেন। এরপর বললেন- বলো তো, বৃষ্টি কেন হয়?
ছেলেটি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলল- স্যার, এখনকার বৃষ্টি, না এক ঘণ্টা পরের?
ইন্সপেক্টর সামান্য বিচলিত হয়ে বললেন- ধরো এখনকার বৃষ্টি।
সে বলতে থাকল- তাহলে স্যার, সমুদ্রের পানি সূর্যের তাপে বাষ্প হয়ে উপরে ওঠে, তারপর সেই বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে ধীরে ধীরে পানির আকারে নিচে নামে।
- আর এক ঘণ্টা পরের বৃষ্টি?
- সেই বৃষ্টি স্যার, হজরত মিকাইল আলায়সাল্লামের আদেশে হয়।
ইন্সপেক্টর কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। ছেলেটি ব্যাখ্যা দেয়, বুঝলেন না স্যার? এখন চলছে বিজ্ঞান ক্লাস আর এক ঘণ্টা পরে হবে ধর্ম ক্লাস।
ছাত্রফ্রন্টের কর্মী এবার দুপ্রকার উত্তর দেখুন। স্বাধীনতা-পূর্ব ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস গৌরবের। এমনকি স্বাধীনতার কুড়ি বছর পর পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে এই গৌরবের রেশ থেকেছে। কিন্তু ৯০-এর অভ্যুত্থানের পর যেদিন আমানউল্লাহ আমান শেখালেন ছাত্র রাজনীতি করে কোটিপতি হওয়া যায়, সেদিন থেকেই এই রাজনীতি কালিমালিপ্ত হওয়া শুরু করেছে। এই কালি এখন হাঁড়ির কালির চেয়ে কালো।
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
তো একটি সাপ্তাহিকের এক অনুজপ্রতিম (আসল নামটা কেন দিলাম না, পাঠক পরে বুঝবেন নিশ্চয়ই। ধরা যাক তার নাম জামান) যথেষ্ট ম্যাচিউর। তাকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়- আরে, এটা তো আমি ৮৫ সালেই বুঝে ফেলেছিলাম। হবে হয়তো, কারণ তিনি সাধারণত মিথ্যা বলেন না। তবে সত্যবাদী মানেই সত্যসন্ধানী নন। সত্যকে স্পর্শ করা বড় কঠিন কাজ, সত্যবাদীর পক্ষে তা সম্ভব না-ও হতে পারে। আর তাই হয়তো জামান এমন এক কথা বলে ফেলেছেন, যা ইমম্যাচিউরিটির নামান্তর। কথাটি নিছকই সুইপিং কমেন্ট হলে তা নেগলিজিবল বলে উড়িয়ে দিতাম। চায়ের আড্ডার কথার মতো। এরূপ আড্ডায় লোকে মুহূর্তে মুহূর্তে সুইপিং কমেন্ট করে। সেগুলো চায়ের ধোঁয়ার সঙ্গে মিলিয়েও যায়। আমরা যখন বলি- অল করাপ্ট, সেটা সুইপিং কমেন্ট, কারণ সমাজে দুর্নীতিমুক্ত মানুষও আছে। যাহোক, জামানের মন্তব্যটি সুইপিং নয়, তিনি জেনে-বুঝেই করেছেন তা। হয়তো তার মতো আরও অনেকেই এই ধারণা পোষণ করেন। জামান বলেছেন, এদেশের সব মন্দ কাজের সূত্রপাত করেছে আওয়ামী লীগ, এই দলটি যতদিন না ধ্বংস হচ্ছে, ততদিন এদেশে কিছু হওয়ার নেই!
এদেশের সব মন্দ কাজের সূত্রপাত আওয়ামী লীগ করেছে কি-না কিংবা দেশের অগ্রগতির জন্য আওয়ামী লীগের ধ্বংস অনিবার্য শর্ত কি-না, ভেবে দেখার ফুরসত পাইনি। কীভাবে পাবো? আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে- এটা ভেবেই তো অস্থির। জামান কি মনে করেন, আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়েও যেতে পারে? তা না হলে অমন কথা বলবেন কেন? আমাদের অনেকেই, এমনকি ভাষাবিদরাও আশংকা বলতে বা লিখতে হবে যেখানে, সেখানে সম্ভাবনা বলেন বা লেখেন। যেমন লেখেন- এবার বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে- জামানের কাছে হয়তো এটা সম্ভাবনা; তবে বাণীটি সম্ভাবনার, না আশংকার, সেটা আমাদের প্রতিপাদ্য নয়। আমরা শুধু যাচাই করব আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা আদৌ সম্ভব কি-না।
শুরুতেই উপসংহার টানার নিয়ম আছে কি? থাকলে নিয়মটা ভাঙলাম। না, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। একমাত্র প্রকৃতিই যদি পারে তা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের রেকর্ডসহ এ অঞ্চলের সভ্যতা যদি কখনও হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর মতো তলিয়ে যায়, তাহলে এরপর নবউত্থিত সভ্যতায় আওয়ামী লীগ বলতে হয়তো কিছু থাকবে না। অন্যথায় নয়। তিনটি বড় কারণে।
প্রথমত, আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল। স্বাধীনতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। সৈয়দ হক বলেছেন, সব অনুভূতি মানুষের মধ্যে বাস করে আর মানুষ বাস করে প্রেমানুভূতির ভেতর। রোমান্টিক তো, তাই এমন বলেছেন। আমি বলি, মানুষ বাস করে স্বাধীন সত্তার ভেতর। এই স্বাধীন সত্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে যে দল, তাকে ধ্বংস করতে চাইলে এই সমাজে তাই সবসময়ই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ পাওয়া যাবে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্টের কারণে যারা তা প্রতিহত করতে এগিয়ে আসবে। ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল কংগ্রেসকে যেমন ধ্বংস করা যায় না, দুর্বল করা যায় মাত্র; বাংলাদেশেও তেমন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা যাবে না, বড়জোর দুর্বল করা যাবে। কেউ হয়তো বলবেন, এ অঞ্চলের স্বাধীনতার জন্য মুসলিম লীগও তো একসময় নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেটি ধ্বংস হল কীভাবে? এর সহজ উত্তর- এ অঞ্চলে মুসলিম লীগের ধ্বংসের জন্য পাকিস্তান ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। মুসলিম লীগ প্রাসঙ্গিক ছিল পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের নয়। যে হেতুর (cause) জন্য মুসলিম লীগ ফাইট করেছিল, সেটিই যখন আর থাকল না, তখন দলটির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগের ধ্বংস দেখতে চাইলে আমাদের প্রবেশ করতে হবে আরেকটি স্বাধীন ভৌগোলিক রাজ্যে এবং সেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলটিই কেবল পারবে আওয়ামী লীগকে প্রতিস্থাপিত করতে। ভাবুন কত অসম্ভব কল্পনা! জামান হয়তো বলবেন, ভৌগোলিক স্বাধীনতাই কি শেষ কথা? স্বাধীন দেশের মানুষ কি পরাধীন জীবনযাপন করে না? গণতন্ত্রহীন মানুষ কি প্রকৃত স্বাধীন? কোনো দল যদি নিজভূমে পরাধীন থাকা মানুষকে স্বাধীন করতে পারে, সেক্ষেত্রে? এর উত্তর হচ্ছে- নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা, নিরঙ্কুশ গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই পৃথিবীতে, হ্যাঁ কোথাও নেই। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র দুটোই আপেক্ষিক প্রপঞ্চ (phenomenon)। এই আপেক্ষিকতা নিয়ে তর্ক চলে, সিদ্ধান্ত টানা যায় না। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে সিদ্ধান্ত টানা একটা বদঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমাদের।
দ্বিতীয় যে কারণে আওয়ামী লীগ ধ্বংস হবে না, সেটা জীববৈজ্ঞানিক। জীববিজ্ঞানে প্রাণীবর্গের প্রধান বিভাগ বা গোত্রকে বলে phylum- যেমন সরীসৃপ প্রাণীদের phylum হল রেপটাইলা, উভচরদের অ্যাম্ফিবিয়া। বাঙালি প্রাণিকুলের একটি প্রধান গোত্র বা ঢ়যুষঁস হল আওয়ামী লীগ। সে টিকে থাকবে প্রজনন ক্ষমতার জোরে। প্রশ্ন, তবে কি ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়নি? হয়েছে এবং সেটা প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতার অভাবে। আওয়ামী লীগের সেই ক্ষমতা আছে। প্রতিকূল পরিবেশে আওয়ামী লীগের অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতা আয়ুব-ইয়াহিয়াই টের পাননি শুধু, ৭৫-পরবর্তী সময়ে জিয়া, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া এবং এক-এগারোর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা (বুয়েট থেকে পাস করা হলে ঘটনা অন্যরকম হতো) টের পেয়েছেন ভালোভাবেই।
তৃতীয়ত, কর্মদোষে অর্থাৎ ভ্রান্ত রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা-উত্তরকালে কখনও কখনও দুর্বল (জনসমর্থনহীনতাজনিত দুর্বলতা) হয়ে পড়েছে ঠিক; কিন্তু তাকে ধ্বংস করতে পারে এমন শক্তিধর সুঠাম দেহ কোথায়? আওয়ামী লীগ যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন নির্বাচনে হারে; কিন্তু তাকে ধ্বংস করার শক্তি ধারণ করে না কেউ। এক অর্থে দেশের সব রাজনৈতিক দলই কম-বেশি দুর্বল, কোনোটাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নাতীত নয়। এক দুর্বল আরেক দুর্বলকে ধ্বংস করতে পারে না, অর্থাৎ দৌর্বল্যে দৌর্বল্যে কাটাকাটি হয়ে যায় এবং তাই সবগুলোই টিকে আছে। এমন কোনো সময় যদি আসে, যখন উন্নত সংস্কৃতি ও যথার্থ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছাড়া রাজনীতি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে, অপরাজনীতিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করতে প্রস্তুত হবে, তখন আওয়ামী লীগসহ সবাইকেই তাদের স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কাউকে ধ্বংস করার কিংবা কারও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার প্রশ্ন অবান্তর হয়ে পড়বে।
হ্যাঁ, ২০০৮ সালের নির্বাচনের অব্যবহিত আগ থেকে এ বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত শত আন্দোলন ও নাশকতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল; কিন্তু এর পর দলটি দুর্বল হয়ে পড়ছে দিন দিন। নিজের দুর্বলতা ঢাকতে বিরোধী দলকে আঘাত করে তাকেও দুর্বল করতে চাইছে এখন ক্ষমতাসীন এই দল; তবে বুঝতে পারছে না এতে তার নিজের ফিজিওলজিক্যাল সিস্টেমগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে মেডিকেল চেকআপ করালে দেখা যাবে, অলক্ষ্যেই দলটির শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেছে অনেক, যা অ্যাফেক্ট করছে নানা সিস্টেম ও অরগ্যান। ইতিমধ্যেই তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে পড়েছে, যে কারণে দেখতে পারছে না অনেক কিছু। আওয়ামী লীগ কিছু কাজ কেন করল আর কিছু কেন করছে না, বিলাতের আবহাওয়া বুঝতে পারার চেয়েও বুঝি কঠিন সেটা বোঝা। এই দল তিনটি বড় গণতান্ত্রিক শুভশক্তি নিয়ন্ত্রণের ভার হাতে তুলে নিয়েছে- বিচারপতি, সম্প্র্রচার ও বিরোধী দল। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পর্যবেক্ষক যারা, তারা জানেন যে, যে সরকার যত কম শাসন করে, সেই সরকার ততো বেশি স্থায়ী হয়। অথচ বর্তমান সরকার অতিরিক্ত শাসন করে টিকে থাকতে চাইছে। শাসনটা যদি অপরাধ দমন কিংবা জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট হতো তাহলে এক কথা ছিল। চারদিকে হত্যা, দুর্নীতির সূচক বাড়ছে, বাড়ছে তেল-গ্যাসের দাম, ওষুধের দামও, ফাঁস হচ্ছে প্রশ্নপত্র- কোথায় শাসন? শাসন মানে কি ক্ষমতার প্রতি হুমকি দমন?
প্রশ্ন উঠতে পারে, আওয়ামী লীগ তো বোঝা হল, বিএনপি কি সুস্থ? না, বিএনপিও অসুস্থ। তার রোগের নাম সিজোফ্রেনিয়া। সিজোফ্রেনিয়ার একটি টাইপ হল, আক্রান্ত ব্যক্তি বাস্তব জগৎ থেকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সে নিজের মতো করে জগৎ গড়ে তোলে, কারও কথা শুনতে চায় না। এ অবস্থায় কখনও সে হঠকারীও হয়ে উঠতে পারে। আমরা এখন যে লড়াইটা দেখছি, তা আসলে ডায়াবেটিক ও সিজোফ্রেনিকের লড়াই।
ওলবার্স নামের এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী একটা কূটতর্ক তুলেছিলেন বহুকাল আগে। এটি 'lburs' paradox বা ওলবার্সের কূটাভাস নামে পরিচিত। তিনি বলেছিলেন- রাতের আকাশে সূর্য নেই ঠিক আছে; কিন্তু আলো বিকিরণকারী লক্ষ-কোটি নক্ষত্র তো আছে। তার তর্কটা- রাতের আকাশ তবু অন্ধকার কেন? ৭৫-এর ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সূর্য চিরকালের জন্য অস্তমিত হয়েছে সত্য; কিন্তু এই দলে ছিল অসংখ্য তারকা। এত তারকা-রাজনীতিক থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ একুশ বছর দলটির অন্ধকার কাটেনি। কেন?
হ্যাঁ, এটাও এক কূটাভাস। মর্মার্থটি খুঁজে বের করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। তা না হলে আওয়ামী লীগকে হয়তো আরেকবার প্রবেশ করতে হবে দীর্ঘস্থায়ী অন্ধকারে।
পুনশ্চ : ছাত্রলীগ নিয়ে আমার লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের এক কর্মী অনেক কথা বলার ফাঁকে বলেছে- ছাত্র রাজনীতি নিয়ে গর্ব করার মতো কিছুই কি নেই?
এই ছাত্র সংগঠনটির কর্মীদের প্রতি আমি সহানুভূতিশীল। প্রায়ই ১০ টাকার বিনিময়ে তাদের লিটারেচার কিনে থাকি। এটা ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মতো চাঁদাবাজি নয়। এই টাকা দিয়ে তারা সংগঠন চালায়, আদর্শকে সমুন্নত রাখে। একটি অধঃপতিত সমাজে তারা মেইনস্ট্রিমে আসতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। যাহোক।
ছাত্রফ্রন্ট কর্মী প্রশ্ন করেছেন- ছাত্র রাজনীতির কোনো গৌরব আছে কি-না। কখনও কখনও এক প্রশ্নের দুই উত্তর থাকে। গল্পটি পড়ুন আগে।
স্কুল পরিদর্শনে এসেছেন ইন্সপেক্টর। পঞ্চম শ্রেণীতে ঢুকে তিনি ফার্স্ট বয়কে দাঁড়াতে বললেন। এরপর বললেন- বলো তো, বৃষ্টি কেন হয়?
ছেলেটি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলল- স্যার, এখনকার বৃষ্টি, না এক ঘণ্টা পরের?
ইন্সপেক্টর সামান্য বিচলিত হয়ে বললেন- ধরো এখনকার বৃষ্টি।
সে বলতে থাকল- তাহলে স্যার, সমুদ্রের পানি সূর্যের তাপে বাষ্প হয়ে উপরে ওঠে, তারপর সেই বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে ধীরে ধীরে পানির আকারে নিচে নামে।
- আর এক ঘণ্টা পরের বৃষ্টি?
- সেই বৃষ্টি স্যার, হজরত মিকাইল আলায়সাল্লামের আদেশে হয়।
ইন্সপেক্টর কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। ছেলেটি ব্যাখ্যা দেয়, বুঝলেন না স্যার? এখন চলছে বিজ্ঞান ক্লাস আর এক ঘণ্টা পরে হবে ধর্ম ক্লাস।
ছাত্রফ্রন্টের কর্মী এবার দুপ্রকার উত্তর দেখুন। স্বাধীনতা-পূর্ব ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস গৌরবের। এমনকি স্বাধীনতার কুড়ি বছর পর পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে এই গৌরবের রেশ থেকেছে। কিন্তু ৯০-এর অভ্যুত্থানের পর যেদিন আমানউল্লাহ আমান শেখালেন ছাত্র রাজনীতি করে কোটিপতি হওয়া যায়, সেদিন থেকেই এই রাজনীতি কালিমালিপ্ত হওয়া শুরু করেছে। এই কালি এখন হাঁড়ির কালির চেয়ে কালো।
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
No comments