ক্ষমতা ছাড়লে জনগণ পিষে ফেলবে -কুমিল্লায় খালেদা by কাজী সুমন ও জাহিদ হাসান
শিগগিরই সরকারের পতন ঘটবে দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ভাল কিছু পেতে হলে কিছু কষ্ট করতে হয়। সামনের আন্দোলনে এবার আমি নিজে আপনাদের সামনে থাকবো। এক কাতারে চলি, দেখি কিভাবে পুলিশ গুলি করে। এবার গুলি করে গদি রক্ষা হবে না। তিনি বলেন, সরকার ভেবেছে- বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বন্দি করে তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পারবে। তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, শিগগিরই তাদের পতন হবে ইনশাআল্লাহ। যখনই ডাক দেয়া হবে, তখনই আন্দোলনে নেমে পড়তে হবে। আপনারা তার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিন। আওয়ামী লীগকে বর্জন করুন। দেশে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। আমরাই দেশে পরিবর্তন আনবো। গতকাল কুমিল্লার টাউন হল মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় খালেদা জিয়া দেশ রক্ষার আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলেন, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, নিরাপত্তা অন্য বস্ত্র, কর্মসংস্থানের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। ইমান-আকিদা ঠিক রাখতে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলন ক্ষমতার জন্য নয়, আমার কাছে ক্ষমতা বড় নয়। তাই সুদিনের আগে কিছু কষ্ট করতে হবে। আর বিদেশীদের বলবো- বাংলাদেশে র্যাবকে গুলি, টিয়ার শেল, ট্রেনিং দেয়া বন্ধ করুন। ওই অস্ত্র দিয়ে তারা নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ সরকার খুনিদের সরকার। ডা. মিলনকে খুন করেছে এরশাদ। জয়নাল, জাফর, দীপালি সাহা ও নূর হোসেনের জীবন নিয়েছে এরশাদ। সেই খুনিদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে হাসিনা। সে খুনিদের ধারা বেষ্টিত। এদের গদি না থাকলে জনগণ পিষে ফেলবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজেদের যদি এতই জনপ্রিয় মনে করেন তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন, কয়টা ভোট পান। সেই সাহস নেই। সাহস থাকবে কোথা থেকে। কেবল তো আছেন লুটপাটের ধান্ধায়। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগেই সবার অংশগ্রহণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। খালেদা জিয়া বলেন, জাসদের একজন নেতা যিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি বলেছেন- আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক নয়। তারা গণতান্ত্রিক কোন দলও নয়। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সঙ্গে আছেন, থাকবেন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, তারা গণতান্ত্রিক নয়।
২০ দলীয় জোটনেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যকলাপে মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সারা দেশে কোন উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়নের নামে লুটপাট করে পকেট ভর্তি করছে তারা। অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তরুণ যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হাসিনা বলেছিল তোমাদের ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন এক মাসে ১৯ ভাগ কর্মসংস্থান কমেছে। ৮২ ভাগ বিনিয়োগ কমে গেছে। এক ব্যক্তির শাসন ও শোষণ চলছে।
খালেদা জিয়া ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনকে ‘কুত্তা মার্কা’ নির্বাচন অভিহিত করে বলেন, শফিউল আলম প্রধান ছবি দেখিয়েছেন কুকুর শুয়ে আছে, ছাগল বসে আছে ভোটকেন্দ্রে। আমরা ডাক দিলাম কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। আওয়ামী লীগ বাদে সবাই ভোট বর্জন করেছে। আওয়ামী লীগও পিটুনির ভয়ে ভোট দিতে যায়নি। খালেদা জিয়া বলেন, এ সংসদ সম্পন্ন অবৈধ। কোন আইন পাস করার অধিকার নেই। ক্ষমতার জোরে তারা যত আইনই পাস করুক না কোন আইনই টিকবে না। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বিভিন্ন আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিরোধী দলের কোন সংবাদ যাতে সাংবাদিকরা লিখতে না পারেন এ জন্য সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। ন্যায়বিচার করার ক্ষমতা রহিত করতে আইন করেছে। জর্জ সাহেবরা আওয়ামী লীগের মনমতো রায় না দিলে তাদের বিদায় করবে এ সংসদ। হাসিনা যা বলবে। খালেদা জিয়া বলেন, তাদের একজন ইমাম আছে, এইচ টি ইমাম। এই ইমাম হাসিনাদের ইমাম। তিনি তাদের জারিজুরি ফাঁস করে দিয়েছেন। কিভাবে নিজেদের লোক দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরেছে। এত বড় সত্য বলার পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। এইচ টি ইমামেরও ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। পাকিস্তান আমলে দুর্নীতির দায়ে চাকরি গেছে তার। যত কুবুদ্ধি তা তার মাথায় আছে। হাসিনাকে সে এই কু-বুদ্ধি দেয়। এ ইমামের পেছনে আর থাকা ঠিক নয়।
খালেদা জিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীদের ছবি দেখিয়ে বলেন, এ অস্ত্রধারীদের ধরা হয় না। এরা পুলিশ, না এরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী। প্রকাশ্যে রাজপথে তারা অস্ত্র নিয়ে মানুষ হত্যা করে! বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এখন বাংলাদেশে। এই অস্ত্রধারীরা বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে। সে বলেছে, আমি হিন্দু তারপরও তাকে রেহাই দেয়া হয়নি। তার খুনিদের বিচার হয়নি। একটি আলোকচিত্র দেখিয়ে বলেন, হাসিনার কাছে জানতে চাই এ অস্ত্র কোথায় পেলো? কেন গ্রেপ্তার করা হয় না তাকে? র্যাবকে খুনি, ড্রাকুলা, রক্তপিপাসু অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, র্যাব এখন খুনি। তারা বহু গুম-খুন করছে। নারায়ণগঞ্জে তারা ৯ জন নয়, ১১ জনকে খুন করেছে। সেখানের গডফাদার ও পুলিশ জড়িত। আর আসল খুনি পর্দার আড়ালে, তিনি হলেন কর্নেল জিয়া। তাকে না ধরা পর্যন্ত গুপ্তহত্যা বন্ধ হবে না। র্যাব এখন ভাড়াটিয়া খুনি হয়ে গেছে। অনেকে টাকা দিয়েও ছাড়া পায় না। শুধু আমরা না অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ সুশীল সমাজ দাবি করেছে র্যাব বাতিল করতে হবে। আমাদের সাবেক এমপি হিরু-পারভেজকে র্যাব ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করেছে। আজও সন্ধান মেলেনি। র্যাব ঢাকা শহরের লোক ধরে নিয়ে গুম করেছে সেই হিসাব আমাদের আছে। এ ছাড়া সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদকেও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যখন ইচ্ছা তাকে ধরে নিয়ে খুন গুম করছে। প্রতি মাসে গড়ে ১০০ পুলিশ অপরাধে জড়াচ্ছে। একটি বিশেষ জেলার পুলিশ ভাবে- তারা আইনের ঊর্ধ্বে। ডিবি এখন কন্ট্রাক্ট কিলিং করছে। মানুষ ধরে নিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে খুন করে। রাস্তাঘাট নদী-নালায় এত লাশ কেন পাওয়া যায়? স্বাধীনতার পর এ অবস্থাই হয়েছিল।
খালেদা জিয়া বলেন, পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ দায়ী। শেখ হাসিনা সব জানতেন। দৈনিক মানবজমিনকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মইনউদ্দীন ওই পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন- সেই দিন তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। সেনাবাহিনীতে অভিযানে পাঠাতে পারেননি। কারণ হাসিনা-মঈনকে তার অফিসে বসিয়ে রেখেছিলেন। কোন সেনা অফিসারকে পিলখানায় যেতে দেননি হাসিনা। মির্জা আজমের বোনের জামাই আবদুর রহমানকে গুলজার আটক করেছিল। র্যাব থেকে গুলজারকে হাসিনা বিডিআর-এ নেন। আবদুর রহমানকে ধরার অপরাধে গুলজারকে হত্যা করা হয়েছে। সে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচেছিল।
কুমিল্লা থাকাকালীন স্মৃতিচারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের প্রথম পোস্টিং হয়েছিল কুমিল্লায়। তখন থেকেই কুমিল্লার মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কুমিল্লা শহরকে আমার নিজের শহর মনে হয়। ভবিষ্যতে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে কুমিল্লা শহরকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার আশ্বাস দেন তিনি। এর আগে খালেদা জিয়া গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশানের বাসভবন থেকে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে ঘুরে দাউদকান্দি হয়ে অপরাহ্ণ ২টায় কুমিল্লা সার্কিট হাউসে পৌঁছান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পার্শ্ববর্তী টাউন হল ময়দানে জনসভায় উপস্থিত হন। জনসভায় বক্তব্য দিয়ে সড়ক পথেই ঢাকায় ফিরেন। উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর ঢাকার বাইরে এটি খালেদা জিয়ার নবম জনসভা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ৫ই জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা সংবিধান সম্মতভাবে হয়নি। তাই বর্তমান সরকার অবৈধ। সত্যিকারে নির্বাচন দিলে পরাজয় হবে জেনে এখন টালবাহানা করছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছেন না, সারা দেশে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ব্যাংকের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতারা। বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকার ইসলামবিদ্বেষী লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার না করে আত্মসমর্পণের সুযোগ করে দিয়েছে। ইসলাম বিদ্বেষীদের আস্তানা বাংলার মাটিতে থাকবে না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণের সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মে. জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দায়, কুমিল্লা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন, কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আবদুল গফুর ভূইয়া, জাকারিয়া তাহের সুমন ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য কারাবন্দি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেনসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
পথে পথে তোরণ ভাঙচুর: জনসভার যাত্রাপথে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নির্মিত অন্তত ২০টি তোরণ ভাঙচুর করেছে সরকার সমর্থকরা। শুক্রবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত নির্মিত প্রায় ২০টি তোরণ ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ভেঙেছে বলে অভিযোগ করেছেন কুমিল্লা (উত্তর) জেলা ছাত্রদলের সভাপতি চৌধুরী রফিকুল হক শিপন।
ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় খালেদা জিয়া দেশ রক্ষার আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলেন, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, নিরাপত্তা অন্য বস্ত্র, কর্মসংস্থানের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। ইমান-আকিদা ঠিক রাখতে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলন ক্ষমতার জন্য নয়, আমার কাছে ক্ষমতা বড় নয়। তাই সুদিনের আগে কিছু কষ্ট করতে হবে। আর বিদেশীদের বলবো- বাংলাদেশে র্যাবকে গুলি, টিয়ার শেল, ট্রেনিং দেয়া বন্ধ করুন। ওই অস্ত্র দিয়ে তারা নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ সরকার খুনিদের সরকার। ডা. মিলনকে খুন করেছে এরশাদ। জয়নাল, জাফর, দীপালি সাহা ও নূর হোসেনের জীবন নিয়েছে এরশাদ। সেই খুনিদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে হাসিনা। সে খুনিদের ধারা বেষ্টিত। এদের গদি না থাকলে জনগণ পিষে ফেলবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজেদের যদি এতই জনপ্রিয় মনে করেন তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন, কয়টা ভোট পান। সেই সাহস নেই। সাহস থাকবে কোথা থেকে। কেবল তো আছেন লুটপাটের ধান্ধায়। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগেই সবার অংশগ্রহণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। খালেদা জিয়া বলেন, জাসদের একজন নেতা যিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি বলেছেন- আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক নয়। তারা গণতান্ত্রিক কোন দলও নয়। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সঙ্গে আছেন, থাকবেন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, তারা গণতান্ত্রিক নয়।
২০ দলীয় জোটনেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যকলাপে মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সারা দেশে কোন উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়নের নামে লুটপাট করে পকেট ভর্তি করছে তারা। অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তরুণ যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হাসিনা বলেছিল তোমাদের ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন এক মাসে ১৯ ভাগ কর্মসংস্থান কমেছে। ৮২ ভাগ বিনিয়োগ কমে গেছে। এক ব্যক্তির শাসন ও শোষণ চলছে।
খালেদা জিয়া ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনকে ‘কুত্তা মার্কা’ নির্বাচন অভিহিত করে বলেন, শফিউল আলম প্রধান ছবি দেখিয়েছেন কুকুর শুয়ে আছে, ছাগল বসে আছে ভোটকেন্দ্রে। আমরা ডাক দিলাম কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। আওয়ামী লীগ বাদে সবাই ভোট বর্জন করেছে। আওয়ামী লীগও পিটুনির ভয়ে ভোট দিতে যায়নি। খালেদা জিয়া বলেন, এ সংসদ সম্পন্ন অবৈধ। কোন আইন পাস করার অধিকার নেই। ক্ষমতার জোরে তারা যত আইনই পাস করুক না কোন আইনই টিকবে না। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বিভিন্ন আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিরোধী দলের কোন সংবাদ যাতে সাংবাদিকরা লিখতে না পারেন এ জন্য সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। ন্যায়বিচার করার ক্ষমতা রহিত করতে আইন করেছে। জর্জ সাহেবরা আওয়ামী লীগের মনমতো রায় না দিলে তাদের বিদায় করবে এ সংসদ। হাসিনা যা বলবে। খালেদা জিয়া বলেন, তাদের একজন ইমাম আছে, এইচ টি ইমাম। এই ইমাম হাসিনাদের ইমাম। তিনি তাদের জারিজুরি ফাঁস করে দিয়েছেন। কিভাবে নিজেদের লোক দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরেছে। এত বড় সত্য বলার পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। এইচ টি ইমামেরও ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। পাকিস্তান আমলে দুর্নীতির দায়ে চাকরি গেছে তার। যত কুবুদ্ধি তা তার মাথায় আছে। হাসিনাকে সে এই কু-বুদ্ধি দেয়। এ ইমামের পেছনে আর থাকা ঠিক নয়।
খালেদা জিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীদের ছবি দেখিয়ে বলেন, এ অস্ত্রধারীদের ধরা হয় না। এরা পুলিশ, না এরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী। প্রকাশ্যে রাজপথে তারা অস্ত্র নিয়ে মানুষ হত্যা করে! বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এখন বাংলাদেশে। এই অস্ত্রধারীরা বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে। সে বলেছে, আমি হিন্দু তারপরও তাকে রেহাই দেয়া হয়নি। তার খুনিদের বিচার হয়নি। একটি আলোকচিত্র দেখিয়ে বলেন, হাসিনার কাছে জানতে চাই এ অস্ত্র কোথায় পেলো? কেন গ্রেপ্তার করা হয় না তাকে? র্যাবকে খুনি, ড্রাকুলা, রক্তপিপাসু অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, র্যাব এখন খুনি। তারা বহু গুম-খুন করছে। নারায়ণগঞ্জে তারা ৯ জন নয়, ১১ জনকে খুন করেছে। সেখানের গডফাদার ও পুলিশ জড়িত। আর আসল খুনি পর্দার আড়ালে, তিনি হলেন কর্নেল জিয়া। তাকে না ধরা পর্যন্ত গুপ্তহত্যা বন্ধ হবে না। র্যাব এখন ভাড়াটিয়া খুনি হয়ে গেছে। অনেকে টাকা দিয়েও ছাড়া পায় না। শুধু আমরা না অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ সুশীল সমাজ দাবি করেছে র্যাব বাতিল করতে হবে। আমাদের সাবেক এমপি হিরু-পারভেজকে র্যাব ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করেছে। আজও সন্ধান মেলেনি। র্যাব ঢাকা শহরের লোক ধরে নিয়ে গুম করেছে সেই হিসাব আমাদের আছে। এ ছাড়া সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদকেও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যখন ইচ্ছা তাকে ধরে নিয়ে খুন গুম করছে। প্রতি মাসে গড়ে ১০০ পুলিশ অপরাধে জড়াচ্ছে। একটি বিশেষ জেলার পুলিশ ভাবে- তারা আইনের ঊর্ধ্বে। ডিবি এখন কন্ট্রাক্ট কিলিং করছে। মানুষ ধরে নিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে খুন করে। রাস্তাঘাট নদী-নালায় এত লাশ কেন পাওয়া যায়? স্বাধীনতার পর এ অবস্থাই হয়েছিল।
খালেদা জিয়া বলেন, পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ দায়ী। শেখ হাসিনা সব জানতেন। দৈনিক মানবজমিনকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মইনউদ্দীন ওই পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন- সেই দিন তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। সেনাবাহিনীতে অভিযানে পাঠাতে পারেননি। কারণ হাসিনা-মঈনকে তার অফিসে বসিয়ে রেখেছিলেন। কোন সেনা অফিসারকে পিলখানায় যেতে দেননি হাসিনা। মির্জা আজমের বোনের জামাই আবদুর রহমানকে গুলজার আটক করেছিল। র্যাব থেকে গুলজারকে হাসিনা বিডিআর-এ নেন। আবদুর রহমানকে ধরার অপরাধে গুলজারকে হত্যা করা হয়েছে। সে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচেছিল।
কুমিল্লা থাকাকালীন স্মৃতিচারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের প্রথম পোস্টিং হয়েছিল কুমিল্লায়। তখন থেকেই কুমিল্লার মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কুমিল্লা শহরকে আমার নিজের শহর মনে হয়। ভবিষ্যতে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে কুমিল্লা শহরকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার আশ্বাস দেন তিনি। এর আগে খালেদা জিয়া গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশানের বাসভবন থেকে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে ঘুরে দাউদকান্দি হয়ে অপরাহ্ণ ২টায় কুমিল্লা সার্কিট হাউসে পৌঁছান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পার্শ্ববর্তী টাউন হল ময়দানে জনসভায় উপস্থিত হন। জনসভায় বক্তব্য দিয়ে সড়ক পথেই ঢাকায় ফিরেন। উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর ঢাকার বাইরে এটি খালেদা জিয়ার নবম জনসভা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ৫ই জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা সংবিধান সম্মতভাবে হয়নি। তাই বর্তমান সরকার অবৈধ। সত্যিকারে নির্বাচন দিলে পরাজয় হবে জেনে এখন টালবাহানা করছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছেন না, সারা দেশে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ব্যাংকের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতারা। বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকার ইসলামবিদ্বেষী লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার না করে আত্মসমর্পণের সুযোগ করে দিয়েছে। ইসলাম বিদ্বেষীদের আস্তানা বাংলার মাটিতে থাকবে না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণের সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মে. জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দায়, কুমিল্লা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন, কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আবদুল গফুর ভূইয়া, জাকারিয়া তাহের সুমন ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য কারাবন্দি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেনসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
পথে পথে তোরণ ভাঙচুর: জনসভার যাত্রাপথে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নির্মিত অন্তত ২০টি তোরণ ভাঙচুর করেছে সরকার সমর্থকরা। শুক্রবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত নির্মিত প্রায় ২০টি তোরণ ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ভেঙেছে বলে অভিযোগ করেছেন কুমিল্লা (উত্তর) জেলা ছাত্রদলের সভাপতি চৌধুরী রফিকুল হক শিপন।
No comments